আবু বকর রা. এর ইসলাম গ্রহণ – আবু বকর রা. এর ইসলাম গ্রহণ ছিল দীর্ঘ প্রতীক্ষার ফলাফল। শুরু থেকেই তিনি সত্য ধর্ম খুঁজতে বেরিয়ে পড়েছিলেন।

এ জন্য তিনি তৎকালীন কয়েকজন বড় বড় খৃষ্টান পন্ডিতের গমণ করেন। তারা তাকে সুসংবাদ দেন এক মহান ধর্মের।

যেই ধর্ম আরবের এক ব্যক্তির হাত ধরে বিশ্বে ছড়িয়ে পড়বে। আর তিনিই হবেন শেষ নবী। আবু বকরের এর এই দীর্ঘ সফর হাদীসের ভাষ্য অনুযায়ী আমরা তার থেকেই বর্ণনা করছি।

উমাইয়া ইবনে আবিস

একবার আমি কা’বার আঙ্গিনায় বসে ছিলাম। আমার পাশে ছিলেন যায়েদ ইবনে আমর ইবনে নুফায়েল। তখন পাশ দিয়ে উমাইয়া  ইবনে আবিস যাচ্ছিলেন।

তিনি তখন আমাদের উদ্দেশ্য করে বললেন, সকালটা কেমন কাটঁলো?

জায়েদ জবাব দেন, কল্যাণ ও সুস্থতার সঙ্গে।

উমাইয়া তখন প্রশ্ন করলেন, কল্যাণ কি পেয়ে গেছ?

যায়েদ বিন আমর বললেন, না।

তখন উমাইয়া বললেন, কেয়ামতের দিন ইব্রাহীম আ. এর দ্বীন ব্যতিত সবগুলোই পরিত্যাজ্য হবে। কিন্তু কথা হলো, প্রতীক্ষিত নবী কি তোমাদের মধ্য থেকে (কুরাইশদের মধ্য থেকে) হবে নাকি আমাদের মধ্য থেকে (ইসহাক আ. এর বংশধরদের মধ্য থেকে)।

ওয়ারাকা ইবনে নাওফালের নিকট

ওয়ারাকা ইবনে নাওফাল ছিলেন একজন নীতিবান ও ধর্মপ্রাণ খৃষ্টান। তিনি অধিকাংশ সময় আকাশের দিকে তাকিয়ে চিন্তায় বিভোর থাকতেন।

তিনি তার নিকট উমাইয়া ইবনে আবিসের কথোপকথন তুলে ধরলেন। তখন ওয়ারাকা ইবনে নাওফাল বললেন,

হ্যাঁ বেটা। আমরা কিতাবের জ্ঞান ও প্রজ্ঞা ধারণ করি। জেনে রেখো, যে নবীর অপেক্ষা করা হচ্ছে, তিনি আরবের শ্রেষ্ঠ বংশে আবির্ভূত হবেন।

আমি আরবের বংশ তালিকা সম্পর্কে জানি। সেই হিসেবে তিনি কুরাইশদের মধ্যেই আবির্ভূত হবেন।

তখন তিনি ওয়ারাকাকে তাকে প্রশ্ন করলেন, সেই নবী কি বলবেন?

ওয়ারাকা ইবনে নাওফাল বললেন, তিনি সেটাই বলবেন, যা আল্লাহ তাকে নির্দেশ দিবেন। তিনি যুলুম করবেন না এবং অন্যকেও ‍যুলুমের আদেশ দিবেন না।

শামে অবস্থানকালে স্বপ্ন

আবু বকর রা. ব্যবসায়িক কাজে প্রায় বিভিন্ন দেশে আসা-যাওয়া করতেন। সেই সুবাদে একবার তিনি শামে গমন করেন।

সেখানে তিনি একটি স্বপ্ন দেখেছিলেন। পরবর্তীতে তা পাদ্রী বুহাইরার কাছে তিনি বর্ণনা করেন। পাদ্রী বুহাইরা হলেন একটা ধার্মিক খৃষ্টান।

তিনি বসবাস করতেন শামের পাশেই। সেখানে একটি ইবাদতখানায় তিনি বসবাস করতেন। পাদ্রী বুহাইরার ব্যাপারে সীরাতের কিতাবে উল্লেখ আছে।

পাদ্রী বুহাইরা স্বপ্ন শোনার পর আবু বকরকে বললেন, আপনি কোথায় থাকেন?

তিনি জবাবা দেন, মক্কায়।

: কোন গোত্রে?

: কুরাইশ গোত্রে।

: কি কাজ করেন আপনি?

: ব্যবসা করে জীবিকা নির্বাহ করি।

তখন বুহাইরা বললেন, আপনার বক্তব্য সঠিক হয়ে থাকলে আপনার গোত্রে একজন নবী আসবেন। আর আপনি সেই নবীর জীবদ্দশায় তার প্রধান সহচর এবং ইন্তিকালের পর সেই নবীর খলিফা হবেন।

আর এই বিষয়ে কাউকে বলবেন না। গোপন রাখবেন।

মুহাম্মাদ সা. এবং আবু বকর রা.

৪০ বছর বয়সে নবীজি প্রথম ওহীপ্রাপ্ত হলেন। তিনি স্রষ্টার পক্ষ থেকে আদেশপ্রাপ্ত হলেন। মানুষের নিকট পৌঁছে দিলেন সাম্যের বাণী।

সর্বপ্রথম তিনি জানালেন তার স্ত্রী খাতিজা রা. এর নিকট। খাদিজা রা. সাথে সাথে ইসলাম গ্রহণ করেন।

পরবর্তীতে নবীজি জানান তার বিশ্বস্ত বন্ধু, আবু বকর রা. কে। তিনিও সাথে সাথে ইসলাম গ্রহণ করে নেন। কোনো প্রশ্ন করেন নি।

আবু বকর রা. পূর্বেই জানতেন একজন নবী আসবে। কিন্তু তিনি কে হবেন, তা জানা ছিল না। যেহেতু আবু বকর এবং মুহাম্মাদ সা. একসাথে বড় হয়েছেন, একসাথে বেড়ে উঠেছেন।

তাই কখনো কখনো তিনি ভাবতেন, হতে পারে সেই প্রতীক্ষিত নবী মুহাম্মাদ ই হবে। কারণ, তার চাল-চলন এবং আচার ব্যবহার সেটাই সাক্ষ্য দেয়।

সিরাতের কিতাবে এই ঘটনা এভাবে উল্লেখ আছে, নবীজি আবু বকরকে দাওয়াত দেন এভাবে,

আমি আল্লাহর নবী। আমাকে আল্লাহ এই দাওয়াত দিয়ে পাঠিয়েছেন যে, কেবল আল্লাহর ইবাদত করো। তার সঙ্গে কাউকে শরীকক করো না।

তিনি ব্যতীত কারো ইবাদত করো না এবং তার আনুগত্য করো ও তার উপর ভালোবাসা স্থাপন করো।

তখন আবু বকর রা. কোনো কথা না বলে সাথে সাথে ইসলাম গ্রহণ করে নেন।

তথ্যসুত্র

১. আবু বকর সিদ্দিক। ড. আলী মুহাম্মাদ আস সাল্লাবী। কালান্তর প্রকাশনী। পৃষ্ঠা ৪৮

আবু-বকর সিদ্দিক বইয়ের রেফারেন্স অনুযায়ী, তারিখুল খুলাফা। ইমাম সুয়ূতি। ‍পৃষ্ঠা ৫২

২. আবু-বকর সিদ্দিক। পৃষ্ঠা ৪৯

আবু বকর সিদ্দিক বইয়ের রেফারেন্স অনুযায়ী, তারিখুল খুলাফা। ইমাম সুয়ূতি। ‍পৃষ্ঠা ৫২

৩. আবু-বকর সিদ্দিক। পৃষ্ঠা ৫১

আবু-বকর সিদ্দিক বইয়ের রেফারেন্স অনুযায়ী, আস সিরাতুন নাবাবিয়্যাহ, ইবনে হিশাম। খণ্ড ১। ২৮৬

আস সিরাতুল হালাবিয়্যাহ। খণ্ড ১। পৃষ্ঠা ৪৪০।। আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া খণ্ড ৩। পৃষ্ঠা ৩১

আরো পড়ুন

আবু বকরের জন্ম

আবু কুহাফা 

সালমা বিনতে সাখর

গাজ্জার জন্য অনুদান

৭ অক্টোবর ২০২৩ তারিখে তুফানুল আকসা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই ফিলিস্তিনের গাজ্জায় অসংখ্য মানুষ আহত ও শহীদ হয়েছে। বহু মানুষ নিজেদের ঘর-বাড়ী হারিয়েছে। এছাড়াও বর্তমানে গাজ্জার ৯৮% মানুষ অনাহারে জীবন-যাপন করছে। গাজ্জার মানুষের এই দুঃসময়ে আমরা যদি তাদের পাশে না দাঁড়াই তাহলে কে দাঁড়াবে?

আর-রিহলাহ ফাউন্ডেশন তুফানুল আকসা যুদ্ধের শুরু থেকেই ফিলিস্তিনের গাজ্জার জন্য ডোনেশন সংগ্রহ করে আসছে। এই মহান কাজে আপনিও আমাদের সাথে যুক্ত হতে পারেন।

অনুদান দিন

Scroll to Top