সাহাবীদের উপর জুলুম নির্যাতন

সাহাবীদের উপর জুলুম নির্যাতন – ইসলামের প্রাথমিক যুগে যখন থেকে নবীজি সা. ইসলাম প্রচার শুরু করলেন,

তখন থেকেই মানুষ একজন বা দুইজন করে ইসলাম গ্রহন করতে লাগলো।

মক্কার কাফেররা এটা সহ্য করতে পারলো না। তারা মুসলমানদের কিভাবে শায়েস্তা করা যায়, সেই উপায় খুঁজতে লাগলো।

তারা বিভিন্নভাবে নবীজিকে দাওয়াতি কার্যক্রম থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করলো। কিন্তু কোনো লাভ হলো না।

নবীজি দাওয়াতি কাজ করে যেতে লাগলেন। সে সময় হাশেম গোত্রের নিকট নবীজির আলাদা মর্যাদা ছিল।

আর হাশেম গোত্রের সর্দার আব্দুল তালিবও নবীজিকে বাঁধা দিচ্ছেন না, তাই নবীজির উপর হাত উঠানো যাচ্ছিল না।

আর অধিকাংশ মুসলমান যেহেতু সহায় সম্বলহীন ছিল, তাই কুরাইশরা তাদেরকেই লক্ষ্যবস্তুতে ‍পরিণত করলো। সাহাবাদেরকে নির্যাতনের পথ বেছে নিল।

হযরত খাব্বাব রা. উপর জুলুম নির্যাতন

হযরত খাব্বাব ইবনে আরাত রা. ছিলেন খোজায়া গোত্রের উম্মে আনসার নামক এক মহিলার গোলাম।

যখন তারা শুনতে পেল যে, খাব্বাব ইসলাম গ্রহণ করেছে।

তখন থেকেই তার উপর বিভিন্নভাবে নির্যাতন চালাতো। তাকে মাটির উপর দিয়ে হেচড়ানো হতো। তার মাথার চুল ধরে টানা হতো।

কখনো কখনো তার ঘাট মটকে দেয়া হতো। কয়েকবার তাকে জ্বলন্ত কয়লার উপরে শোয়ানো হয়েছিল।

এর ফলে তার কোমর একেবারে ঝলসে যায়।

হযরত বেলাল রা. উপর জুলুম নির্যাতন

হযরত বেলাল রা. ছিলেন মক্কার কট্টরপন্থি কাফের উমাইয়া ইবনে খালফের গোলাম।

ইসলাম গ্রহণের পর উমাইয়া বেলাল রা. এর গলায় দড়ি বেঁধে উচ্ছৃঙ্খল বালকদের হাতে তুলে দিত।

বালকেরা তাকে মক্কার অলিগলিতে নিয়ে যেত। এরকম করায় তার গলায় দড়ির দাগ পড়ে যেত। উমাইয়া নিজেও তাকে অনেক নির্যাতন করতো।

এ সময় তাকে খাদ্য বা পানীয় দেয়া হতো না। কখনো কখনো তপ্ত বালূর মধ্যে বেলালকে চিৎ করে শুইয়ে রাখতো ও বুকে পাথর চাপা দিয়ে রাখতো।

উমাইয়া বিন খালফ তখন বলতো, মুহাম্মাদের খোদাকে অস্বীকার করে লাত ‍উজ্জার পূজা কর; অন্যথায় তোর প্রাণ এভাবেই নিঃশেষ হয়ে যাবে।

হযরত বেলাল রা. এমন কষ্টের মধ্যেও বলতেন, আহাদ আহাদ তথা আল্লাহ এক আল্লাহ এক।

হযরত বেলালের উপর এমন কষ্টকর নির্যাতন চলতে দেখে আবু বকর রা. তাকে খরিদ করে নেন।

তিনি বেলাল রা. কে ৪০ উকিয়া স্বর্ণ দিয়ে ক্রয় করে নেন। যার বর্তমান বাজারমূল্য ৬ লাখ ২৪ হাজার টাকা।

আম্মার বিন ইয়াসির রা. উপর যুলুম নির্যাতন

হযরত আম্মার রা. ছিলেন বনু মাখজুমের শাখাগোত্র কাহতানি বংশোদ্ভূত। তার পিতা ইয়াসির এবং মা সুমাইয়া রা. ইসলামের প্রথম যুগেই ইসলাম গ্রহণ করেন।

মক্কায় তাদের কোনো আত্মীয়-স্বজন ছিল না। যখন তারা ইসলাম গ্রহণ করলেন তখন কুরাইশ সরদার আবু জাহেল তিনজনকে ধরে মরুভূমিতে নিয়ে আসে।

মরুভূমির উত্তপ্ত বালুকাময় প্রান্তরে তাদেরকে শুইয়ে রাখা হতো। এভাবে আরো কঠিন থেকে কঠিনতর শাস্তি তাদেরকে প্রদান করা হতো।

নবীজি সা. তাদেরকে দেখে বলতেন, হে ইয়াসিরের পরিবার! তোমরা ধৈর্যধারণ করো। তোমাদের ঠিকানা হলো জান্নাত।

আম্মার রা. এর বাবা হযরত ইয়াসির রা. ছিলেন বয়স্ক মানুষ। এমন অনবরত নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে ইন্তিকাল করেন।

আম্মার রা. এর মা হযরত সুমাইয়া রা. এর লজ্জাস্থানে কট্টরপন্থি কাফের আবু জাহেল বর্শা নিক্ষেপ করে। ফলে তিনি শাহাদাত বরণ করেন।

হযরত সুমাইয়া রা. ছিলেন ইসলামের প্রথম শহীদ। তখনো আম্মার রা. এর উপর অব্যাহতভাবে নির্যাতন চালানো হচ্ছিল।

কাফেররা তখন আম্মার রা. এর বুকে পাথর চাপা দিয়ে রাখতো।

আর বলতো, যদি তুমি মুহাম্মাদের খোদাকে ছেড়ে লাত-উজ্জাকে গ্রহণ না করো, তাহলে তোমাকে মৃত্যু পর্যন্ত এভাবেই রাখবো।

একদিকে বাবা-মায়ের মৃত্যু, অন্যদিকে এমন নির্যাতনে বাহ্যিকভাবে কাফেরদের কথা মেনে নেন। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ কুরআনে বলেছেন,

مَنۡ کَفَرَ بِاللّٰهِ مِنۡۢ بَعۡدِ اِیۡمَانِهٖۤ اِلَّا مَنۡ اُکۡرِهَ وَ قَلۡبُهٗ مُطۡمَئِنٌّۢ بِالۡاِیۡمَانِ وَ لٰکِنۡ مَّنۡ شَرَحَ بِالۡکُفۡرِ صَدۡرًا فَعَلَیۡهِمۡ غَضَبٌ مِّنَ اللّٰهِ ۚ وَ لَهُمۡ عَذَابٌ عَظِیۡمٌ

কোন ব্যক্তি আল্লাহর প্রতি ঈমান আনার পর আল্লাহকে অবিশ্বাস করলে এবং কুফরী কাজে লিপ্ত হয়ে গেলে তার উপর আল্লাহর গযব পতিত হবে। এছাড়াও আখিরাতে তার জন্য আছে মহা শাস্তি। তবে তার জন্য নয়, যাকে (কুফরীর জন্য) বাধ্য করা হয়েছে। অথচ তার অন্তর ঈমানের উপর দৃঢ়ভাবে অবিচল থাকে।

সূরা নাহল। আয়াত ১০৬

অন্যান্য সাহাবীদের উপর জুলুম নির্যাতন

এ ছাড়াও যারা ইসলামের শুরুর দিকে ইসলামকে আঁকড়ে ধরেছে, তাদের উপর নির্যাতনের স্ট্রীম রোলার চালানো হয়েছে।

হযরত আবু বকর রা., হযরত ওমর রা., হযরত উসমান রা., হযরত আবু উবায়দা রা. সহ আরো অসংখ্য সাহাবীদের উপরে কাফেররা নির্যাতন করেছে।

যদি মুসলমান ব্যক্তি সম্পদশালী ও উচ্চ মর্যাদাসম্পূন্ন ব্যক্তি হতো তাহলে তাকে তারা অপমান করতো। আর যদি সম্পদশালী না হতো, তাহলে প্রকাশ্যে নির্যাতন করতো।

ইসলামের শুরুর সময়টা ছিল খুবই কঠিন। শেষ পর্যন্ত নবীজি সা. নওমুসলিমদের বলেছিলেন, ইসলাম গ্রহণ করার পর যেন তারা ইসলামকে গোপন রাখে।

আমরা তো বাপ-দাদার মাধ্যমে ইসলাম পেয়েছি। তাই ইসলামের কদর বুঝি না। যদি সেই জামানার মতো অবস্থায় থাকতাম তাহলে কিছুটা বুঝতাম।

সাহাবীদের উপর জুলুম নির্যাতন আসা সত্ত্বেও তারা দ্বীন ছেড়ে চলে যান নি। তারা ইসলামকে আকঁড়ে ধরে রেখেছিলেন।

তথ্যসুত্র

মুসলিম উম্মাহর ইতিহাস। খন্ড ১। পৃষ্ঠা ২৯৮-৩০০

আর রাহিকুল মাখতুম। পৃষ্ঠা ৯৭-৯৮

মুসলিম উম্মাহর ইতিহাস গ্রন্থের রেফারেন্স অনুযায়ী, সিরাতে ইবনে হিশাম। খন্ড ১। পৃষ্ঠা ৩১৮

তাবাকাতে ইবনে সাদ। খন্ড ৩। পৃষ্ঠা ২৬

মুসতাদরাকে হাকিম। পৃষ্ঠা ৫২৩৮

আল মুনতাযাম। খন্ড ৪। পৃষ্ঠা ৩৩৫

আল ইসতিয়াব। খন্ড ৪। পৃষ্ঠা ৭৪

আরো পড়ুন

নিজের দাসীকে যৌন নির্যাতন করা কি ইসলামে বৈধ ?

অমুসলিমদের সাথে কি বন্ধুত্ব করা যাবে ?

বজ্র কি আসলেই ফেরেশতার গর্জনে তৈরি হয় ?

ইসলাম ও বাল্যবিবাহ বিধান

মক্কা বিজয়ের দিন আবু বকর রা. কি করেছিলেন

আবু বকর রা. এর ইসলাম গ্রহণের পরবর্তী জীবন কেমন ছিল ?

আবু বকর রা. কত টাকা দিয়ে বেলাল রা. কে মুক্ত করেন ?

হযরত বেলালের উপর এমন কষ্টকর নির্যাতন চলতে দেখে আবু বকর রা. তাকে খরিদ করে নেন। তিনি বেলাল রা. কে ৪০ উকিয়া স্বর্ণ দিয়ে ক্রয় করে নেন। যার বর্তমান বাজারমূল্য ৬ লাখ ২৪ হাজার টাকা।

ইসলামের প্রথম শহীদ কে

হযরত সুমাইয়া রা.

গাজ্জার জন্য অনুদান

৭ অক্টোবর ২০২৩ তারিখে তুফানুল আকসা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই ফিলিস্তিনের গাজ্জায় অসংখ্য মানুষ আহত ও শহীদ হয়েছে। বহু মানুষ নিজেদের ঘর-বাড়ী হারিয়েছে। এছাড়াও বর্তমানে গাজ্জার ৯৮% মানুষ অনাহারে জীবন-যাপন করছে। গাজ্জার মানুষের এই দুঃসময়ে আমরা যদি তাদের পাশে না দাঁড়াই তাহলে কে দাঁড়াবে?

আর-রিহলাহ ফাউন্ডেশন তুফানুল আকসা যুদ্ধের শুরু থেকেই ফিলিস্তিনের গাজ্জার জন্য ডোনেশন সংগ্রহ করে আসছে। এই মহান কাজে আপনিও আমাদের সাথে যুক্ত হতে পারেন।

অনুদান দিন

Scroll to Top