মুসলমানদের পতনে বিশ্ব কী হারালো

বিখ্যাত ভারতীয় ইসলামিক ব্যক্তিত্ব ও যুগের অন্যতম মুজাদ্দিদ সাইয়্যেদ আবুল হাসান আলী নদভী রহ. এর মুসলমানদের পতনে বিশ্ব কী হারালো বইটি আরববিশ্বসহ এশিয়া, ইউরোপের বহু দেশে বেস্টসেলার বইয়ের মধ্যে অন্যতম।

বইটি আলী নদভী রহ. লিখেছিলেন আরবী ভাষায়। যদিও তিনি ছিলেন ভারতীয়। স্থান, কাল-পাত্র অনুযায়ী উচিৎ ছিল, তা উর্দূতে লেখা।

কিন্তু আরবিতে তিনি এজন্যই লিখেছেন, বইটির বিষয়বস্তু আরবদের সাথে অধিক সম্পৃক্ত।

১৯২৩ সালে মুসলিম খেলাফত ধ্বংস হওয়ার পর মুসলমানরা অভিবাবকহারা হয়ে গিয়েছিল। সীমানা ও কাঁটাতাঁরের বেঁড়া মনুষ্যত্ব ভুলিয়ে দিয়েছিল।

পরবর্তীতে লেখক আলী নদভী রহ. ১৯৪৭ সালে আরবে সফর করে তাদের হাল হাকিকত একেবারে কাছ থেকে অবলোকন করেন।

ইসলামপূর্ব মক্কার অবস্থা, পরবর্তী অবস্থা, নবীজির আগমণ, ইসলাম প্রচার এই সকল কিছু একই সুত্রে গেঁথে উম্মাহকে উজ্জীবিত করার প্রয়াস চালান লেখক।

আরবিতে এই বইটি লেখার পর সাইয়্যেদ আলী নদভী রহ. চাচ্ছিলেন, মিসরের কোনো অভিজাত মাকতাবা থেকে এটি প্রকাশিত হোক।

আরববিশ্বের জন্য লেখা এই বইটি আরবদের মাকতাবা থেকে প্রকাশিত হলে এই গ্রহণযোগ্যতা কেমন পাবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

সেই সময়ে বইটি প্রকাশের আগে এটির জন্য একটি ভূমিকা প্রস্তুত করা একান্ত প্রয়োজন ছিল।

প্রথমে ড. আহমাদ আমিনের মাধ্যমে একটি ভূমিকা লেখা হলেও এটি তেমন চেতনা জাগানিয়া ছিল না।

পরবর্তীতে এই বইটি ইখওয়ানুল মুসলিমীন বা মুসলিম ব্রাদারহুডের পাঠ্যতালিকার অন্তর্ভূক্ত করা হলে সাইয়্যেদ কুতুব রহ. এর একটি ভূমিকা লিখেন।

যা ছিল, এই পুরো বইটির একটি সামারি বা সংক্ষিপ্ত সংকলন। এই লেখাটিতে উঠে এসেছে বইয়ের সকল আহবান ও মেসেজ।

বইটির অধ্যায় সম্পর্কে ধারণা

আলী নদভী রহ. লিখিত মুসলমানদের পতনে বিশ্ব কী হারালো বইটিকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়।

এই প্রতিটি ভাগে আলাদা আলাদাভাবে আলোচনা করা হয়েছে।

নবীজি সা. এর আগমণের পূর্বে বিশ্বের অবস্থা ও আরবের অবস্থা কেমন ছিল, এই বিষয়ে প্রথমে সংক্ষিপ্ত ও প্রয়োজনীয় আলোচনা করেছেন।

দ্বিতীয়তে আলোচনা করা হয়, নবীজি সা. এর যুগ নিয়ে। কিভাবে ইসলাম প্রচার হলো, এত মানুষের নিকট কিভাবে গ্রহণযোগ্যতা পেল, কাফেরদের ষড়যন্ত্র ও মুসলমানদের দৃঢ়তা এই অধ্যায়ে বর্ণনা করা হয়েছে।

তৃতীয় ভাগে মুসলমানদের নেতৃত্বের যুগ নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে সংক্ষিপ্ত আকারে। এই মুসলমানদের কি না ছিল! পূর্ব থেকে পশ্চিমের ভূমির মালিক ও রক্ষক ছিল তারা।

খেলাফতের সূর্য মধ্য আকাশে আলো ছড়াচ্ছিল। মুসলিম শাসনের অকল্পনীয় পরিবর্তন অবলোকন করছিল মানুষ। দলে দলে তারা ইসলামে প্রবেশ করছিল।

ইসলাম ইউরোপ থেকে চীন, আফ্রিকা থেকে ইন্দোনেশিয়াতে ছড়িয়ে পড়ছিল। সোনালী যুগের মুসলিম শাসকদের ন্যায়পরায়ণতার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়লো বিশ্বময়।

জ্ঞান-বিজ্ঞানে মুসলমানরা তখন বিশ্বের সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছে গিয়েছিল। অত্যাধুনিক সমরাস্ত্র, আধুনিক কারুকার্য ও জীবনকে সহজ করে দেওয়ার জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছিল মুসলমানরা।

চতুর্থ অধ্যায়ে মুসলমানদের পতনের যুগ নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। কেন পতন হলো এই উম্মাহর। কিসের অভাব ছিল তাদের? কেন দ্বন্দ্ব বেড়ে চললো এবং আল্লাহর হুকুম ছেড়ে কেন পার্থিব স্রোতে গাঁ ভাসিয়েছিল তারা।

শেষের অধ্যায়গুলোতে পশ্চিমাদের নেতৃত্বে কেড়ে নেওয়া, তাদের উত্থান, বিজ্ঞানচর্চায় তাদের অগ্রগামিতা এবং পশ্চিমাদের শাসনকালে বিশ্বের ক্ষয়-ক্ষতি সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।

একেবারে শেষের দিকে বর্তমান মুসলিমবিশ্ব ও আরবদের নেতৃত্ব নিয়ে আলোচনা করেছেন সাইয়্যেদ আবুল হাসান আল নদভী রহ.।

কেন মুসলমানদের পতনে বিশ্ব কী হারালো বইটি পড়া উচিৎ বলে মনে করি

একজন মুসলমানের ইসলামের বেসিক ধারণার পরে প্রথমত সীরাত সম্পর্কে ধারণা থাকা দরকার।

এরপর তার নবীদের ঘটনাবলী সম্পর্কে ও পূর্বেরকার বিভিন্ন জাতি সম্পর্কে জানা উচিৎ।

এই বিষয়গুলো জানা হলে এরপর মুসলিম ইতিহাস অধ্যায়ন শুরু করবে।

কারণ, মুসলিম ইতিহাস জানার দ্বারাই একজন মানুষ তার অতীত সম্পর্কে জানতে পারবে।

কিভাবে মুসলমানদের উত্থান ঘটেছিল, কেন পতন হয়েছিল, কারা পথভ্রষ্ট ছিল, কি কারণে সমাজে অধঃপতন দেখা দিয়েছিল, এই সকল জিনিষ তার জানা থাকা দরকার।

এরপর আলী নদভী রহ. এর এই বইটি জ্ঞানের সীমানাকে আরো এক ধাপ অগ্রসর করবে। এখানে এক মলাটেই শুরু থেকে শেষ, কারণ ও পর্যালোচনা রয়েছে।

আমাদেরকে চিন্তা করতে শেখাবে এই বই। হা-হুতাশ করা এই জাতি উত্তরণের পথ খুঁজে পাবে।

মুসলমানদের পতনে বিশ্ব কী হারালো বইটির দুইটা বাংলা অনুবাদ আছে।

একটি আবু সাঈদ মুহাম্মদ ওমর আলী রহ. কর্তৃক অনূদিত।

অন্যটি আবু তাহের মেসবাহ হাফিঃ কর্তৃক অনূদিত। সেটির নাম মুসলিম উম্মাহর পতনে বিশ্বের কী ক্ষতি হলো!

উভয় অনুবাদই সুন্দর। আদিব হুজুর আবু তাহের মেসবাহ হাফিঃ এর বই যারা পড়েছেন, তারা জানেন হুজুরের লেখার ধরণ কেমন।

এই বইটিতেও তিনি কলমের মাধুর্যতা ফুঁটিয়ে তুলেছেন। আল্লাহ হুজুরকে নেক হায়াত দান করুন। আর ওমর আলী রহ. কে আল্লাহ মাফ করে দিন।

সর্বশেষে এই কামনা করি, সাইয়্যেদ আবুল হাসান আলী নদভী রহ. এর মতো চিন্তাশীল ব্যক্তি যেন পৃথিবীতে আরো আসেন। উম্মাহকে জাগ্রত করতে তাদের ভূমিকা চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।

বইটি সংগ্রহ করতে দেখুন অনলাইন শপ

লেখাটি শেয়ার করতে সর্ট লিংক কপি করুন

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top