সাবায়ীদের মদীনা আক্রমণ – হযরত উসমান রা. এর বিরুদ্ধে বিদ্রোহীরা মদীনায় এসে আক্রমণের সিদ্ধান্ত নেয়। মদীনা ছিল চারদিক থেকে বেষ্টিত ইসলামী শহর।

তাই মদীনার প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থার তেমন প্রয়োজন ছিল না। তাই মদীনাতে তেমন কোনো সেনাবাহিনী থাকতো না।

৩৫ হিজরীর শাওয়াল মাসের শেষের দিকে হাজীর বেশে বিদ্রোহীরা মদীনা থেকে ৪৮ মাইল দূরে ছাউনি ফেললো।

কাফেলার সাধারণ লোকদেরকে এখানে রেখে নেতারা সামনে অগ্রসর হয়। মূলত সাধারণ লোকদেরকে তারা এটা বুঝিয়ে এনেছিল যে,

মদীনায় একজন অত্যাচারী শাসক বসে আছে। যে মানুষের রক্ত নিয়ে খেলে। কেউ তাকে পছন্দ করে না। এমনকি সাহাবীরাও তার প্রতি সন্তুষ্ট নন।

এই ভুলের উপর তাদেরকে রাখা হয়েছিল। যাতে চূড়ান্ত মূহুর্তে তাদেরকে ব্যবহার করা যায়। এরপর নেতারা মদীনায় প্রবেশ করলো।

তারা হযরত আয়েশা, হযরত আলী, হযরত যুবায়ের রা. সহ বড় বড় সাহাবীদের সাথে সাক্ষাৎ করলো। কিন্তু কোনো সাহাবীই তাদেরকে সমর্থন করলো না।

অবস্থা খারাপ দেখে তারা বললো, আমরা তো শুধুমাত্র কয়েকজন গভর্নরের বরখাস্তের দাবী করছি।

মদীনার বাহিরে সাহাবীদের পাহারা

হযরত আলী রা. এবং হযরত যুবায়ের রা. পূর্বেই বুঝতে পেরেছিলেন যে, তাদের নাম ব্যবহার করে বিদ্রোহীরা জনগণকে উষ্কানী দিচ্ছে।

তারা তারা প্রত্যেকেই পৃথক পৃথক দল নিয়ে মদীনার বাহিরে পাহারায় ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। কেননা তারা সকলেই উসমান রা. এর নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত ছিলেন।

হযরত আলী রা. তার পুত্র হাসানকে এবং হযরত ‍যুবায়ের রা. তার পুত্র আব্দুল্লাহকে এবং হযরত তালহা রা. তার দুই পুত্রকে পাহারার পূর্ণ দায়িত্ব দিলেন।

তাদের প্রতি এই আদেশ করা হলো যে, সর্ব অবস্থায় যেন তারা সজাগ থাকে। যেন মদীনায় বিদ্রোহীরা প্রবেশ করতে না পারে।

বানানো চিরকুট নিয়ে বিদ্রোহীদের অগ্নি প্রজ্জ্বলন

বিদ্রোহীরা যখন বুঝতে পারলো যে, মদীনায় প্রবেশ অনেকটা অসম্ভব। তাই তারা ফিরে যাওয়ার মনস্থ করলো। তখনই একটা বানোয়াট ঘটনা ঘটলো।

বিদ্রোহীরা সন্দেহভাজন এক ব্যক্তিকে দেখতে পেল। সে পালিয়ে মিসর যাচ্ছিল। কাফেলার লোকেরা তাকে আটক করে জিজ্ঞাসা করলো,

তুমি কে? কোথায় যাচ্ছ? তখন সে বললো, আমি খলিফার বার্তাবাহক। আমাকে মিসরের গভর্নরের নিকট পাঠানো হয়েছে।

উক্ত ব্যক্তিকে তল্লাশি তার নিকট হতে একটি চিঠি পেল। যেটিকে লেখা ছিল, কাফেলার লোকেরা মিসর যাওয়ার পর তাদের সবাইকে হত্যা করবে।

লোকেরা এটা দেখে ক্ষোভে ফেটে পড়লো। এরপর সাবায়ীদের মদীনা তে আক্রমণ শুরু হয়। তারা তাকবীর দিয়ে মদীনায় প্রবেশ করলো। অল্প সময়ের মধ্যেই অন্য পাশ দিয়ে বসরা ও কুফার লোকেরাও প্রবেশ করলো।

এরপর বিদ্রোহীরা আলী রা. এর নিকট গিয়ে বললো, আমি উসমান রা. বিরুদ্ধে আমাদের সাথে অংশগ্রহণ করুন।

আলী রা. তা ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করলেন। তিনি বললেন, আল্লাহর কসম! আমি কখনোই তোমাদের সঙ্গী হবো না।

লোকরা তখন আলী রা. কে বললো, তাহলে কেন আপনি আমাদেরকে মদীনায় আসতে বললেন,

আলী রা. বললেন, আমি তোমাদের কাউকেই মদীনায় আসতে বলি নি। আর আমি কখনোই বিদ্রোহ করতে বলি নি।

এটা শুনে সাধারণ বিদ্রোহীরা একে অন্যের দিকে তাকাতে লাগলো। কারণ, তাদের ধারণাই ছিল না,সাহাবীদের নামে চিঠিগুলো ছিল বানোয়াট।

তথ্যসুত্র

মুসলিম উম্মাহর ইতিহাস, খন্ড ৪, পৃষ্ঠা ১৯৯-২০৪

Scroll to Top