ওমর এর সময়ে রাষ্ট্রের সীমানা

ওমর এর সময়ে রাষ্ট্রের সীমানা কেমন ছিল তা আমাদের জানা উচিৎ। হযরত ওমর রাঃ প্রায় ১০ বছর খেলাফতের দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি মুসলমানদের প্রধান ছিলেন। তার সময়ে ইসলামী রাষ্ট্রের সীমানাও বৃদ্ধি পেয়েছিল।

সে সময় রাষ্ট্রীয় সুবিধার্থে পুরো সাম্রাজ্য কয়েকটি প্রদেশে বিভক্ত ছিল। ওমর রাঃ এসব  প্রদেশে দক্ষ গভর্নর নিযুক্ত করে ইসলামী রাষ্ট্রকে আরো উপরে নিয়ে যান।

মক্কা – ওমর এর সময়ে রাষ্ট্রের সীমানা

হযরত উমর রাঃ এর সময় মক্কার গভর্নর প্রথম ছিলেন মুহরিয ইবনে হারিসা রাঃ। পরবর্তীতে উমর রাঃ কুনফুজ ইবনে উমাইর রাঃ কে নিযুক্ত করেন।

এই দুইজন সাহাবীর ব্যাপারে তেমন কোনো তথ্য পাওয়া যায় না। পরবর্তীতে হযরত নাফে বিন হারিস রাঃ কে উমর রাঃ গভর্নর নিযুক্ত করেন।

নাফে বিন হারিস রাঃ মৃত্যুপর্যন্ত গভর্নর নিযুক্ত ছিলেন। আমরা তার গভর্নর থাকাকালীন সময়ের কিছু ঘটনা উল্লেখ করছি।

হযরত ওমর রাঃ একবার হজ্জের সময় মক্কায় আগমন করলেন। তখন তার সাথে মক্কার বাহিরে নাফে রাঃ এর সাক্ষাৎ হয়।

তিনি তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, মক্কায় কাকে তোমার নায়েব নিযুক্ত করে এসেছ?

নাফে রাঃ বললেন, ইবনে আবযাকে।

ওমর রাঃ বললেন, ইবনে আবযা কে?

নাফে রাঃ তখন জবাব দিলেন, আমাদের একজন ক্রীতদাস সে।

ওমর রাঃ তখন অবাক হয়ে বললেন, মক্কাবাসীদের জন্য তুমি একজন ক্রীতদাসকে হাকিম নিযুক্ত করে এসেছ?

তখন নাফে রাঃ জবাবে বললেন, ইবনে আবযা একজন হাফেজে কুরআন ও আমিল। সে ফারায়েজ শাস্ত্রে বা ইসলামী উত্তরাধিকার শাস্ত্রে বেশ অভিজ্ঞ।

ওমর রাঃ তখন হেসে বললেন, রাসূল সা. সত্য বলেছেন যে, এই কুরআনের মাধ্যমে আল্লাহ বহু মানুষকে সম্মানিত করেছেন। আর বহু মানুষকে অপদস্ত করেছেন।

ওমর এর সময়ে রাষ্ট্রের সীমানা এর আওতায় এই পবিত্র মক্কা নগরী ছিল। অবশ্য এটি নবীজির সময়কাল থেকেই মুসলমানদের আওতায় ছিল।

মদীনা – ওমর এর সময়ে রাষ্ট্রের সীমানা

মদীনা ছিল ইসলামী রাষ্ট্রের কেন্দ্র। তাই মদীনার গভর্নর থাকতেন খলিফা নিজেই। কারণ, খলিফা মদীনাতেই অবস্থান করতেন।

ওমর রাঃ খলিফা হওয়ার পর যখন মদীনায় না থাকতেন তখন যোগ্য কাউকে তা নায়েব নিযুক্ত করে যেতেন। আর সেই নায়েব তখন নতুন কেসগুলো সমাধান করতেন।

তায়েফ

ওমর রাঃ এর খেলাফতকালে তায়েফ ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ শহর। এখানে জিহাদী কার্যক্রমকে শক্তিশালী করার জন্য সেনাবাহিনী থাকতো।

রাসূল সাঃ এর যুগ থেকে এখানে গভর্নর ছিলেন উসমান ইবনে আবুল আস রাঃ। ওমর রাঃ এর খেলাফতকালে তিনি দুই বছর উক্ত পদে বহাল থাকেন।

তার অন্তরে জিহাদের আকাঙ্খা জাগ্রত ছিল। তাই তনি জিহাদে অংশগ্রহণ করতে ওমর রাঃ এর নিকট অনুমতি চান।

তখন উমর রাঃ বললেন, রাসূল সাঃ আপনাকে নিযুক্ত করেছেন। আপনাকে আমি অব্যাহত দিতে পারি না।

আপনি না চাইলে তায়েফবাসীর মধ্য থেকে তাদের একজন আমির নিযুক্ত করে দিন।

পরবর্তীতে উসমান ইবনে আবুল আস রাঃ কে বাহরাইনের গভর্নর নিযুক্ত করেছিলেন। 

উসমান উবনে আবুল আস রাঃ এর পর তায়েফের গভর্নর হন সুফিয়ান ইবনে আব্দুল্লাহ সাকাফি রাঃ।

ইয়ামান – ওমর এর সময়ে রাষ্ট্রের সীমানা

হযরত ‍উমর রাঃ যখন খেলাফতের মসনদে আরোহন করেন তখন ইয়ামেন অত্যন্ত নিরাপদ ও স্থিতিশীল অবস্থায় ছিল।

উমর রাঃ ইয়ামানে আবু বকর রাঃ এর নিযুক্ত আমীরদের বহাল রাখেন।

ইয়ালা ইবনে উমাইয়া রাঃ কে আবু বকর রাঃ ইয়ামেনের গভর্নর করে পাঠিয়েছিলেন।

উমর রাঃ এর খেলাফতকালেও তিনি ইয়ামানের গভর্নর ছিলেন। হযরত ওমর রাঃ এর যুগে তিনি ব্যপক সুনাম-সুখ্যাতি অর্জন করেন।

বাহরাইন

উমর রাঃ যখন খেলাফতের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন তখন বাহরাইনের গভর্নর ছিলেন আলা ইবনে হাযরামি রাঃ। তিনি তার স্বপদেই বহাল থাকেন।

আলা ইবনে হাযরামি রাঃ পারস্যের বিভিন্ন এলাকায় সংগঠিত  যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তিনি সেসব যুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন।

উমর রাঃ পরবর্তীতে আলা ইবনে হাযরামি রাঃ কে গভর্নরের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়েছিলেন। এর কারণ হিসেবে বলা হয়,

তিনি উমর রাঃ এর অনুমতি ব্যতিতই পারস্যের উপর নৌপথে আক্রমণ করেন। উমর রাঃ মুসলিম সেনাদের নৌপথে আক্রমণ পছন্দ করতেন না।

আলা ইবনে হাযরামি রাঃ কে অব্যাহতি দেয়ার কিছুদিন পর তার ইন্তিকাল হয়ে যায়।

পরবর্তীতে বাহরাইনের গভর্নর হিসেবে নিযু্ক্ত হন উসমান ইবনে আবুল আস রাঃ।

তিনি দায়িত্ব পাওয়ার পরই বাহরাইনের পার্শ্ববর্তী পারস্যের অন্তর্ভুক্ত এলাকাতে জিহাদি কার্যক্রম অব্যাহত রাখেন। উমর রাঃ তাকে বলেছিলেন,

সামরিক কর্মকান্ডে তুমি মুসা আশআরী রাঃ এর সাহায্য গ্রহণ করবে। পরবর্তীতে বাহরাইনের গভর্নর নিযুক্ত করা হয় আবু কুদামা রাঃ।

তার পরে সেখানের গভর্নর হন আবু হুরায়রা রাঃ।

মিসর

মিসরে ইসলামের দাওয়াত নিয়ে আগমন করেন সাহাবী আমর ইবনে আস রাঃ। বিজয়ের পর তাকেই সেখানের গভর্নর নিযুক্ত করেন উমর রাঃ।

আমর ইবনে আস রাঃ ওমর রাঃ পুরো সময়ে মিসরের নিযুক্ত গভর্নর ছিলেন।

মিসর যেহেতু অনেক বড় একটি প্রদেশ ছিল, তাই আমর ইবনে আস রাঃ সেখানে আরো কিছু আমীর নিযুক্ত করেন।

তারা হলেন, আব্দুল্লাহ ইবনে সা’দ রাঃ। আবু আসরাহ রাঃ।

আমর ইবনে আস রাঃ সর্বদা মানুষের যোগ্যতার মূল্যায়ন করতেন। তিনি দক্ষ ব্যক্তিদের কারিগরি কাজে নিযুক্ত করেন। এখানে তিনি কোনো ধর্মীয় ভেদাভেদ তৈরি করেন নি।

ওমর এর সময়ে রাষ্ট্রের সীমানা এর আওতায় তখন মিসর চলে এসেছিল। এটি ছিল মুসলমানদের অন্যতম বিজয়।

কারণ, এর মাধ্যমেই ফিলিস্তিনে মুসলমানদের অভিযান পরিচালনা সহজ হয়ে যায়।

শাম ও তা আশপাশের অঞ্চল

বর্তমানের শামের সীমানা আর তৎকালীন শামের সীমানা এক নয়। পূর্বে শাম বলতে সিরিয়া ও ফিলিস্তিন সহ আরো বেশ কিছু ভূমিকে বুঝানো হতো।

আবু বকর রাঃ এর সময়ে শামের সেনাপ্রধান ও দায়িত্বশীল ছিলেন খালিদ বিন ওয়ালিদ রাঃ।

হযরত ওমর রাঃ খেলাফতের দায়িত্ব গ্রহণের পর তাকে অবসর দেন।

যাতে মানুষ খালিদ রাঃ এর অধিক বিজয় অর্জনের কারণে আকীদাগতভাবে বিভ্রান্ত না হয়।

তাই ওমর রাঃ আবু উবায়দা রাঃ কে শামের প্রধান হিসেবে নিযুক্ত করেন।

আর খালিদা রাঃ কে জিহাদী কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে বলেন। আবু উবায়দা রাঃ তখন শামের ব্যবস্থাপনাকে নতুনরূপে সজ্জিত করলেন।

আবু উবায়দা রাঃ তখন ইয়াজিদ ইবনে আবু সুফিয়ান রাঃ কে ফিলিস্তিনের গভর্নর নিযুক্ত করেন।

শুরাহবিল বিন হাসানা রাঃ কে জর্ডানের গভর্নর নিযুক্ত করেন।

দামেষ্কের গভর্নর বা প্রশাসক নিযুক্ত করেন খালিদ বিন ওয়ালিদ রাঃ কে। হিমসের গভর্নর নিযুক্ত করেন হাবিব ইবনে মাসলাম রাঃ কে।

ইরাক ও পারস্যের রাজ্য সমূহ

হযরত আবু বকর রাঃ এর যামানায় ইরাকে মুসলিম বিজয় শুরু হয়। তারপর থেকে শুরু হয় বিজয়ের এক নতুন ধারা।

এই বিজয়ের নেতৃত্বে ছিলেন হযরত মুসান্না বিন হারিসা রাঃ। তিনি তখন ছিলেন ইরাকের গভর্নর।

পরবর্তীতে খালিদ বিন ওয়ালিদ রাঃ ইরাকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

খালিদ রাঃ যখন তার বাহিনী নিয়ে শামে যাত্রা শুরু করলেন তখন আবার ‍মুসান্না রাঃ কে গভর্নর নিযুক্ত করা হলো।

হযরত ওমর রাঃ এর খেলাফতকালে তিনি মুসান্না বিন হারিসা রাঃ কে অবসর দিয়ে দেন।

এরপর সেখানে নতুন গভর্নর নিযুক্ত করা হয় আবু উবাইদ ইবনে মাসউদ সাকাফি রাঃ।

মুসান্না বিন হারিসা রাঃ জিহাদ করতে পছন্দ করতেন।

তাই তিনি গভর্নরের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি পাওয়ার পর জিহাদে শরীক হন। ওমর রাঃ এর নিযুক্ত গভর্নর আবু উবাইদ সাকাফি রাঃ এক হিজাদের ময়দানে শহীদ হন।

এরপর মুসান্না রাঃ কিছুদিনের জন্য আবার ইরাকের শাসনভার গ্রহণ করেন। এই দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি তিনি জিহাদের লিপ্ত থাকতেন।

ওমর রাঃ তখন নতুন একজনকে গভর্নর হিসেবে পাঠানোর জন্য মনস্থ করলেন। তিনি সাদ বিন আবি ওয়াক্কাস রাঃ কে ইরাকে পাঠালেন দায়িত্ব পালনের জন্য।

কিন্তু তিনি ইরাকে পৌছার পূর্বেই মুসান্না বিন হারিসা রাঃ ইন্তিকাল করেন। তার ইন্তিকালের পূর্বে জিসর নামক যুদ্ধে তিনি মারাত্মক আহত হন। সেই ক্ষতস্থানের থেকেই তার মৃত্যু ঘটে।

বসরা – ওমর এর সময়ে রাষ্ট্রের সীমানা

উমর রাঃ বসরা আবাদযোগ্য হওয়ার পূর্বে সেখানে কুতাবা ইবনে কাতাদা রাঃ এর সাহায্যে সাদ ইবনে বকর গোত্রের শুরাইহ ইবনে আমের রাঃ কে পাঠিয়েছিলেন।

তারপর তাকেই বসরা ও তার আশপাশের গভর্নর নিযুক্ত করেন। পরবর্তী সময়ে তিনি কোনো এক জিহাদের ময়দানে শহীদ হন।

শুরাইহ ইবনে আমের রাঃ এর শাহাদাতের পর উমর রাঃ উতবা ইবনে গাজওয়ান রাঃ কে একটি সেনাদলের সঙ্গে সেখানকার আমির নিযুক্ত করলেন।

একবার হজ্জের সময়ে ‍উতবা রাঃ উমর রাঃ এর নিকট পদত্যাগপত্র জমা দিলে তিনি তা গ্রহণ করেন নি। উমর রাঃ বললেন,

আপনি ফিরে যান ও দায়িত্ব পালন করুন। ফেরার পথেই তিনি ইন্তিকাল করেন। উতবা রাঃ এর পরে মুগিরা ইবনে শুবা রাঃ কে গভর্নর নিযুক্ত করা হলো।

তিনি সর্বপ্রথম রেজিষ্টার করা চালু করেন। তিনি জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করে যান।

কুফা – ওমর এর সময়ে রাষ্ট্রের সীমানা

সর্বপ্রথম সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস রাঃ কুফা শহরের গভর্নর নিযুক্ত হন। পরবর্তীতে কূফার গভর্নরের দায়িত্ব পালন করেন আম্মার ইবনে ইয়াসার রাঃ।

তিনি প্রায় ১ বছর ৯ মাস দায়িত্ব পালনের পর ওমর রাঃ জুবাইর ইবনে মুতইম রাঃ কে কুফার গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব প্রদান করলেন।

কিন্তু তার ছোট একটি ভুলের কারণে ওমর রাঃ তাকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি প্রদান করে অন্য একটি দায়িত্ব প্রদান করেন।

আর কুফার দায়িত্ব প্রদান করেন মুগিরা বিন শুবা রাঃ কে।

তথ্যসুত্র

জীবন ও কর্ম: ওমর রাঃ। খন্ড ২। পৃষ্ঠা ১৪-৪১

ওমর রাঃ কেন খালিদ রাঃ কে অব্যাহতি দিয়েছিলেন?

যাতে মানুষ তার উপর বেশি ভরসা করে আকীদা নষ্ট না করে

মুসান্না বিন হারিসা রাঃ কোন জায়গার গভর্নর ছিলেন?

তিনি ইরাকের গভর্নর ছিলেন

গাজ্জার জন্য অনুদান

৭ অক্টোবর ২০২৩ তারিখে তুফানুল আকসা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই ফিলিস্তিনের গাজ্জায় অসংখ্য মানুষ আহত ও শহীদ হয়েছে। বহু মানুষ নিজেদের ঘর-বাড়ী হারিয়েছে। এছাড়াও বর্তমানে গাজ্জার ৯৮% মানুষ অনাহারে জীবন-যাপন করছে। গাজ্জার মানুষের এই দুঃসময়ে আমরা যদি তাদের পাশে না দাঁড়াই তাহলে কে দাঁড়াবে?

আর-রিহলাহ ফাউন্ডেশন তুফানুল আকসা যুদ্ধের শুরু থেকেই ফিলিস্তিনের গাজ্জার জন্য ডোনেশন সংগ্রহ করে আসছে। এই মহান কাজে আপনিও আমাদের সাথে যুক্ত হতে পারেন।

অনুদান দিন

Scroll to Top