তাবুক যুদ্ধ ও আবু বকর – ৮ম হিজরীতে মক্কা বিজয়ের পর ইসলাম আরো দূর দূরান্তে ছড়িয়ে পড়ে। এরইমধ্যে পুরো আরব অঞ্চল ইসলামের আলোয় আলোকিত হয়।

যেই আবরে সামান্য থেকে সামান্য বিষয় নিয়ে যুগের পর যুগ যুদ্ধ চলতো, সেখানে মানবতার লেশ মাত্রও ছিল না,

তারা আজ এক পতাকাতলে সমবেত হয়েছে।

আরবের দুই পাশেই বিশাল দুই সাম্রাজ্যের অবস্থান। পশ্চিমে পারস্য সাম্রাজ্য ক্ষমতাদ্বন্দ্বে ভাঙ্গনের শিকার।

কিন্তু বাইজেন্টাইন রোমানরা মুতাযুদ্ধের পরই সতর্ক হয়ে গিয়েছিল।

তারা আরব সীমান্তবর্তী খৃষ্টানদের সাথে হাত মেলালো এক বড় যুদ্ধের জন্য।

প্রায় চল্লিশ হাজারের বাইজেন্টাইন বাহিনী বালকা নামক স্থানে এসে শিবির স্থাপন করে।

নবীজির নিকট সংবাদ

নবী সা. এই সংবাদ জানতে পারেন নাবতিদের মাধ্যমে। তারা শাম থেকে যাইতুন তৈল এসে হিজাজে বিক্রি করতো।

নাবতি বিন ইসলাইল হলো এই বংশের প্রতিষ্ঠাতা। প্রথমে তারা উত্তর হিজাজে আধিপত্য বিস্তার করেছিল। পরে ক্ষমতা হারানোর পর ব্যবসা ও চাষাবাদে লিপ্ত হয় তারা।

নবীজি রোমান খৃষ্টানদের এই অগ্রযাত্রার কথা শুনে চিন্তিত হন। মদীনাবাসীরা পূর্ব থেকেই রোমানদের আক্রমণের আশঙ্কা করতো।

এই খবর শুনে তারাও বিচলিত হয়ে পড়ে।

রণাঙ্গনের প্রস্তুতি

যেহেতু এই যুদ্ধে রোমানরা আগে থেকেই অগ্রসর হচ্ছে, তাই তারা মদীনায় চলে মদীনাকে রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়বে।

তা ছাড়া যদি খন্দকের যুদ্ধের ন্যায় পরিখা খনন করা হয়, তাহলে বাইজেন্টাইন খৃষ্টানরা শহর অবরোধ করে আরবদের থেকে মদীনাকে বিচ্ছিন্ন করে দিবে।

তাই নবী সা. নিজেই মদীনা থেকে অগ্রসর হয়ে যুদ্ধের ঘোষণা দিলেন।

ফান্ড

নবীজি সা. সাহাবাদেরকে মসজিদে সমাবেত করে জিহাদের ফান্ডে দান-সাদকা করার জন্য উদ্বুদ্ধ করেন। মুজাহিদরা তখন বড় বড় অঙ্কের ফান্ড নিয়ে আসেন।

হযরত আসেম বিন আদি রা. ৯০ অসাক খেজুক দান করেন। হযরত উসমান রা. মালামালসহ ৩০০ উট এবং ১ হাজার স্বর্ণমুদ্রা দান করেন।

আর হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আউফ রা. ১০০ উকিয়া সামানা নিয়ে আসেন। উমর রা. ঘরের অর্ধেক সম্পদ এনে রাসূলের সামনে পেশ করেন।

হযরত আবু বকর রা. ব্যবাসায়ী ছিলেন বিধায় তিনি যথেষ্ঠ সচ্ছল ছিলেন। তিনি ঘরের সমস্ত সম্পদ এনে রাসূলৈর সামনে পেশ করেন।

যুদ্ধে যাত্রা

৯ম হিজরীর ৩ রজব রোজ বৃহষ্পতিবার রাসূল সা. ৩০ হাজার সাহাবার বিশাল এক বাহিনী নিয়ে রোমানদের মোকাবেলার জন্য শামের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন।

যখন মুসলিম বাহিনী সানিয়াতুল বিদা উপত্যকায় আসেন তখন নবীজি পুরো বাহিনীকে পরিচালনার সুবিধার্থে বিভিন্ন প্লাটুনে অধিনায়ক ও পতাকা নির্ধারণ করেন।

তখন সবচেয়ে বড় এবং মর্যাদা সম্পূর্ণ পতাকাটি ছিল আবু বকর রা. এর হাতে।

তাবুকে অবস্থান ও বিজয়

নবীজি শামের সীমান্তে তাবুক নামক ঝর্ণার কাছে সেনা ছাউনি স্থাপন করেন। যুদ্ধের পূর্ণ প্রস্তুতি গ্রহণ করলেন। কিন্তু রোমান খৃষ্টানরা ভয়ে সামনে অগ্রসর হলো না।

তারা যখন জানতে পারলো,

মুসলমানরা ৩০ হাজার সৈন্যের বিশাল বাহিনী নিয়ে অগ্রসর হয়েছে তখন তারা মদীনা আক্রমণের ইচ্ছা পরিত্যাগ করে শহরের দিকে পলায়ন করলো।

রাসূল সা. তাবুক নামক স্থানে ২০ দিন অবস্থান করলেন। মদীনা থেকে তাবুকে আসা-যাওয়া মিলিয়ে প্রায় এক মাস সময় ব্যয় হয়েছে।

নবীজির জীবদ্দশায় এই তাবুক যুদ্ধ ই ছিল তার শেষ স্বশরীরে জিহাদে যাত্রা।

তথ্যসুত্র

১. আর রাহিকুল মাখতুম। মীনা বুক হাউজ

২. মুসলিম উম্মাহর ইতিহাস। মাকতাবাতুল ইত্তিহাদ

৩. আবু বকর সিদ্দিক রা.। কালান্তর প্রকাশনী

FAQ

কোন সাহাবী তাবুক যুদ্ধে সকল সম্পদ ব্যয় করেছিলেন

হযরত আবু বকর রা. সমস্ত সম্পদ ব্যয় করেছিলেন

তাবুক যুদ্ধ কত হিজরীতে সংঘটিত হয়

৯ হিজরীর ৩ রজব রোজ বৃহষ্পতিবার

তাবুক যুদ্ধের প্রধান পতাকা কোন সাহাবীর হাতে ছিল

হযরত আবু বকর রা. এর হাতে ছিল।

গাজ্জার জন্য অনুদান

৭ অক্টোবর ২০২৩ তারিখে তুফানুল আকসা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই ফিলিস্তিনের গাজ্জায় অসংখ্য মানুষ আহত ও শহীদ হয়েছে। বহু মানুষ নিজেদের ঘর-বাড়ী হারিয়েছে। এছাড়াও বর্তমানে গাজ্জার ৯৮% মানুষ অনাহারে জীবন-যাপন করছে। গাজ্জার মানুষের এই দুঃসময়ে আমরা যদি তাদের পাশে না দাঁড়াই তাহলে কে দাঁড়াবে?

আর-রিহলাহ ফাউন্ডেশন তুফানুল আকসা যুদ্ধের শুরু থেকেই ফিলিস্তিনের গাজ্জার জন্য ডোনেশন সংগ্রহ করে আসছে। এই মহান কাজে আপনিও আমাদের সাথে যুক্ত হতে পারেন।

অনুদান দিন

Scroll to Top