আল্লাহকে কেন ভুলে যাই আমরা

আল্লাহকে কেন ভুলে যাই আমরা – আল্লাহ আমাদের কত ভালোবাসেন। কত মুহাব্বত করেন। কত যত্ন করেন। এরপরও আমরা আল্লাহর নাফরমানিতে লিপ্ত।

আমাদেরকে বারবার বিভিন্ন মাধ্যমে তিনি সতর্কবার্তা পাঠান। এরপরও আমরা তা উপেক্ষা করে হারাম কাজে লিপ্ত হই।

অশ্লীল-অশালীন কাজে গা ভাসিয়ে দেই। মনে করি, হয়তো কোনো সমস্যা নেই। আসলে আমরা বর্তমানে আল্লাহকে ভয় করি না।

আমরা ভয় করি সি.সি. ক্যামেরাকে। ভয় করি পুলিশকে। ভয় করি বাবা-মাকে। লোকজনকে। কেউ আমার খারাপ কাজ দেখে ফেললে ভীত সন্ত্রস্ত হই।

কিন্তু আমরা নির্জনে থাকলে, লোকচক্ষুর আড়ালে থাকলে এই কথাটি ভুলে যাই যে, আল্লাহ আমাকে দেখছেন। ফেরেশতারা আমাকে দেখছেন।

আল্লাহর নির্ধারিত দুই কাঁধে থাকা দুই গোপন সি.সি. ক্যামেরা (ফেরেশতা) আমাকে দেখছে। তারা তো আমাকে খারাপ কাজে লিপ্ত হতে দেখে অভিশাপ দিচ্ছে।

অথচ আমরা কোনো ভ্রুক্ষেপও করছি না। যেভাবে ইচ্ছা সেভাবেই জীবন পরিচালনা করছি। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলেন,

یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اِنۡ تَتَّقُوا اللّٰهَ یَجۡعَلۡ لَّکُمۡ فُرۡقَانًا وَّ یُکَفِّرۡ عَنۡکُمۡ سَیِّاٰتِکُمۡ وَ یَغۡفِرۡ لَکُمۡ ؕ وَ اللّٰهُ ذُو الۡفَضۡلِ الۡعَظِیۡمِ

হে মুমিনগণ! তোমরা যদি আল্লাহকে ভয় কর তাহলে তিনি তোমাদেরকে ভাল ও মন্দের মধ্যে পার্থক্য করার শক্তি প্রদান করবেন, তোমাদের দোষ-ত্রুটি দূর করে দিবেন, তোমাদেরকে ক্ষমা করবেন, আল্লাহ বড়ই অনুগ্রহশীল। (সূরা আনফাল, আয়াত ২৯)

আমরা তো বর্তমানে আল্লাহকেই ভয় করি না। তাই তো আমরা খারাপ কাজ থেকে বের হতে পারি না। সর্বদা গুনাহে লিপ্ত থাকি।

যাপিত জীবনে আমরা মনে করি, হয়তো এভাবেই চললে আল্লাহ একদিন না একদিন মাফ করে দিবেন। ক্ষমার ব্যাপারে সবচেয়ে বেশি আশাবাদী ছিলেন সাহাবায়ে কেরামরা।

কিন্তু এরপরও তারা কোনোদিন খারাপ কাজে লিপ্ত হন নি। আল্লাহর ভয়ে তাদের অবস্থা এমন হতো, যেন তারা ভয়ঙ্কর কোনো দৃশ্য দেখেছে।

খলিফা হযরত আবু বকর রা. –যিনি জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত সাাহাবী- মাঝেমধ্যে শস্যক্ষেতে গিয়ে বলতেন, হায়! আমি যদি মানুষ না হয়ে এই শস্যদানা হতাম, তাহলে হয়তো কোনো জীব আমাকে খেয়ে ফেলতো। আমার কোনো হিসাব হতো না।

কেয়ামতের কথা যখন সাহাবীদের মধ্যে আলোচনা হতো তখন তাদের মধ্যে কান্নার রোল পড়ে যেত।

আর আমরা জাহান্নামের কথা হাজারবার শুনলেও অন্তরে কোনো পরিবর্তন আনতে পারি না।

পবিত্র কুরআনের সূরা তালাকের ৩নং আয়াতে বলা হয়েছে, “যে আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করে, তার জন্য আল্লাহই যথেষ্ঠ।”

অথচ এরপরও আমরা মুসলমান হয়েও জীবন নিয়ে নিরাশ। হতাশায় নিমজ্জিত থাকি। আত্মহত্যার মতো মহাজঘন্য কাজও করি।

2

আমাদের এমন আচরণের কথা চিন্তা করলে, কিভাবে আমরা মনে করি যে আল্লাহ আমাদের ক্ষমা করে দিবেন? আল্লাহর ক্ষমা যেমন মহান তেমনি আল্লাহর শাস্তি অত্যন্ত কঠোর।

মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআন শিরক ছাড়া সকল পাপকে ক্ষমা করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। পাশাপাশি তিনি এটাও বলেছেন, তোমাদের খারাপ কাজের হিসাবও নেওয়া হবে।

আল্লাহ সূরা যিলযালের ৭-৮ নং আয়াতে বলছেন,

فَمَنۡ یَّعۡمَلۡ مِثۡقَالَ ذَرَّۃٍ خَیۡرًا یَّرَهٗ ؕ. وَ مَنۡ یَّعۡمَلۡ مِثۡقَالَ ذَرَّۃٍ شَرًّا یَّرَهٗ

কেয়ামতের দিন কেউ অণু পরিমাণ ভালকাজ করলে তা সে দেখবে। আর কেউ অণু পরিমাণ খারাপ কাজ করলে তাও সে দেখবে।

মানুষকে শুধু দেখানোই হবে না, পাশাপাশি তার প্রতিটি খারাপ কাজের হিসাব নেওয়া হবে, শাস্তিও ভোগ করতে হবে।

সব শাস্তির পরই কেবল সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে। এখন এই শাস্তি কয়দিন হবে? ১দিন, ২দিন, ১সপ্তাহ, ২ সপ্তাহ, ১বছর, ২ বছর নাকি ১ হাজার বছর হবে, তা আল্লাহ ভালো জানেন।

আমরা কি আল্লাহর নির্ধারিত জাহান্নামের শাস্তি ১ মিনিট সহ্য করার ক্ষমতা রাখি? বলা হয়ে থাকে, যদি জাহান্নামের শাস্তি কেমন তা বুঝতে চাও তাহলে আগুনে নিজের হাত রাখ।

দুনিয়ার এই জীবনটা খুবই ছোট। খুবই সংক্ষিপ্ত। আমাদের উচিৎ আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করা, আল্লাহ আদেশ নিষেধ মেনে চলা। আর আল্লাহকে ভয় করা।

আল্লাহর ভয় মানুষকে গুনাহ থেকে বিরত রাখবে ইনশাল্লাহ। কেমনভাবে ভয় করতে হবে আল্লাহকে? সীরাতের কিতাব খুলে পড়ুন।

সাহাবীদের জীবনী পড়ুন। তাবেয়ী, তাবে তাবেয়ী, মুজতাহিদিন ও মুজাহিদদের জীবনী পড়ুন। ইনশাল্লাহ আস্তে আস্তে অন্তরে আল্লাহর ভয় আসবে

একদিনে কোনো কিছু হবে না, দীর্ঘস্থায়ী মেহনতের ফলেই তা ঘটবে। আর বেশি বেশি ইস্তিগফার পড়া উচিৎ আমাদের।

এই ইস্তিগফারের মাধ্যমে আমাদের গুনাহকে আল্লাহ ক্ষমা করে দিবেন ও অন্তরে আস্তে আস্তে আল্লাহর ভয় তৈরি করে দিবেন।

নবীজি সা. যদি নিষ্পাপ হয়েও দিনে ৭০ বারের অধিক ইস্তিগফার পড়তেন তাহলে আমরা গুনাহগার হয়েও কেন এই চেষ্টা করতে পারি না?

Scroll to Top