নবী মুহাম্মাদ সা. এর নিকট প্রথম ওহী নাযিল কোথায় হয়, তা আমরা কমবেশি সকলেই জানি। মক্কা থেকে দুই মাইল দূরে হেরাগুহায় তিনি ধ্যানমগ্ন থাকতেন।

সে সময় তার বয়স ছিল ৪০ বছর। অন্যান্য নবীদের নিকটও এই বয়সে আল্লাহর পক্ষ থেকে ওহী নাযিল হতো। ওহী আসার পূর্বেই এর বিভিন্ন আলামত প্রকাশ পেয়েছিল।

তিনি সত্য স্বপ্ন দেখতে পেতেন। এমন অবস্থায় প্রায় ৬ মাস অতিক্রান্ত হয়। এমন একাকী থাকা অবস্থায় একদিন হযরত জিবরাইল আ. আবির্ভূত হন।

আল্লাহ তা’আলার হুকুমে সর্বশেষ রিসালাত ও সমগ্র পৃথিবীকে হেদায়াতের আলোয় উদ্ভাসিত করতে তিনি রাসূলের নিকট আগমণ করেছিলেন।

প্রথম আয়াত নাযিল – প্রথম ওহী নাযিল হয় কোথায়

হযরত জিবরাইল আ. হঠাৎ আসার পরে তিনি সর্বপ্রথম তার পরিচয় দিলেন এই বলে, হে মুহাম্মাদ! আমি জিবরাইল।

আর আপনি আল্লাহর রাসূল। এরপর এই ফেরেশতা সূরা আলাকের প্রথম পাঁচটি আয়াত তেলওয়াত করেন,

اِقۡرَاۡ بِاسۡمِ رَبِّکَ الَّذِیۡ خَلَقَ ۚ﴿۱﴾ خَلَقَ الۡاِنۡسَانَ مِنۡ عَلَقٍ ۚ﴿۲﴾ اِقۡرَاۡ وَ رَبُّکَ الۡاَکۡرَمُ ۙ﴿۳﴾ الَّذِیۡ عَلَّمَ بِالۡقَلَمِ ۙ﴿۴﴾ عَلَّمَ الۡاِنۡسَانَ مَا لَمۡ یَعۡلَمۡ ؕ﴿۵

“পড় তোমার রবের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন। তিনি মানুষকে জমাট-বাঁধা রক্তপিন্ড হতে সৃষ্টি করেছেন। পড়ো, আর তোমার রব বড়ই অনুগ্রহশীল। যিনি কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন। তিনি মানুষকে এমন জ্ঞান শিক্ষা দিয়েছেন, যা মানুষ জানত না।”

নবীজি তখন জিবরাইল আ. কে বললেন, আমি তো পড়তে জানি না। জিবরাইল আ. তাকে বুকে জড়িয়ে ধরে সজোরে চাপ দিলেন।

হাদীসে নবীজি ইরশাদ করেন, তখন আমার শক্তি যেন নিংড়ে নেয়া হলো। এরপর জিবরাইল আ. বললেন, এবার পড়ো।

নবীজি আবারও বললেন, আমি তো পড়তে জানি না।

পুনরায় জিবরাইল আ. তাকে সজোরে চাপ দিলেন। তখন নবীজি পড়তে শুরু করলেন।

কবে ওহী নাযিল হয় – প্রথম ওহী নাযিল হয় কোথায়

নবী সা. এর উপর প্রথম কবে ওহী নাযিল হয়, তা নিয়ে রয়েছে ব্যাপক মতানৈক্য। তবে সকলেই একটা ক্ষেত্রে একমত যে,

ওহী নাযিল হয়েছে সোমবারে। এ ব্যাপারে নবীজির হাদীস রয়েছে। সহীহ হাদীসে রয়েছে,

সোমবারের রোজা সম্পর্কে নবীজিকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, এই দিনে আমি জন্মগ্রহণ করেছি এবং এই দিনেই আমার উপর ওহী নাযিলের সূচনা হয়।

সর্বপ্রথম হেরা গুহায় ওহী নাযিলের সময় নবীজি বয়স ছিল ৪০ বছর। এতে কারো কোনো দ্বিমত নেই।

তবে মাস এবং তারিখ নিয়ে রয়েছে মতানৈক্য।

প্রথম এবং প্রসিদ্ধ মত হলো, রবিউল আউয়াল মাসে নবীজির উপর ওহী নাযিল হয়। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেন,

রাসূল সা. এর বয়স যখন ৪০ তখন তার উপর ওহী নাযিল হয়। আর দিনটি রবিউল আউয়াল মাসের ১২ তারিখ। একটা প্রসিদ্ধ মত হলো,

নবীজির জন্ম তারিখ হলো, ১২ তারিখ। সেই মোতাবেক উপরোক্ত হাদীসের দিকে ইশারা করে বলা হয়ে থাকে, 

নবীজির জন্ম ১২ তারিখে। নবুয়তও ১২ তারিখে।

প্রথম ওহী নাযিল হয় কোথায়

কাজি সুলাইমান মানসূরপুরি রহ. এর মতামত হলো, নবুয়তের তারিখ ১২ রবিউল আউয়াল নয়।

কারণ, নবীজির জন্ম তারিখই তো ১২ রবিউল আউয়ালে প্রমাণিত নয়।

ক্যালেন্ডারের হিসাব অনুযায়ী, ৮ অথবা ৯ তারিখে নবীজির জন্ম। তাই ৯ তারিখকে তিনি প্রাধান্য দিয়েছেন।

কাজি সুলাইমান জন্ম ও নবুয়তলাভ ৯ তারিখে হবে বলে উল্লেখ করেছেন। কারণ, এই দিনটিতেই সোমবার ছিল। ১২ তারিখে নয়।

পঞ্জিকা বিশেষজ্ঞদের মতে, সোমবার নয় তারিখ হয় না। বরং আট তারিখ সোমবার হিসেবে উল্লেখ করা যায়।

তা ছাড়া নবীজির জন্ম আট তারিখে হওয়ার মধ্যেও বড় দলীল আছে।

আবার কেউ কেউ বলে থাকেন, নবুয়ত ও নবীজির জন্ম উভয়টাই রমজান মাসে হয়েছে। তারা মক্কী ক্যালেন্ডারের সাথে এটাকে একত্র করে ফেলেন।

তথ্যসুত্র

বিস্তারিত জানতে পড়ুন – মুসলিম উম্মাহর ইতিহাস। খন্ড ১। পৃষ্ঠা ২৮০-২৮২

পড়ুন – আর রাহিকুল মাখতুম। পৃষ্ঠা ৭২-৭৪

আরো পড়ুন

আল্লাহ তা’আলা কত দিনে পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন

রাসূলের নবুয়তপূর্ব জীবন

খলিফা আবু বকর রা. এর মৃত্যু

ফিরাজের যুদ্ধ

গাজ্জার জন্য অনুদান

৭ অক্টোবর ২০২৩ তারিখে তুফানুল আকসা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই ফিলিস্তিনের গাজ্জায় অসংখ্য মানুষ আহত ও শহীদ হয়েছে। বহু মানুষ নিজেদের ঘর-বাড়ী হারিয়েছে। এছাড়াও বর্তমানে গাজ্জার ৯৮% মানুষ অনাহারে জীবন-যাপন করছে। গাজ্জার মানুষের এই দুঃসময়ে আমরা যদি তাদের পাশে না দাঁড়াই তাহলে কে দাঁড়াবে?

আর-রিহলাহ ফাউন্ডেশন তুফানুল আকসা যুদ্ধের শুরু থেকেই ফিলিস্তিনের গাজ্জার জন্য ডোনেশন সংগ্রহ করে আসছে। এই মহান কাজে আপনিও আমাদের সাথে যুক্ত হতে পারেন।

অনুদান দিন

Scroll to Top