আমরা শিক্ষাব্যবস্থায় কাদের অনুসরণ করি?

আমরা শিক্ষাব্যবস্থায় কাদের অনুসরণ করি? – একটি সমাজকে পরিবর্তনের জন্য শিক্ষা হলো মূল হাতিয়ার। প্রাচীনকাল থেকেই মানুষ শিক্ষা অর্জনের মাধ্যমে পৃথিবীকে আরো নতুনভাবে চিনেছে।

প্রাচীন লৌহযুগ থেকে শুরু করে বর্তমান পৃথিবী, শিক্ষার মাধ্যমেই মানুষ ধাপে ধাপে আস্তে আস্তে অগ্রসর হয়েছে।

একজন সন্তানের জীবনের প্রথম শিক্ষক হলো তার মা-বাবা। এরপর সে নিজের পরিবার থেকে শিখে। সমাজ থেকে শিখে। পরিবেশ থেকে শিখে।

আমরা এতটুকু শিক্ষালাভে সন্তুষ্ট না বিধায় এই শিশুকে আমরা বিদ্যালয়ে পাঠাই। যাতে সে বিদ্যার আলোয় আলোকিত হতে পারে।

তার সেই মক্তবে কায়দা হাতে দৌঁড়াদৌড়ি কিংবা প্লে, নার্সারিতে ছুটাছুটি যেন আগাম বার্তা দেয়, শিশুটি একদিন বড় হবে।

সে অনেক কিছু শিখবে। সে জানবে ভাষার ব্যবহার। জানবে কুরআন-হাদীসের জ্ঞান। জানবে গণিত, বিজ্ঞান, সমাজ, ইতিহাস, অলংকার শাস্ত্রের জ্ঞান।

তার শিক্ষার সুনির্দিষ্ট কারিকুলামই অগ্রিম ভবিষ্যদ্বানী করে দিবে যে, শিশুটি আগামী ১০/১২/১৫ বছর পর কি হবে? কতটুকু শিক্ষায় শিক্ষিত হবে?

পূর্বের যামানায় বিশেষ করে মুসলিম স্বর্ণযুগে দেখা যেত, তাদের শিক্ষার কারিকুলাম তখন আরো বড় ছিল। সে সময় জিহাদের জন্য প্রস্তুতি হিসেবে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের নির্দিষ্ট ঘন্টাও ছিল।

তৈরি হতো অনেক মুজাহিদ, মুজতাহিদ, মুফাসসির, মুহাক্কিক, মুদীর, মুহাফিজ ব্যক্তিবর্গ। তাদের শিক্ষাব্যবস্থা ছিল সম্পূর্ণ ধর্মীয় আলোকে সাজানো।

একটা শিশু ব্যবসা কিংবা কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত হোক, কিন্তু প্রথম ঘন্টায় তার শিখতে হতো আল্লাহ ও নবীজির প্রশংসামূলক ক্লাস কিংবা কুরআনের বিশেষ ক্লাস।

এর ফলে তার পরবর্তী ক্লাসগুলো হতো প্রাণবন্ত, আল্লাহর প্রতি আনুগত্য স্বরুপ।

যেই ছেলেটি বা মেয়েটি চিকিৎসাপেশায় শিক্ষালাভ করতো, তার প্রথম ঘন্টাটি শুরু হতো কুরআন মুখস্ত করে। নবীজির হাদীসের নববী অধ্যয়নের মাধ্যমে।

এর ফলে তার নিকট আসা রোগীরা ডাক্তারের কথা শুনে ও আল্লাহর প্রতি আত্মবিশ্বাসের কথা শুনে অর্ধেক সুস্থ হয়ে যেত।

স্বর্ণযুগের পরের শিক্ষাব্যবস্থা

সেই যুগ হারিয়ে গেছে। কাফেররা এমন শিক্ষাব্যবস্থাকে চক্রান্ত করে মুছে দিয়েছে।

তারা দেখেছে, উক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো শুধু বিদ্বান ব্যক্তিই তৈরি করতো না, পাশাপাশি তৈরি করতো যুগশ্রেষ্ঠ মুজাহিদ ও ফকিহ।

এর ফলে এই এক ব্যক্তিই কাফেরদের বিরুদ্ধে শিশাঠালা প্রাচীনের ন্যায় তাদের নাকানি চুবানি খাওয়াতো। উপমহাদেশে ইংরেজদের আক্রমণের পূর্বেও এমন শিক্ষাব্যবস্থার প্রচলন ছিল।

তাদের চলে যাওয়র পর ইংরেজরাই একটা শিক্ষানীতি প্রচলিত করে গেল। যাকে কয়েকটা ডিগ্রিতে ভাগ করে দিল।

শিক্ষার বিভিন্ন মান ও ক্রমিক ধারা নির্ধারণ করে গেল। আমরাও তখন তাদের দাসত্ব থেকে মুক্ত না হয়ে তাদের দেওয়া শিক্ষাব্যবস্থাকেই একমাত্র ভিত্তি ভেবে আঁকড়ে ধরেছি।

একজন মুসলিম শিশু সেই শিক্ষাই শিখবে, যা দুনিয়া ও আখেরাতে তাকে লাভবান করবে। সে ধর্মীয়ক্ষেত্রে পাণ্ডিত্ব অর্জন করবে।

যেটি হবে তার আখিরাতের পাথেয় ও দুনিয়ার জীবনে সকল সমস্যার সমাধান।

এর পাশাপাশি সে সমাজের খেদমত করার জন্য দুনিয়াবী বিভিন্ন লাইনে জ্ঞান অর্জন করবে।

সে ডাক্তার হবে, ইঞ্জিনিয়ার হবে, সমাজ বিজ্ঞানী হবে, পদার্থবিদ হবে, রসায়নবিদ হবে, জ্যোতির্বিদ হবে। তার দুনিয়াবি এসব খেদমতগুলো হবে হালালপন্থায় মানবজাতির কল্যানে।

তবেই তো তার এসব শিক্ষাও হয়ে যাবে ইবাদাতের অন্যতম মাধ্যম। বর্তমানে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাকে সংস্কারের নামে তৈরি করা হচ্ছে প্রাচ্যাত্যের গোলাম হিসেবে।

ধর্মীয় ও সামাজিক মূল্যবোধ উঠিয়ে দিয়ে তাদেরকে বানানো হচ্ছে ইসলাম বিদ্বেষী হিসেবে। ধর্মীয় সকল ধরনের শিক্ষা উঠিয়ে দেওয়া হয়েছে স্কুলগুলো থেকে।

কেউ যদি ধর্মীয় শিক্ষাগ্রহণ করতে চায়, তাহলে সে বাসায় কোনো হুজুর রেখে বা পার্শ্ববর্তী কোনো মক্তব থেকে খানিকটা শিক্ষালাভ করে। যা নিতান্তই অপ্রতুল।

দেশের মাটিতে শিক্ষাখাতে নতুন চক্রান্ত

বাংলাদেশের বর্তমান শিক্ষা কারিকুলাম নিয়ে অনেক অসন্তুষ্ট অভিবাবকরা। তারা তাদের সন্তানদের অধঃপতন দেখতে পাচ্ছে।

হতাশায় কোনো কোনো বাবা-মা কান্না পর্যন্ত করছে। চোখের সামনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে থেকেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে তাদের আদরের সন্তান।

যদি এমন সিলেবাস স্কুলগুলোতে থাকে তাহলে আগামী ১৫ বছর পর দেশে মুসলমানদের ঘরে জন্ম নিয়ে মুসলিম বিদ্বেষী হিসেবে আবির্ভূত হবে আমাদের সন্তানেরা।

জিহাদকে তো এখনই অনেকে জঙ্গীবাদের সাথে তুলনা করে।

তখন দেখা যাবে জিহাদের সাথে সাথে নামাজে যাওয়া, দাওয়াত ও তাবলীগকেও জঙ্গীবাদীমূলক কাজের সাথে তুলনা করবে তারা।

একজন গণ্যমান্য ব্যক্তি কিছুদিন একটি পডকাস্টে বলেছেন, বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা তৈরি করা হচ্ছে ফিনল্যান্ডের শিক্ষা কারিকুলামের আদলে।

ইউরোপীয়ান দেশের শিক্ষাব্যবস্থার আদলে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা তৈরি করলে আমরা উক্ত শিক্ষাব্যবস্থা থেকে ধর্মীয় কতুটুকু জ্ঞান পাওয়ার আশা রাখি?

ধর্ম বিদ্বেষীরা, নাস্তিকরা তো আপনাকে ও আপনার সন্তানকে ততটুকু শিক্ষাই শিক্ষা দিবে, যতটুকু অপ-শিক্ষার মাধ্যমে আপনি আল্লাহর সাথে বিদ্রোহে লিপ্ত হন।

আপনার দুনিয়া ও আখিরাত উভয়টা ধ্বংস করে দিচ্ছে তারা।

সময় থাকতে যদি আপনি সতর্ক না হোন তাহলে অদূর ভবিষ্যতে আপনার জন্য বড় বিপদ অপেক্ষা করছে।

পরীক্ষা সিস্টেম উঠিয়ে দেওয়ায় আস্তে আস্তে নতুন প্রজন্মরা ডিভাইস আসক্তি হবে।

অ্যাসাইনমেন্ট কতটুকু কার্যকর, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেদের জিজ্ঞাসা করলেই টের পাওয়া যায়।

এমন খারাপ পরিস্থিতিতে আপনার সন্তানকে কিংবা আপনার ভাই-বোনকে যদি সঠিক শিক্ষা দিতে চান তাহলে তাদেরকে কওমী মাদ্রাসায় ভর্তি করিয়ে দিন।

সাধারণ শিক্ষায় এখন যেহেতু ক্লাস 10 এর আগে কোনো বোর্ড পরীক্ষা নেই আর কওমী মাদ্রাসা বোর্ডের ৮ম শ্রেণী কিংবা 10 পর্যন্ত কারিকুলাম আছে।

সেখানে তাদেরকে পড়িয়ে জেনারেলে শুধু পরীক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা করতে পারেন।

এতে সে মাদ্রাসা পরিবেশে থেকে দুনিয়া ও আখিরাতে উভয়ক্ষেত্রেই লাভবান হবে ইনশাল্লাহ।

এছাড়াও অভিজ্ঞ স্থানীয় আলেমদের সাথে পরামর্শ করতে পারেন। তাদের মতামত অবশ্যই গ্রহণীয়। তাদের দেওয়া দিক-নির্দেশনাও মেনে চলতে পারি আমরা।

এখন সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার আমাদের। আমরা কি আমাদের সন্তানদের বা ভাই-বোনদের ধর্ম বিদ্বেষী শিক্ষালাভ করাবো নাকি কুরআন-সুন্নাহ মোতাবেক শিক্ষালাভ করাবো?

আমরা শিক্ষাব্যবস্থায় কাদের অনুসরণ করি, এমন প্রশ্নটা আমাদের প্রথমেই ভাবা ‍উচিৎ।

Scroll to Top