আল্লাহকে ভয় করা – ঈমানের আরেক সঙ্গী

আল্লাহকে ভয় করা একজন ঈমানদার মুমিন-মুসলমানের জন্য অবশ্য কর্তব্য। যেই আল্লাহ আমাদের লালন-পালন করছেন, আমরা তার আনুগত্য করবো, তার বড়ত্ব বর্ণনা করবো, এটাই ঈমানের দাবী।

যেই ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করে না, সে যা ইচ্ছা করতে পারে। দুনিয়াতে সে কোনো বিধি-নিষেধের আওতাভুক্ত হয় না।

যেমনটা আমরা কাফের-মুশরিকদের ক্ষেত্রে দেখতে পাই। যেই ব্যক্তি আল্লাহকে মানে না, আল্লাহর বিধানকে অস্বীকার করে, সে কিভাবে আল্লাহকে ভয় করবে?

আল্লাহ পবিত্র কুরআনে বলছেন, یٰۤاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوْۤا اَطِیْعُوا اللهَ তোমরা আল্লাহর আনুগত্য করো। (সূরা আনফাল, আয়াত ২০)

পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তার নিজের আনুগত্য করতে বলেছেন। এর পাশাপাশি তার রাসূলের আনুগত্য করতে বলেছেন।

কারণ, রাসূলের মাধ্যমেই আমরা এই কুরআনুল কারীম পেয়েছি। রাসূল আমাদেরকে কুরআন ও বিধি-বিধান শিক্ষা দিয়েছেন।

আল্লাহর আনুগত্য মানে হলো, আল্লাহ যা আদেশ করেছেন তা মান্য করা, যা নিষেধ করেছেন তা থেকে বিরত থাকা।

যেই বিষয়ে সতর্ক করেছেন, সেই বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করা। আল্লাহর বিধান জানা সত্ত্বেও তার অবাধ্যতায় লিপ্ত না হওয়া ও আল্লাহর পথ থেকে সরে না যাওয়া।

যেই ব্যক্তি কোনো বিধান শোনার পর তা মান্য না করে, এক কান দিয়ে শুনে আর অপর কান দিয়ে বের করে দেয়, তার আচরণ হলো মুনাফিক ও কাফেরদের ন্যায়।

কারণ, তারাও আল্লাহর বিধান শোনে এবং আল্লাহর বিধান জানে।

কিন্তু এরপরও তারা তা মানে না এবং তারা তা নিজের জীবনে বাস্তবায়ন করে না।

আল্লাহ তা’আলা পবিত্র কুরআনের সূরা মুহাম্মাদের ৩৩ নং আয়াতে বলেছেন,

یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اَطِیۡعُوا اللّٰهَ وَ اَطِیۡعُوا الرَّسُوۡلَ وَ لَا تُبۡطِلُوۡۤا اَعۡمَالَکُمۡ

হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহর আনুগত্য কর এবং রাসূলের আনুগত্য কর। আর তোমরা তোমাদের আমলসমূহ বিনষ্ট করো না।

মানুষের আমল কিভাবে বিনষ্ট হয়? যখন সে আল্লাহর আনুগত্য ছেড়ে দিবে, নিজের মনগড়া জীবনে চলবে, যা ইচ্ছা সেটাই করবে, তখন তাদের আমল বিনষ্ট হয়ে যাবে।

একজন মুমিন মুসলমানকে লোক দেখানো কাজ, কুবুদ্ধিমূলক কাজ ও ছোট শিরক থেকে বের থাকতে হবে।

তাকে কোনো ভ্রান্ত আকীদা-বিশ্বাস লালন করা যাবে না।

নবীজি সা. যা করতে বলেছেন এবং যা করেছেন, সাহাবায়ে কেরাম এবং তাবেয়ীরা যা করেছেন এবং যা করতে বলেছেন, সেটাই করা।

তার বাহিরে মনগড়া কিছু না করা। তা দেখতে যতই ভালো মনে হোক না কেন!

যারা আল্লাহর আনুগত্য করবে এবং তার রাসূলের আদর্শে চলাফেরা করবে, তাদের জন্য রয়েছে মহা প্রতিদান। এ বিষয়ে কুরআনে বলা হচ্ছে,

وَ مَنْ یُّطِعِ اللهَ وَ الرَّسُوْلَ فَاُولٰٓىِٕكَ مَعَ الَّذِیْنَ اَنْعَمَ اللهُ عَلَیْهِمْ مِّنَ النَّبِیّٖنَ وَ الصِّدِّیْقِیْنَ وَ الشُّهَدَآءِ وَ الصّٰلِحِیْنَ ۚ وَ حَسُنَ اُولٰٓىِٕكَ رَفِیْقًا،ذٰلِكَ الْفَضْلُ مِنَ اللهِ وَ كَفٰی بِاللهِ عَلِیْمًا

যারা আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্য করবে, তারা সেইসকল লোকের সঙ্গে থাকবে, যাদের প্রতি আল্লাহ অনুগ্রহ করেছেন, অর্থাৎ নবী, সিদ্দীক, শহীদ ও সালিহগণের সঙ্গে। কতই না উত্তম সঙ্গী তারা! এটা কেবলই আল্লাহপ্রদত্ত শ্রেষ্ঠত্ব। আর (মানুষের অবস্থাদি সম্পর্কে) পরিপূর্ণ ওয়াকিবহাল হওয়ার জন্য আল্লাহ্ই যথেষ্ট। (সূরা নিসা, আয়াত ৬৯-৭০)

শয়তান হলো মানুষের চিরশত্রু। শয়তান হযরত আদম আ. কে সেজদা না করায় তাকে জান্নাত থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিল।

এরপর সে শপথ নিয়েছিল, বনী আদমের সকলকে সে জাহান্নামী করে ছাড়বে। এ বিষয়ে পবিত্র কুরআনের সূরা আনফালের ১৬-১৭ নং আয়াতে বর্ণিত আছে,

قَالَ فَبِمَاۤ اَغۡوَیۡتَنِیۡ لَاَقۡعُدَنَّ لَهُمۡ صِرَاطَکَ الۡمُسۡتَقِیۡمَ. ثُمَّ لَاٰتِیَنَّهُمۡ مِّنۡۢ بَیۡنِ اَیۡدِیۡهِمۡ وَ مِنۡ خَلۡفِهِمۡ وَ عَنۡ اَیۡمَانِهِمۡ وَ عَنۡ شَمَآئِلِهِمۡ ؕ وَ لَا تَجِدُ اَکۡثَرَهُمۡ شٰکِرِیۡنَ

সে বলল, যেহেতু তুমি আমাকে পথভ্রষ্ট করেছ, তাই আমিও শপথ করছি, আমি তাদের জন্যে তোমার সরল পথে ওঁত পেতে থাকব। তারপর আমি তাদের ওপর হামলা করব তাদের সম্মুখ থেকে, তাদের পেছন থেকে, তাদের ডান দিক থেকে এবং তাদের বাম দিক থেকেও। আর তুমি তাদের অধিকাংশকেই কৃতজ্ঞ পাবে না।

মানুষের জীবনে মৃত্যু পর্যন্ত শয়তান প্রতিটি পদে পদে ওৎ পেঁতে থাকে।

হতে পারে কাউকে মুমিনের মতো দেখা যায়, কিন্তু মৃত্যুর আগে হয়তো সে ঈমানহারা হয়ে মারা যাবে।

একজন মুমিন সর্বদা ভালো কাজ করবে, আল্লাহর প্রতি ভরসা রাখবে, দুনিয়াতে সদা শঙ্কিত থাকবে যে, কখন আবার তার ঈমান চলে যায়!

এমনকি মৃত্যুর পরও এই শঙ্কা থাকবে। কারণ আল্লাহ অন্যত্র বলেছেন, মানুষের অনু পরিমাণ অসৎ কাজও কেয়ামতের দিন দেখতে পাবে।

এ জন্য দুনিয়াতে থাকাবস্থায় একজন মুমিন আল্লাহকে ভয় করবে, আল্লাহর আনুগত্য করবে, রাসূলের আনুগত্য করবে এবং শয়তানের ধোঁকা থেকে বেঁচে থাকার চেষ্টা করবে।

এটাই দ্বীনের দাবী। এটাই মুমিন মুসলমানের কর্তব্য। দুনিয়াতে যখন কোনো গুনাহ্ হয়ে যাবে তখন সাথে সাথে তওবা করে নিবে।

আর পরবর্তীতে ওই গুনাহ যেন আর দ্বিতীয়বার না হয়, সেদিকে সদা সতর্ক দৃষ্টি থাকতে হবে। আল্লাহকে ভয় করা আমাদের কর্তব্য।

এমন যেন না হয়, একবার গুনাহ করলাম, আবার তওবা করলাম, আবার গুনাহ করলাম, আবার তওবা করলাম। এমন ধারাবাহিকতা যেন চলতে না থাকে।

আল্লাহ আমাদেরকে সকল ভালো কাজ করার তাওফিক দান করুন। আমীন।

Scroll to Top