রিযিক সম্পর্কে কোরআনের আয়াত

রিযিক সম্পর্কে কোরআনের আয়াত

: জানেন ভাবি! আমাদের এই কুরবানীর ঈদে গরু কিনেছে এক লাখ ত্রিশ হাজার দিয়ে।

: ওয়াও। এটা কি আপনারা একাই দিচ্ছেন?

: হ্যাঁ। একাই।

: তো এত গোশত রাখবেন কিভাবে?

: আজকে আমরা ওয়ালটন শো রুম থেকে একটা ফ্রিজ কিনে আনবো।

: বলছিলাম কি ভাবি, গোশতগুলো জমিয়ে না রেখে গরীব-অসহায়দের দান করলে ভাল হয় না?

: আরে দূর ভাবি, কি যে বলেন। এত কষ্টের টাকা দিয়ে গরু কিনে যদি অন্যকে দিয়ে দেই, তাহলে কি লাভ বলেন?

রিযিক নিয়ে এমনটাই ঘটে আজকাল। মানুষ ভাবে, রিযিক তার নিজ হাতে কামানো। সে যেভাবে ইচ্ছা সেভাবেই খরচ করবে। কিন্তু সে ভুলে যায়, তার একজন স্রষ্টা আছে। আছে একজন রব। যিনি তাকে সৃষ্টি করেছেন। তাকে খাওয়াচ্ছেন। তাকে পরিধান করাচ্ছেন।

আল্লাহ তা’আলা সূরা যারিয়াতের ৫৮ নং আয়াতে বলছেন,

اِنَّ اللّٰهَ هُوَ الرَّزَّاقُ ذُو الۡقُوَّۃِ الۡمَتِیۡنُ

“নিশ্চয় আল্লাহ হলেন তিনি, যিনি রিযিকদাতা এবং মহাশক্তিধর ও মহাপরাক্রমশালী।”

আয়াতে আল্লাহ স্পষ্টভাবে বলে দিচ্ছেন, তিনি হলেন রিযিকদাতা। আল্লাহ আমাদের রিযিক দান করেন। কিন্তু রিযিক নষ্ট করতে বলেন নি। আপনাকে আল্লাহ অনেক রিযিক দান করেছে? তাহলে আপনি সাবধান হোন। কারণ, এটা একটি পরীক্ষা।

আল্লাহ তা’আলা সূরা বাকারার ২১২ নং আয়াতে বলেছেন,

زُیِّنَ لِلَّذِیۡنَ کَفَرُوا الۡحَیٰوۃُ الدُّنۡیَا وَ یَسۡخَرُوۡنَ مِنَ الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا ۘ وَ الَّذِیۡنَ اتَّقَوۡا فَوۡقَهُمۡ یَوۡمَ الۡقِیٰمَۃِ ؕ وَ اللّٰهُ یَرۡزُقُ مَنۡ یَّشَآءُ بِغَیۡرِ حِسَابٍ

“যারা কুফরী করেছে, দুনিয়ার জীবনকে তাদের জন্য সুশোভিত করা হয়েছে। আর তারা মুমিনদের নিয়ে উপহাস করে। আর যারা তাকওয়া অবলম্বন করেছে, তারা কিয়ামত দিবসে তাদের উপরে থাকবে। আর আল্লাহ যাকে চান, হিসাব ছাড়া রিযিক দান করেন।”

কত কঠিন কথা বলেছেন তিনি। আপনি কুফরী করবেন? আপনি তার নাফরমানি করবেন? কোনো সমস্যা নেই। দুনিয়াকে আপনার জন্য সুশোভিত করা হয়েছে।

আপনার জন্য সমস্ত নাজ-নেয়ামত খুলে দেয়া হয়েছে। যত ইচ্ছা ভোগ করেন। কেউ বাঁধা দিবে না। কিন্তু জেনে রাখেন, আপনার রিযিক এই দুনিয়াতেই সীমাবদ্ধ।

পরকালে বা আখিরাতে আপনার জন্য কিছুই নেই। সেদিন আপনি হবেন নিঃস্ব। আপনি হবেন ধিকৃত। আপনি হবেন অপমানিত।

আর আপনার পাশের ব্যক্তিটি আল্লাহর নিয়ম-নীতি পালন করছে, নবীজির বাতলে দেয়া পথে চলছে তাহলে কেয়ামতের দিন সে থাকবে আপনার উপরে।

আপনার থেকেও তার মর্যাদা বেশি হবে। তিনি হবেন সম্মানিত। তিনি হবেন রোল মডেল।

আল্লাহ তা’আলা সূরা হুদের ৬ নং আয়াতে বলেন,

وَ مَا مِنۡ دَآبَّۃٍ فِی الۡاَرۡضِ اِلَّا عَلَی اللّٰهِ رِزۡقُهَا وَ یَعۡلَمُ مُسۡتَقَرَّهَا وَ مُسۡتَوۡدَعَهَا ؕ کُلٌّ فِیۡ کِتٰبٍ مُّبِیۡنٍ

“যমীনে বিচরণকারী প্রতিটি প্রাণীর রিযিকের দায়িত্ব আল্লাহর হাতে। তিনি জানেন তাদের দুনিয়াতে বসবাসের স্থান ও মৃত্যুর পর তাদের সমাধিস্থল কোথায় হবে। আর সব কিছু লিপিবদ্ধ রয়েছে সু-স্পষ্ট কিতাবের মধ্যে।”

আপনি আজ রাস্তার রিকশাওয়ালাকে এক জায়গার কথা বলে অন্য জায়গায় নিয়ে টাকা কম দিলেন। রিকশাওয়ালা তখন নায্য ভাড়া দাবী করলো। আপনি ক্ষমতার বলে তাকে থাপ্পড় দিলেন। এই কর্মকাণ্ড কিন্তু আল্লাহ লিপিবদ্ধ করে রাখছেন।

ওই রিকশাওয়ালার রিযিক তো আপনার হাতে নয়। তা একমাত্র আল্লাহর হাতে। আপনি হয়তো ভাবছেন, তার রিযিক আপনি বন্ধ করে দিবেন। কিন্তু কখনোই তা পারবেন না।

আল্লাহ পূর্ব থেকেই জানেন, দুনিয়াতে আপনি কতুটুকু পাবেন এবং মৃত্যুর পর আপনাকে কোথায় মাটিচাপা দেয়া হবে।

আপনার মৃত্যুর পরের খবর কেউ রাখবে না। সেদিন আপনার অশ্লীল কর্মকাণ্ডের জন্য শাস্তি প্রদান করা হবে। কেউ আপনাকে সাহায্য করবে না। কেউ আপনার সাহাযার্থে এগিয়ে আসবে না।

আল্লাহ তা’আলা সূরা বনী ইসরাইলের ১৭ নং আয়াতে উল্লেখ করছেন,

اِنَّ رَبَّکَ یَبۡسُطُ الرِّزۡقَ لِمَنۡ یَّشَآءُ وَ یَقۡدِرُ ؕ اِنَّهٗ کَانَ بِعِبَادِهٖ خَبِیۡرًۢا بَصِیۡرًا

“নিশ্চয় তোমার রব যাকে ইচ্ছা তার জন্য রিযিক বাড়িয়ে দেন এবং যাকে ইচ্ছা তার জন্য রিযিক সীমিত করে দেন। আর অবশ্যই তিনি তাঁর বান্দাদের সম্পর্কে পূর্ণ জ্ঞাত এবং প্রত্যক্ষদর্শী।”

আপনি আজকে অফিসের বস হয়ে ভাবলেন, কর্মচারীর বেতন কমিয়ে তাদের না খাইয়ে রাখবেন। অথবা আপনি দেশের উচ্চপদস্থ ব্যক্তি হয়ে ভাবছেন, জনগণের টাকা মেরে সুখে দিন কাটাবেন। তাহলে জেনে রাখুন, আল্লাহ যেভাবে আপনাকে রিযিক দিতে পারে তেমনই আপনার থেকে রিযিক ছিনিয়ে নিতেও পারে।

এই লেখাটি যখন লেখছি তখন শ্রীলঙ্কার মানুষ বিক্ষোভ করে প্রেসিডেন্টের ভবনে ঢুকে পড়েছে। কেউ তাদের আঁটকায় নি। ক্ষমতালোভীরা এখন কোনঠাসা হয়ে পড়েছে।

এই উত্থান-পতন একমাত্র আল্লাহ তা’আলাই ঘটান। এখনো যদি গোঁড়ামি করেন তাহলে কবে আপনি সংশোধন হবেন?

আল্লাহ তা’আলা সুরা রহমানের ২৯ নং আয়াতে বলেন,

یَسۡـَٔلُهٗ مَنۡ فِی السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضِ ؕ کُلَّ یَوۡمٍ هُوَ فِیۡ شَاۡنٍ

“আকাশ আর পৃথিবীতে যারা আছে তারা (নিজেদের প্রয়োজন মেটানোর জন্য যা কিছু দরকার) তাঁর কাছেই চায়, প্রতি মুহূর্ত তিনি নতুন নতুন গুরুত্বপূর্ণ কাজে নিয়োজিত (কাউকেও বাঁচাচ্ছেন, কাউকেও মারছেন, কাউকেও সম্মানিত ক’রে ঊর্ধ্বে উঠাচ্ছেন, কাউকেও অপমানিত ক’রে নামিয়ে দিচ্ছেন ইত্যাদি)।”

এই যে, আপনাকেই বলছি। আপনি কোনো কারণে অসহায়বোধ করছেন? কাজে আগ্রহ পাচ্ছেন না? মনে শান্তি পাচ্ছেন না? অভাববোধ করছেন?

দুই রাকাত নামাজ পড়ে আল্লাহর কাছে দোয়া করুন। আপনি তার নিকট চান। তাকে আপনার প্রয়োজন বলুন। তার নিকট অনূয়-বিনয় করুন।

তিনি অবশ্যই আপনাকে সাহায্য করবেন। তিনি সর্বদা মানুষসহ সকল সৃষ্টিজীবকে সাহায্য করছেন। তার ধনভাণ্ডার এত বিশাল যে, কখনো তা কমবে না। সম্ভব হলে শেষ রাতে তাহাজ্জুদ পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। দেখবেন, অন্তরে প্রশান্তি পাবেন। আর এই প্রশান্তি এতটাই শান্তিময় যে, এমন শান্তি দুনিয়ার অন্য কোথাও পাবেন না।

তথ্যসুত্র

১. সূরা যারিয়াত। আয়াত ৫৮

২. সূরা বাকারা। আয়াত ২১২

৩. সূরা হুদ। আয়াত ৬

৪. সূরা বনী ইসরাইল। আয়াত ১৭

৫. সূরা রহমান। আয়াত ২৯

৬. বাঁধ ভাঙ্গার আওয়াজ ব্লগ

আরো পড়ুন

নবীজির জন্ম তারিখ

শিয়া মতবাদ ও আকীদাগত বিচ্যুতি

গাজ্জার জন্য অনুদান

৭ অক্টোবর ২০২৩ তারিখে তুফানুল আকসা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই ফিলিস্তিনের গাজ্জায় অসংখ্য মানুষ আহত ও শহীদ হয়েছে। বহু মানুষ নিজেদের ঘর-বাড়ী হারিয়েছে। এছাড়াও বর্তমানে গাজ্জার ৯৮% মানুষ অনাহারে জীবন-যাপন করছে। গাজ্জার মানুষের এই দুঃসময়ে আমরা যদি তাদের পাশে না দাঁড়াই তাহলে কে দাঁড়াবে?

আর-রিহলাহ ফাউন্ডেশন তুফানুল আকসা যুদ্ধের শুরু থেকেই ফিলিস্তিনের গাজ্জার জন্য ডোনেশন সংগ্রহ করে আসছে। এই মহান কাজে আপনিও আমাদের সাথে যুক্ত হতে পারেন।

অনুদান দিন

Scroll to Top