২০২৪ সালে আমার পড়া সেরা বইগুলো

২০২৪ সালে আমার পড়া সেরা বইগুলো – ২০২৪ সাল মোতাবেক ১৪৪৪-১৪৪৬ হিজরীতে বেশ অনেকগুলো বই পড়া হয়েছে আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহর অনুগ্রহ ছাড়া তা সম্ভব ছিল না।

আল্লাহ যেন উক্ত পড়াগুলো মনে রাখার ও আমল করার তাওফিক দান করেন। প্রথমে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, এবছর আমার পড়া সকল বই থেকে ৫টি বই নির্ধারণ করে খানিকটা লিখবো।

কিন্তু বই বাছাই করতে গিয়ে ৫ এ সীমাবদ্ধ রাখতে পারি নি। ১০টা বই নির্ধারণ করতে হলো। সিরিয়াল অনুযায়ী তা নিয়ে খানিকটা আলোকপাত করছি।

এই লেখায় যা যা থাকছে :

১ম বইয়ের নাম, অবাধ্যতার ইতিহাস লেখক, ডা. শামসুল আরেফীন

এটাকে একদম কমপ্লিট প্যাকেজ বলা যায়। আরো সহজে বললে “একের ভেতর সব” বাক্যটিও ব্যবহার করা যায়।

বইটাতে বর্তমান সময়ের গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু বিষয় আনা হয়েছে। যেখানে আছে, খ্রিষ্টধর্মের পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস।

এরপর চার্চের অনাচার-অত্যাচার। রাজ্য ও চার্চের দ্বন্দ্ব। শেষ পর্যন্ত রেনেসাঁ, রিফর্মেশন, এনলাইটেনমেন্ট নিয়ে আলোকপাত।

পাশাপাশি মুসলিম বিশ্ব এই সময়টাতে কেমন ছিল, তাদের কি ছিল আর কি ছিল না, সেটাও উল্লেখ করা হয়েছে।

মুসলমানরা কেন তাদের ধর্ম ও শরীয়াহ শাসন থেকে দূরে সরে গেল? কি কি ভুল ছিল? আধুনিকতার আসল উৎস কি?

এসব নিয়েও বিস্তারিত আলোকপাত করা হয়েছে। শেষে গুরুত্বপূর্ণ দুইটা বিষয় আনা হয়েছে। এক, ধর্মনিরক্ষেতা বা সেক্যুলারিজম।

কিভাবে এটি রাষ্ট্র, ক্যারিয়ার, পরিবার ও নিজের মধ্যে জায়গা করে নিয়েছে? পুঁজিবাদ, বক্রতা, অশ্লীলতা কিভাবে ছড়িয়েছে?

আর পাশ্চাত্য সমাজে ইসলাম কিভাবে আছে? এই বিষয়গুলো। দুই, ঈমান-কুফরের দ্বন্দ্ব। এর সীমারেখা ও জরুরিয়্যত নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।

বলতে দ্বিধা নেই, বইটা ছিল এবছর আমার পড়া শ্রেষ্ঠ বই। এটা অবশ্যই প্রত্যেক বুঝমান মুসলিমের পাঠ করা উচিৎ।

২য় বইয়ের নাম, শ্বেত সন্ত্রাসের এই সময় লেখক, সাঈদ মুহাম্মাদ আবরার

বইটা যতই পড়েছি, ততই হৃদয় কেঁদে উঠেছে। হাত ‍মুষ্টিবদ্ধ হয়ে গিয়েছে। কল্পনায় হোঁচট খেয়েছি। অনেকগুলো প্রবন্ধ এতে যুক্ত করা হয়েছে।

বিভিন্ন বিষয় লিপিবদ্ধ এতে। আফগানিস্তানে কুফফারদের আগ্রাসন ও লোলুপ দৃষ্টি, ভারতবর্ষে মুসলমানদের পরাধীনতা, ফিলিস্তিনি সেই আবদ্ধ ভূমি!

উম্মাহ যা নিয়ে এখনো গাফেল, বাস্তুচ্যুত মানুষদের কষ্ট, আরব বিপ্লবের লেলিহান শিখা, মিসরের উত্থান-পতন, পশ্চিমা ও গাদ্দাফির মধ্যে পার্থক্যের সীমানা কি, সিরিয়া, তিউনিশিয়া, লিবিয়া, ইয়েমেন, মোরিতানিয়া, সোমালিয়া ইত্যাদি বিষয়ক আলোচনা উঠে এসেছে বইটির পাতায় পাতায়।

পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদ ও কুফফারদের নির্যাতনের ইতিহাস পড়তে গিয়ে হৃদয় বিগলিত হতে বাধ্য। অনেক কিছু রয়েছে লোকচক্ষুর অন্তরালে।

হায়! তারাও তো মুসলিম। তাহলে কেন আমরা তাদের পাশে নেই? এই আক্ষেপ আপনাকে বয়ে বেড়াতে হবে আজীবন। হৃদয়ের মধ্যে দাউ দাউ করে জ্বলবে লেলিহান অগ্নিশিখা।

আপনাদের কি মনে আছে আয়লান কুর্দির কথা? সমুদ্রের পাশে পড়ে থাকা নিথর দেহটি। তারাও বাঁচতে চেয়েছিল।

ষড়যন্ত্রের বলি সেই অধিকার কেড়ে নিয়েছে বহু আগেই। কুফফার রাষ্ট্রগুলো প্রতিনিয়্যত বাড়াচ্ছে মারণাস্ত্রের মজুদ। কেন এত ভয় তাদের?

বিগত ১০০ বছরে এই অস্ত্র কাদের উপকারে এসেছে, কল্পনা করেছি কি আমরা? আমেরিকা কেন তাদের প্রতিরক্ষায় বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ব্যয় করে?

প্রতিনিয়্যত কেন গাণিতিক হারে বাড়াচ্ছে অস্ত্রের মজুদ। জানা আছে কি? সভ্য আমেরিকার অসভ্য ইতিহাস কতটুকু আমরা জানি?

চকচকে ঝকমকে আলীশান বাড়ির আড়ালে মাথা উঁচু করে আছে গুয়ান্তানামো, বাগরাম, আবু গারিব কারাগার। নষ্ট এই সভ্যতা থেকে আমরা কি শিখি? আমাদের প্রজন্ম কি শিখে? ভেবেছি কি কখনো?

আপনি সত্য জানতে চান? ওরা আপনাকে তা কখনোই দিবে না। ইলেক্ট্রিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার মাধ্যমে শত শত প্রোপাগান্ডার মধ্যে সত্য আড়াল হয়ে যাবে।

কোনো কোনো ক্ষেত্রে লীন হয়ে যাবে। চারিদিকে দেখতে পাবেন চকচকে চেহারার আড়ালে কদার্য এক শাকচুন্নির চেহারা। তাড়া করছে প্রতিনিয়্যত। তাদের বলয় থেকে বের হবেন? অলীক কল্পনা হতে পারে। মঞ্জিল বহু দূর!

৩য় বইয়ের নাম, ইতিহাসের আয়নায় বর্তমান বিশ্বব্যবস্থা লেখক, হেদায়াতুল্লাহ মেহমান্দ

আতশ কাঁচ চিনেন? তা দিয়ে কি করে? ছোট জিনিষকে বড় করে দেখা হয়। সত্যকে জানার চেষ্টা করা হয়। এই বইটি অনেকটা তেমনই।

পুরো বইটা দুইভাগে বিভক্ত। এক, ওল্ড ওয়ার্ল্ড অর্ডার। দুই, নিউ ওয়ার্ল্ড অর্ডার। বাক্যগুলো খানিকটা পরিচিত লাগার কথা।

এই বইতে পাবেন বাক্যগুলোর আসল হাকিকত ও উদ্দেশ্য। পুরাতন বিশ্বব্যবস্থার সূচনা ছিল ইহুদিদের হাত ধরে।

তাদের ইতিহাস তো অনেক পড়া হয় আমাদের। নবী মুসা, দাউদ, সুলায়মান আ. সহ শত শত ও হাজার হাজার নবী তাদের নিকট আল্লাহ পাঠিয়েছিলেন।

অবাধ্যতা কাকে বলে, তা কত প্রকার ও কি কি, এসব জানার জন্য বনী ইসরাইলের ইতিহাস পড়া যেতে পারে।

তবে এই ইহুদিরা কিন্তু আজীবন এক চিন্তায় স্থির থাকে নি। ধূর্ত জাতি হিসেবে পরিচিত এই ইহুদিরা নিজেদের পোশাকি নাম ঠিক রেখে খোলস পরিবর্তন করেছে বারবার।

পৃথিবীর বড় বড় ফিতনার পেছনে হাত ছিল এই ইহুদিদের। ওদের রয়েছে গোপন এজেন্ডা। গোপন মিশন এবং প্রকাশ্য চক্রান্ত।

নতুন বিশ্বব্যবস্থার সাথে খ্রিষ্টধর্মের যোগসুত্র রয়েছে অনেক। খ্রিষ্টধর্মের বিশ্বাস, ইউরোপের অন্ধকার যুগ, মধ্যযুগ, রেনেসাঁ, এনলাইটেনমেন্টসহ বহু বিষয় এখানে যোগসুত্র হিসেবে আছে।

তবে নিউ ওয়ার্ল্ড অর্ডারের মূল এজেন্ডা শুরু হয় ফরাসি বিপ্লবের সময় থেকে। কারা ঘটিয়েছিল এই বিপ্লব? পেছনে কারা ইন্দন যুগিয়েছিল? কারা আসলে উপকৃত হয়েছিল?

এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাবেন এই বইতে। পরবর্তীতে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, রাশিয়া-আমেরিকা স্নায়ুযুদ্ধ ও বর্তমান অবস্থার সাথে এর যোগসুত্রও খুঁজে পাবেন এর পাতায় পাতায়।

ভারতবর্ষের ইতিহাসের এমন কিছু তথ্যও সামনে চলে আসবে, যা হয়তো আপনি জানতেন না।

৪র্থ বইয়ের নাম, মুসলমানদের পতনে বিশ্ব কী হারালো লেখক, সাইয়্যেদ আবুল হাসান আলী নদভী রহ.

উসমানীয় খেলাফত ১৯২৩ সালে ধ্বংসের পর মুসলিমবিশ্ব মারাত্মক অধঃপতনের মুখে পতিত হলো। ভুলে গেল নিজেদের সোনালী গৌরব।

এই সময়ের বছরখানেক পর ১৯৪৭ সালে আলী নদভী রহ. মক্কা মদীনা সফর করেন। কাছ থেকে অবলোকন করেন মুসলিমবিশ্বের কেন্দ্রের অবস্থা।

এরপরই তিনি এই বইটি লিখেন। আরববিশ্বের বিখ্যাত মনিষী সাইয়্যেদ কুতুব রহ. বইটির ভূমিকা লিখে দিয়েছিলেন। ইখওয়ানুল মুসলিমীনের তৎকালীন সময়ের সিলেবাসের অন্তর্ভুক্ত ছিল বইটি।

বইটি অনেকগুলো অধ্যায়ে বিভক্ত। প্রথমেই আনা হয়েছে নবীজি সা. এর আবির্ভাবের পূর্বে পৃথিবীর অবস্থা কেমন ছিল।

বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে এটি নিয়ে। পরে একে একে আনা হয়েছে নবীজির পরবর্তী পৃথিবীর অবস্থা, মুসলমানদের নেতৃত্বের যুগে পৃথিবী, মুসলমানদের পতনের যুগে পৃথিবী ইত্যাদি।

শেষের অধ্যায়গুলোতে আরো গুরুত্বপূর্ণ কিছু আনা হয়েছে। যেমন পাশ্চাত্য জগৎ বিশ্বনেতৃত্বের আসনে আসার ফলে কি হলো, এতে আমাদের কি ক্ষতি হলো, মুসলিমবিশ্ব এখন কেমন আছে, আরববিশ্বের দায়িত্ব কি ইত্যাদি।

বইটা এককথায় আমাদের উত্থান-পতনের পূর্ণাঙ্গ প্যাকেজ ধরা যায়। ২০১৮ সালে এই বইটির প্রায় অর্ধেক পড়েছিলাম আমি।

তখন এতটা বুঝতে পারি নি। বেশ কিছু বিষয় মাথার উপর দিয়ে গিয়েছিল। পরবর্তীতে মুসলিম ইতিহাস নিয়ে ব্যাপক পড়াশোনা করার পর এবার পূর্ণাঙ্গ বইটি পড়ে কিছুটা হলেও অনুধাবন করতে পেরেছি।

আলী নদবী রহ. এর প্রতিটা বই গুরুত্বপূর্ণ। সচেতন পাঠকদের এই ইলমি সমুদ্রে একবার হলেও ডুব দেওয়া উচিৎ।

৫ম বইয়ের নাম, ইসলামে দাসদাসী ব্যবস্থা লেখক, ডা. শামসুল আরেফীন

দাসপ্রথা। শব্দটি শুনলে আমাদের মাথায় কি আসে? অসহায় মানুষদের ধরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তাদেরকে পশুর মতো খাটানো হচ্ছে।

নির্যাতন করা হচ্ছে। মেরে ফেলে দেওয়া হচ্ছে। তাদের জীবন মূল্যহীন। কেউ তাদের পরোয়া করছে না। – এই তো?

অথচ এই পুরো চিত্রটি হলো ইউরোপ-আমেরিকার বানানো দাসপ্রথার চিত্র। তারা আফ্রিকানদের ধরে নিয়ে এভাবে বিনামূল্যে ব্যবহার করতো।

একটা আতঙ্ক ছড়িয়ে দিয়েছিল পৃথিবীতে। বিপরীতে মুসলিম ইতিহাসে দাসপ্রথা ছিল পুরোই ভিন্ন। আপনি মাদ্রাসায় পড়ে থাকলে বিভিন্ন সময়ে দাস-দাসীর মাসআলা পড়েছেন অথবা শুনেছেন।

অধিকাংশ সময়েই শিক্ষকরা তা বাদ দিয়ে যান। কারণ, বর্তমানে এর প্রচলন নেই। আমাদের মাথার মধ্যেও সেই ইউরোপীয়ান দাসত্বের চিত্র গেঁথে আছে।

এই বইটি আপনাকে সেই নিষ্ঠুর চিত্রের বিপরীতে তুলে ধরবে মুসলিম ইতিহাসের দাসত্বের সোনালী ইতিহাস।

আশ্চর্য লাগছে শুনতে? তবে একটু ভাবুন। মিশরে মামলুক সালতানাত ছিল দাস বংশ। তারা কিভাবে শাসক হলো? ভারতবর্ষে সুলতানি আমলে দাস বংশ শাসন করেছে, তারা কিভাবে শাসক হলো? উসমানীয় আমলে অনেক মন্ত্রী ছিল দাস। তারা কিভাবে রাষ্ট্রীয় পদে গেল? ইউরোপে এনলাইটেনমেন্টের পর এই দাসপ্রথা বন্ধ করে সূচনা করলো শ্রমিক নির্ধারণ। এমনকি আমেরিকার জাতির পিতাদের বড় বড় দাস ব্যবসা ছিল। তারা কেন একটা সময় এই লাভের ব্যবসা বন্ধ করে ভালো মানুষ হয়ে গেল? কোনো নৈতিকতার বলে কি হয়েছিল? আপনাকে বইটির পাতায় পাতায় দেখিয়ে দিবে সেই ইতিহাস।

ইসলাম কেন এই দাসপ্রথা চালু রেখেছে? উদ্দেশ্য কি? ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি কি? লক্ষ কি? বিস্তারিত আকারে তুলে ধরা হয়েছে বইটিতে।

জেনেভা কনভেনশন কি আসলেই কার্যকর নাকি তা স্রেফ ধোঁকা, ভিয়েতনাম যুদ্ধ ও আমেরিকার বর্তমানে মুসলিমবিশ্বে চালানো আগ্রাসনে এই জেনেভা কনভেনশনের ভূমিকা কি?

যুদ্ধকালীন সময়ে এই সৈনিক, মেজর, সরকারের মনস্তত্ব কেমন থাকে, বিজয়ী সেনাদের মানসিক অবস্থা আর হেরে যাওয়া সেনাদের মানসিক অবস্থা কেমন থাকে, সেটাও আলোকপাত করা হয়েছে বইটিতে।

আমরা যেই দাসব্যবস্থাকে চিনি, সেটা নিয়ে বিস্তর কথা বলা হয়েছে।

ইসলামের সফলতা কোথায়, মানবাধিকার ও আধুনিক দাসপ্রথার বুলি, যুদ্ধে নারী বন্দীর সাথে ব্যবহার ও সবচেয়ে আলোচিত দাসীদের সাথে সহবাসের বৈধতা নিয়েও এখানে পূর্ণাঙ্গ আলোচনা রয়েছে। যা পড়ে আপনার আর প্রশ্ন তোলার কোনো সুযোগ থাকবে না।

আল্লাহর বিধানের সামনে মাথা অবনত হয়ে যাবে সম্মানার্থেই।

৬ষ্ঠ বইয়ের নাম, অবক্ষয়কাল লেখক, আসিফ আদনান

আধুনিকতা পৃথিবীকে যতটুকু উপহার দিয়েছে, তার থেকে বেশি তারা অপকার করেছে। তারা সভ্যতার চূড়ান্ত সফলতা পেয়েও প্রতিনিয়্যত নেমে যাচ্ছে আইয়ামে জাহিলিয়্যাতের অতল গহ্বরে।

হযরত লুত আ. এর জাতিকে যেই কারণে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছিল, সেই একই কর্মে লিপ্ত হওয়া পুনরায় শুরু করেছে এই পৃথিবী। তাও কি কদাকার নামে?

না। তারা এটাকে অধিকারের নামে, সভ্য হওয়ার নামে গ্রহণ করেছে। সমকামিতা বা ট্রান্সজেন্ডার নিয়ে বাংলায় প্রথম ও পূর্ণাঙ্গ গবেষণালব্ধ বই হলো অবক্ষয়কাল।

আজকের পৃথিবীতে কারা সমকামিতার সূচনা ঘটিয়েছে পুনরায়? তাদের আদি-অন্ত নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে বইটির পাতায়।

তারা পৃথিবীর কি কি অপকার করেছে, কি কি রোগ চাপিয়ে দিয়েছে, সেটাও সবিস্তারে বর্ণনা করা হয়েছে।

নারীবাদীদের সাথে সমকামীদের মিল কোথায়, লেখক তা দেখিয়েছেন। বাংলাদেশে কিভাবে এই সমকামিতা ছড়িয়ে পড়েছে, ট্রান্সজেন্ডার ছড়িয়েছে, এই এজেন্ডা বাস্তবায়নে কারা সহযোগী, এ নিয়ে বিস্তারিত বলা হয়েছে।

সর্বশেষে আনা হয়েছে ইসলামের সাথে এই কুরুচির দ্বন্দ্ব কি, তা। তাদের প্রশ্ন ও আমাদের উত্তরগুলো নিয়েও বলা হয়েছে পরিপূর্ণ।

৭ম বইয়ের নাম, কাশগড় কতো না অশ্রুজল লেখক, মুহাম্মাদ এনামুল হোসাইন

ভুলে যাওয়া কিছু জনপদের নাম জানেন কি? যেই ভূমিতে রয়েছে আপনার ভাই-বোনেরা। অথচ তা আপনি জানেনই না।

তেমন একটি ভূমি হলো, চীনের জিংজিয়াং প্রদেশ। মুসলিমবিশ্বে এই ভূমি পরিচিত পূর্ব তুর্কিস্তান বা উইঘুর নামে।

এর বিখ্যাত শহর কাশগড়ে জন্মেছেন অনেক মনিষী। এককালে এই ভূমি ছিল সম্পূর্ণ স্বাধীন একটি মুসলিম জনপদ।

অথচ আজ তা হায়েনা চীনের দখলে। চীনের মেট ১৭% ভূমি এটি। তাই চীন এটিকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে বদ্ধ প্রতিকর।

ফিলিস্তিন, সিরিয়া, ইয়ামেন, ভারত, আরাকান ও আফ্রিকার মুসলমানদের অসহায়ত্বের কথা আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পারি।

কিন্তু উইঘুর মুসলমানদের লাইভ সংবাদ আপনি কখনোই জানতে পারবেন না। চীন এমনভাবে তাদেরকে নির্যাতন করছে, তা সভ্য পৃথিবীর বিস্মৃতির অন্তরালে রয়েছে।

যখন তখন চীনা সৈন্যরা উইঘুর মুসলমানদের ধরে নিয়ে যাচ্ছে। কোথায় নিচ্ছে, কেউ জানে না। তাদেরকে রি-এডুকেশন ক্যাম্পে নেওয়ার নামে নির্যাতন করে অধিকাংশ সময়েই মেরে ফেলা হয়।

গুটিকয়েক ভাগ্যবান ব্যক্তি এখান থেকে পালিয়ে বা ছাড়া পেয়ে এসেছেন।

এমনকি কোনো উইঘুর যদি ধর্মীয় শিক্ষা অর্জনের চেষ্টা করে অথবা বিদেশে অবস্থানরত পরিবারের সাথেও যোগাযোগের চেষ্টা করে, মূহুর্তেই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

উইঘুরের রোডে-ঘাটে, গলিতে ও সড়কে, এমনকি ঘরের মধ্যেও সি সি ক্যামেরা দিয়ে প্রতিনিয়্যত নজরদারি করা হয় মুসলমানদের।

সন্দেহজনক কিছু দেখলেই সাথে সাথে গুম। চীন বর্তমানে বহির্বিশ্বে অর্গান ট্রান্সপ্ল্যান্ট করার জন্য কারাবন্দী উইঘুরদের অঙ্গ বিক্রি করছে।

এক সমীক্ষা মতে, চীন বছরে ২০ হাজার অর্গান ট্রান্সপ্ল্যান্ট করে। যা বিশ্বের শীর্ষে অবস্থান করছে। চীনের এই কাজে কি কোনো মুসলিম দেশগুলো বাধা দিচ্ছে?

জাতিগতভাবে তুর্কিরা হলো উইঘুরদের একই রক্তের ভাই। তারা কি কিছু করছে? বা অন্য মুসলিম দেশগুলো?

অথচ মধ্যপ্রচ্যের মুসলিম দেশগুলোর সাথেই চীনের সবচেয়ে বেশি ব্যবসায়িক যোগাযোগ। ইসলামবিদ্বেষ চীনের পরতে পরতে ছড়িয়ে আছে। যা অকল্পনীয়!

৮ম বইয়ের নাম, সংশয়বাদীলেখক, ড্যানিয়েল হাকিকাতজু

বইটা হলো আধুনিকতা নিয়ে জানার জন্য একটা কমপ্লিট প্যাকেজ। এতে বেশ কিছু অধ্যায় রয়েছে। প্রতিটা অধ্যায় আলাদা ও স্বতন্ত্র।

যেমন নাস্তিকতা, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা, সাম্য মুক্তি ও স্বাধীনতা, নারীবাদ, হিজাব, বিজ্ঞানবাদ, লিবারেলিজম, নৈতিকতা ও প্রগ্রতিবাদ, মডার্নিটি, সংস্কারপন্থী ও মডার্নিস্ট মুসলিম, যৌনতা ও যিনা ইত্যাদি।

প্রতিটা অধ্যায়ের অধীনে আছে বেশ অনেকগুলো আর্টিকেল। আপনার চিন্তার দরজায় বারবার আঘাত করবে লেখাগুলো।

অন্তর থেকে দূর হয়ে যাবে সমস্ত সংশয়। দাঈ আসিফ আদনান ভাইয়ের অনুবাদে বইটা আরো জীবন্ত হয়ে উঠেছে। বইটা নিয়ে বিস্তারিত রিভিউ লেখার কারণে এখানে আর বড় করছি না।

৯ম বইয়ের নাম, পার্মানেন্ট রেকর্ডলেখক, এডওয়ার্ড স্নোডেন

একটা সময় অনলাইন জগতে আলোচিত নাম ছিল এডওয়ার্ড স্নোডেন। বিশেষ করে যারা সাইবার সিরিকউরিটি নিয়ে চিন্তিত, তারা তো অবশ্যই তাকে চিনে থাকবেন।

স্নোডেন কাজ করেছেন সিআইএ এর সাথে। তৈরি করেছিলেন অনেক প্রকল্প। যার মধ্যে বিখ্যাত ছিল প্রিজম নামক এক নজরদারি প্রকল্প।

২০১৩ সালে স্নোডেন গোপনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ত্যাগ করেন। তবে যাওয়ার আগে সিআইএ এর গুরুত্বপূর্ণ কিছু নথি এবং গবেষণা নিজের নিকট গোপনে রেখে দেন।

পরবর্তীতে সাংবাদিকদের নিকট তা হস্তান্তর করেন এবং প্রকাশ করে দেন যুক্তরাষ্ট্রের মোড়লগিরি।

এডওয়ার্ড স্নোডেন অবশ্য আমেরিকার সকল গোপনীয়তা প্রকাশ করেন নি। অল্প কয়েকটা প্রকাশ করেছেন।

এতেই হইচই পড়ে যায় পুরো বিশ্বে। যুক্তরাষ্ট্র তাকে মোস্ট ওয়ান্টেড ব্যক্তিদের তালিকায় নিয়ে আসে।

এডওয়ার্ড স্নোডেনের ফাঁস করা প্রিজম কর্মসূচির আওতায় ফেসবুক, গুগল, মাইক্রোসফট, ইয়াহু, ইউটিউব এবং অ্যাপলসহ বিভিন্ন ইন্টারনেট জায়ান্ট প্রতিষ্ঠানকে না জানিয়েই তাদের সার্ভারে সরাসরি প্রবেশ করে তথ্য সংগ্রহ করে আমেরিকার ন্যাশনাল সিকিউরিটি এজেন্সি (এনএসআই) ও ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই) যা ছিল মারাত্মক এবং অসাংবিধানিক কাজ।

অন্য দশজন আমেরিকানদের মতোই স্নোডেন ৯/১১ এর পর ওয়ার অর টেররের আওতায় ইরাকের যুদ্ধে অংশগ্রহণের চেষ্টা করেছিলেন।

কিন্তু ট্রেনিং চলাকালীন পা ভেঙ্গে গেলে পরবর্তীতে সেনাবাহিনী থেকে অব্যাহতি নেন স্নোডেন।

এরপর বিভিন্ন কোম্পানীতে ও দেশের সরকারি বাহিনীতে সিস্টেম অ্যাডমিনিস্ট্রেটর হিসেবে কাজ করেন।

স্নোডেনের লিখিত এই বইটি হলো তার আত্মজীবনী। এতে জানতে পারবেন মোড়ল বিশ্বের গোপনীয়তার রহস্য কি।

আমাদের কি অনলাইনে আদৌ কোনো নিরাপত্তা আছে কিনা। বইটা স্নোডেন লিখে ২০১৯ সালে। এরপরই সারাবিশ্বে এই প্রসিদ্ধ হয়ে যায়।

১০ম বইয়ের নাম, হামাস স্ট্রাটেজি। লেখক, খালেদ হারুব ও আযযাম তামিমি

মুসলিমবিশ্বের বর্তমানে গুরুত্বপূর্ণ একটি দল হলো, হারাকাতুল ‍মুকাওয়ামাতুল ইসলামিয়্যা ফি ফিলিস্তিন তথা হামাস।

১৯৯৩ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে প্রতিষ্ঠানটি এখনো টিকে আছে স্ব-মহিমায়। দলটি এত ঝড় ঝাপটার পর কিভাবে টিকে আছে, তা অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগে।

এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে এই বইতে। এতে হামাসের নেতৃত্ব, কাঠামো, সামারিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক স্ট্রাটেজি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

পূর্বে এই বই সম্পর্কে বিস্তারিত রিভিউ লেখায় এখানে নতুন করে আর লিখছি না।

এছাড়াও আরো কিছু বই

উপরের দশটা বই ছাড়াও আরো অনেক বই পড়া হয়েছে ২০২৪ সালে। সেগুলোও গুরুত্বপূর্ণ ছিল।

যার মধ্যে সমাজ বিপ্লবের রূপরেখা, চিন্তাপরাধ, ইসলামবিদ্বেষ ও উগ্র সেক্যুলারিজম, সালাফদের জীবনকথা, মরুশার্দুল, রেশমি রুমাল আন্দোলন, ত্রানকর্মীর স্মৃতিকথা, দ্য আর্ট অব ওয়ার ইত্যাদি।

বই পড়ুন। সুন্দর জীবন গড়ে তুলুন!

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top