আবু বকর রা. এর ইসলাম গ্রহণের পরবর্তী জীবন

আবু বকর রা. এর ইসলাম গ্রহণের পরবর্তী জীবন – ধর্ম প্রাচীনকাল থেকেই মানুষকে সাম্যের দিকে আহবান করে। প্রতিটি মানুষ নিজের জীবনকে সুন্দর করে তোলার জন্য ধর্ম অনুসরণ করে।

ধর্ম শুধু মানুষকে ভালো করে, এমনটি নয়। ধর্ম মানুষকে আত্ববিশ্বাসী করে তোলে। স্রষ্টার সাথে সম্পর্ককে আরো গভীর করে তোলে।

আবু বকর রা. এর ইসলাম গ্রহণের পরবর্তী জীবন

দাওয়াতি কার্যক্রম

ইসলাম গ্রহণের পর আবু বকর রা. ইসলামের দাওয়াত নিজে মানুষের দ্বারে দ্বারে পৌছে যান। তখনো এই ধর্মের এতটা প্রচার-প্রসার হয় নি। সবেমাত্র শুরু হলো।

আবু বকর রা. যেহেতু ব্যবসায়ী ছিলেন, সেই সুবাদে তার সাথে আরো বেশ কিছু বিশ্বস্ত ব্যবসায়ীর পরিচয় ছিল। তিনি তাদেরকে সাম্যের পথে আহবান করলেন।

তাদেরকে এক আল্লাহর দিকে ডাকলেন। মূর্তিপূজা ছেড়ে দিয়ে নিরাকার আল্লাহর ইবাদত করতে বললেন।

আবু বকর রা. এর এই দাওয়াতি কার্যক্রমে আরো অনেক মহান ব্যক্তিরা এই নূরানী কাফেলায় শামিল হলো। তাদের মধ্য থেকে কয়েকজন হলেন,

যুবায়ের ইবনে আওয়াম রা., উসমান ইবনে আফফান রা., তালহা বিন উবায়দুল্লাহ রা., সাদ বিন আবি ওয়াক্কাস রা., আবু উবায়দা ইবনে জাররাহ রা.,

উসমান ইবনে মাজউন রা., আব্দুর রহমান ইবনে আউফ রা., আবু সালামা ইবনে আবদিল  আসাদ রা, আরকাম রা, প্রমুখ সাহাবারা।

আবু বকর রা. খুবই বুদ্ধিদীপ্তভাবে তাদেরকে দাওয়াত দেন। তিনি তাদের প্রত্যেকে আলাদা আলাদাভাবে রাসূলের নিকট উপস্থিত করেন।

তারাই ছিলেন ইসলামের প্রথম স্তম্ভ। তাদের মাধ্যমেই ইসলাম আরো ব্যাপকভাবে মানুষের নিকট পৌছে গিয়েছে। এ সময় ধীরে ধীরে আরো অনেকে ইসলাম গ্রহণ করেন।

নিজ পরিবারকে দাওয়াত

অন্যকে ভালো কাজের দাওয়াত দেয়ার পাশাপাশি নিজের পরিবারকেও সংশোধন করা একজন বুদ্ধিমান ব্যক্তির কাজ।

তেমনি হযরত আবু বকর রা. ইসলামী দাওয়াতের ক্ষেত্রে নিজের পরিবারকেও অনেক সময় দেন।

এর ফলে তার কন্যা আসমা এবং আয়েশা রা., তার স্ত্রী উম্মে রুম্মান, ছেলে আব্দুল্লাহ, নিজের খাদেম আমির ইবনে ফুহাইরা রা. ইসলাম গ্রহণ করেন।

কাফেরদের নির্যাতন

মক্কায় যখন চুপি চুপি ইসলামের দাওয়াতি কার্যক্রম চলতে লাগলো তখনই মুসলমাদের উপর শুরু হলো নির্যাতন।

চির পরিচিত ধর্মকে ত্যাগ করে আল্লাহর একত্ববাদে বিশ্বাসীরা মক্কার মূর্তিপূজকদের নিকট ছিল পথভ্রষ্ট এবং স্ব-ধর্মত্যাগী।

তারা এটা মেনে পারে নি। তাই তারা মুসলমানদের ধর্মত্যাগের অফার দেয়।

কিন্তু যারা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য স্বধর্ম ত্যাগ করে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছে, তারা কি দুনিয়ার সামান্য প্রলোভনে ধর্মত্যাগ করবে?

শেষ পর্যন্ত কাফেররা বুঝতে পারলো, এরা আর ইসলাম ত্যাগ করবে না। পরিশেষে তারা নির্যাতনের দিকটি বেছে নিল।

হযরত আবু বকর রা. নবীজির নিকট আবেদন করেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমাদেরকে প্রকাশ্যে দাওয়াতের অনুমতি দিন।

নবীজির নিকট বারবার পীড়াপীড়ি করার কারণে তিনি অনুমতি দেন।

নবীজি তখন সাহাবাদের নিয়ে কা’বার চত্বরে যান। এরপর স্ব স্ব গোত্রের নিকট বসেন। তখন আবু বকর রা. দাঁড়িয়ে ভাষণ দেয়া শুরু করলেন।

তিনি মানুষকে নিরাকার আল্লাহর পথে ডাকছিলেন। মূর্তিপূজা ত্যাগ করে মানুষকে ইসলামের পথে আহবান করছিলেন।

এই বক্তব্য শুনে মূর্তিপূজক কাফেররা ক্ষিপ্ত হয়ে আবু বকর এবং উপস্থিত সাহাবাদের উপর হামলা করে। তারা আবু বকরকে এমনভাবে লাথি মারতে থাকে যে, তার নাক ফেঁটে রক্ত ঝরছিল।

আবু বকর রা. এর এমন অবস্থা দেখে বনু তাইমের লোকেরা দৌঁড়ে আসলো। তারা আবু বকরকে বাড়িতে নিয়ে যায়।

আবু বকর রা. তখন অজ্ঞান হয়ে পড়ে ছিলেন। তার হুশ ছিল না।

জ্ঞান ফেরার পর

যখন তার জ্ঞান ফিরলো তখন আবু বকর রা. বললেন, নবীজি কেমন আছেন?

এ কথা শুনে লোকেরা তাকে ভৎসনা করতে করতে চলে যায়। তার মা তখন পাশে বসে কিছু খাবার খেতে পীড়াপীড়ি করলেন।

তখন আবু বকর বললেন, আল্লাহর কসম! আমি ততক্ষণ পর্যন্ত খাবো না যতক্ষণ না আমি রাসূলের খবর জানতে পারবো।

তখন সালমা বিনতে সাখর উম্মে জামিলের নিকট গিয়ে বললেন, আবু বকর মুহাম্মাদের অবস্থা সম্পর্কে জানতে চায়। তখন উম্মে জামিল সতর্কতাবশত বললো,

আমি তো মুহাম্মাদ কিংবা আবু বকর কাউকেই চিনি না। তবে আপনি চাইলে আপনার ছেলের নিকট যেতে পারি।

উম্মে জামিল আবু বকরের খারাপ অবস্থা দেখে বললেন, যারা আপনার উপর এমন অত্যাচার করেছে, তারা জঘণ্য কাফির।

তখন উম্মে জামিল বললেন, নবীজি ভালো আছেন এবং সুস্থ আছেন।

আবু বকর জিজ্ঞাসা করলেন, কোথায় আছেন এখন তিনি? উম্মে জামিল বললেন, আরকাম রা. এর বাড়িতে আছেন।

রাতে আবু বকর উম্মে জামিল এবং সালমা বিনতে সাখরের সাথে দারুল আরকামে গেলেন। নবীজি আবু বকরকে দেখে জড়িয়ে ধরলেন।

তখন আব বকর বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! ইনি আমার মা। তার জন্য হেদায়াতের দোয়া করুন।

এরপর আবু বকরের মা সালমা বিনতে সাখর ইসলাম গ্রহণ করেন।

তথ্যসুত্র

১. আবু বকর সিদ্দিক রা., ড. আলী মুহাম্মাদ আস সাল্লাবী। কালান্তর প্রকাশনী। পৃষ্ঠা ৫৫

আবু বকর সিদ্দিক বইয়ের রেফারেন্স অনুযায়ী, মুহাম্মাদুর রাসূল সা.। খণ্ড ১। পৃষ্ঠা ৫৩৩

২. আবু বকর সিদ্দিক। পৃষ্ঠা ৫৬-৫৭

আবু বকর সিদ্দিক বইয়ের রেফারেন্স অনুযায়ী, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া। খণ্ড ৩। পৃষ্ঠা ৩০

FAQ

আবু বকরের মাধ্যমে কে কে ইসলাম গ্রহণ করেন?

যুবায়ের ইবনে আওয়াম রা., উসমান ইবনে আফফান রা., তালহা বিন উবায়দুল্লাহ রা., সাদ বিন আবি ওয়াক্কাস রা., আবু উবায়দা ইবনে জাররাহ রা., উসমান ইবনে মাজউন রা., আব্দুর রহমান ইবনে আউফ রা., আবু সালামা ইবনে আবদিল  আসাদ রা, আরকাম রা, প্রমুখ সাহাবারা।

ইসলামে সর্বপ্রথম ভাষণ দেন কে?

আবু বকর রা.। তিনিই সর্বপ্রথম কা’বার চত্ত্বরে দাঁড়িয়ে ভাষণ দেন।

গাজ্জার জন্য অনুদান

৭ অক্টোবর ২০২৩ তারিখে তুফানুল আকসা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই ফিলিস্তিনের গাজ্জায় অসংখ্য মানুষ আহত ও শহীদ হয়েছে। বহু মানুষ নিজেদের ঘর-বাড়ী হারিয়েছে। এছাড়াও বর্তমানে গাজ্জার ৯৮% মানুষ অনাহারে জীবন-যাপন করছে। গাজ্জার মানুষের এই দুঃসময়ে আমরা যদি তাদের পাশে না দাঁড়াই তাহলে কে দাঁড়াবে?

আর-রিহলাহ ফাউন্ডেশন তুফানুল আকসা যুদ্ধের শুরু থেকেই ফিলিস্তিনের গাজ্জার জন্য ডোনেশন সংগ্রহ করে আসছে। এই মহান কাজে আপনিও আমাদের সাথে যুক্ত হতে পারেন।

অনুদান দিন

Scroll to Top