উসমান রা. এর সমুদ্র অভিযান – হযরত মুআবিয়া রা. এবং আব্দুল্লাহ ইবনে আবু সারাহ রা. একটি নতুন উদ্যোগ নেয়ার চিন্তা-ভাবনা করলেন।

রোমানদের সাথে এই যুদ্ধে কোনো না কোনোভাবে ইউরোপের হাত ছিল।

সে সময় রোম উপসাগরে বাইজেন্টাইনদের পদচারণা মুসলমানদের জন্য চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাই উক্ত সাহাবীদ্বয় একটি নৌবাহিনী গঠনের উদ্যোগ নিলেন।

তৃতীয় খলিফা হযরত উসমান রা. এই বাস্তবতা সম্পর্কে অবগত ছিলেন। ২৮ হিজরীর রজব মাসে হযরত মুআবিয়া রা. উসমান রা. এর নিকট নৌ-অভিযানের অনুমতি প্রার্থনা করেন।

তিনি খলিফাকে এই আশ্বাস দেন যে, যুদ্ধ তেমন কঠিন হবে না। খেলাফতের পক্ষ থেকে এ যুদ্ধের অনুমতি প্রদান করা হয়।

কিন্তু যেহেতু এই মুসলমানদের সর্বপ্রথম নৌবাহিনী ছিল, তাই উসমান রা. মুজাহিদদের মনোবল বৃদ্ধির জন্য অত্যন্ত বিচক্ষণতাপূর্ণ কর্মপন্থা নির্ধারণ করেন।

তিনি শর্ত দেন, মুজাহিদদের সাথে তাদের স্ত্রীরাও যাবে। মুজাহিদরা যাতে নিছক আবেগের বশে যুদ্ধ না করে; বরং যথাসম্ভব হুশিয়ার হয়ে যুদ্ধ করে।

তা ছাড়াও আরেকটি কারণ ছিল যে, এটি প্রথম নৌযুদ্ধ ছিল। তাই সাথে স্ত্রীরা থাকলে পুরুষদের মনোবল বৃদ্ধি পাবে।

যুদ্ধর প্রস্তুতি

হযরত মুআবিয়া রা. অনুমতি পাওয়া মাত্রই ভালোমানের নৌযান তৈরি করলেন।

এই ফিল্ডে জিহাদের জন্য তিনি উচ্চ মনোবলসম্পন্ন স্বেচ্ছাসেবক যুবকদের সংগ্রহ করেন।

হযরত মুআবিয়া রা. ও আব্দুল্লাহ ইবনে আবু সারাহ রা. রোম উপসাগরের নকশা এবং ইউরোপিয়ানদের জাহাজগুলোর আনাগোনা সম্পর্কে বিচার-বিশ্লেষণ করেন।

তারা মিসর এবং সিরিয়ার উপকূলবর্তী দুর্গ ব্যতিত রোম উপসাগরের মাঝামাঝি মুসলমানদের কোনো হেডকোয়ার্টার থাকার প্রয়োজন অনুভব করলেন।

এজন্য তারা কুবরুস নামক ভূখন্ডকে নির্বাচন করলেন, যা উত্তর শামের সীমান্তে বাইজেন্টাইনদের গুরুত্বপূরণ সেনাছাউনির নিকটেই ছিল।

২৮ হিজরীর বসন্তকালে হযরত মুআবিয়া রা. নৌ-সেনাপতি আব্দুল্লাহ বিন কায়েসের সাথে শামের উপকূল আক্কায় প্রথম নৌবাহিনী নিয়ে সমুদ্র সফর করেন।

সাথে মুআবিয়া রা. এর স্ত্রী ফাখিতা বিনতে কুরাইজা রা. ও ছিলেন। এমনিভাবে হযরত উবাদা বিনতে সামেত রা. ও তার স্ত্রী উম্মে হারাম বিনতে মিলহান রা. ও এই ঐতিহাসিক যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।

হযরত আবু তালহা রা. তখন বৃদ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু এরপরও জিহাদে অংশগ্রহণ করার জন্য অস্থির হয়ে পড়েন।

তিনি পরিবারের লোকদের বলতে থাকেন, আমার রব চাচ্ছেন আমরা বৃদ্ধ বা যুবক হই না কেন, আমরা যেন জিহাদের জন্য বের হয়ে যাই।

তার সন্তানরা তখন যুবক ছিল। তারা বললো, আব্বাজান আপনি তো নবীজির সাথে জিহাদ করেছেন।

এরপর আবু বকর রা. এর সময়ে ও উমর রা. এর সময়ে জিহাদের অংশগ্রহণ করেছেন।

এখন আপনি এখানেই থাকুন। আমরা জিহাদে যাচ্ছি। কিন্তু আবু তালহা রা. তাদের কথা মানতে নারাজ ছিলেন। তাই তিনি যুদ্ধে শরীক হয়ে যান।

তিনি জাহাজে সফরকালেই ইন্তিকাল করেন। দাফন করার মতো আশেপাশে কোনো উপকূল পাওয়া যাচ্ছিল না।

অবশেষে নয়দিন পর  উপকূল দেখা যায়। সেখানে উনাকে দাফন করা হয়।

উসমান রা. সমুদ্র অভিযান
উসমান রা. এর সমুদ্র অভিযান

রাসূলের স্বপ্নে

এটা ছিল সেই জিহাদ, রাসূল সা. কে যার দৃশ্য দেখানো হয়েছিল। রাসূল সা. বলেন,

আমার উম্মতের একটি দল জাহাজে করে সমুদ্রে এমন অবস্থায় সফর করতে দেখেছি, যেমনভাবে বাদশাহরা সিংহাসনে বসে থাকে।

রাসূল সা. এর এই কথা শুনে হযরত উম্মে হারাম বিনতে মিলহান রা. রাসূলের নিকট এই যুদ্ধে শামিল হওয়ার আবেদন করেন।

রাসূল সা. তার এই তামান্না পূরণের সুসংবাদ দিয়েছিলেন। তিনি এই অভিযানে শরীক ছিলেন। ফেরার সময় এক স্থানে তার খচ্চর লাফিয়ে উঠলে তিনি পড়ে যান।

এতে তার ঘাড়ের হাড্ডি ভেঙ্গে যায়। এতে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

মুসলমানদের সাথে সন্ধি

মুসলিম বাহিনী কুবরুসের তীরে অবতরণ করার পর স্থানীয় সৈন্যরা অস্ত্র সমর্পন করে। তখন তাদের সাথে মুসলমানদের সন্ধি হয়।

সন্ধিচুক্তিসমূহ হলো,

১. কুবরুসবাসী জিজিয়া কর হিসেবে প্রতিবছর ৭০ হাজার দিনার (২৫১ কোটি ৯ লাখ টাকা প্রায়) প্রদান করবে।

২. মুসলমানগণ তাদের পরিপূর্ণ নিরাপত্তা প্রদান করবে।

৩. কুবরুসবাসী রোমানদের বিরুদ্ধে মুসলমানদেরকে সমুদ্রাভিযানে যাতায়াতের সুবিধা প্রদান করবে।

৪. মুসলমানদেরকে রোমানদের আনাগোনা সম্পর্কে সংবাদ সরবরাহ করবে।

এই সন্ধি চার বছর বহাল ছিল। সন্ধির সময়সীমা শেষ হওয়া মাত্র ৩২ হিজরীতে হযরত মুয়াবিয়া রা. কনস্টান্টিনোপল অভিমুখে সেনা অভিযান পরিচালনা করেন।

তিনি এশিয়া মাইনরের উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে ব্লাক সাগরে পৌঁছে যান। এরপর তিনি কনস্টান্টিনোপল নামক স্থানে শিবির স্থাপন করেন।

সেখান থেকে রোম সাম্রাজ্যের প্রাচীর সুস্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছিল। এটা কনস্টান্টিনোপল অভিমুখে মুসলমানদের প্রথম অভিযান ছিল।

কিন্তু এ সময় সেখানে কোনো যুদ্ধ সংগঠিত হয় নি। এর পূর্বেই মুসলমানদের দ্বিতীয়বার কুবরুস অভিমুখে যাত্রা করতে হয়।

কুবরুস জয়

রোম সম্রাট আফ্রিকা ও এশিয়া মাইনরে মুসলমানদের ধারাবাহিক বিজয় দেখে চিন্তিত হয়ে পড়ে।

সে নিজের দুর্গ থেকেই মুসলমানদের শিবির দেখতে পাচ্ছিল।

মুসলমানদের প্রতিহত করার জন্য সে কুবরুসবাসীদের সাথে যোগাযোগ করে। ফলে কুবরুসবাসীরা ওয়াদা ভঙ্গ করে রোমানদের সহায়তা করে।

এই খবর পেয়ে হযরত  মুআবিয়া রা. ৫০০ যুদ্ধজাহাজ নিয়ে কুবরুসবাসীর উপর হামলা করেন। তিনি যুদ্ধের মাধ্যমে পুরো কুবরুস জয় করে নেন।

৩২ হিজরীতে এই কুবরুস বিজয়ের মাধ্যমে এখানে মুসলমানদের শক্তিশালী ঘাঁটি তৈরি হয়। ১২ হাজার মুজাহিদ এখানে তাদের পরিবার নিয়ে বসবাস শুরু করেন।

তথ্যসুত্র

মুসলিম উম্মাহর ইতিহাস, খন্ড ৩, পৃষ্ঠা ২৮৮-২৯২

১ দিনার = ৪.২৫ গ্রাম স্বর্ণ

এক গ্রাম স্বর্ণ = 8440৳

১ দিনার = 35870৳

70 হাজার দিনার = 251,09,00,000৳

গাজ্জার জন্য অনুদান

৭ অক্টোবর ২০২৩ তারিখে তুফানুল আকসা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই ফিলিস্তিনের গাজ্জায় অসংখ্য মানুষ আহত ও শহীদ হয়েছে। বহু মানুষ নিজেদের ঘর-বাড়ী হারিয়েছে। এছাড়াও বর্তমানে গাজ্জার ৯৮% মানুষ অনাহারে জীবন-যাপন করছে। গাজ্জার মানুষের এই দুঃসময়ে আমরা যদি তাদের পাশে না দাঁড়াই তাহলে কে দাঁড়াবে?

আর-রিহলাহ ফাউন্ডেশন তুফানুল আকসা যুদ্ধের শুরু থেকেই ফিলিস্তিনের গাজ্জার জন্য ডোনেশন সংগ্রহ করে আসছে। এই মহান কাজে আপনিও আমাদের সাথে যুক্ত হতে পারেন।

অনুদান দিন

Scroll to Top