নারীবাদী তত্ত্ব থেকে নাস্তিক

নারীবাদীরা সর্বদা তাদের নারীবাদী তত্ত্ব থেকে ইসলামকে যাছাই করতে যায়। তখনই শুরু হয় বিরাট এক সমস্যা।

ইসলামের সাথে নারীবাদের দ্বন্দ্ব বহু আগ থেকেই। কারণ, ইসলাম মানে আল্লাহর প্রতি আত্মসমর্পণ। আর নারীবাদ বলে ভোগবাদীর উপর আত্মসমর্পণ।

এজন্য মুসলিম নারীবাদীরা একটা সময় ইসলাম থেকে বিচ্যুত হয়ে নাস্তিক হয়ে যায়। আর এই জিনিষটা একদিনে ঘটে না। পর্যায়ক্রমে এমনটা ঘটে।

প্রথম ধাপ

প্রথম প্রথম কিছুটা মনগড়া অভিযোগ ও কিছুটা ক্ষোভ দিয়ে তাদের বীজ বপন করা শুরু হয়। মুসলিম হলেই তো সকল মুসলমান ভালো হয় না।

তাই কিছু নামধারী মুসলমানদের দোষগুলোকে সামনে এনে তারা প্রচার করতে থাকে, মুসলমানরা বোধ হয় এমনই।

যে, মুসলমানরা স্ত্রীর হক আদায় করে না, স্ত্রীর উপর যুলুম করে। নারীদের দাসীর মতো খাটায়।

এখানে উক্ত ফেমিনিস্ট সঠিক ইসলামের বক্তব্য কুরআন-হাদীস থেকে না দেখেই কিছু ব্যক্তিদের দেখে সেটাকেই ইসলামের সিস্টেম বলে মনে করে বসে।

পরবর্তীতে নারীবাদীরা ত্যাক্ত ও বিরক্ত হয়ে বলা শুরু করে, সবটাই হলো পুরুষতন্ত্র। তারাই মূল হোতা। তাদের জাতটাতেই সমস্যা ইত্যাদি ইত্যাদি।

দ্বিতীয় ধাপ

প্রথম ধাপে যদিও নির্দিষ্ট কিছু দোষের কারণে পুরুষদের উপর ক্ষোভ ছিল, কিন্তু পরবর্তীতে তা বিভিন্ন চিন্তাধারা ও মতাদর্শের দিকেও রুপ নেয়।

তা তখন বলা শুরু করে, নারীরা কেন ইমাম হতে পারে না? কেন নারী-পুরুষের সালাতের নিয়ম ভিন্ন? কেন নারীদেরকে মাহফিলে বা ধর্মীয় সভা-সেমিনারে রাখা হয় না?

এমন আরো বিভিন্ন ধরণের সংশয় নারীবাদীদের মাথায় ভীর জমায়। তারা এসব প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করে। কিন্তু তা শেষ পর্যন্ত অশ্বডিম্ব ছাড়া কিছুই দেখায় না।

তৃতীয় ধাপ

নারীবাদীরা যখন সংশয়ের গভীরে পড়ে যায়, তখন তাদের শুরু হয় ইলমের সিলসিলা নিয়ে প্রশ্ন তোলা।

তারা পূর্বে যদিও ইসলামী কালচার নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল। কিন্তু এবার তারা মুসলিম উম্মাহ,ইমামদের লক্ষ্যবস্তু করে।

তারা তখন বলা শুরু করে, ইলমের ধারা হলো পুরুষতান্ত্রিক। এখানে নারীদের কোনো অবদান নেই। তাই পুরুষরা যেভাবে ইচ্ছা, সেভাবেই ফাতওয়া দিয়েছে, মাসআলা বলেছে।

চতুর্থ ধাপ

শেষ পর্যন্ত এত কিছুতে তাদের স্বপক্ষে কোনো কিছু না পেয়ে ভাবে, কুরআনে হয়তো নারীবাদীর পক্ষে দলীল আছে। তাই সে তখন কুরআন নিয়ে বসে।

কিন্তু এখানে এসে সে দেখতে পায়,

সূরা নিসার ৩৪ নং আয়াতে আছে,

اَلرِّجَالُ قَوّٰمُوۡنَ عَلَی النِّسَآءِ بِمَا فَضَّلَ اللّٰهُ بَعۡضَهُمۡ عَلٰی بَعۡضٍ وَّ بِمَاۤ اَنۡفَقُوۡا مِنۡ اَمۡوَالِهِمۡ ؕ فَالصّٰلِحٰتُ قٰنِتٰتٌ حٰفِظٰتٌ لِّلۡغَیۡبِ بِمَا حَفِظَ اللّٰهُ ؕ وَ الّٰتِیۡ تَخَافُوۡنَ نُشُوۡزَهُنَّ فَعِظُوۡهُنَّ وَ اهۡجُرُوۡهُنَّ فِی الۡمَضَاجِعِ وَ اضۡرِبُوۡهُنَّ ۚ فَاِنۡ اَطَعۡنَکُمۡ فَلَا تَبۡغُوۡا عَلَیۡهِنَّ سَبِیۡلًا ؕ اِنَّ اللّٰهَ کَانَ عَلِیًّا کَبِیۡرًا

পুরুষগণ নারীদের উপর কর্তৃত্বশীল এ কারণে যে, আল্লাহ তাদের এককে অন্যের উপর মর্যাদা প্রদান করেছেন, আর এজন্য যে, পুরুষেরা স্বীয় ধন-সম্পদ হতে ব্যয় করে। ফলে পুণ্যবান স্ত্রীরা (আল্লাহ ও স্বামীর প্রতি) অনুগতা থাকে এবং পুরুষের অনুপস্থিতিতে তারা তা (অর্থাৎ তাদের সতীত্ব ও স্বামীর সম্পদ) সংরক্ষণ করে যা আল্লাহ সংরক্ষণ করতে আদেশ দিয়েছেন। যদি তাদের মধ্যে অবাধ্যতার সম্ভাবনা দেখতে পাও, তাদেরকে সদুপদেশ দাও এবং তাদের সাথে শয্যা বন্ধ কর এবং তাদেরকে (সঙ্গতভাবে) প্রহার কর, অতঃপর যদি তারা তোমাদের অনুগত হয়, তাহলে তাদের উপর নির্যাতনের বাহানা খোঁজ করো না, নিশ্চয় আল্লাহ সর্বোচ্চ, সর্বশ্রেষ্ঠ।

সূরা বাকারার ২২৮ নং আয়াতে আছে,

وَ الۡمُطَلَّقٰتُ یَتَرَبَّصۡنَ بِاَنۡفُسِهِنَّ ثَلٰثَۃَ قُرُوۡٓءٍ ؕ وَ لَا یَحِلُّ لَهُنَّ اَنۡ یَّکۡتُمۡنَ مَا خَلَقَ اللّٰهُ فِیۡۤ اَرۡحَامِهِنَّ اِنۡ کُنَّ یُؤۡمِنَّ بِاللّٰهِ وَ الۡیَوۡمِ الۡاٰخِرِ ؕ وَ بُعُوۡلَتُهُنَّ اَحَقُّ بِرَدِّهِنَّ فِیۡ ذٰلِکَ اِنۡ اَرَادُوۡۤا اِصۡلَاحًا ؕ وَ لَهُنَّ مِثۡلُ الَّذِیۡ عَلَیۡهِنَّ بِالۡمَعۡرُوۡفِ ۪ وَ لِلرِّجَالِ عَلَیۡهِنَّ دَرَجَۃٌ ؕ وَ اللّٰهُ عَزِیۡزٌ حَکِیۡمٌ

তালাকপ্রাপ্তা নারীরা তিন মাসিক পর্যন্ত প্রতীক্ষা করবে এবং তাদের পক্ষে জায়িয নয় সে বস্তু গোপন করা যা তাদের পেটে আল্লাহ সৃজন করেছেন, যদি তারা আল্লাহ ও পরকালের প্রতি বিশ্বাস রাখে। তাদের স্বামীরা তাদেরকে উক্ত সময়ের মধ্যে পুনঃ গ্রহণে অধিক হকদার, যদি তারা আপোস-নিস্পত্তি করতে চায় এবং পুরুষদের উপর নারীদেরও হাক্ব আছে, যেমন নিয়ম অনুযায়ী পুরুষদের নারীদের উপরও হাক্ব আছে, অবশ্য নারীদের উপর পুরুষদের বিশেষ মর্যাদা আছে এবং আল্লাহ মহাপরাক্রান্ত, প্রজ্ঞাশীল।

সূরা বাকারার ২৮২ নং আয়াতে আছে,

وَ اسۡتَشۡهِدُوۡا شَهِیۡدَیۡنِ مِنۡ رِّجَالِکُمۡ ۚ فَاِنۡ لَّمۡ یَکُوۡنَا رَجُلَیۡنِ فَرَجُلٌ وَّ امۡرَاَتٰنِ مِمَّنۡ تَرۡضَوۡنَ مِنَ الشُّهَدَآءِ اَنۡ تَضِلَّ اِحۡدٰىهُمَا فَتُذَکِّرَ اِحۡدٰىهُمَا الۡاُخۡرٰی ؕ

আর তোমরা তোমাদের পুরুষদের মধ্য হতে দু’জন সাক্ষী রাখ। অতঃপর যদি তারা উভয়ে পুরুষ না হয়, তাহলে একজন পুরুষ ও দু’জন নারী- যাদেরকে তোমরা সাক্ষী হিসেবে পছন্দ কর। যাতে তাদের (নারীদের) একজন ভুল করলে অপরজন স্মরণ করিয়ে দেয়।…..

সূরা নিসা এর ১১ নং আয়াতে আছে,

یُوۡصِیۡکُمُ اللّٰهُ فِیۡۤ اَوۡلَادِکُمۡ ٭ لِلذَّکَرِ مِثۡلُ حَظِّ الۡاُنۡثَیَیۡنِ ۚ فَاِنۡ کُنَّ نِسَآءً فَوۡقَ اثۡنَتَیۡنِ فَلَهُنَّ ثُلُثَا مَا تَرَکَ ۚ وَ اِنۡ کَانَتۡ وَاحِدَۃً فَلَهَا النِّصۡفُ ؕ وَ لِاَبَوَیۡهِ لِکُلِّ وَاحِدٍ مِّنۡهُمَا السُّدُسُ مِمَّا تَرَکَ اِنۡ کَانَ لَهٗ وَلَدٌ ۚ فَاِنۡ لَّمۡ یَکُنۡ لَّهٗ وَلَدٌ وَّ وَرِثَهٗۤ اَبَوٰهُ فَلِاُمِّهِ الثُّلُثُ ۚ فَاِنۡ کَانَ لَهٗۤ اِخۡوَۃٌ فَلِاُمِّهِ السُّدُسُ مِنۡۢ بَعۡدِ وَصِیَّۃٍ یُّوۡصِیۡ بِهَاۤ اَوۡ دَیۡنٍ ؕ اٰبَآؤُکُمۡ وَ اَبۡنَآؤُکُمۡ لَا تَدۡرُوۡنَ اَیُّهُمۡ اَقۡرَبُ لَکُمۡ نَفۡعًا ؕ فَرِیۡضَۃً مِّنَ اللّٰهِ ؕ اِنَّ اللّٰهَ کَانَ عَلِیۡمًا حَکِیۡمًا

আল্লাহ তোমাদেরকে তোমাদের সন্তান-সন্ততির (অংশ) সম্পর্কে নির্দেশ দিচ্ছেন, পুরুষ দুই নারীর অংশের সমান পাবে, তবে সন্তান-সন্ততি যদি শুধু দু’জন নারীর অধিক হয় তাহলে তাঁরা রেখে যাওয়া সম্পত্তির তিন ভাগের দু’ ভাগ পাবে, আর কেবল একটি কন্যা থাকলে সে অর্ধেক পাবে এবং তার পিতা-মাতা উভয়ের প্রত্যেকে রেখে যাওয়া সম্পত্তির ছয় ভাগের এক ভাগ পাবে যদি তার সন্তান থাকে, আর যদি তার সন্তান না থাকে এবং তার ওয়ারিশ মাতা-পিতাই হয়, সে অবস্থায় তার মাতার জন্য এক তৃতীয়াংশ, কিন্তু তার ভাই-বোন থাকলে, তার মাতা পাবে ছয় ভাগের এক ভাগ, (ঐসব বণ্টন হবে) তার কৃত ওয়াসীয়াত অথবা ঋণ পরিশোধের পর। তোমরা জান না তোমাদের পিতা এবং সন্তানদের মধ্যে কে তোমাদের পক্ষে উপকারের দিক দিয়ে অধিকতর নিকটবর্তী। (এ বণ্টন) আল্লাহর পক্ষ হতে নির্ধারিত করে দেয়া হয়েছে, নিশ্চয় আল্লাহ মহাজ্ঞানী, প্রজ্ঞাশীল।

এছাড়াও হাদীসের গ্রন্থগুলোতে নারী আর পুরুষের অধিকার আলাদা আলাদাভাবে বর্ণনা করা আছে।

এত কিছু জানার পর মুসলিম ফেমিনিস্ট আর কোনো কূল-কিনারা খুঁজে পায় না।

সে তখন কুরআন নিয়ে ও হাদীস নিয়ে সন্দেহে পড়ে যায়।

শেষ পর্যন্ত যখন তার নিকট স্পষ্ট হয় যে, কুরআন তো ধ্রুব সত্য। তখন সে কুরআনকে অস্বীকার করে বসে।

একটা সময় ফেমিনিস্টরা নবীদের ব্যাপারে কুৎসিত শব্দ ব্যবহার করা শুরু করে। এমনকি আল্লাহকেও অস্বীকার করে বসে।

ফেমিনিজম বা নারীবাদী তত্ত্ব এর সবচেয়ে ভয়ঙ্কর দিক হলো, এটা একটা সার্কেলের মতো।

একজন মানুষ যখন সবকিছুকে ‘পুরুষতন্ত্র’ দিয়ে ব্যাখ্যা করা শুরু করে তখন বাকি ধাপগুলোতে দোষত্রুটি খুঁজে বের করা তার নেশা হয়ে যায়।

সে তখন সব ধরনের “অবিচারকে” পুরুষতন্ত্রের দোষ বলে চালিয়ে দিতে চেষ্টা করে।

তার এই ব্যাখ্যা যদিও ভুল তারপরও কিন্তু এটা তার নিকট আসল।

আসলে চতুর্থ ধাপে থাকা ফেমিনিস্টরা আগের তিনটি ধাপের মুসলিম ফেমিনিস্টদের চেয়ে বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে সৎ।

চতুর্থ ধাপের নারীবাদী তত্ত্ব তার আদর্শিক সমীকরণের চূড়ান্ত ধাপ পর্যন্ত গেছে। অন্যরা যায়নি।

তথ্যসুত্র

রিদ্দার পথে একজন মুসলিম ফেমিনিস্টের যাত্রা, আসিফ আদনান

Scroll to Top