মক্কা বিজয়ের দিন আবু বকর – হুদাইবিয়ার সন্ধির পর মুসলমানরা কুরাইশদের সাথে দীর্ঘ একটা যুদ্ধবিরতি পেল।  ফলে ইসলামের আলো ছড়িয়ে পড়লো দূর বহুদূর।

এরইমাঝে রাসূলের সাহাবাদের সাথে মূতার যুদ্ধ ও খাইবারের যুদ্ধ সংগঠিত হলো। ছোট ছোট আরো বেশ কিছু গাযওয়া সংগঠিত হলো।

ঠিক এই সময় কুরাইশরা বড় একটি ভুল করে বসে। বনু বকর ইবনে ওয়াইল গোত্র বনু খুজাআর উপর আক্রমণ করে বসে। বনু খুজাআও তখন এই চুক্তির অন্তর্ভূক্ত ছিল।

এমনকি তারা এই হামলার মাঝেই ক্ষান্ত থাকে নি, কুরাইশদের বড় বড় নেতারা এই হামলার পেছনে মদদ জুগিয়েছে।

রাসূল সা. এর নিকট বনু খুজআর একজন মজলুম ব্যক্তি এসে এই সংবাদ জানালো। মুহাম্মাদ সা. বললেন, আমি অবশ্যই তোমাদের সাহায্য করবো ইনশাল্লাহ।

যেহেতু চুক্তি অনুযায়ী এটা গর্হিত একটি কাজ ছিল, তাই রাসূল সা. কুরাইশদের নিকট দূত প্রেরণ করলেন। কুরাইশদেরকে দূতের মাধ্যমে বললেন,

হয় তোমরা বনু খুজাআর রক্তপণ আদায় করো। কিংবা নিজেদের এর থেকে সম্পর্কহীনতা ঘোষণা দাও। অথবা হুদাইবিয়ার সন্ধির সমাপ্ত ঘোষণা করো।

কুরাইশরা আত্মগর্বে জবাব দেয়, আমরা সন্ধি সমাপ্ত ঘোষণা করছি। নবীজির দূত তখন মদীনায় এসে এই কথা নবীকে জানায়।

আবু সুফিয়ানের মদীনা আগমণ

নবীজির দূতকে ফেরৎ পাঠানোর পর তারা বুঝতে পারলো, কাজটি উচিৎ হয় নি। তাই মক্কার অন্যতম বড় নেতা আবু সুফিয়ানের মদীনায় আসলো।

সে নবীজিকে বললো, মুহাম্মাদ সন্ধিচুক্তির মেয়াদ আরো বাড়িয়ে নিন এবং তা আরো দৃঢ় করে নিন।

নবীজি তখন তীর্যক ভাষায় বললো, তুমি কি এ জন্যই মদীনায় এসেছ? তবে কি তোমরা কোনো চুক্তিভঙ্গ করেছ?

আবু সুফিয়ান বললো, আল্লাহর কাছে পানাহ চাই। আমরা হুদাইবিয়ার সন্ধির উপর দৃঢ় আছি।

নবীজি তখন তাকে কোনোরূপ উত্তর প্রদান করেন নি। এরপর আবু সুফিয়ান আবু বকরের নিকট চলে যায়। তার নিকট সন্ধির মেয়াদ বৃদ্ধি এবং তা নবায়ন করার অনুরোধ করে।

কিন্তু আবু বকর রা. স্পষ্ট বলে দেন, আল্লাহর শপথ, আমি যদি পিপিলিকাকে তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে দেখি তাহলে তাদেরকে আমি সহায়তা করবো।

নবীজির মক্কা বিজয়ের প্রস্তুতি

এই ঘটনার পর আবু বকর রা. তার মেয়ে আয়েশার ঘরে যান। মেয়েকে তিনি কোনো যুদ্ধ হবে নাকি এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করেন।

কিন্তু মেয়ে কিছু জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন। তখন নবীজি ঘরে আসলেন। আবু বকর রা. তখন নবীজিকে বললেন,

হে আল্লাহর রাসূল, আপনি কি কোনো যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছেন?

নবীজি বললেন, হ্যাঁ।

আবু বকর রা. বললেন, কার বিরুদ্ধে? রোমানদের বিরুদ্ধে

নবীজি বললেন, না।

এরপর আবু বকর রা. বললেন, তাহলে কি নাজদবাসীর বিরুদ্ধে? নবীজি বললেন, না। এরপর আবু বকর রা. বললেন, তাহলে খুব সম্ভব আপনি কুরাইশদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবেন?

নবীজি বললেন, হ্যাঁ। আবু বকর রা. তখন বললেন, সন্ধির মেয়াদ তো এখনো বাকী আছে। নবীজি তখন বললেন, তারা চুক্তিভঙ্গ করেছে। তুমি কি বনু খুজআর সঙ্গে কি ঘটেছে তা জানো না?

আবু বকর রা. তখন যুদ্ধের প্রস্তুতি গ্রহণ শুরু করলেন।

মক্কা অভিযানের তারিখ

আল্লামা ইবনে ইসহাক র. আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস হতে বর্ণনা করেন, রাসূল সা. ৮ম হিজরীর রমজান মাসের ১০ তারিখে  মদীনা ত্যাগ করেন।

ইমাম বাইহাকী রহ. ইবনে আব্বাস হতে বর্ণনা করেন, রমজান মাসেই বিজয় অভিযান পরিচালিত হয়েছে।

ইমামা বুখারী রহ. ও ইউনুস রহ. ও ইবনে আব্বাস হতে রমজান মাসে সফরের কথা উল্লেখ করেছেন।

মুসলিম উম্মাহর ইতিহাস গ্রন্থে উল্লেখ আছে, মক্কা বিজয় সংগঠিত হয়েছে ৮ম হিজরীর রমজান মাসে। তবে এটা মাদানী বর্ষপঞ্জিকার রমজান মাস ছিল না।

কারণ, হিসাব অনুযায়ী তখন মাদানী বর্ষপঞ্জিকার তারিখ হলো, ৯ হিজরীর সফর মাস। তবে ঐতিহাসিকরা এই ঘটনাকে মক্কী বর্ষপঞ্জিকা অনুযায়ী বর্ণনা করেছেন।

মক্কায় প্রবেশকালে আবু বকর রা.

মক্কা বিজয়ের দিন আবু বকর – যখন নবী সা. মক্কা বিজয়ের দিন সাহাবাদের নিয়ে মক্কার নিকটবর্তী হলেন তখন আবু বকরও রাসূলের পাশে ছিলেন।

নবীজি দেখতে পেলেন, নারীরা মুসলমানদের ঘোড়াগুলোর দিকে হতাশ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। নবীজি তখন আবু বকরের দিকে তাকিয়ে বললেন,

হাসসান (হযরত হাসসান বিন সাবেত রা.। একজন বিখ্যাত কবি ছিলেন তিনি।) কি যেন বলেছিল?

কবিতাটি তখন আবু বকর রা. আবৃতি করলেন,

যদি আমাদের অশ্বারোহীদের ধূলি উড়িয়ে কিদার দিকে যেতে না দেখ,

তাহলে তোমরা ধ্বংস হয়ে যাও।

বর্শা চালাতে আমরা পুরোপুরিভাবে মোকাবেলা করছি,

তাদের কাঁধে রয়েছে তীর ও তরবারী।

আমাদের ঘোড়াগুলো দ্রুততায় পরষ্পরের প্রতিযোগী,

মহিলারা ওড়না দিযে ঘোড়ার ধূরের দূলি থেকে নিজের রক্ষা করে।

নবীজি তখন বললেন, হাসসান যেই দিকের কথা বলেছে, সেদিক দিয়ে মক্কায় প্রবেশ করো। অর্থাৎ কিদা এলাকা নিয়ে মক্কায় প্রবেশ করো।

মক্কা বিজয়ের দিন আবু বকর রা. এর পিতা আবু কুহাফা ইসলাম গ্রহণ করেন।

তথ্যসুত্র

১. মুসলিম উম্মাহর ইতিহাস। মাওলানা ইসমাইল রেহান। খণ্ড ২। মাকতাবাতুল ইত্তিহাদ। পৃষ্ঠা ২৪১-২৪২

আবু বকর সিদ্দিক রা.। ড. আলী সাল্লাবী। কালান্তর প্রকাশনী। পৃষ্ঠা ১১৯

২. আবু বকর সিদ্দিক। পৃষ্ঠা ১২০

৩. আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া। খণ্ড ৪। ইসলামিক ফাউন্ডেশন। পৃষ্ঠা ৪৮৫

৪. মুসলিম উম্মাহর ইতিহাস। খণ্ড ২। পৃষ্ঠা ২৮৬

আরো পড়ুন

মুসান্না বিন হারিসা রা. ও ইরাক

খালিদ বিন ওয়ালিদ রা. এর পারস্য অভিযান

মুইয বিন বাদিশ কে ছিলেন

FAQ

মক্কা বিজয় কত হিজরী সনে অনুষ্ঠিত হয়?

৮ম হিজরীর রমজান মাসের ১০ তারিখ মক্কা বিজয় হয়।

মক্কা বিজয়ের সময় মুসলিম বাহিনীর সংখ্যা কত ছিল

প্রায় দশ হাজারের অধিক।

মক্কা বিজয়ের সময় কাবা ঘরের চাবি কার কাছে ছিল

হযরত উসমান বিন তালহা রা. এর নিকট।

গাজ্জার জন্য অনুদান

৭ অক্টোবর ২০২৩ তারিখে তুফানুল আকসা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই ফিলিস্তিনের গাজ্জায় অসংখ্য মানুষ আহত ও শহীদ হয়েছে। বহু মানুষ নিজেদের ঘর-বাড়ী হারিয়েছে। এছাড়াও বর্তমানে গাজ্জার ৯৮% মানুষ অনাহারে জীবন-যাপন করছে। গাজ্জার মানুষের এই দুঃসময়ে আমরা যদি তাদের পাশে না দাঁড়াই তাহলে কে দাঁড়াবে?

আর-রিহলাহ ফাউন্ডেশন তুফানুল আকসা যুদ্ধের শুরু থেকেই ফিলিস্তিনের গাজ্জার জন্য ডোনেশন সংগ্রহ করে আসছে। এই মহান কাজে আপনিও আমাদের সাথে যুক্ত হতে পারেন।

অনুদান দিন

Scroll to Top