আবু বকরের সম্পদ ব্যয় – দিন দিন ইসলাম মানুষের নিকট আরো সমাদৃত হতে লাগলো। মানুষ ইসলামকে গ্রহণ করলো মনেপ্রাণে। সাহাবারা নিজের জীবনের চেয়েও ইসলামকে দামী মনে করতো।

মক্কার মূর্তিপূজকরা যখন দেখলো, গরীব এবং গোলামরা দলে দলে ইসলামে প্রবেশ করছে তখন তারা ভয় পেয়ে গেল।

তাই সর্বদা গরীব ও অসহায়দের ইসলাম ত্যাগ করার জন্য চাপ প্রয়োগ করতো। এই ব্যক্তিদের বেশিরভাগই ছিল গোলাম। যারা ছিল অন্যের মালিকানাধীন।

আবু বকরের সম্পদ ব্যয়

হযরত বেলাল রা.

তিনি ছিলেন একজন হাবশী সাহাবী। তিনি কোনো স্বাধীন পুরুষ ছিলেন না। ছিলেন একজন গোলাম বা দাস। তার মুনিব ছিল উমাইয়া ইবনে খালফ।

উমাইয়া ইবনে খালফ ছিল একজন কট্টর মুর্তিপূজক। কখনো যে কেউ মূর্তির বিরুদ্ধে কথা বলবে, এটা সে সহ্য করতে পারতো না।

সে বেলাল রা. কে ইসলাম ত্যাগ করার বিনিময়ে লোভনীয় অফার করলো। কিন্তু যার অন্তরে আল্লাহর ইসলামের তৃপ্তি দিয়ে দিয়েছেন, সে কি কখনো ইসলাম ত্যাগ করবে?

তিনি ঘৃণাভরে তা প্রত্যাখ্যান করলেন। শুরু হলো তার উপর নির্যাতনের স্ট্রীম রোলার। উমাইয়া ইবনে খালফ অন্য গোলামদের হুকুম দিলেন,

বেলালকে পাথরচাপা দিয়ে রাখ। তখন গোলামরা বেলালকে ধরে পাথরচাপা দিয়ে রাখলো। উমাইয়া ইবনে খালফ এগিয়ে এসে বললো,

যতক্ষণ না তুমি লাত ও উজ্জার পূজা না করবে ততক্ষণ পর্যন্ত তুমি এই শাস্তি ভোগ করতে থাকবে।

একদিন আবু বকর রা. রাস্তার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। বেলালকে এমন দুরবস্থায় দেখে উমাইয়া ইবনে খালফকে বললেন, এই লোকটির ব্যাপারে কি সৃষ্টিকর্তাকে ভয় করবে না? আর কত এই লোকটিকে নির্যাতন করবে?

উমাইয়া ইবনে খালফ বলে, তোমরাই তো তাকে পথভ্রষ্ট করেছ। তাই মন চাইলে তাকে কিনে নাও।

আবু বকর রা. তৎক্ষণাৎ বেলাল রা. কে কিনে আজাদ করে দিলেন। আর উমাইয়া ইবনে খালফকে এর মূল্য বাবদ দিয়েছিলেন ৪০ উকিয়া স্বর্ণ। যার বর্তমান বাজারমূল্য ৬ লাখ ২৪ হাজার টাকা। তবে বর্তমানে ডলারের মূল্য বেড়ে যাওয়ায় দামটা আরো বেশি হবে।

আবু বকরের বদান্যতা

কাফেররা মুসলমানদের ধৈর্য এবং সহনশীলতা দেখে জ্বলে ছাই হয়ে যাচ্ছিল। তারা কোনোভাবেই এটা মানতে চাইতো না যে, আল্লাহ এক।

তারা নওমুসলিমদের উপর অত্যাচার করতো। তাদের উপর যুলুম নির্যাতন করতো অতিরিক্ত মাত্রায়। হযরত আবু বকর রা. তাদের নিকট হতে গোলাম মুসলমানদের ক্রয় করে নিতেন।

এতে তাদের কষ্ট কিছুটা লাঘব হতো। আবু বকর রা. আরো যাদের ক্রয় করেছিলেন,

১. আমির ইবনে ফুহাইরা রা.।

২. উম্মে উবাইস রা.।

৩. জিন্নিরা রা.।

৪. নাহদিয়া রা. এবং তার কন্যা।

জিন্নিরা রা.

জিন্নিরা রা. ছিলেন অন্ধ একজন সাহাবী। সম্ভবত কাফেরদের নির্যাতনের কারণে তার দৃষ্টিশক্তি চলে গিয়েছিল। তাই কাফেররা বলাবলি করতে লাগলো,

লাত উজ্জা তার দৃষ্টিশক্তি ছিনিয়ে নিয়েছে। তখন জিন্নিরা রা. বলেছিলেন, তোমরা মিথ্যা বলেছ। আল্লাহর শপথ! লাত ও উজ্জার কোনো ক্ষতি বা উপকার করার ক্ষমতা নেই।

পরিবেশে আল্লাহ তা’আলা জিন্নিরা রা. এর চোখের  দৃষ্টি ফিরিয়ে দেন।

নাহদিয়া রা. এবং তার কন্যা

তারা ছিলেন বনু আব্দুদ দারের এক মহিলার বাঁদি। আবু বকর রা. তাদেরকে ক্রয় করে মুক্ত করে দেয়ার সময় তারা তাদের পূর্বের মনিবের কাজ করছিল।

যখন আবু বকর রা. তাদেরকে মুক্তির সুসংবাদ দিলেন তখন তারা বললো, আমরা কি আমাদের হাতের কাজ শেষ করবো না?

আবু বকর রা. বললেন, তোমাদের ইচ্ছা।

এভাবেই আবু বকর রা. অনেক সাহাবাকে দাসত্বের শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করেছেন। তাদেরকে কাফেরদের নির্যাতন থেকে মুক্ত করেছেন। – আবু বকরের সম্পদ ব্যয়

তখনো আবু বকরের পিতা উসমান বিন আমের আবু কুহাফা ইসলাম গ্রহণ করেন নি। তাই তিনি এভাবে গোলামদের কিনে আযাদ করে দেয়া পছন্দ করতেন না।

একবার তিনি তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, এভাবে গোলামদের কিনে আযাদ করে দাও কেন? তাদেরকে ব্যবসায় লাগালে তো আরো লাভবান হতে।

তখন আবু বকর রা. বললেন, এটা এমন এক ব্যবসা, যার লাভ আরো অনেক বেশি।

আল্লাহ আবু বকরের উপর সন্তুষ্ট হোন।

তথ্যসুত্র

১. আবু বকর সিদ্দিক রা.। ড. আলী সাল্লাবী। পৃষ্ঠা ৬৪

হযরত আবু বকর রা. জীবনী। আজিজুল হক আনসারী। পৃষ্ঠা ৩৮

আবু বকর সিদ্দিক বইয়ের রেফারেন্স অনুযায়ী, আতিকুল উতাকা। মাহমুদ বাগদাদী। পৃষ্ঠা ৩৯-৪০

আত তারবিয়াতুল কিয়াদিয়া। খণ্ড ১। পৃষ্ঠা ১৪০

২. আবু বকর সিদ্দিক রা.। পৃষ্ঠা ৬৫-৫৫

আবু বকর সিদ্দিক বইয়ের রেফারেন্স অনুযায়ী, আস সিরাতুন নাবাবিয়্যাহ। ইবনে হিশাম। খণ্ড ১। পৃষ্ঠা ৩৯৩

৩. আবু বকর রা. জীবনী। পৃষ্ঠা ৩৭

আরো পড়ুন

দিনার এবং দিরহামের না জানা ইতিহাস

বর্তমানে রুপার ভরি কত করে এবং এক গ্রাম রুপার মূল্য

FAQ

বেলাল রা. কে কত টাকা নিয়ে আবু বকর ক্রয় করে আজাদ করে দেন?

প্রায় ৬ লাখ ২৪ হাজার টাকা দিয়ে।

কোন সাহাবীর দৃষ্টিশক্তি হারানোর পর কাফেররা তিরষ্কার করেছিল?

হযরত জিন্নিরা রা.। পরে আল্লাহ তার দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দেন।

Abdur Rahman Al Hasan
Scroll to Top