মদ হারাম হওয়ার আয়াত

মদ হারাম হওয়ার আয়াত – রাফি গতকালকেও একটা ট্রফি জিতেছে। ন্যাশনাল টিমের ক্রিকেটার সে। ছোটবেলা থেকেই খেলার সাথে জড়িত। আগে খেলা ছিল তার নেশা। এখন হয়ে গেছে পেশা।

হঠাৎ করেই ইমেইল করলো রাফি। মানসূরের সাথে সর্বশেষ তার দেখা হয়েছে চার মাস আগে। ইদানিংকালে দুজনের সামনা সামনি দেখা হয় না তেমন।

রাফি বিভিন্ন টুর্নামেন্ট খেলার জন্য প্রায় দেশের বাহিরে থাকে। মানসূর এবার ইসলামিক বিচার ব্যবস্থার উপর পিএইডি করছে মদীনা ইউনিভার্সিটিতে।

কম্পিউটার স্ক্রীনে ইমেইলটি দেখলো মানসূর। তাতে লেখা,

মানসূর, তোর সাথে অনেকদিন দেখা হয় না। কিন্তু তোকে কি এত সহজে ভুলে যাওয়া যায়? একটা বিপদে পড়ে আজকে তোকে মেইলটি করছি।

গত দুইদিন আগে আমি আয়ারল্যান্ডে দ্য লিটল মিউজিয়াম অব ডাবলিনে যাই। সেখানে আমার এক ফ্রেন্ডের সাথে দেখা হয়। আমরা একত্রে ঘুরাঘুরি করার পর স্থানীয় এক রেস্টুডেন্টে খাবার খাই।

সেখানে খাওয়া দাওয়ার পর সে বিয়ারের দোকান থেকে অ্যালকোহল বা মদ ক্রয় করে। সে আমার দিকে এক গ্লাস মদ এগিয়ে দিলে আমি তা গ্রহণ করতে অপারগতা প্রকাশ করি।

তখন সে বলে, ইয়াংম্যান এখানে তো তোমার নবী নেই। খেয়ে নাও, শরীর চাঙ্গা হবে।

আমি তখন তাকে বলি, আমাদের ধর্মীয় গ্রন্থ কুরআনে এই মদ সম্পর্কে নিষেধাজ্ঞা আছে। তাই আমি এটা গ্রহণ করতে পারি না।

পরবর্তীতে সে আর জোরাজুরি করে নি। এখন আমার জানার বিষয় হলো, কুরআনের কোথায় মদকে হারাম বলা হয়েছে?

মদ হারাম হওয়া সম্পর্কে কুরআনের আয়াত

মদ হারাম হওয়ার আয়াত – নবীজি সা. যখন ইসলাম প্রচার শুরু করলেন তখন থেকেই তার উপর স্রষ্টার পক্ষ থেকে বিভিন্ন আদেশ-নিষেধ আসতে লাগলো। তার মধ্যে একটা হলো মদ সম্পর্কিত বিধান।

জাহিলিয়্যাতের যুগ থেকেই আরবসহ পৃথিবীর প্রায় সকল অঞ্চলেই এই মদের প্রচলন ছিল। কেউ এটা বানাতো আঙ্গুর দিয়ে, কেউ বা খেজুর দিয়ে।

মদকে আল্লাহ তা’আলা একবারেই হারাম করেন নি। চার ধাপে হারাম করেছেন। উক্ত আয়াতগুলো কুরআনে রয়েছে।

প্রথম ধাপ

সূরা নাহলের ৬৭ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন,

وَ مِنۡ ثَمَرٰتِ النَّخِیۡلِ وَ الۡاَعۡنَابِ تَتَّخِذُوۡنَ مِنۡهُ سَکَرًا وَّ رِزۡقًا حَسَنًا ؕ اِنَّ فِیۡ ذٰلِکَ لَاٰیَۃً لِّقَوۡمٍ یَّعۡقِلُوۡنَ

“আর খেজুর ও আঙ্গুর ফল হতে তোমরা মদ ও উত্তম খাদ্য গ্রহণ করে থাক, এতে অবশ্যই বোধশক্তিসম্পন্ন সম্প্রদায়ের জন্য রয়েছে নিদর্শন।”

উক্ত আয়াতে আল্লাহ তা’আলা সরাসরি মদকে হারাম বলেন নি। এই আয়াতটি হলো, মদ সম্পর্কে নাযিল হওয়া প্রথম আয়াত।

এখানে আল্লাহ তা’আলা বলেছেন, মদ ও অন্যান্য খাদ্য তোমরা খেজুর এবং আঙ্গুর হতে গ্রহণ করে থাক। নিশ্চয় এই দুইটি জিনিষ ভিন্ন ভিন্ন।

অর্থাৎ মদ এবং অন্যান্য উপকারী খাদ্য এক নয়। আর জ্ঞানীরা সামান্য কথার মাধ্যমেই বুঝতে পারে।

২য় ধাপ

সূরা বাকারার ২১৯ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন,

يَسْأَلُونَكَ عَنِ الْخَمْرِ وَالْمَيْسِرِ قُلْ فِيهِمَا إِثْمٌ كَبِيرٌ وَمَنَافِعُ لِلنَّاسِ وَإِثْمُهُمَا أَكْبَرُ مِنْ نَفْعِهِمَا

“তারা তোমাকে মদ ও জুয়া সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে। বল, এ দু’টোয় রয়েছে বড় পাপ ও মানুষের জন্য সামান্য উপকার। আর তার পাপ তার উপকারিতার চেয়ে অধিক বড়।”

এই আয়াতটি নাযিল হয় দ্বিতীয়তে। যখন প্রথম আয়াতটি নাযিল হওয়ার পর সাহাবারা নবীজিকে মদ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে।

এই আয়াতে বলা হয়েছে, দুইটা বড় পাপ কাজ হলো মদ এবং জুয়া খেলা। আর এই দুইটা কাজে যদিও সামান্য উপকার রয়েছে, তবে ক্ষতিটাই সবচেয়ে বেশি।

৩য় ধাপ

সূরা নিসার ৪৩ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন,

يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَقْرَبُوا الصَّلَاةَ وَأَنْتُمْ سُكَارَى

“হে মুমিনগণ, নেশাগ্রস্ত অবস্থায় তোমরা নামাজের নিকটবর্তী হয়ো না।”

এই আয়াতটি তৃতীয় পর্যায়ে নাযিল হয়েছে। এই আয়াতে আল্লাহ তা’আলা নেশাগ্রস্ত অবস্থায় নামাজ পড়তে নিষেধ করেছেন।

এই আয়াতটি নাযিল হওয়ার আগে একটা ঘটনা ঘটেছে। তা হলো,

একবার এক সাহাবী মদপান করে (তখনও মদ পরিপূর্ণ হারাম হয় নি) নামাজ পড়ছিলেন। সাথে আরেকজন ছিল।

একজন মাতাল হয়ে পড়ে গেল। আর অপরজন সূরা কাফিরুন পড়তে গিয়ে উল্টাপাল্টা পড়া শুরু করলো।

এই পরিপ্রেক্ষিতে উক্ত আয়াত নাযিল হয়েছে।

৪র্থ ধাপ

সূরা মায়েদার ৯০ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন,

يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِنَّمَا الْخَمْرُ وَالْمَيْسِرُ وَالْأَنْصَابُ وَالْأَزْلَامُ رِجْسٌ مِنْ عَمَلِ الشَّيْطَانِ فَاجْتَنِبُوهُ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ

“হে মুমিনগণ, নিশ্চয় মদ, জুয়া, প্রতিমা-বেদী ও ভাগ্যনির্ধারক তীরসমূহ তো শয়তানের কাজ। সুতরাং তোমরা তা পরিহার কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও।”

এই আয়াত নাযিল হওয়ার মাধ্যমে পরিপূর্ণরূপে মদকে হারাম সাব্যস্ত করা হয়। একটা ঘটনা রয়েছে,

এক মজলিসে সাহাবারা একত্রিত হয়ে বসে ছিল। তাদের কেউ মদপান করছিল। কেউ বা মদের গ্লাস হাতে রেখেছিল।

কেউ মদ ঢালছিল। কেউ মদ পরিবেশন করছিল। যখন একজন সাহাবী এসে ঘোষণা দিল,

হে লোকসকল! মদকে পরিপূর্ণ হারাম করা হয়েছে। তখন সাথে সাথে যে মদের গ্লাস ধরে রেখেছিল, সে হাত থেকে ফেলে দিল।

যে মুখে নিয়েছিল, সে কুলি করে ফেলে দিল। যে পরিবেশন করছিল, সে মদের পাত্র ছুঁড়ে মারলো।

মদীনার প্রতিটি বাড়িতে থাকা মদকে ঢেলে ফেলে দেয়া হলো। এমন একটা পরিস্থিতি সৃষ্টি হলো, যেন মদের বন্যা বয়ে গেছে।

এটাই ছিল তাদের ঈমান এবং তাকওয়া। আদেশ পাওয়ার সাথে সাথে কোনো ধরণের জালিয়াতি না করে সাথে সাথে হুকুম কার্যকর করেছেন তারা।

উপরোক্ত আয়াতগুলোর বিধান কি এখনো একইরকম?

মদ হারাম হওয়ার আয়াত – অনেকেই ভেবে বসতে পারেন, যেহেতু চারধাপে আল্লাহ নিষেধ করেছেন। তাহলে হয়তো বিধানটা এখনো চারধাপের ন্যায়। এটা একটি ভুল ধারণা।

পবিত্র কুরআন শরীফের কিছু আয়াতের বিধান আবশ্যকীয়ভাবে মানতে হয়। আর কিছু আয়াতের বিধান প্রেক্ষাপটে নাযিল হয়েছে।

মদ সম্পর্কে প্রথম তিন আয়াতের বিধান অর্থাৎ মদ সম্পর্কে শিথিলতার বিধান চতুর্থ আয়াতটি নাযিল হওয়ার সাথে সাথেই রহিত হয়ে গেছে।

তাই এখন যদি কেউ মদকে হালাল মনে করে খায়, তাহলে সে কুরআনের আয়াত অস্বীকার করার কারণে মুসলমান থেকে বের হয়ে যেতে পারে। আল্লাহ ভালো জানেন।

তাই এই সম্পর্কে কথা বলার আগে সাবধান!

আমাদের দেশে মদের লাইসেন্স দেয়া হয় এবং অনেকেই মদ হারাম হওয়াকে মানতে চান না। তারা বলেন, মদ তো হালাল। এটা সম্পর্কে কুরআনে বলা হয়েছে, সামান্য উপকার আছে।

অথচ তারা সূরা মায়েদার ৯০ নং আয়াতটি দেখে না। এ জন্যই বলা হয়, অল্প জ্ঞান বিপদজনক।

আল্লাহ আমাদের হেফাজত করুন।

আরো পড়ুন

১. রিযিক অন্বেষণ সম্পর্কে কুরআনের আয়াত

২. হারাম রিলেশন থেকে বাঁচুন

৩. ঈদের দিনের করণীয় ও বর্জনীয়

আরো পড়তে পারেন এখান থেকে

১. মদ হারাম হওয়ার চারটি ধাপ

২. মদ হারামের আয়াত নাযিল হওয়ার পর

৩. ইসলামে মদ হারাম কেন

৪. মদ কেন হারাম

Scroll to Top