হামাস ইসরাইল যুদ্ধ – দখলকৃত ফিলিস্তিনে প্রতিনিয়্যত ইসরাইলের আগ্রাসন চলায় এর একটা বিহিত করতে প্রস্তুত হয় ফিলিস্তিনের মুক্তিকামী সংগঠন হামাস।

শনিবার (৭ অক্টোবর ২০২৩) স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ছয়টায় হামাস ইসরাইলে আক্রমণ শুরু করে। সে সময় তারা রকেট নিক্ষেপ করে।

পরবর্তীতে হামাস ইসরাইলের উপর স্থল, জল ও আকাশপথে এক এক করে আক্রমণ বাড়াতে থাকে। ইসরাইলের সেনাবাহিনীর প্রধান মুখপাত্র ড্যানিয়েল হাগারি বলেন, দলটি স্থল, সমুদ্র ও আকাশ পথে আক্রমণ করেছে।

ফিলিস্তিনের মুক্তিকামী সংগঠন হামাস টেলিগ্রামে পোস্ট করে একটি বিবৃতিতে ফিলিস্তিনের যোদ্ধাদের পাশাপাশি আরবদেরকেও এই পবিত্র যুদ্ধে যোগদানের আহবান করেছে।

হামাস বলেছে, এখন পর্যন্ত তারা প্রায় ৫ হাজারের অধিক রকেট ইসরাইলে নিক্ষেপ করেছে।

যুদ্ধের নতুন আপডেট জানতে ক্লিক করুন এখানে

হামাস কেন ইসরাইল হামলা করলো?

১৯৪৮ সাল থেকেই চিরচেনা ফিলিস্তিন দখল করতে শুরু করে ইসরাইলরা। এর পূর্বে থিউডোর হার্জেল সুলতান আব্দুল হামিদের নিকট ফিলিস্তিনের ভূমি চেয়ে কোনো ফল পায় নি।

এরপর থেকেই তারা দখলদারিত্ব, অন্যায়ভাবে হত্যা, খুন-গুমের মাধ্যমে ফিলিস্তিন দখল করার চেষ্টা শুরু করে। সেই ধারাবাহিকতা এখনো চলছে।

তবে ২০২১ সালে ইসরাইল এবং হামাসের মধ্যে চলমান ১১ দিনের যুদ্ধের পর থেকেই ইসরাইল প্রতিনিয়্যত ফিলিস্তিনের হয়রানি এবং ভূমি দখল করে আছে।

বর্তমানের এই যুদ্ধকে “অপারেশন আল-আকসা স্টর্ম” নামে নামকরণ করেছে হামাস। এই যুদ্ধে হামাস ৫ হাজার রকেট হামলার পাশাপাশি ইসরাইলের দখলকৃত ভূমিতে প্রবেশ করেও হামলা করেছে হামাস।

হামাস বলছে, আমাদের লক্ষ্য হলো স্বাধীনতা। আমরা আমাদের স্বাধীনতা চাই এবং পবিত্র স্থানগুলোর স্বাধীনতা চাই।

হামাসের চীফ ডিপুটি বলেন, আমরা যুদ্ধ ততক্ষণ চালিয়ে যাব যতক্ষণ না আমরা বিজয়, স্বাধীনতা পাচ্ছি। এছাড়াও ইসরায়েলি দখলদারদের বিরুদ্ধে লড়াই করার এবং তাদের থেকে পবিত্র ভূমি উদ্ধার করার অধিকার আমাদের রয়েছে।

হামাস আরো বলেছে, আমরা যে কোনো খারাপ পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত।

এছাড়াও বহু ফিলিস্তিনিকে ইসরাইল বন্দী করে রেখেছে অনেকদিন ধরে। তাদের মুক্তির লক্ষ্যে এই হামলা করছে হামাস।

চীফ ডিপুটি সালেহ আরোরি বলেন, হামাসের নিকট পর্যাপ্ত ইসরায়েলি বন্দী রয়েছে। যার মাধ্যমে আমাদের ফিলিস্তিনি বন্দীদের উদ্ধার করা যাবে।

হতাহত

গাজার চিকিৎসা সুত্রের তথ্যমতে, ইসরাইলের হামলায় ৩০০ এর অধিক ফিলিস্তিনি শহীদ এবং ২ হাজারের অধিক ফিলিস্তিনি আহত হয়েছে।

ইসরায়েলের স্বাস্থ্য সংস্থার মথ্যমতে, হামাসের হামলায় ১০০ জন ইসরায়েলি নিহত এবং ৭৫০ জন ইসরায়েলি আহত হয়েছে।

এছাড়াও এই যুদ্ধ আরো কয়েকদিন গড়ালে এই হতাহতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

স্বাভাবিকভাবেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য এই হামলার নিন্দা জানিয়েছে এবং ইসরায়েলের পক্ষে শর্তহীনভাবে থাকার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্স।

কাফেররা কাফেরদেরকে সমর্থন করবে, এটাই হক কথা। কুরআনেই বলা হয়েছে, কুফফার শক্তি তাদের সকল বিভেদ ভুলে একত্রিত হবে মুসলমানদের বিরুদ্ধে।

এদিকে সৌদি আরব নিরপেক্ষ থেকে হামাসকে হামলা বন্ধের আহবান জানিয়েছে। তাদের অবস্থানটা স্পষ্ট নয়। ইরান, লেবানন হামাসের পাশে থাকবে বলে বিবৃতি দিয়েছে।

ফিলিস্তিনের পরিস্থিতি

ফিলিস্তিনের শহর গাজার অধিবাসীরা একটি দীর্ঘমেয়াদী হামলার আশঙ্কা করছেন। সেখানে বিমান হামলা, রকেট হামলা করছে ইসরাইল।

বিভিন্ন পাবলিক প্লেস, আবাসিক এলাকা, পার্ক ইসরাইলের হামলার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে। অভিজ্ঞতা এলাকার বাসিন্দাদের অন্যত্র সরে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।

শুধুমাত্র গাজাতে মৃতের সংখ্যা দাড়িয়েছে ১৯৮ এর অধিক। আর হতাহতের সংখ্যা ১৬০০ এর বেশি। রামাল্লা, পশ্চিম তীরে হতাহত আরো বাড়তে পারে বলে বিশ্লেষকরা দাবী করছেন।

দক্ষিণ গাজায় অবৈধ ইসরাইলের হামলায় ইন্দোনেশিয়ার একটি হাসপাতালের সামনে একটি অ্যাম্বুলেস ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।

এর পাশাপাশি নিরপেক্ষ একজন নার্স, অ্যাম্বুলেসের ড্রাইভার নিহত হয়েছেন। পাশাপাশি স্থানীয় লোকজনের অনেকে আহত হয়েছে।

এছাড়াও দখলদার ইসরাইল বিভিন্ন সেবা সংস্থা, হাসপাতাল এবং স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে ইচ্ছাকৃতভাবে হামলা করছে বলে মনে করা হচ্ছে।

ইসরাইলের বিমান বাহিনী বলেছে, তারা গাজার মধ্যখানে অবস্থিত হামাসের সামরিক কেন্দ্রে আক্রমণ করেছে।

ফিলিস্তিনের রেড ক্রিসেন্ট বলেছে, সন্ধা ৬ টার মধ্যে আরো ৩৩ জন ফিলিস্তিনি আহত হয়েছেন। এছাড়াও মাথায় গোলার বারুদ লেগে ১৪ জন, টিয়ার গ্যাসের কারণে ৮ জন, অবৈধ ইসরায়েলি সৈন্যরা পিটিয়ে ২ জনকে আহত করেছে।

ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরে তিনজন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। এছাড়াও সেখানে অবস্থিত দখলদার বসতি স্থাপনকারী ইহুদিরা ফিলিস্তিনিদের উপর আক্রমণ করছে।

এরইমধ্যে নাবলুস শহরের দক্ষিণে ৪ জন আহত হয়েছেন। সালফিটের পূর্বে ৬ জন গোলা বারুদে আক্রান্ত হয়ে আহত হয়।

একজনকে স্থানীয় এক ইহুদি ছুরিকাঘাত করে হত্যার চেষ্টা করে। ২৫ জন টিয়ার শেলের কারণে আক্রান্ত হয়।

ইসরাইলের মাথায় হাত

ইসরাইলের একজন প্রাক্তন বিচারপতি বলছেন, ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ কিভাবে এই আক্রমণের খবর আগে থেকে জানতে পারলো না, এটি তদন্ত করা হবে।

এটি ফিলিস্তিনের জন্য ও বিশেষ করে হামাসের জন্য খুবই ভালো সংবাদ যে, তারা ইহুদি গোয়েন্দাদের চোখে ধুলো দিতে পেরেছে।

গাজার কাছে বর্তমানে ২২টি স্থানে যুদ্ধ চলছে। ইসরাইলের মুখপাত্র বলেন, ইসরাইলের অনেক সেনাদের এবং কমান্ডারদের হত্যা করা হয়েছে।

এছাড়াও এই হামাস ইসরাইল যুদ্ধ এর মধ্যে হামাসের হাতে অনেক ইসরায়েলি সৈন্য এবং ইহুদি বন্দী অবস্থায় রয়েছে।

হামাস ইসরাইল যুদ্ধ এর লাইভ আপডেট জানুন আল জাজিরা থেকে

Scroll to Top