ইয়ামামার যুদ্ধ

ইয়ামামার যুদ্ধ – হযরত আবু বকর রা. খালিদ বিন ওয়ালিদ রা. কে পাঠালেন ইয়ামামার ময়দানে। মুসায়লামার হাতে শহীদ হওয়া হযরত হাবিব বিন যায়েদ রা. এর মা উম্মে উমামা রা. ও নিজের আরেক সন্তান আব্দুল্লাহ বিন যায়েদের সাথে এই বাহিনীতে যোগদান করলেন।

মুসলিম বাহিনীর আগমনের সংবাদ শুনে বনু হানিফার ৪০ হাজার যোদ্ধা আকরাবা ময়দানে সারিবদ্ধ হয়ে অপেক্ষা করতে থাকে।

ইয়ামামার যুদ্ধ

ইয়ামামার অনেক যাযাবর গোত্র সে সময় ইসলাম থেকে বের হয়ে গিয়েছিল। খালিদ বিন ওয়ালিদ রা. তাদেরকে পুনরায় ইসলামে পথে আনার চেষ্টা করেন।

তাদের মধ্য থেকে কেউ সেচ্ছায় ইসলাম গ্রহণ করে আর কেউ বা সাম্প্রদায়িতার উষ্কানীতে যুদ্ধ করতে প্রস্তুত হয়।

খালিদ রা. তাদেরকে উচিৎ শিক্ষা দিয়ে সামনে অগ্রসর হন।

মুসায়লামা ও খালিদ রা. এর বাহিনী বিন্যাস

মুসায়লামাতুল কাজ্জাব আকরাবা ময়দানে বাহিনী প্রস্তুত করে। মুসায়লামা তার বাহিনীর ডানে ও বামে যথাক্রমে মুহকাম ইবনে তুফায়েল এবং রাজ্জাল ইবনে উনফুয়াকে সেনাপতি নিযুক্ত করে।

এদিকে খালিদ রা. এর অগ্রবাহিনীতে প্রধান হিসেবে ছিলেন শুরাহবিল বিন হাসানা রা. ।

আর সেনাবাহিনীর ডানে ও বামে ছিলে যায়েদ বিন খাত্তাব রা. ও আবু হুজাইফা ইবনে উতবা ইবনে রাবিআ রা.।

ইয়ামামার মুসলমানদের খালিদ রা. এর সাথে যোগদান

ইয়ামামায় মুসায়লামাতুল কাজ্জাবের উত্থানের পর ইরতিদাদ এমনভাবে প্রচার করা হয় যে, মনে হয় সেখানে কোনো মুসলমান ছিল না।

সেই কঠিন পরিস্থিতিতেও সেখানে মুসলমানরা ছিল। তাদের মধ্য থেকে অন্যতম হলেন হযরত সুমামা ইবনে উসাল হানিফা রা.।

ইয়ামামার মুসলমানরা যখন জানতে পারে, খালিদ রা. বাহিনী নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে তখন তারা সুমামা রা. এর পাশে জড়ো হয়।

সুমামা রা. ছিলেন অত্যন্ত বুদ্ধিমান ও চৌকষ ব্যক্তি। ইয়ামামায় আরেকজন ব্যক্তি ছিলেন হযরত মা’মার  ইবনে কিলাব রুমানি রা.।

এরপর এই ব্যক্তিরা অন্যন্য মুসলমানদের নিয়ে খালিদ রা. এর নিকট গমন করেন। খালিদ রা. তাদেরকে নিজ বাহিনীতে যুক্ত করে নেন।

ইয়ামামার চূড়ান্ত যুদ্ধক্ষেত্র

দুই বাহিনীতে তুমুল যুদ্ধ শুরু হয়। বনু হানিফার লোকেরা সাম্প্রদায়িক উন্মাদনার কারণে মিথ্যাবাদী নবীর জন্য অসম্ভব আগ্রহ উদ্দীপনার সাথে লড়াই করতে থাকে।

মুসলমানগণ ইতিপূর্বে এমন মারাত্মক আক্রমনের শিকার হন নি। কয়েকজন প্রসিদ্ধ সাহাবী এক এক করে শহীদ হয়ে যান।

যুদ্ধের ময়দানের অবস্থা ছিল খুবই নাজুক। একবার মুসলমানরা বিজয়ী হতো আরেকবার কাফেররা। একবার মুসলমানদের পা উপড়ে যায়।

মুসায়লামার বাহিনী তাদেরকে তাড়াতে তাড়াতে তাবু পর্যন্ত নিয়ে আসে। হযরত সাবেত বিন কায়েস রা. মুসলমানদের এই অবস্থা দেখে চিৎকার করে বললেন,

হে আল্লাহ আমি মুসলমানদের পক্ষ থেকে আপনার নিকট ক্ষমা চাচ্ছি। এরপর তিনি ময়দানে ঝাঁপিয়ে পড়েন। এক পর্যায়ে তিনি যুদ্ধ করতে করতে শহীদ হয়ে যান।

একে একে হযরত সালেম, হযরত আবু হুফায়ফা, হযরত যায়েদ বিন খাত্তাব রা. প্রত্যেকেই শহীদ হয়ে যান।

হযরত খালিদ রা. মুসলিম বাহিনীকে নতুনভাবে বিন্যস্ত করেন। তারপর প্রবলবেগে আক্রমণ করেন। এতে শত্রুদের অবস্থান নড়বড়ে হয়ে যায়।

মিথ্যা নবীর অনুসারীরা তখন দিগইবদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে পলায়ন করতে থাকে। যুদ্ধের ময়দান থেকে অল্প কিছু দূরেই একটা বাগান ছিল।

ইয়ামামার যুদ্ধকে মৃত্যুর বাগান বলা হয় কেন

তারা বাগানে পলায়ন করে মোর্চা তৈরি করে। হযরত বারা বিন মালিক রা. বারবার বলতে থাকেন, যেন তাকে বাগানে নিক্ষেপ করা হয়।

যাতে তিনি সেখানে গিয়ে ভেতর থেকে দরজা খুলতে পারেন। তার ইচ্ছানুযায়ী তা করা হয়। এর মধ্যেই তার শরীরে আশির অধিক আঘাত লাগে।

মুসলমানরা বাগানে প্রবেশ করতে সক্ষম হন। এই স্থানে বিখ্যাত বদরী সাহাবী হযরত আবু দুজানা রা. শহীদ হয়ে যান।

উম্মে উমারা ও তার ছেলে আব্দুল্লাহ বিন যায়েদ রা. ভেতরে প্রবেশ করেন। এক ব্যক্তি উম্মে উমারার হাত কেঁটে ফেলে।

তা সত্ত্বেও তিনি ময়দানে সাহসীকতার সাথে লড়াই করে যান।

শেষ পর্যন্ত শত্রুরা বাগান থেকেও পলায়ন করতে থাকে। তারা ছত্রভঙ্গ হয়ে এদিক ওদিক চলে  যায়। মুসায়লামাতুল কাজ্জাব ও তখন পলায়ন করতে থাকে।

মুসায়লামাতুল কাজ্জাবের মৃত্যু

হযরত ওয়াহশি বিন হারব রা. আগে থেকেই তার বর্শা নিয়ে ওৎ পেতে ছিলেন।

তিনি তার বর্শা নিজস্ব ভঙ্গিতে এমনভাবে ছুড়ে মারেন যে, মুসালমার পিঠ দিয়ে ঢুকে বুক দিয়ে বেরিয়ে যায়।

সেখানেই সে নেতিয়ে পড়ে। এ সময় উম্মে উমারা ছেলে আব্দুল্লাহ বিন যায়েদ রা. তরবারির মাধ্যমে তার মাথা আলাদা করে ফেলেন।

ইয়ামামার যুদ্ধে কতজন শহীদ হন

এই প্রলয়ঙ্কারী যুদ্ধে মদীনার মুহাজির ও আনসার মিলিয়ে ৩৬০  জন সাহাবী শাহাদাতলাভ করেন। যাদের মধ্যে ৩৫ জন কুরআনের হাফেজ ছিল।

অন্যদিকে মুসায়লামার বাহিনীর সাত হাজার সৈন্য ময়দানে ও সাত হাজার সৈন্য বাগানে মৃত্যুবরণ করে। আর বাকীরা এদিক ওদিক পালিয়ে যায়।

হিজরি কত সালে ইয়ামামার যুদ্ধ সংঘটিত হয়

ইয়ামামার যুদ্ধ ১১ হিজরীর শেষের দিকে সংগঠিত হয়। এটা আরব ভূখণ্ডে তৈরী হওয়া সর্বশেষ বড় ফেতনা ছিল।

এরপর মুরতাদদের মনোবল সম্পূর্ণরূপে ভেঙ্গে যায়।

হযরত আবু বকর সিদ্দিক রা. এর সেনাপতিগণ আরবের সকল বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি দমন করেন।

আবু বকর সিদ্দিক রা. মুতরিফ বিন নুমান রা. কে ইয়ামামার গভর্নর নিযুক্ত করেন। তিনি ছিলেন হযরত সুমামা বিন উসাল রা. এর ভাতিজা।

বিশেষ দ্রষ্টব্য: আমাদের লেখাগুলো সূচিপত্র অনুযায়ী দেখুন www.subject.arhasan.com এই ওয়েবসাইটে।
আমরা কোন প্রকাশনীর বই রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করি তা জানতে ভিজিট করুন www.arhasan.com/book এই ওয়েবসাইটে।
আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করতে পারেন এই লিংক থেকে

আমি একজন মুসলিম ও ইসলামিক আলোচক। পড়ালেখা করেছি কওমী মাদ্রাসায়। পরবর্তীতে সাইন্স বিভাগ থেকে এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে বর্তমানে আমি ডিপ্লোমা ইন মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এ অধ্যায়নরত। অবসরে আমি বই পড়তে পছন্দ করি। নতুন কিছু শিখতে, নতুন কিছু জানতে ভালোবাসি। আমার ইচ্ছা, ভালো মানুষ হয়ে সমাজকে সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজে বিরত রাখার চেষ্টা করা।

https://alfan.link/abdurrahmanalhasan