ইসলাম গ্রহণের পূর্বে ওমর রা. এর অর্ধেক জীবন অতিবাহিত হয়ে যায়। তিনি অন্য দশটা কুরাইশী ছেলের মতন বেড়ে উঠেছিলেন।

তবে তার সাথে অন্যান্য শিশুদের কিছুটা পার্থক্য ছিল। তিনি জাহেলী যুগেই তার পিতা খাত্তাবের অধীনে লেখাপড়া শিখেছিলেন।

সে সময় সাক্ষরতার হার ছিল অনেক কম। মানুষ লেখাপড়া জানতো না। কারণ, তারা লেখাপড়া শেখার প্রয়োজনবোধ করে নি।

মক্কায় তখন হাতেগোনা কয়েকজন ব্যক্তি লেখাপড়া জানতেন। তাদের মধ্যে হযরত ওমর রা. অন্যতম।

ওমর রা. এর কাঁধে দায়িত্ব অর্পন

খুব ছোট থাকতেই হযরত ওমর রা. এর কাঁধে পরিবারের দায়িত্ব এসে পড়ে। ফলে তিনি ভোগবিলাসিতায় লিপ্ত থাকতে পারেন নি।

অর্থনৈতিকভাবে তিনি মারাত্মক সংকটে পতিত হন। এ প্রসঙ্গে আব্দুর রহমান ইবনে হাতিব বলেছেন,

আমি ওমর বিন খাত্তাবের সাথে দাজনান নামক শহরে ছিলাম।

এ কথা বলার সময় ওমর রা. পাশেই ছিলেন। তিনি তখন আব্দুর রহমানকে বললেন,

তখন আমি আমার বাবার গবাদিপশু সেখানে চড়াতে যেতাম।

বাবা যে কি কঠোর ছিল! কখনো আমি পশু চরাতাম আবার কখেনো জ্বালানি কাঠ সংগ্রহ করতাম। আরো বিভিন্ন কাজে আমাকে লিপ্ত থাকতে হতো।

অতীতকে স্মরণ

ওমর রা. ইসলাম গ্রহণের পর কখনো অহংকার করতেন না। তিনি সর্বদা অতীতকে স্বরণ করতেন।

একবার হজ্জ্বে গমনের সময় দাজনান এলাকায় অবস্থান করেন।

তখন তিনি বলেন, আল্লাহ কত মর্যাদাশীল। তিনি যাকে ইচ্ছা সম্মান দান করেন। যাকে ইচ্ছা বেজ্জতি করেন।

এক সময় আমি এই উপত্যকায় গবাদিপশু চড়াতাম।

আমার পিতা খাত্তাব অতি নিষ্ঠুর ছিল। গাটাতে খাটাতে আমাকে বিধ্বস্ত করে ফেলতো।

আবার যদি কোনো কাজ ঠিকমতো না করতাম তাহলে আবার শুরু করতো মারধর।

অথচ এখন আমার দিকে তাকিয়ে দেখ, আল্লাহ আমাকে সম্মানিত করেছেন। সে সময় শুধু আমার বাবার নয়, আমাদের খালাদেরও গবাদিপশু চরাতে হতো।

জাহেলী যুগে ব্যবসায়ী হিসেবে ওমর রা.

যুবক বয়সে তিনি ব্যবসা-বানিজ্যে খুব উন্নতি করেছিলেন। এক সময় তিনি মক্কার অন্যতম ধনী এবং প্রভাবশালী ব্যক্তিকে পরিণত হয়েছিলেন।

তিনি ব্যবসায়িক সফর করতেন ইয়ামেন এবং সিরিয়ায়। জাহেলী যুগের বিভিন্ন ঘটনায় তিনি কার্যকরী ভূমিকা পালন করেছেন।

তার দাদা নুফায়েল বিন আব্দুল ওজ্জা মক্কার বিচারক ছিলেন। সে হিসেবে তাদের পরিবার মক্কার সম্মানিত পরিবারগুলোর একটি ছিল।

জ্ঞানী ব্যক্তিদের একজন হিসেবে ওমর রা.

জাহিলিয়্যাতের যুগ থেকেই হযরত ওমর রা. ছিলেন একজন বাকপটু, জ্ঞানী, স্পষ্টভাষী, শক্তিশালী এবং অভিজাতসম্পূন্ন ব্যক্তি।

তিনি তার পিতার মতো কুরাইশদের মুখপাত্র বা দূত ছিলেন। যখনই কুরাইশদের সাথে অন্য কোনো গোত্রের যুদ্ধ বেঁধে যেত তখনই কুরাইশরা তাকে দূত হিসেবে প্রেরণ করতো।

অন্য পক্ষ যতই অহমিকা প্রদর্শন করুক না কেন, ওমর রা. এর সদয় আচরণের সামনে তারা টিকতে পারতো না। তারা সন্ধি করতে বাধ্য হতো।

তিনি তার গোত্রকে সম্মান করতেন। তিনি ভাবতেন, গোত্র হলো অন্যতম একটি ঐতিহ্য। যদি এই ঐতিহ্য ঝরে পড়ে তাহলে সমাজব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে যাবে।

এ জন্যই তিনি ইসলামের সূচনালগ্নে ইসলামের বিরোধিতা করেছিলেন। তিনি ভেবেছেন, ইসলাম এই গোত্রের বন্ধনগুলো ভেঙ্গে দিচ্ছে। তাই তিনি কয়েকজন মুসলমানের উপর জুলুমও করেছিলেন।

ইসলাম গ্রহণ করায় জনৈক খাদেমকে মারধর

ইসলাম গ্রহণের পূর্বে ওমর কতটা কঠোর ছিলেন। উদাহরণ দেয়া যাক,

একবার জাহেলী যুগে তার এক খাদেম ইসলাম গ্রহণ করে। যখন এটা তিনি জানতে পারেন তখন সেই খাদেমকে বেধড়ক মারধর করেন।

একটা সময় ক্লান্ত হয়ে তিনি বসে পড়লেন। সেখান দিয়ে হযরত আবু বকর রা. যাচ্ছিলেন। তিনি খাদেমের উপর এমন অত্যাচার দেখে তাকে কিনে আজাদ করে দেন।

তথ্যসুত্র

জীবন ও কর্ম: ওমর রা.। পৃষ্ঠা ৩৫-৩৯

আরো পড়ুন

ইসলাম গ্রহণের পূর্বে হযরত আবু বকর রা. কেমন ছিলেন ? পড়ুন

ইসলাম প্রচারের সময় হযরত আবু বকর রা. এর উপর হামলা

আবু আব্দুল্লাহ শিয়ায়ীকে কিভাবে হত্যা করা হয়? পড়ুন

হযরত আবু বকর সিদ্দিক রা.

রাসূল সা. এর নবুয়তপূর্ব জীবন কেমন ছিল, পড়ুন

উবায়দুল্লাহ মাহদী কিভাবে শিয়া সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করে, পড়ুন

বাহ্যিক লিংক থেকে পড়ুন

নবীজি সা. কেন নিজে ১১ টি বিয়ে করেছেন আর উম্মতের জন্য ৪ টি নির্ধারণ করেছেন, পড়ুন

একজন পুরুষের বিকল্পে কেন ইসলাম নারীর সাক্ষ্যকে অর্ধেক হিসেবে গ্রহণ করে?

রোগ কি সংক্রমিত হয়? নবীজি এই সম্পর্কে কি বলেছেন?

চাঁদের আকৃতি কি ছোট হয়ে খেজুরের ডালের মতন হয়ে যায়?

ওমর রা. কি লেখাপড়া জানতেন

হযরত ওমর রা. ছোটবেলা থেকেই লেখাপড়া জানতেন। তিনি তার পিতার নিকটে লেখাপড়া শিখেছেন। তিনি যুবক বয়সে কুরাইশদের দূত ছিলেন।

ওমর রা. কি মুসলমানদের উপর নির্যাতন করতেন

ইসলাম গ্রহণের পূর্বে তিনি গরীব মুসলমানদের উপর নির্যাতন করতেন। একবার জাহেলী যুগে তার এক খাদেম ইসলাম গ্রহণ করে। যখন এটা তিনি জানতে পারেন তখন সেই খাদেমকে বেধড়ক মারধর করেন। একটা সময় ক্লান্ত হয়ে তিনি বসে পড়লেন। সেখান দিয়ে হযরত আবু বকর রা. যাচ্ছিলেন। তিনি খাদেমের উপর এমন অত্যাচার দেখে তাকে কিনে আজাদ করে দেন।

গাজ্জার জন্য অনুদান

৭ অক্টোবর ২০২৩ তারিখে তুফানুল আকসা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই ফিলিস্তিনের গাজ্জায় অসংখ্য মানুষ আহত ও শহীদ হয়েছে। বহু মানুষ নিজেদের ঘর-বাড়ী হারিয়েছে। এছাড়াও বর্তমানে গাজ্জার ৯৮% মানুষ অনাহারে জীবন-যাপন করছে। গাজ্জার মানুষের এই দুঃসময়ে আমরা যদি তাদের পাশে না দাঁড়াই তাহলে কে দাঁড়াবে?

আর-রিহলাহ ফাউন্ডেশন তুফানুল আকসা যুদ্ধের শুরু থেকেই ফিলিস্তিনের গাজ্জার জন্য ডোনেশন সংগ্রহ করে আসছে। এই মহান কাজে আপনিও আমাদের সাথে যুক্ত হতে পারেন।

অনুদান দিন

Scroll to Top