আবু বকরের যুগে পারস্য – হযরত আবু বকর রা. ছিলেন ইসলামের প্রথম খলিফা ও আমিরুল মু’মিনীন।

তিনি তার খেলাফত লাভের পর প্রথমে তিনটা ফেতনার মোকাবেলা করেন। যেই ফিতনাগুলো নবীজির মৃত্যুর পর সংগঠিত হয়েছিল।

তিনটি বড় ফেতনা

আবু বকর সিদ্দিক রা. খেলাফতের দায়িত্ব গ্রহণ করার পর পরই তিনটি বড় ফেতনার সম্মুখিন হতে হয়।

প্রথম ফিতনা হলো: নবীজির মৃত্যুর পর আরবের বিভিন্ন অঞ্চলে কয়েকজন মিথ্যা নবুয়তের দাবি করেছিল। তাদের সাথে মোকাবেলা।

দ্বিতীয় ফেতনা হলো: ইরতিদাদ বা মুরতাদ হওয়া। নবীজির মৃত্যুর পর অনেক নতুন মুসলিম ইসলামের আলো নিভে গেছে মনে করে মুরতাদ হয়ে যায়। তাদের সাথে যুদ্ধ ঘোষণা।

মদীনার প্রতিরক্ষা

নবীজির শেষ জীবনে হযরত উসামা রা. এর নেতৃত্বে একটি মুজাহিদ বাহিনী গঠন করেছিলেন। যারা রোমানদের বিরুদ্ধে লড়াই করবে। কিন্তু নবীজির মৃত্যুর খবরে তা আর অগ্রসর হয় নি।

আবু বকর রা. খেলাফতের দায়িত্বভার গ্রহনের পর সর্বপ্রথম তিনি এই মুজাহিদ বাহিনীকে রোমানদের উদ্দেশ্যে প্রেরণ করেন।

যদিও সে সময় আশেপাশে বিদ্রোহ করেছিল বেশ কিছু আরব গোষ্ঠী এবং ফেতনা প্রকাশ পাচ্ছিল।

তারপরও তিনি এই বাহিনীকে মদীনায় রাখা ন্যায়সঙ্গত মনে করেন নি। তিনি তাদের জিহাদে পাঠিয়ে দিলেন।

উসামা রা. এর বাহিনী চলে যাওয়ার পর মদীনার সামরিক শক্তি কমে যায়।

তাই মুরতাদরা মদীনার আশেপাশে একত্রিত হতে থাকে।

আবু বকর রা. শহরকে বিপদজ্জনক অবস্থায় দেখে প্রতিরক্ষার প্রস্তুতি নেন। তিনি শহরের প্রবেশপথ বন্ধ করে দেন। মদীনাবাসীকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দেন।

বিদ্রোহীরা ক্রমে ক্রমেই মনোবল হারাতে লাগলো।

তারা ভাবতে লাগলো, এমন পরিস্থিতিতে যদি মদীনার অধিবাসীরা রোমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে যায় তাহলে না জানি ভেতরে কত বড় বাহিনী অপেক্ষা করছে।

এর ফলে তারা আর অগ্রসর হতে সাহস পায় নি।

মদীনার পার্শ্ববর্তী বিদ্রোহীদের দমন

প্রায় ৪০ দিন পর উসামা রা. বিজয়ের পতাকা উড্ডীন করে মদীনায় ফিরে আসেন।

আবু বকর রা. তাকে মদীনার স্থলাভিষিক্ত করে নিজে মুজাহিদ বাহিনী নিয়ে বিদ্রোহীদের দমনের উদ্দেশ্যে বের হন।

সে সময় আবু বকর রা. আবস, জুবইয়ান, বনু মুররা, বনু কিনানার বিদ্রোহীদের উপর আকষ্মিক হামলা করেন।

এর ফলে তাদের লাশের স্তুপ তৈরী হয়ে যায়। আর বাকিরা যেদিকে পারে পলায়ন করে।

মিথ্যা নবুওয়াত দাবীদারদের বিরুদ্ধে জিহাদ

মদীনার আশেপাশে তখন কয়েকজন মিথ্যা নবুয়তের দাবী করেছিল। তাদের মধ্যে একজন হলো, তুলাইহা আসাদী

আবু বকর রা. তাকে দমন করার জন্য খালিদ বিন ওয়ালিদ রা. কে প্রেরণ করেন। খালিদ রা. তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে।

যুদ্ধের মাঝখানে সে তার স্ত্রীকে নিয়ে পলায়ন করে। পরবর্তীতে সে দ্বিতীয়বার ইসলাম গ্রহণ করে এবং ইরাকের যুদ্ধে একজন মুসলিম বীর সৈনিক হিসেবে যুদ্ধ করে।

মিথ্যা নবুওয়াত দাবীদারদের মধ্যে আরেকজন ছিল, উম্মে যিমিল।

উম্মে যিমিল এককালে যুদ্ধবন্দী হিসেবে আয়েশা রা. এর বাঁদি ছিল। আয়েশা রা. অনুগ্রহ প্রদর্শন করে তাকে আজাদ করে দেয়। সে ছিল মারাত্বক ইসলাম বিদ্ধেষী।

হযরত খালিদ বিন ওয়ালিদ রা. তার বিরুদ্ধেও যুদ্ধ করতে থাকে।

সে তখন একটা উটে চড়ে লড়াইয়ে অবতীর্ণ হয়। মুসলমানরা তার উটকে ধরাশয়ী করে তাকে হত্যা করে।

মিথ্যা নবুওয়াত দাবীদারদের মধ্যে আরেকজন ছিল, আসওয়াদ আনাসী

এই ব্যক্তি রাসূলের জীবদ্দশায় ফেতনা শুরু করেছিল। পরবর্তীতে হযরত ফিরোজ দাইলামি রা. তাকে হত্যা করেন।

উক্ত ফেতনাগুলোর মোকাবেলা করার পর আবু বকর রা. বহির্বিশ্বের সাথে রাজনৈতিক জীবন শুরু করেন।

বহির্বিশ্বের সাথে যুদ্ধ

পারস্য

পারস্য বা ইরান সে সময় ছিল বিশ্বের পরাশক্তিগুলোর মধ্যে একটি। তাদের সাথেই ছিল আরবের সীমানা।

পারস্যের ক্ষমতাধররা আরব সীমান্তের অধীবাসীদের উপর জুলুম নির্যাতন করতো।

খলিফা আবু বকর রা. এর সময় পারস্য এর রাজনৈতিক ময়দানে ধস নামে। এর ফলে তাদের সেনাব্যবস্থা নড়বড়ে হয়ে যায়।

পারস্যের পাশে উক্ত আরব সীমান্তের অধিবাসীদের মধ্যে একজন ছিলেন হযরত মুসান্না বিন হারিসা রা.।

তিনি নবম হিজরীতে ইসলাম গ্রহন করেন। সে সময় সীমান্তের আবররা পারস্যের উপর গেরিলা আক্রমন করতো।

হযরত আবু বকর রা. এসব কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে অবগত হলেন।

তখন থেকে তিনি সীমান্ত এলাকার খোঁজ খবর নিতে লাগলেন। মুসান্না বিন হারিসা রা. আবু বকরকে বললেন,

আমাকে কিছু সৈন্য দিন। কারণ, পারস্যের শক্তি শেষ হয়ে গেছে।

মুজাহিদ বাহিনী গঠন

তখন মুসান্না বিন হারিসা ভাবলেন, এখন যদি বড় একটা বাহিনী গঠন করা যায়, তাহলে পারস্য জয় করাটা তেমন কঠিন কিছু নয়।

তাই তিনি নিজেই মদীনায় এসে পারস্য আক্রমনের অনুমতি প্রার্থনা করলেন। পাশাপাশি তিনি মুজাহিদ বাহিনীও চাইলেন।

আবু বকর রা. তখন আট হাজার মুজাহিদ দিয়ে মুসান্না বিন হারিসাকে সাহায্য করেন।

খালিদ বিন ওয়ালিদ রা. কে সেনাপতি নিযুক্তকরণ

হযরত আবু বকর রা. অনুভব করলেন, পারস্যের মতো এক বড় এক সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য একজন দক্ষ ও যোগ্যতা সম্পূর্ণ সেনাপ্রধান দরকার।

তখন তার দৃষ্টি হযরত খালিদ বিন ওয়ালিদ রা. এর উপর পড়ে।

হযরত খালিদ বিন ওয়ালিদ রা. খতমে নবুয়ত অস্বীকারকারীদের বিরুদ্ধে অসাধারণ সফলতার সাথে জিহাদ পরিচালনা করেছিলেন।

আবু বকর রা. তখন তাকে পারস্য অভিমূখে তার বাহিনী নিয়ে অগ্রসর হতে বললেন।

খালিদ বিন ওয়ালিদ রা. নিজের সাহাযের জন্য অন্য কাউকে পাঠাতে বললেন। তখন আবু বকর রা. কা’কা বিন আমর রা. কে তার সহায়তায় পাঠান।

কা’কা বিন আমর রা. ছিলেন সে সময়ের বিখ্যাত দূত ও যুদ্ধের ময়দানে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়া ব্যক্তিদের মধ্যে একজন।

সেনাদলের অবস্থান

উক্ত সেনাদলগুলো এসে উবুল্লা নামক স্থানে একত্রিত হয়।

বর্তমানে উবুল্লা হলো ইউফ্রেটিস – টাইগ্রিস মোহনার ডান তীরে পারস্য উপসাগরে প্রবেশময় অবস্থিত। এটি পুরাতন বসরার পূর্বে অবস্থিত এবং নাহর আল-উবুল্লা নামক খালের উত্তর দিকে অবস্থিত।

যা বসরাকে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে টাইগ্রিস নদী, আবাদান (আধুনিক ইরানে) এবং শেষ পর্যন্ত সংযুক্ত করেছে।

পারস্য উপসাগর আধুনিক বসরার আশর পাড়া বর্তমানে আল-উবুল্লার জায়গা দখল করে আছে।

উক্ত স্থান এতটাই গুরুত্বপূর্ণ যে, সেখানে অবস্থানকারী সেনারা চাইলে আরব ও ইরাক কবজা করার পাশাপাশি সমুদ্রেপথে ভারত উপমহাদেশেও অভিযান পরিচালনা করতে পারতো।

ইরাকের এই পয়েন্টটি পারস্যের গভর্নর হরমুজের শাসনাধীন ছিল।

সে ছিল অনেক বদকার লোক। সে অসহায় জনগণের উপর নির্যাতন করতো।

খালিদ রা. এর হুমকি

খালিদ রা. হরমুজকে চিঠি লিখে বলে, তোমার সামনে তিনটা পথ খোলা আছে। হয় তুমি ইসলাম গ্রহন করবে। কিংবা তুমি জিজিয়া কর দিয়ে আমাদের নিরাপত্তায় চলে আসবে।

অন্যথায় যুদ্ধের ময়দানে আমাদের সাথে শক্তি পরীক্ষায় নামতে হবে।

আর তোমাকে হত্যা করার জন্য আমার নিকট এমন এক বাহিনী আছে, যারা আল্লাহকে ভালোবাসে। যেমনটা তুমি মদপান করতে ভালোবাসো।

হরমুজের প্রতিক্রিয়া

হরমুজ খালিদ রা. এর চিঠিটি পাওয়ার পর সেটা পারস্যের রাজধানী মাদায়েনে পাঠিয়ে দেয়। তখন পারস্যের সম্রাট ছিল আরদশির।

পারস্যের সাথে যুদ্ধ

যাতুস সালাসিল যুদ্ধ

হরমুজ তখন বিশাল বড় সেনাবাহিনী নিয়ে মুসলমানদের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য বের হয়।

সাথে ছিল পারস্যের প্রসিদ্ধ শাহজাদা ও নামকরা পালোয়ানরা। হরমুজ তার সৈন্যদের পায়ে শেকল বেঁধে দেয়। যাতে তারা যুদ্ধের ময়দান থেকে পলায়ন না করে।

এই যুদ্ধটি ছিল আবরদের সাথে অনাবরদের প্রথম যুদ্ধ। তাই বেশ ঘটা করেই প্রস্তুতি নেয়া হয়।

যুদ্ধের সারিতে দাঁড়ানোর পর হযরত খালিদ রা. ময়দানের মাঝখানে এসে মল্লযুদ্ধের আহবান জানান। হরমুজ তখন এগিয়ে আসে।

যখন হরমুজ ও খালিদ রা. পরষ্পর যুদ্ধ করছিল তখনই দুই বাহিনীর মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়।

কাফেরদের একটা অংশ হযরত খালিদ রা. এর উপর আক্রমণ করার জন্য উদ্যত হয়। সে সময় হযরত কা’কা বিন আমর রা. তাদেরকে পিছু হটিয়ে দেন।

দীর্ঘক্ষণ মল্লযুদ্ধ হওয়ার পর হযরত খালিদ রা. হরমুজকে হত্যা করেন।

তাকে হত্যার পর পরই কাফেরদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়ে যায়। তারা পলায়ন করতে থাকে।

তাদের পালোয়ানরা ও সৈন্যরা পায়ের শেকল ভেঙ্গে ভেগে যেতে থাকে। মুসলিমরা তাদের পিছু নিয়ে অসংখ্য সৈন্যদের হত্যা করেন।

এটি হলো ১২ হিজরীর শুরুর দিকের ঘটনা। এ বিষয়ে পুরো মুসলিম বিশ্বে আনন্দের জোয়ার বয়ে যায়।

ছান্নির যু্দ্ধ

হরমুজের সৈন্যরা পলায়ন করতে করতে ছান্নি নামক স্থানে চলে যায়।

সেখানে তখন পারস্যের অন্যতম জেনারেল কারিন অবস্থান করছিল।

সে যখন জানতে পারে, হরমুজ পরাজিত হয়েছে তখন সে ছান্নির ময়দানে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হয়ে যায়।

হযরত খালিদ রা. অগ্রসর হয়ে ছান্নির নিকটে চলে আসেন। সেখানে আবার কাফেরদের সাথে যুদ্ধ হয়।

এই যুদ্ধে জেনারেল কারিন নিহত হয় এবং প্রায় ত্রিশ হাজার কাফের সৈন্য নিহত হয়।

অলাজার যুদ্ধ

পর পর দুইটি পারসিক বাহিনীর পরাজয়ের সংবাদ পৌছে পারস্যের রাজদরবারে।

বেদনায়, হতাশায় আচ্ছন্ন হয়ে যায় তারা। তখন আন্দারযাগর ও বাহমান জাদাবিয়া বিশাল সৈন্য নিয়ে মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য বের হয়। এটা ১২ হিজরীর সফর মাসের ঘটনা।

হযরত খালিদ রা. নিজের বাহিনীর এক তৃতীয়াংশ সৈন্য রণাঙ্গনের পাশে ঝোপঝাড়ে লুকিয়ে রাখেন।

যখন উভয় পক্ষ যুদ্ধ করতে করতে ক্লান্ত হয়ে যায়, তখন খালিদ রা. লুকিয়ে রাখা বাহিনীকে সামনে আনেন।

তাদের দৃঢ় আক্রমণে পারসিক বাহিনী দিশেহারা হয়ে পলায়ন করতে থাকে।

পারসিক বাহিনীর প্রধান আন্দারযাগর প্রচণ্ড পিপাসায় মৃত্যুবরণ করে।

আমগিশিয়ার গণিমত

অলাজারদের সাথে মুসলমানদের যুদ্ধ চলাকালে ইরাক সীমান্তে বসবাসকারী খ্রিষ্টানরা অলাজারদের সহায়তা করে।

খালিদ রা. তাদেরকে উচিৎশিক্ষা দেয়ার জন্য ফুরাত নদীর দিকে অগ্রসর হলেন।

খালিদ রা. শহরে পৌছে তাদের মল্লযুদ্ধের আহবান জানায়। সেখানকার খ্রিস্টান যোদ্ধা মালিক বিন কায়েস তার মোকাবেলায় এগিয়ে আসে। খালিদ রা. তার শরীর থেকে মাথা আলাদা করে ফেলেন। এরপর ব্যাপক যুদ্ধ শুরু হয়।

এই যুদ্ধে ৭০ হাজার পারসিক সৈন্য ও অসংখ্য আরব খ্রিস্টান নিহত হয়। বেঁচে থাকা সৈন্যরা ঘোড়া, গাধা, ধন-সম্পদ রেখেই পলায়ন করে। এরপর এই গণিমতের এক পঞ্চমাংশ তিনি মদীনায় পাঠিয়ে দেন।

আবু বকর সিদ্দিক রা. বলেন, কোনো মা খালিদের মতো বীর সন্তান জন্ম দিতে পারবে না।

হিরা বিজয়

ফুরাত নদীর তীরে আবর খ্রিস্টানদের পুরাতন একটা কেন্দ্র ছিল। মুসলিম বাহিনী অগ্রসর হয়ে সেটা ঘেরাও করে।

শহরের বাসিন্দারা তাদের মোকাবেলা করতে অক্ষম হয়ে পড়ে। তারা তখন তাদের নেতা আমর বিন আব্দুল মাসিহকে সন্ধির জন্য পাঠায়।

খালিদ রা. তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, যুদ্ধ চাও নাকি শান্তি চাও?

সে বললো, শান্তি চাই।

খালিদ রা. আমরের হাতে বিষ দেখে বললেন, তুমি হাতে করে বিষ এনেছ কেন?

সে উত্তর দেয়, যদি সন্ধির আলোচনা করতে আমি ব্যর্থ হই তাহলে নিজ সম্প্রদায়কে কিভাবে মুখ দেখাবো? এর চেয়ে বিষ পান করা উত্তম।

খালিদ রা. তখন বিষের কৌটাটি হাতে নিয়ে বললেন, যতক্ষণ পর্যন্ত তোমার সময় না হবে ততক্ষণ তুমি জীবিত থাকবে।

এরপর তিনি নিম্নোক্ত দোয় পড়ে বিষ পান করলেন,

بسم الله خير الأسماء، رب الارض والسماء، الذي ليس يضر مع اسمه داء، الرحمن الرحيم

অর্থ: ‘সর্বোত্তম নামের অধিকারী আল্লাহর নামে পান করছি, যিনি আকাশ এবং পৃথিবীর প্রতিপালক,

যার অনুমতি ব্যতিত কোনো রোগ ক্ষতি করতে পারে না, যিনি পরম দয়ালু ও মেহেরবান।”

আমর বিন আব্দুল মাসিহ এই দৃশ্য দেখে হতবাক হয়ে যায়। সে বলে ওঠে,

যতদিন পর্যন্ত মুসলমানদের মধ্যে তোমার মতো ব্যক্তিরা থাকবে ততদিন তোমাদের কেউ বাধা দিতে পারবে না।

এরপর হিরার অধিবাসীরা বার্ষিক এক লক্ষ নব্বই হাজার দিরহামের বিনিময়ে সন্ধি চুক্তি করে।

আইনে তামামার যুদ্ধক্ষেত্র

পারস্যের মধ্যে তখন ক্ষমতা দিয়ে দ্বন্দ্ব চলছিল। কিন্তু যখনই মুসলমানরা তাদের উপর আক্রমণ করলো তখন তারা একজোট হয়ে হামলা পরিচালনা করলো।

সে সময় মিহরান সৈন্য নিয়ে ইরাকের উত্তর দিকে আইনে তামারে শিবির স্থাপন করে।

তার সাহায্যের জন্য খ্রিষ্টান আরব সরদার উকবা বিন আবু উকবা নিজের গোত্রের সৈন্যদের নিয়ে অগ্রসর হয়।

যুদ্ধের শুরুতেই খালিদ রা. প্রবল আক্রমণ করে উকবাকে জাহান্নামে পাঠিয়ে দেন।

এটা দেখে শত্রুরা আর নয়া উদ্যমে ঝাঁপিয়ে পড়ার হিম্মত করে নি। তারা তখন নিজের জীবন বাঁচানোর জন্য পালিয়ে একটা দুর্গে আশ্রয় নেয়।

পারসিক বাহিনীর সেনাপ্রধান মিহরান ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পালিয়ে যায়। খালিদ রা. তখন দুর্গটি অবরোধ করে, সেটিও জয় করে নেন।

আরব খ্রিষ্টানদের যুদ্ধ প্রস্তুতি

আইনে তামামার যুদ্ধ শেষ হতে না হতেই আরব খ্রিষ্টান গোত্রগুলো মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে থাকে।

তাদের মধ্যে বনু গাসসান, বনু তানুখ, বনু কালব অন্যতম।

আবু বকর রা. তাদেরকে দমন করার জন্য হযরত ইয়াজ বিন গনাম রা. কে পাঠান।

কিন্তু তিনি একা এতগুলো গোত্রকে মোকাবেলা করতে পারছিলেন না। তাই তিনি খালিদ রা. নিকট সাহায্য চান।

খালিদ রা. কালক্ষেপণ না করেই সেখানে পৌছে গেলেন। খ্রিষ্টান আবরবা খালিদকে আসতে দেখে ঘাবড়ে যায়।

খ্রিস্টানদের নেতা উকাইদির বিন মালিক খালিদ রা. এর সাহসিকতা পারস্য এর বাহিনীর বিরুদ্ধে আগেই প্রত্যক্ষ করেছিল। তাই সে সন্ধি করতে আগ্রহী হয়।

কিন্তু তার গোত্র ও অন্যান্য খ্রিষ্টানরা যুদ্ধ করতে আগ্রহী ছিল।

পরিশেষে খালিদ বিন ওয়ালিদ রা. এর সাথে ঘোরতর যুদ্ধ হয়। এই যুদ্ধে খ্রিষ্টানরা পরাজিত হয়ে দুর্গে আশ্রয় গ্রহন করে।

খালিদ রা. শেষ পর্যন্ত দুর্গও বিজয় করে নেন।

তথ্যসুত্র

মুসলিম উম্মাহর ইতিহাস তৃতীয় খণ্ড

১. মুসলিম উম্মাহর ইতিহাস, ইত্তিহাদ প্রকাশনী। পৃষ্ঠা ৭৩। খণ্ড ৩
২. মুসলিম উম্মাহর ইতিহাস। পৃষ্ঠা ৭৩। খণ্ড ৩
৩. মুসলিম উম্মাহর ইতিহাস। পৃষ্ঠা ৭৪-৮০। খণ্ড ৩

আরো পড়ুন

আবু বকর রা. এর রাজনৈতিক জীবন

মুঈয বিন বাদিশ রহ.

FAQ

খালিদ বিন ওয়ালিদ রা. কে ছিলেন?

খালিদ বিন ওয়ালিদ রা. ছিলেন বিখ্যাত মুসলিম সেনাপতি ও সমর বিশারদ। প্রতিটি যুদ্ধে তিনি বিজয় ছিনিয়ে আনতেন। তিনি খলিফা আবু বকর রা. ওমর রা. সময়কালে দামেষ্ক, ইরান ও আরো বেশ কিছু অঞ্চলে বিধর্মীদের সাথে যুদ্ধ করেছেন।

খালিদ রা. যুদ্ধের ময়দানে কি অফার করতেন?

তিনি বলতেন, হয় তোমরা ইসলাম গ্রহণ করো। নতুবা তোমরা জিজিয়া কর প্রদান করো। অথবা তোমরা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হয়ে যাও।

গাজ্জার জন্য অনুদান

৭ অক্টোবর ২০২৩ তারিখে তুফানুল আকসা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই ফিলিস্তিনের গাজ্জায় অসংখ্য মানুষ আহত ও শহীদ হয়েছে। বহু মানুষ নিজেদের ঘর-বাড়ী হারিয়েছে। এছাড়াও বর্তমানে গাজ্জার ৯৮% মানুষ অনাহারে জীবন-যাপন করছে। গাজ্জার মানুষের এই দুঃসময়ে আমরা যদি তাদের পাশে না দাঁড়াই তাহলে কে দাঁড়াবে?

আর-রিহলাহ ফাউন্ডেশন তুফানুল আকসা যুদ্ধের শুরু থেকেই ফিলিস্তিনের গাজ্জার জন্য ডোনেশন সংগ্রহ করে আসছে। এই মহান কাজে আপনিও আমাদের সাথে যুক্ত হতে পারেন।

অনুদান দিন

Scroll to Top