গাজায় ৯৪৮৮ ফিলিস্তিনি নিহত

গাজায় ৯৪৮৮ ফিলিস্তিনি নিহত – ফিলিস্তিন ও ইসরাইল যুদ্ধের খবর ৪ নভেম্বর ২০২৩। ইসরাইল ফিলিস্তিন যুদ্ধের আজকের খবর এখানে বিস্তারিত।

গতকাল লেবাননভিত্তিক আধা সামরিক দল হিজবুল্লাহর প্রধান হাসান নাসরুল্লাহ দুপুর তিনটায় (বাংলাদেশ সময় সন্ধা ৭টায়) বক্তব্য দেয়।

এই বক্তব্যটি ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, হিজবুল্লাহ এই তুফানুল আকসা বা আল আকসা বন্যা যুদ্ধে নামবে কিনা, সেটা নির্ণয় করেছিল।

গত ৭ অক্টোবর ২০২৩ তারিখে হামাস ৫ হাজার মিসাইল ইসরাইলের দিকে ছুঁড়ে আল আকসা বন্যা বা তুফানুল আকসা যুদ্ধের সূচনা করে।

ফিলিস্তিনিরা অকুতোভয় জাতি। তারা ১৯৪৮ সাল থেকেই এই ভূমিতে দখলদার জায়োনিস্ট ইসরাইল কর্তৃক নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।

এর ফলে হামাস একটা ফায়সালা করার লক্ষ্যে এবং ইসরাইলের মসজিদে আকসাকে ঘিরে ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রকে নস্যাৎ করতে এই যুদ্ধের সুচনা করে।

উচিৎ ছিল, আবর দেশগুলো এবং মুসলিম দেশগুলোর এগিয়ে আসা। কিন্তু তারা কেউই এখনো পর্যন্ত এই ফিল্ডে এগিয়ে আসে নি।

প্রতিটা দেশ নিজেদের অভ্যন্তরীন সমস্যা নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছে। ফিলিস্তিন বাঁচলো নাকি মরলো, তাতে কারো কিছু যায় আসে না।

ফিলিস্তিন ও ইসরাইল যুদ্ধের সর্বশেষ আপডেট নিয়ে আজকের এই প্রবন্ধটি লিখিত হচ্ছে। আজ তারিখ ৪ নভেম্বর ২০২৩ রোজ শনিবার।

হামাস ও ফিলিস্তিন পরিস্থিতি

গতকাল গাজা অঞ্চলের তিনটি হাসপাতালে ইসরাইল বিমান হামলা করে। আশ শিফা হাসপাতালের কাছে একটি অ্যাম্বুলেন্সের উপর বোমা নিক্ষেপ করে জায়োনিস্টরা।

অ্যাম্বুলেন্সে আক্রমন

এতে প্রায় ১৫ জন শহীদ হয়েছে এবং ১৬ জন আহত হয়েছেন।

গাজায় ৯৪৮৮ ফিলিস্তিনি নিহত

এছাড়াও ইসরাইল গাজা অঞ্চলের একটি স্কুলে হামলা করে। এতে ২০ জন লোক শহীদ হয়।

এছাড়াও গতকালদের সবচেয়ে হৃদয়বিদারক দৃশ্যের একটি হলো,

গাজা উপকূলীয় সড়কের উপর প্রায় ১৪ জন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করে তাদেরকে ফেলে রাখে দখলদার ইসরাইল। তাদের মধ্যে শিশুও ছিল।

গত ৭ অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত গাজায় ৯৪৮৮ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। যাদের মধ্যে নারী, শিশু (৩,৯০০ জন) রয়েছে।

গতকাল হাসান নাসরুল্লাহ বক্তৃতায় ইসরাইলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবেন না বলে ঘোষণা দিয়েছেন। এতে লেবাননের সাথে ইসরাইলের যুদ্ধ হবে না বলে লেবাননবাসীর কেউ কেউ খুশী!

ইসরায়েলের বিমান হামলা গাজায় রাতভর চলতে থাকে্ অবরুদ্ধ ছিটমহলের বিভিন্ন স্থানে জুড়ে হামলার খবর পাওয়া যায়।

ইন্দোনেশিয়ান হাসপাতালের আশেপাশে আবারও আঘাত হেনেছে। সেইসাথে নুসিরাত এবং বুরেইজ ক্যাম্পের আবাসিক বাড়িগুলিও।

পড়ুন: আমেরিকা আবিষ্কার ও ইহুদিদের গোপন মিশন

গাজায় সংঘাত শুরু হওয়ার পর থেকে অধিকৃত পশ্চিম তীরে ১৩৫ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি শহীদ হয়েছে। বন্দি আছে কয়েকশত। আহত হাজারের কাছাকাছি।

জাতিসংঘের এক কর্তকর্তা বলেছেন, গাজার মানুষ দিনে মাত্র দুই টুকরো রুটি নিয়ে বেঁচে থাকে। সেখানে খাদ্য, সুপেয় পানি, ঔষধের হাহাকার প্রচুর পর্যায়ে রয়েছে।

অধিকৃত পশ্চিম তীর এলাকায় জায়োনিস্ট ইহুদিরা একটি মসজিদ ঘেরাও করে এবং মসজিদে গম্বুজে ইসরাইলের পতাকা লাগায় তারা। এছাড়াও ৮জনকে গ্রেপ্তার করে তারা।

গাজায় অনবরত বোমা বর্ষণ হতে থাকায় হাসপাতালগুলো  শত শত ফিলিস্তিনিদের অস্থায়ী ক্যাম্প হিসেবে রয়েছে।

একজন ফিলিস্তিনি বলেছেন, আমাদের সবকিছু ধ্বংস হয়ে গেছে। এখন কিছুই নেই।

গাজায় গতকাল হামলার পর আজ তারা একটি পানি সরবরাহের কনভয়ের উপর আক্রমণ করে। এই পানি সরবরাহ ইসরাইলের কি দোষ করেছিল?

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী পশ্চিম গাজা শহরের আল-নাসের শিশু হাসপাতালের প্রবেশদ্বার লক্ষ্যবস্তু করেছে।

অধিকৃত পশ্চিম তীরে রাতারাতি দখলদারিত্ব ইসরায়েলি অভিযানে অন্তত ৪১ জন ফিলিস্তিনিকে আটক করেছে জায়োনিস্টরা।

ইসরায়েলি বিমান হামলায় আল-ওয়াফা হাসপাতালের সোলার প্যানেল ধ্বংস হয়ে গেছে।

২.

বর্তমানে গাজার বাইরে থাকা হামাসের রাজনৈতিক নেতা ইসমাইল হানিয়াহের গাজার বাড়িতে একটি ইসরায়েলি ড্রোন ও একটি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে।

জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরে UNRWA পরিচালিত স্কুলে হামলা করে দখলদার ইসরাইল। পূর্বেও এখানে আরো তিনবার হামলা করেছিল।

জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরে এটি তৃতীয় বড় হামলা, তবে গাজা জুড়ে অন্যান্য স্থানে ইসরায়েলি বিমান হামলা কখনও থামেনি।

কিছুক্ষণ আগে অন্য এক জায়গায় আঘাত হানে। তাই অ্যাম্বুলেন্স অন্য এলাকায় ছুটে যায়।

শুধু জাবালিয়ায় নয়, গাজার সর্বত্র বোমা হামলা হচ্ছে।

প্রায় ৪০,০০০ মানুষ আল-শিফা হাসপাতালে আশ্রয় নিচ্ছে, কিন্তু হাসপাতাল, স্কুল, মসজিদ এবং গির্জাগুলিকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে, লোকেরা যে কোনও সময় ইসরায়েলি হামলার জন্য অপেক্ষা করছে।

পড়ুন: ফিলিস্তিনের জন্য যেভাবে সহায়তা করতে পারেন!

জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরে বাস্তুচ্যুত লোকদের আশ্রয় দেওয়া আল-ফাখুরা স্কুলে ইসরায়েলি বোমা হামলায় কমপক্ষে ১৫ জন নিহত হয়েছে ও ৫২ জন আহত হয়েছে।

“স্কুলের ভেতরে আমাদের বোমা হামলা করা হয়েছিল। শিশুরা আমাদের সাথে ছিল। বোমা হামলা না হওয়া পর্যন্ত তারা খায়নি,” একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেছেন।

গাজায় ৯৪৮৮ ফিলিস্তিনি নিহত

সেভ দ্য চিলড্রেন বলছে, গাজায় চলমান বোমাবর্ষণে নিহত হাজার হাজার শিশু ছাড়াও ৭ অক্টোবর থেকে অধিকৃত পশ্চিম তীরে অন্তত ৪১ শিশু নিহত হয়েছে।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গত কয়েক ঘণ্টার মধ্যে দক্ষিণ গাজা শহরের দুটি মসজিদে বোমা হামলা চালিয়েছে।

এই হামলায় আলী বিন আবি তালিব এবং আল-ইস্তিজাবাহ মসজিদ ধ্বংস হয়ে যায়।

ইসরায়েলি বাহিনী দিশেহারা হয়ে সোলার প্যানেল টার্গেট করছে।

বর্তমানে গাজায় বিদ্যুতের এটিই একমাত্র উৎস। এটিও রেহাই পায় নি জায়োনিস্টদের হামলা থেকে।

গাজা স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়ের তথ্য থেকে,

৭ অক্টোবর থেকে ১৫০ জন প্যারামেডিক নিহত হয়েছে।

শুক্রবার রাফাহ অভিমুখে রওনা হওয়া ভিকটিমদের বহনকারী দুটি কনভয় সহ ২৭টি অ্যাম্বুলেন্স গাড়ি সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করা হয়েছে।

১০৫ টি চিকিৎসা সুবিধা ইচ্ছাকৃতভাবে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে, যার মধ্যে ১৬টি এখন পরিষেবার বাইরে।

৩২টি প্রাথমিক পরিচর্যা চিকিৎসা সুবিধাগুলি পরিষেবার বাইরে, হয় জ্বালানীর অভাব বা তাদের সম্পূর্ণ ধ্বংসের কারণে।

জায়োনিস্ট ইসরাইল ও কুফরী বিশ্বশক্তি

যুক্তরাষ্ট্র আশা করছে, ইসরাইল বিমান হামলা কমাবে। এই যুক্তরাষ্ট্র হলো শয়তানের মূল হোতা।

প্রাক্তন গ্রীক অর্থমন্ত্রী ইয়ানিস ভারোফাকিস একটি মেডিকেল কাফেলার উপর ইসরায়েলের হামলার প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেছেন যে, অ্যাম্বুলেন্সে বোমা হামলা “জেনেভা কনভেনশন লঙ্ঘন করে” (!)।

জোরান কুসোভাক গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযানের খরচ পর্যবেক্ষণ করেছেন।

তিনি অনুমান করেন, ইসরায়েল এখন পর্যন্ত ন্যূনতম ৭৫০ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে শুধু নিরীহ মানুষের উপর বোমার হামলার জন্য।

চীনে বর্তমান ঘটনাগুলো নিয়ে ইহুদি বিদ্বেষ বাড়ছে। চীনের সামাজিক সাইটগুলোতে এখন গাজা ইসরাইল যুদ্ধ হলো মূল আলোচ্য বিষয়।

৭ অক্টোবর হামাসের হামলার সময় গাজায় যারা আটক হয় তাদের স্বজনরা তাদের মুক্তির ব্যাপারে সরকারকে চাপ দেওয়ার জন্য তেল আবিবের কিরিয়া সামরিক ঘাঁটির প্রবেশপথে একটি অস্থায়ী শিবির স্থাপন করেছে।

“তারা সবাই বাড়ি ফিরে না আসা পর্যন্ত আমরা ছাড়ব না!” হোস্টেজ অ্যান্ড মিসিং ফ্যামিলি ফোরামের একটি বিবৃতিতে বলেন।

সব জিম্মি ঘরে না ফেরা পর্যন্ত তারা গদি ও স্লিপিং ব্যাগ নিয়ে তাঁবুতে থাকবে। প্রতিটি ইসরায়েলি নাগরিককে তাদের সমর্থন দেখানোর জন্য আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে!

শুক্রবার ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন শহরে বড় ধরনের বিক্ষোভ হয়েছে। তাদের মধ্যে একটি ছিল আর্জেন্টিনার রাজধানী বুয়েনস আইরেস।

গাজায় ৯৪৮৮ ফিলিস্তিনি নিহত

যেখানে গাজার জনগণের প্রতি সমর্থন জানাতে কংগ্রেসের বাইরে শত শত মানুষ জড়ো হয়েছিল। আর্জেন্টিনা ১৯ নভেম্বর রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের রানঅফ অনুষ্ঠিত হবে।

প্রার্থীরা ইসরায়েলের প্রতি তাদের সমর্থন প্রকাশ করেছে এবং সার্জিও মাসা, যিনি অর্থনীতি মন্ত্রীও,

বলেছেন তিনি হামাসকে একটি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসাবে মনোনীত করার পরিকল্পনা করছেন।

তুর্কি প্রেসিডেন্ট বলেছেন, গাজায় ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডের কারণে তিনি ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করছেন।

“নেতানিয়াহু আর এমন কেউ নন যার সাথে আমরা কথা বলতে পারি।

আমরা তাকে বাতিল করে দিয়েছি,” তুর্কি মিডিয়া রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোগানকে উদ্ধৃত করে বলেছে।

জর্ডানের রাজা দ্বিতীয় আবদুল্লাহ বেশ কয়েকজন আরব পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলেন,

অবরুদ্ধ গাজায় যুদ্ধ বন্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ওপর চাপ সৃষ্টি করা আরব দেশগুলোর দায়িত্ব। (!)

গাজায় ৯৪৮৮ ফিলিস্তিনি নিহত হওয়ার বিষয়ে কোনো আরব কিংবা সভ্যতার নামে ধাপ্পাবাজি করা ইউরোপিয়ান দেশগুলোর কোনো কথা নেই।

শুক্রবার, আবু এলবা এবং তার কিশোরী কন্যা গাজা থেকে বেরিয়ে আসার আশা নিয়ে মিশরের সীমান্তের দিকে যাত্রা করছিলেন যখন তারা ইসরায়েলি হামলায় আক্রান্ত হয়েছিল।

“আমাদের মার্কিন নাগরিকত্ব আছে এবং মিশরের সীমান্তে রাফাহ ক্রসিংয়ে যেতে বলা হয়েছিল।

রাফাহ দিয়ে যাবার অনুমতি পাওয়াদের তালিকায় আমাদের নাম ছিল।

আমরা যখন দক্ষিণ দিকে উপকূলীয় সড়ক দিয়ে যাচ্ছিলাম, তখন আমাদের বাসে গোলা বর্ষিত হয়।

“আমার মেয়ে, 17 বছর বয়সী, তার হাত হারিয়েছে। ইসরাইলীদের লজ্জা, আল্লাহ তাদের শাস্তি দিন। এটি আমার মার্কিন নাগরিকত্ব [তার পাসপোর্ট দেখায়]; কেউ রেহাই পায় না।

গাজায় ৯৪৮৮ ফিলিস্তিনি নিহত

আজকের সংবাদ লাইভ দেখুন আল জাজিরা থেকে

Scroll to Top