রিজিক কি নির্ধারিত

রিজিক কি নির্ধারিত – মানুষের জীবনে খাওয়া-দাওয়া নিয়ে যতটা না পেরেশান থাকতে হয়, অন্য কোনো কাজে বোধহয় এতটা পেরেশান কেউ হয় না।

প্রতিদিন তিনবেলা বা দুবেলা কিংবা অন্তত একবেলা খাবার যেন আমাদের লাগেই। এছাড়া আমরা শরীরের শক্তিমত্তা হারাতে পারি।

দুর্বলতা আমাদের গ্রাস করে নিবে। রিযিক নিয়ে এত পেরেশানী কখনো কখনো আমাদেরকে আল্লাহর আনুগত্য থেকে দূরে সরিয়ে দেয়।

তাওয়াক্কুল করা থেকে আমাদের বাধা দেয়। আল্লাহ পবিত্র কুরআনে বলেছেন, যে আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করে তার জন্য আল্লাহই যথেষ্ঠ।

এত বড় সু-সংবাদ থাকার পরও আমরা তাওয়াক্কুল ছেড়ে দেই। আমাদের মধ্যে দুনিয়াবী সংশয় কাজ করে। “হয়তো অমুক হারাম কাজটা ছেড়ে না দিলে আমার ভাত ঝুটবে না।” সর্বদা এমন চিন্তা আমাদের কুঁড়েকুঁড়ে খায়।

মহান আল্লাহ তা’আলা পবিত্র কুরআনের সূরা তালাকের ৩নং আয়াতে বলছেন,

وَّ یَرۡزُقۡهُ مِنۡ حَیۡثُ لَا یَحۡتَسِبُ ؕ وَ مَنۡ یَّتَوَکَّلۡ عَلَی اللّٰهِ فَهُوَ حَسۡبُهٗ ؕ اِنَّ اللّٰهَ بَالِغُ اَمۡرِهٖ ؕ قَدۡ جَعَلَ اللّٰهُ لِکُلِّ شَیۡءٍ قَدۡرً

তিনি (আল্লাহ) মানুষকে এমন উৎস থেকে রিযক দিবেন যা সে কখনো কল্পনাও করতে পারবে না। আর যেই ব্যক্তি আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করে তার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট। আল্লাহ তাঁর উদ্দেশ্য পূর্ণ করবেনই। নিশ্চয় আল্লাহ প্রত্যেক জিনিসের জন্য একটি সময়সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছেন।

অন্যত্র সূরা বাকারার ১৫৫ নং আয়াতে বলা হচ্ছে,

وَ لَنَبۡلُوَنَّکُمۡ بِشَیۡءٍ مِّنَ الۡخَوۡفِ وَ الۡجُوۡعِ وَ نَقۡصٍ مِّنَ الۡاَمۡوَالِ وَ الۡاَنۡفُسِ وَ الثَّمَرٰتِ ؕ وَ بَشِّرِ الصّٰبِرِیۡنَ

নিশ্চয়ই আমি তোমাদেরকে ভয়, ক্ষুধা, সম্পদের ক্ষতি, প্রাণ এবং ফল-ফসলের দ্বারা পরীক্ষা করব। (হে নবী!) আপনি ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ প্রদান করুন।

কুরআন হলো চিন্তাশীলদের কিতাব। কুরআনের জায়গায় জায়গায় আল্লাহ বলেছেন, জ্ঞানীরা কি ভেবে দেখে না? উপরের আয়াতদ্বয় নিয়ে একটু কল্পনা করুন তো!

সবেমাত্র হয়তো আপনি পড়াশোনা শেষ করেছেন। কিংবা হতে পারে, আপনি এখন প্রচণ্ড আর্থিকভাবে কষ্টে আছেন। অথবা আপনার পরিবারের নিকটস্থ ব্যক্তি মারা গেল। কিংবা আপনার গার্ডিয়ান মারা গেল।

এমন মুহুর্তে মানুষ প্রচণ্ড ডিপ্রেশনে থাকে। অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থানের চিন্তা সর্বদা মাথায় ঘুরে।

এই সময়ে কোনোভাবে যদি আপনার নিকট একটি হারামভাবে উপার্জনের সুযোগ আসে, তাহলে সেটি কি আপনি গ্রহণ করবেন?

আপনি হয়তো ভাবতে পারেন, এখন তো আমার আর্থিক অবস্থা খারাপ! কিছুদিন এই পথে উপার্জন করি, পরে না হয় তওবা করে নিব।

আপনি তখন কুরআনের এই আয়াতটি ভাবতে পারেন।

আল্লাহর উপর যে তাওয়াক্কুল করে, সৎপথে থাকে, হালাল-হারাম মান্য করে, তাকে আল্লাহ এমন স্থান থেকে রিযিক দিবেন, যা সে কল্পনাও করতে পারবে না।

2

নবীজির সাহাবীদের মধ্যে অধিকাংশ ছিলেন গরীব, অসহায়, মিসকিন। কাফেররা এজন্য নবীজিকে টিটকারি করতো। তারা বলতো, হে মুহাম্মাদ! এই গরীবদের দূর করে দাও। তাহলে আমরা তোমার নিকট বসবো।

আল্লাহ নবীজিকে তা করতে নিষেধ করলেন। এই সাহাবীরাই একটা সময় এতটা সম্পদের মালিক হয়েছিলেন যে, মদীনায় যাকাত গ্রহণ করার মতো লোক পাওয়া যেত না।

সাহাবীরা আল্লাহকে ভয় করতেন। তার উপর তাওয়াক্কুল করতেন। আল্লাহ ফলস্বরুপ তাদেরকে হালাল উৎস থেকে অকল্পনীয় রিযিক দান করেছিলেন।

সম্পদ পেয়ে আমরা যদি মনে করি, যেভাবে ইচ্ছা সেভাবেই তো খরচ করতে পারবো তাহলে কুরআনে আবার আমাদের নজর দেওয়া দরকার।

সূরা আনফালের ২৮ নং আয়াতে বলা হয়েছে,

وَ اعۡلَمُوۡۤا اَنَّمَاۤ اَمۡوَالُکُمۡ وَ اَوۡلَادُکُمۡ فِتۡنَۃٌ ۙ وَّ اَنَّ اللّٰهَ عِنۡدَهٗۤ اَجۡرٌ عَظِیۡمٌ

জেনে রেখ, তোমাদের ধন-সম্পদ আর সন্তান-সন্ততি হচ্ছে পরীক্ষাস্বরুপ। (এ পরীক্ষায় যারা উত্তীর্ণ হবে তাদের জন্য) আল্লাহর নিকট রয়েছে মহাপুরস্কার।

নবীজি সাঃ, সাহাবীরা, তাবেয়ীরা কখনো সম্পদ জমা করে রাখেন নি। তারা গরীবদের নিকট তা বিলিয়ে দিয়েছেন অকাতরে।

এই সম্পদ যতটা সুশভিত করে রাখে আমাদের ততটা সুশভিত নয় এটি। এই সম্পদ কারো জন্য হতে পারে জাহান্নামে যাওয়ার কারণ।

দুনিয়া ও আখিরাতে আল্লাহর রিযিক অনেক অনেক বেশি। যার কখনোই শেষ হবার নয়। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা সম্মানিত করেন, যাকে ইচ্ছা লাঞ্চিত করেন।

দুনিয়াতে আমাদের মোটাদাগে কয়েকটা কাজ করা উচিৎ।

প্রথমত, আল্লাহর উপর পূর্ণ তাওয়াক্কুল করা।

দ্বিতীয়ত, সৎ উপায়ে রিযিক তালাশ করা। হারাম উপার্জন থেকে বেঁচে থাকা।

তৃতীয়ত, গুনাহ থেকে বিরত থাকা। এর মাধ্যমে আল্লাহ অন্তরে প্রশান্তি দান করবেন ও ভালো-খারাপ নির্ণয়ের শক্তি দান করবেন।

চতুর্থত, বেশি বেশি ইস্তিগফার পড়া। ইস্তিগফারের মাধ্যমে যেমন গুনাহ মাফ হয়, তেমনি এর মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করা যায়।

আল্লাহ তা’আলা এই দুনিয়াতে আমাদের জন্য যতুটুকু রিযিক নির্ধারণ করে রেখেছেন, আমরা তার থেকে বেশি কিছু কখনোই পাব না। আবার তার থেকে কমও পাব না। তাহলে রিযিক নিয়ে আমাদের এত চিন্তা কিসের?

Scroll to Top