অন্যান্য ধর্মের ও নারীবাদীদের খুবই পছন্দের একটি প্রসঙ্গ হলো নারী নেতৃত্ব । এজন্য কখনো কখনো মুসলমানরা যখন উক্ত ধর্মের ও চিন্তাধারার লোকদের সাথে মিলিত হয় তখন কথার জালে কিংবা আরো বিভিন্ন কার্যক্রমে তারা আস্তে আস্তে এই নারী নেতৃত্বকে পছন্দ করা শুরু করে।
ইসলাম মানে যদিও আল্লাহর নিকট আত্মসমর্পণ, কিন্তু এই মুসলিমরা একটা সময় মানসিক দাসত্ব ও শয়তানের দাসে পরিণত হয়।
ইসলামের প্রথম দিকের সাহাবী, তাবেয়ী ও অন্যান্য ঈমামরা সুষ্পষ্টভাবে নারী নেতৃত্বকে হারাম বলেছেন। নবীজি সা. ও এই বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন।
স্বর্ণযুগের মুসলিম শাসকদের মধ্যে কোনো ধরণের নারী নেতৃত্বের কথা ইতিহাসে পাওয়া যায় না।
এমনকি কম গুরুত্বপূ্র্ণ দায়িত্বের মধ্যেও নারীদের কার্যক্রম নেই।
সে যুগের কোনো নারী কখনোই এটা নিয়ে প্রতিবাদ করেন নি। তারা পুরুষ ও নারীর সীমাবদ্ধতা বুঝতেন।
পুরুষ যেমন সন্তান জন্মদানে অক্ষম, তেমনি নারী নেতৃত্ব দানে অক্ষম। এটি চিরসত্য ও বাস্তব।
আমরা যদি তৎকালীন সময়ের বড় বড় ঈমাম ও আলেমদের মতামত ও অভিমত দেখি, তাহলে আমরা সেখানেও দেখতে পাই, নারী নেতৃত্বকে তারা হারাম মনে করেছেন।
আন্দালুস তথা স্পেনের বিখ্যাত আলেম আবু মুহাম্মাদ আলী ইবনে হাজাম রহ. বলেছেন, সকল মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে এমন কোনো দল নেই, যারা নারী নেতৃত্বের অনুমতি দেয়।
এছাড়াও ইমাম আবু আব্দুল্লাহ আল কুরতুবী রহ. – যিনি ছিলেন আন্দালুসের কর্ডোভার বিখ্যাত মুফাসসির ও মুহাদ্দিস – তিনি ও আল্লামা শানকিতি রহ. বলেন, নারী নেতৃত্ব হারাম হওয়ার ব্যাপারে আলেমদের কোনো মতপার্থক্য নেই।
নারী নেতৃত্ব নিয়ে সেক্যুলার ও নারীবাদীদের উগ্রতা
মুসলিমবিশ্বের বিখ্যাত আলেম ও মনিষীদের এমন উক্তি দেখে অনেক নারীবাদী ও সেক্যুলার আঁতকে উঠে বলা শুরু করবে, এটা তো নারীবিদ্বেষ ও অন্যায়।
অথচ এই সেক্যুলার ও নারীবাদীরা চায়, নারীদের পণ্য বানাতে। নারীদের দেহ ব্যবসায় জড়িত করতে।
নারীদের দ্বারা পর্ন ইন্ড্রাস্টি গড়ে তুলতে। বিজ্ঞাপনের নামে সমাজে অশ্লীলতা ছড়াতে।
অনেক আধুনিক ও মুক্তমনা বলবে, নারী-পুরুষ তো সমান। দৈহিক কিছু পার্থক্য থাকলেও বাকী অধিকার তো এক। তাহলে কেন এমন পার্থক্য করতে হবে?
আবার কেউ কেউ এমন আলোচনা দেখে ইসলাম, মুসলিম ও নবীজির উপর দোষারোপ করবে।
কেউ বা আল্লাহকে অবিশ্বাসও করতে পারে। আর বাস্তবিকপক্ষে নারীবাদীরা একটা সময় নাস্তিকতাকেই বেঁছে নেয় নিজেদের হাতিয়ার হিসেবে।
নারীবাদীরা সাধারণত নারী-পুরুষের সমতা দাবী করে। তাদের এই সমতাকে মোটাদাগে দুইভাগে বিভক্ত করা যায়।
১. সবখানে ও সর্বাবস্থায় সমানভাবে মান বণ্টন।
২. যে যেমন, তার নিকট সেভাবেই মান বণ্টন করা।
এখানে প্রথমটা মানতে সেক্যুলার ও নারীবাদীরাও নারাজ। কারণ, তারা জানে, কখনোই তারা পুরুষদের সমান সমান লেভেলে কাজ করতে পারবে না।
সুতরাং প্রথমটা এভাবেই বাতিল হয়ে যায়। নারীবাদীরা দ্বিতীয় পয়েন্টে নিজেদের সমান অধিকার চায়।
কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে তারা দ্বিতীয় পয়েন্টের আড়ালে প্রথম পয়েন্টের সকল সুবিধা পেতে চায়।
যেমন, নারীবাদীরা বলবে, তারা চাকুরি করতে চায়। পুরুষদের মতো বেতন গ্রহণ করতে চায়।
অফিস-কর্পোরেট হাউজ, সরকারি কাজে তারা যুক্ত হতে চায়।
কিন্তু তারা পুরুষদের মতো কটিন পরিশ্রমের কাজগুলো করতে চায় না।
তারা পদ পেতে চায় ঠিকই কিন্তু তারা বিল্ডিং, ব্রিজ বানানোর মতো কঠিন কাজগুলো করতে চায় না।
তারা পুরুষদের ন্যায় ভবনের ডিজাইন করে উপার্জন করতে চায় ঠিকই কিন্তু তারা ভবন বানানোর সময় কঠিন পরিশ্রমের কাজগুলো করতে চায় না।
তারা পুরুষদের ন্যায় বেতন চায় ঠিকই কিন্তু তারা পুরুষদের মতো বছরের অফিস টাইমগুলোতে প্রতিদিন উপস্থিত হতে চায় না। শারিরিক ও মানসিক কারণে তারা ছুটি নিবে।
তাহলে এখানে দ্বিতীয় পয়েন্ট অনুযায়ী, যে যেমন তার নিকট সেভাবেই তো মান বণ্টন হচ্ছে না।
বরং এখানে দ্বিতীয় পয়েন্টের আড়ালে প্রথম পয়েন্টের সুবিধা নিচ্ছে বর্তমান সেক্যুলার ও নারীবাদীরা।
নারী-পুরুষের সীমারেখা
আল্লাহ তা’আলা মহান। তিনি মানুষের ভালো-খারাপ সম্পর্কে পূর্ণ অবগত। তাই তিনি একজন নারী ও পুরুষের সীমারেখা পবিত্র কুরআনে বলে দিয়েছেন।
আমরা কুরআন-হাদীসের আলোচনায় পরে আসছি। কিছু যুক্তি ও উদাহরণের মাধ্যমে এই জিনিষটা বিষদভাবে বুঝার চেষ্টা করি।
ড্রাইভিং লাইসেন্স নিতে সরকারিভাবে একজন ড্রাইভারের ১৮ বছর হওয়া লাগে।
এখন আমরা দেখতে পাই, অনেক ১৪/১৫/১৬ বছরের ছেলেরাও কিন্তু ভালো ড্রাইভিং পারে।
আবার কেউ কেউ এতটাই দক্ষ হয় যে, লাইসেন্সপ্রাপ্ত ড্রাইভারের চেয়েও উক্ত ছেলেটির দক্ষতা বেশি থাকে। এখন কি সরকার সেই ছেলেটিকে ১৮ বছরের আগে ড্রাইভিং লাইসেন্স দেয়?
কখনোই নয়। সে যতই ভালো ড্রাইভিং জানুক না কেন, ১৮ বছরের আগে কিছুতেই তাকে লাইসেন্স দেওয়া হয় না। এখন কেউ যদি এখানে সমতার স্লোগান দেয় তাহলে তা হবে অযৌক্তিক।
এখন আরেকটি উদাহরণ দেখুন, ক্লাসের ফাইনাল পরীক্ষায় আমাদেরকে উত্তরপত্র দেওয়া হয় প্রশ্নের উত্তর লেখার জন্য।
এখন কেউ যদি বলে, যা ইচ্ছা লিখলেই হবে। একটা লিখলেই নম্বর দিয়ে দিবে। তাহলে কি তার এই ধারণা সঠিক হবে?
কেউ কি পদার্থবিজ্ঞান পরীক্ষায় রসায়নের উত্তর লিখে পাস করতে পারে? কেউ কি আইসিটি পরীক্ষায় জীববিজ্ঞানের উত্তর লিখে মার্ক পাবে?
দুনিয়ার এমন আরো বহু কাজ দেখতে পাব, যেগুলো বাহ্যিকভাবে একই দেখালেও উভয়টার কার্যক্রম ভিন্ন। আর তাতে সমতার কথা কেউই বলে না।
ঠিক তেমনি মানুষ হিসেবে নারী-পুরুষকে একই দেখা গেলেও উভয়জনই সম্পূর্ণ ভিন্ন। তাদের মধ্যে সমতা করা একেবারেই অসম্ভব।
আর যেখানে নারী-পুরুষের সমতা ই স্পষ্ট কায়েম হয় না, সেখানে তো নারী নেতৃত্ব নিয়ে কথা বলাটাই অবাস্তবিক এবং অবান্তর।
নারী নেতৃত্ব ও কুরআন-হাদীসে নারী-পুরুষের সীমারেখা
পবিত্র কুরআন ও হাদীসের তথ্য অনুযায়ী, পুরুষদের সৃষ্টি করা হয়েছে পরিবারের দায়িত্ব নেওয়ার জন্য। পরিবারের, ধর্মের, দেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য।
আর নারীদেরকে সৃষ্টি করা হয়েছে সন্তানদের উত্তমরূপে লালন-পালন করার জন্য, স্বামীর সম্পদের হেফাজত করার জন্য।
এখন আমরা কিছু হাদীস ও আয়াত দেখি। সহীহ বুখারীর ৭০৯৯ নং হাদীসে উল্লেখ করেছেন,
عَنْ أَبِي بَكْرَةَ قَالَ لَقَدْ نَفَعَنِي اللهُ بِكَلِمَةٍ أَيَّامَ الْجَمَلِ لَمَّا بَلَغَ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم أَنَّ فَارِسًا مَلَّكُوا ابْنَةَ كِسْرَى قَالَ لَنْ يُفْلِحَ قَوْمٌ وَلَّوْا أَمْرَهُمْ امْرَأَةً.
আবূ বকরাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একটি কথা মনে পড়ায় আল্লাহ্ জঙ্গে জামাল (উষ্ট্রের যুদ্ধ) এর সময় আমাকে বড়ই উপকৃত করেছেন। (তা হল) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট যখন এ খবর পৌঁছল যে, পারস্যের লোকেরা কিসরার মেয়েকে তাদের শাসক নিযুক্ত করেছে, তখন তিনি বললেন, ঐ জাতি কখনোই সফলকাম হবে না, যারা তাদের শাসনভার কোন স্ত্রীলোকের হাতে অর্পণ করে।
এই একটি হাদীসই দলীল হিসেবে যথেষ্ঠ। পারস্য সাম্রাজ্যের মতো সুপার পাওয়ার একটি সাম্রাজ্য আরবের সাহাবীদের হাতে ২০/৩০ বছরেই পুরো ধ্বংস হয়ে গেছে।
কারণ, তারা নারীদের নেতৃত্বে বসিয়ে ছিল। বর্তমান সময়ে যেই দেশের শাসকরা নারী, সেই দেশগুলোর দিকে তাঁকালেই আমরা দেশের অধঃপতন দেখতে পাই।
জিডিপি দিয়ে আমরা উন্নয়ন মেপে গর্ব করি। অথচ লাখো মানুষ খাবার না পেয়ে কষ্টে আছে।
লাখো যুবক আজ বেকার। শিক্ষাঙ্গনে আজ পড়া ছাড়া সবই হচ্ছে। অবাধ যৌনাচার, ট্রান্সজেন্ডার ও সমকামিতার মতো জঘন্য মতবাদগুলো স্বাভাবিক করা হচ্ছে।
স্থানে স্থানে আগুন, ঘুষ নিয়ে চাকুরি, কালোবাজারি, ধর্মনিরপেক্ষতার নামে স্থানে স্থানে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের হয়রানি, কুরআনের ব্যাখ্যা করলে জেল-জুলুম এই সকল কিছু হচ্ছে নারীর ক্ষমতায়নে।
বর্তমান বিশ্বে গণতন্ত্র নিয়ে মোড়লগিরি করা আমেরিকার কোনো প্রেসিডেন্ট কিংবা ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে কোনো নারীকে নেওয়া হয় না।
বিশ্বের তাক লাগানো রাষ্ট্রগুলোতে নারীদের সংসদে প্রবেশের অধিকার থাকলেও প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী, সেনাপ্রধান পদে কখনোই কোনো নারীকে নিয়োগ দেওয়া হয় না।
তাহলে কি আমরা হাদীসের সাথে বর্তমান বিশ্বব্যবস্থার মিল খুঁজে পাচ্ছি? নাকি দেখেও আমরা না দেখার ভান করি?
মুদতাদরাকে হাকেম কিতাবে বর্ণিত একটি হাদীসে (৭৮৭০ নং) বলা হয়েছে,
পুরুষরা যখন থেকে নারীদের আনুগত্য করা শুরু করবে তখন তারা বরবাদ ও ধ্বংস হয়ে যাবে।
আল্লাহ নারীদেরকে তাদের কাজ বর্ণনা করে দিয়েছেন। সূরা আহজাবের ৩৩ নং আয়াতে বলা হচ্ছে,
وَ قَرۡنَ فِیۡ بُیُوۡتِکُنَّ وَ لَا تَبَرَّجۡنَ تَبَرُّجَ الۡجَاهِلِیَّۃِ الۡاُوۡلٰی وَ اَقِمۡنَ الصَّلٰوۃَ وَ اٰتِیۡنَ الزَّکٰوۃَ وَ اَطِعۡنَ اللّٰهَ وَ رَسُوۡلَهٗ ؕ اِنَّمَا یُرِیۡدُ اللّٰهُ لِیُذۡهِبَ عَنۡکُمُ الرِّجۡسَ اَهۡلَ الۡبَیۡتِ وَ یُطَهِّرَکُمۡ تَطۡهِیۡرًا
তোমরা নিজ গৃহে অবস্থান করবে এবং প্রাক-জাহেলী যুগের মত সৌন্দর্য প্রদর্শন করো না। আর তোমরা সালাত কায়েম কর, যাকাত প্রদান কর এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য কর। হে নবী পরিবার, আল্লাহ তো কেবল চান তোমাদের থেকে অপবিত্রতাকে দূরীভূত করতে এবং তোমাদেরকে সম্পূর্ণরূপে পবিত্র করতে।
উপরোক্ত আয়াতগুলো যদিও নবীজির পরিবারের জন্য নাজিল হয়েছিল কিন্তু এর আদেশ সমস্ত মুসলমানদের উপর ফরজ।
সুতরাং আজ যারা নারী নেতৃত্ব নিয়ে স্লোগান দেয় তারা আসলে নারীদের শরীরকে ভক্ষণ করতে চায়।
মূর্খ নারীরা ও লোভী নারীরা না বুঝেই নিজেও ধ্বংস হয় ও নিজ জাতিকেও ধ্বংস করে।