আবু কুহাফা রা. – হযরত আবু কুহাফা রা. ছিলেন বিখ্যাত সাহাবী আবু বকর রা. এর পিতা। তিনি ছিলেন দীর্ঘ হায়াত প্রাপ্ত একজন ব্যক্তি। আল্লাহ তাকে চার প্রজম্ম পর্যন্ত দেখার সুযোগ দিয়েছেন।

হযরত আবু কুহাফা রা. এর মূল নাম ছিল উসমান ইবনে আমের আল তাইমী আল কুরাইশী। তিনি ছিলেন বিখ্যাত কুরাইশ বংশের “তাইম” শাখার গুরুত্বপূর্ণ একজন ব্যক্তি।

আবু কুহাফা

আবু কুহাফা রা. এর বংশ পরিচয়

আবু কুহাফার বাবার নাম ছিল আমের। তিনি ছিলেন কুরাইশ বংশের বনু তাইম গোত্রের সদস্য।

তার বংশীয় নসব হলো,

তার বাবার নাম আমর, তার বাবার নাম কা’ব, তার বাবার নাম সাঈদ, তার বাবার নাম তাইম, তার বাবার নাম মুররা, তার বাবার নাম কা’ব ।

মুররা বিন কা’ব এর সাথে গিয়ে আবু কুহাফার বংশ কুরাইশের বিখ্যাত হাশেম গোত্রের সাথে মিলে যায়।

আবু কুহাফার মায়ের নাম ছিল কিলাহ্। তিনি ও ছিলেন বিখ্যাত কুরাইশ বংশের সন্তান।

তার বংশীয় নসব হলো,

তার বাবার নাম ছিল আদা, তার বাবার নাম ছিল রিয়াহ, তার বাবার নাম ছিল আব্দুল্লাহ, তার বাবার নাম ছিল ক্বরত, তার বাবার নাম ছিল রজাখ, তার বাবার নাম ছিল আদি, তার বাবার নাম ছিল কা’ব।

(অ্যারাবিক উইকিপিডিয়া থেকে সংগ্রহীত,

সেখানের তথ্যানুযায়ী উপরোক্ত নসবগুলো সংগ্রহ করা হয়েছে,

ইকমালুল কামাল, লেখক ইবনে মাকুলা, খণ্ড ৭, পৃষ্ঠা ৩০

নসবু কুরাইশ, লেখক মুসআব আল যুবাইরী, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ১২২)

আবু কুহাফার জন্ম

উসমান ইবনে আমের আল কুহাফা জন্মগ্রহন করেন ১ জুলাই ৫৪২ খৃষ্টাব্দে। তার জন্মস্থান হলো, আরবের অন্যতম উল্লেখযোগ্য শহর মক্কায়।

আবু কুহাফার শৈশবকাল

আবু কুহাফা মক্কা শহরেই শৈশব থেকে বসবাস করতেন। তিনি শৈশবকালে গুরুত্বপূর্ণ অনেক কাজ করেছেন।

যা তাকে পরবর্তীতে মক্কার উল্লেখযোগ্য একজন ব্যক্তি হিসেবে গড়ে তুলতে সাহায্য করে।

আবু কুহাফার স্ত্রী

আমের আবু কুহাফা (উসমান ইবনে আমের) রা. এর স্ত্রীর নাম হলো সালমা বিনতে সাখর। যিনি উম্মুল খায়ের নামে প্রসিদ্ধ ছিলেন।

আবু কুহাফার সন্তানগণ

আমের আবু কুহাফার ঘরে প্রথমে কয়েকজন সন্তান জন্মগ্রহন করে। কিন্তু শৈশবেই তারা ইন্তিকাল করে।

আবু বকর রা. এর জন্ম হওয়ার পর যখন দেখা গেল, তিনি জীবিত তখন তার নাম দেয়া হয় আতিক (মুক্তিপ্রাপ্ত) নামে।

পরবর্তীতে আরো দুইজন পুত্র সন্তান আবু কুহাফার ঘরে জন্মগ্রহন করে।

( বাংলা উইকিপিডিয়ার তথ্যানুযায়ী এটা বর্ণিত আছে,

তারিখুল খুলাফা নামক গ্রন্থে। যার লেখক জালালুদ্দিন সুয়ুতী।

হযরত আবু বকর রা. জীবনী, সোলেমানিয়া বুক হাউজ থেকে প্রকাশিত, পৃষ্ঠা ১৪)

আবু বকর রা. এর ইসলাম গ্রহন ও আবু কুহাফার প্রতিক্রিয়া

রাসূল সা. যখন ইসলাম প্রচার শুরু করলেন তখন আবু বকর রা. ছিলেন তার বিশ্বস্ত বন্ধু। আবু বকর রা. নবুয়তের দ্বিতীয় দিনই ইসলাম গ্রহন করেন।

আবু কুহাফা তখনও ইসলাম গ্রহন করেন নি। কিন্তু তিনি পুত্রের এমন পরিবর্তনে কোনো বাধা দিলেন না।

“কিন্তু তিনি আলী রা. দেখিয়ে বলতেন, এই ছেলেপেলেরা আমার ছেলেটাকেও বিভ্রান্ত করে ফেলেছে।”

আবু বকর রা. এর হিজরতের দিনকার ঘটনা

যখন আবু বকর রা. নবীজির সাথে মক্কা ত্যাগ করে মদীনার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলেন তখন তিনি সাথে করে তখন তিনি সাথে করে সব টাকা-পয়সা নিয়ে গেলেন। যার ছিল প্রায় ৫০০ মুদ্রা বা ৬০০ মুদ্রার মতো।

আবু কুহাফা তখন খুব বৃদ্ধ ছিলেন। তাই তিনি চোখে খুব কম দেখতেন। তিনি তার নাতি অর্থাৎ আবু বকর রা. এর মেয়ে আসমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, সে কি সব কিছু নিয়ে চলে গেছে?

আসমা রা. বললেন, না। তিনি তো আমাদের জন্য কিছুটা রেখে গেছেন।

তখন আসমা রা. ঘরের এককোণে কিছু কঙ্করের টুকরো কাপড়ে মুড়িয়ে রাখলেন। এরপর তিনি আবু কুহাফার হাত সেখানে বুলিয়ে দিলেন। তখন আবু কুহাফা বললেন,

তাহলে তো সে তোমাদের জন্য অনেক কিছুই রেখে গেছে। এতে তোমাদের দিন চলে যাবে।

(অ্যারাবিক উইকিপিডিয়ার তথ্যানুযায়ী উক্ত ঘটনাটি বর্ণিত রয়েছে,

সিয়ারু আ’লামীন নুবালাহ্, খণ্ড ২, ‍পৃষ্ঠা ২৯০

লেখক, ইমাম শামসুদ্দিন যাহাবী রহ.

তাহকীক, শুয়াইব আল আরনাউত

সনদের মান: সহীহ।)

আবু কুহাফার ইসলাম গ্রহণ

মক্কা বিজয়ের দিন আবু কুহাফা তার ছোট মেয়ের সাথে পাহাড়ের উপরে উঠে মেয়েকে বললেন, তুমি কি দেখতে পাচ্ছ? সে বললো, একটি সুশৃঙ্খল দল এগিয়ে আসছে। তারা নিজের পতাকা উত্তোলন করে সামনে অগ্রসর হচ্ছে।

এরপর আবু কুহাফা বাড়ি ফেরার আগেই মুসলিম বাহিনীর সামনে পড়ে গেল। আবু বকর রা. তখন তার পিতার নিকট এগিয়ে আসলেন। তিনি তখন তাকে রাসূল সা. এর নিকট নিয়ে গেলেন।

রাসূল সা. তার বুকে হাত রেখে বললেন, ইসলাম গ্রহন করে নিজেকে সংশোধন করুন।

তখন আবু কুহাফা রা. ইসলাম গ্রহন করলেন।

(অ্যারাবিক উইকিপিডিয়ার তথ্যানুযায়ী

তাবাকাতে ইবনে সা’দ , ইবনে সা’দ আল বাগদাদী, খণ্ড ৫, পৃষ্ঠা ৪৫১)

মৃত্যু

আবু  বকরের বাবা প্রায় ৯৭ বছর হায়াত পেয়েছিলেন। তিনি খলিফা ওমর রা. যামানায় ইন্তিকাল করেন। অর্থাৎ তার ছেলে আবু বকর রা. তার আগে ইন্তিকাল করেন।

আবু বকর রা. ১৩ হিজরী মোতাবেক ৬৩৪ খৃষ্টাব্দে মদীনায় ইন্তিকাল করেন। যখন আবু কুহাফা এই সংবাদ পেলেন তখন তিনি বললেন, এটা তো বড় একটি বিপর্যয়। এখন তার পরে কে খলিফা হয়েছে?

লোকেরা বললো, ওমর খলিফা হয়েছে।

তখন আবু কুহাফা বললেন, সে আবু বকরের সঙ্গী ছিল।

(ইংরেজি উইকিপিডিয়ার তথ্যানুযায়ী

তারিখুল খুলাফা, জালালুদ্দিন সুয়ূতি।)

আবু কুহাফা রা. কখনো মক্কার বাহিরে যান নি বিধায় তিনি এর কয়েকমাস পরে মক্কাতেই ১৪ হিজরীর মুহররম মাসে ইন্তিকাল করেন।  ইংরেজি তারিখ অনুযায়ী ৬৩৫ খৃষ্টাব্দ।

আবু কুহাফা রা. চান্দ্র বছর অনুযায়ী ৯৭ বছর হায়াত পেয়েছেন। আর সৌর বছর অনুযায়ী ৯৪ বা ৯৫ বছর হায়াত পেয়েছিলেন।

তথ্যসুত্র

১. আরবি উইকিপিডিয়া

২. আবু বকর রা. জীবনী, পৃষ্ঠা ১২

৩. ইংরেজি উইকিপিডিয়া

আবু কুহাফা কে ছিলেন?

আবু কুহাফা ছিলেন হযরত আবু বকর রা. এর পিতা

আবু কুহাফা কবে জন্মগ্রহন করেন?

তিনি ৫৪২ খৃষ্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন।

আবু কুহাফা কোন বংশের ছিল?

আবু কুহাফা বিখ্যাত কুরাইশ গোত্রের শাখা গোত্র বনু তাইম গোত্রের লোক ছিল।

আবু কুহাফা কবে মারা যান?

তিনি ১৪ হিজরী মোতাবেক ৬৩৫ খৃষ্টাব্দে মৃত্যুবরণ করেন।

গাজ্জার জন্য অনুদান

৭ অক্টোবর ২০২৩ তারিখে তুফানুল আকসা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই ফিলিস্তিনের গাজ্জায় অসংখ্য মানুষ আহত ও শহীদ হয়েছে। বহু মানুষ নিজেদের ঘর-বাড়ী হারিয়েছে। এছাড়াও বর্তমানে গাজ্জার ৯৮% মানুষ অনাহারে জীবন-যাপন করছে। গাজ্জার মানুষের এই দুঃসময়ে আমরা যদি তাদের পাশে না দাঁড়াই তাহলে কে দাঁড়াবে?

আর-রিহলাহ ফাউন্ডেশন তুফানুল আকসা যুদ্ধের শুরু থেকেই ফিলিস্তিনের গাজ্জার জন্য ডোনেশন সংগ্রহ করে আসছে। এই মহান কাজে আপনিও আমাদের সাথে যুক্ত হতে পারেন।

অনুদান দিন

Scroll to Top