আলা ইবনে হাজরামি রা. – রাসূল সা. এর ইন্তিকালের পর পরই আরবের বিভিন্ন প্রাঙ্গনে মুরতাদ হওয়ার হিড়িক পড়ে যায়।

এই পরিস্থিতিতে  তুলাইহা আসাদি, মুসায়লামাতুল কাজ্জাবআসওয়াদ আনাসি সহ আরো বেশ কিছু ব্যক্তিরা মিথ্যা নবুয়তের দাবী করে।

জাজিরাতুল আরবের অন্যতম শহর বাহরাইনে মুরতাদদের বিরুদ্ধে হযরত আলা বিন হাদরামি রা. বিশেষ ভূমিকা পালন করেন।

পূর্বে বাইরাইনে রাসূল সা. এর নিযুক্ত গভর্নর ছিল মুনজির বিন সাওয়া রা.। তিনি মৃত্যুবরণ করলে বহু লোক ইসলাম থেকে বের হয়ে যায়।

আবু বকর রা. এর নির্দেশে আলা ইবনে হাযরামি রা. বাহিনী নিয়ে রণাঙ্গনের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন।

উক্ত বাহিনীতে আবু হুরায়রা রা. ও সুমামা বিন উসাল রা. ও শামিল ছিলেন।

মরুভূমিতে উট হারিয়ে যাওয়া

একদিন মরুভূমিতে রাত্রীযাপনের পর সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে দেখেন, খাবার ও পানীয় বহনকারী সকল উট গায়েব হয়ে গেছে।

মুসলিম মুজাহিদরা এমন অবস্থা দেখে পেরেশান হয়ে যায়। তখন সম্ভবত গ্রীষ্মকাল ছিল।

আর এমন পরিস্থিতিতে মরুভূমিকে পানি ছাড়া সফর করা মৃত্যু সমতূল্য ছিল।

তা সত্ত্বেও হযরত আলা বিন হাদরামি রা. বিন্দুমাত্র পেরেশান হলেন না। তিনি সাথীদের বললেন, আপনারা অযথা পেরেশান হবেন না।

আল্লাহ তা’আলা কখনো তার রাস্তায় বের হওয়ার পর একাকী ছেড়ে দেন না। তিনি সাথীদের নিয়ে ফজরের নামাজ আদায় করে আল্লাহর নিকট দোয়া করতে লাগলেন।

সকল মুজাহিদ উক্ত দোয়ায় শরীক ছিল। দোয়া শেষ করার পর দূরে এক জায়গায় পানি দৃষ্টিগোচর হয়।

সূর্য একটু ভালোভাবে উঠলেই হারিয়ে যাওয়া উটগুলো ফিরে আসে।

সাথীরা আল্লাহর শোকর আদায় করে সফর শুরু করলেন। হঠাৎ হযরত আবু হুরায়রা রা. এর স্মরণ হয়, তিনি একটা পানিভর্তি মশক ফেলে এসেছেন।

আবু বকর রা. কিছু সাথীদের নিয়ে সেখানে গিয়ে দেখেন, মশকের পাশে ছোট একটি পুকুর সৃষ্টি হয়েছে। হযরত আবু হুরায়রা রা. বলেন,

আমি বুঝতে পারলাম যে, এটি আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ ছিল।

বিস্ময়করভাবে সমুদ্র পাড়ি

হযরত আলা বিন হাজরামি রা. মুরতাদদের পরাজিত করে দারিন নামক এলাকার দিকে যাত্রা করেন। দারিন ছিল পারস্যের উপকূলবর্তী একটি শহর।

মুরতাদরা পলায়ন করার সময় জাহাজ দিয়ে পলায়ন করে। বন্দরে আর কোনো জাহাজ ছিল না।

হযরত আলা বিন হাজরামি রা. তখন আল্লাহর নিকট দোয়া করলেন।

দোয়ার পর তিনি সমুদ্রের উপর ঘোড়া নিয়ে নেমে পড়েন। অন্যান্য মুজাহিদরাও তাদের বাহন নিয়ে সমুদ্রে নেমে পড়ে।

সমুদ্রের পানি স্থির হয়ে মুজাহিদদের জন্য রাস্তা বানিয়ে দেয়। পুরো ‍মুজাহিদ বাহিনী নিশ্চিন্তে এই বিশাল সমুদ্র পাড়ি দেন।

কেউ ই পানিতে নিমজ্জিত বা ডুবে যায় নি। দারিনে আত্মগোপনকারী মুরতাদরা এটা দেখে হতবাক হয়ে যায়।

হযরত আলা ইবনে হাজরামি রা. তাদের শক্তিকে চূর্ণ করে ফেলেন।

ঘোড়ায় আরোহণ করে সমুদ্র পাড়ি দেয়া সাহাবাদের কারামত ছিল। যা গোটা দুনিয়াকে হতবাক করে দিয়েছে।

এটা দেখে এক খৃষ্টান পাদ্রী তৎক্ষণাৎ ইসলাম গ্রহণ করেন।

তাকে কারণ জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, আমি যদি এই কারামত দেখে ইসলাম গ্রহণ না করতাম তাহলে আমার আশংকা হচ্ছিল যে, আল্লাহ আমার চেহারা বিকৃত করে দিবেন।

তথ্যসুত্র

মুসলিম উম্মাহর ইতিহাস। খন্ড ৩। পৃষ্ঠা ৬৮-৭০

আরো পড়ুন

মহানবীর সিরিয়া সফর ও বিস্ময়কর ঘটনা

বদর যুদ্ধে আবু বকর রা. এর অংশগ্রহণ

মালেক বিন নুয়াইরা এর সাথে যুদ্ধ

গাজ্জার জন্য অনুদান

৭ অক্টোবর ২০২৩ তারিখে তুফানুল আকসা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই ফিলিস্তিনের গাজ্জায় অসংখ্য মানুষ আহত ও শহীদ হয়েছে। বহু মানুষ নিজেদের ঘর-বাড়ী হারিয়েছে। এছাড়াও বর্তমানে গাজ্জার ৯৮% মানুষ অনাহারে জীবন-যাপন করছে। গাজ্জার মানুষের এই দুঃসময়ে আমরা যদি তাদের পাশে না দাঁড়াই তাহলে কে দাঁড়াবে?

আর-রিহলাহ ফাউন্ডেশন তুফানুল আকসা যুদ্ধের শুরু থেকেই ফিলিস্তিনের গাজ্জার জন্য ডোনেশন সংগ্রহ করে আসছে। এই মহান কাজে আপনিও আমাদের সাথে যুক্ত হতে পারেন।

অনুদান দিন

Scroll to Top