মুসলিম উম্মাহর ঐক্য

মুসলিম উম্মাহর ঐক্য – পৃথিবীতে মুসলিমরা আজ দ্বিধাবিভক্ত। তারা বিধ্বস্ত। তাদের জাগরণ আজ নিস্তব্ধ। ইসলাম শুরুতে এমন ছিল না।

পৃথিবীতে এমন এক কঠিন সময়ে এই দ্বীনকে আল্লাহ পাঠিয়েছেন, যখন জাতিগত বিভেদ ছিল তুঙ্গে। মানুষ সর্বদা নিজের বড়াই করতো আর অপরকে হেয় প্রতিপন্ন করতো।

মানুষ নিজের পরিচয় দিত, আমি অমুক গোত্রের, সে অমুক গোত্রের। আমি সাদা বর্ণের আর সে কালো বর্ণের। আমি ধনী আর সে গরীব। আমি আরবীয়। সে ভারতীয়।

আল্লাহ তা’আলা ইসলামকে এমন কঠিন সময়ে পাঠালেন। সমস্ত মানুষকে একত্ববাদের আহবান জানালেন। এক সুতোয় গাঁথার আহবান জানালেন।

ইসলাম এসে ধনী-গরীব, গোত্রীয়, দেশীয় বিভেদ তুলে দিল। সকলে তখন থেকে একটা মাত্র পরিচয় নিয়ে আগ্রসর হতে লাগলো। আমি মুসলিম।

আল্লাহ তা’আলা মুসলমানদের ঐক্যের গুরুত্ব বুঝাতে গিয়ে কুরআনের সূরা আলে ইমরান আয়াত ১০৩ উল্লেখ করেছেন,

وَ اعۡتَصِمُوۡا بِحَبۡلِ اللّٰهِ جَمِیۡعًا وَّ لَا تَفَرَّقُوۡا ۪ وَ اذۡکُرُوۡا نِعۡمَتَ اللّٰهِ عَلَیۡکُمۡ اِذۡ کُنۡتُمۡ اَعۡدَآءً فَاَلَّفَ بَیۡنَ قُلُوۡبِکُمۡ فَاَصۡبَحۡتُمۡ بِنِعۡمَتِهٖۤ اِخۡوَانًا

তোমরা সকলে আল্লাহর রজ্জুকে দৃঢ়ভাবে ধারণ কর এবং বিভক্ত হয়ো না। আর তোমরা তোমাদের উপর আল্লাহর নিয়ামতকে স্মরণ কর, যখন তোমরা পরস্পরে শত্রু ছিলে। তারপর আল্লাহ তোমাদের অন্তরে ভালবাসার সঞ্চার করেছেন। অতঃপর তাঁর অনুগ্রহে তোমরা ভাই-ভাই হয়ে গেল।

উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় আল্লাহর রশি দ্বারা কুরআনকে বুঝানো হয়েছে। কুরআন প্রেরণের মাধ্যমে তিনি উম্মাহকে এক ধারায় নিয়ে আসলেন।

পৃথিবীতে কোনো ব্যক্তিই ঐক্যের বিরুদ্ধে যায় না। সকলেই চায়, ঐক্য করতে। সকলেই চায় যুদ্ধ-বিগ্রহ বন্ধ করতে।

এত এত ঐক্যের পতাকা থাকার পরও মানুষ বারবার বিভক্ত হয়ে পড়েছে। বারবার দল উপদল গড়ে তুলেছে। সাময়িক স্বার্থের জন্য মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়।

স্বার্থ শেষ হয়ে গেলে আবার পূর্বের অবস্থায় ফিরে যায়। পরষ্পর শত্রুতা মাথাচাড়া দিয়ে উঠে।

যে কোনো জ্ঞানী ব্যক্তিই স্বীকার করে, বিশ্বজাহানের প্রতিপালকের পক্ষেই শুধুমাত্র সমস্ত মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করা সম্ভব।

2

এখন প্রশ্ন আসে, এই ঐক্যের মূল ভিত্তি কি হবে? ইহুদীরা তাওরাতকে আল্লাহর প্রদত্ত বিধান বলে দাবী করে। খৃস্টানরা ইনজিলকে আল্লাহ প্রদত্ত বিধান বলে দাবী করে।

মুশরিকদের বিভিন্ন দল তাদের নিজস্ব  ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানকে আল্লাহর বিধি-বিধান বলে দাবী করে।

এ ধরনের সকল মতবাদ ও সকল দলাদলি আল্লাহ কুরআনে নিষিদ্ধ করেছেন। তিনি বলেছেন, তোমরা আমার রজ্জুকে আকঁড়ে ধরো।

সুনানে তিরমিযি হাদীস নং ৩৭৮৮ হাদীসে আছে। আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. এর রেওয়াতে নবীজি বর্ণনা করছেন,

كِتَابُ اللَّهِ حَبْلٌ مَمْدُودٌ مِنَ السَّمَاءِ إِلَى الأَرْضِ

আল্লাহ তা’আলার কিতাব যা আকাশ হতে মাটি পর্যন্ত দীর্ঘ এক রশি।

যায়েদ ইবনে আরকাম রা. এর রেওয়াত হতে আছে, আল্লাহর রজ্জু হলো কুরআন। মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করতে এখন দুইটা কাজ করা দরকার। যেই দুইটা বিধান এই আয়াতে নির্দেশ করা হয়েছে।

১. আল্লাহ কর্তৃক প্রেরিত জীবন ব্যবস্থা কুরআনকে কাজে কর্মে বাস্তবায়িত করা সকলের উপর কর্তব্য।

২. সকল মুসলমানের সম্মিলিতভাবে এই আদেশকে বাস্তবায়িত করতে হবে।

যখন ঐক্য হয়ে যাবে তখন আল্লাহ আদেশ করেছেন, তোমরা পরষ্পর বিভেদে লিপ্ত হয়ো না। কুরআনে বিভিন্ন নবীদের ঘটনা বর্ণনা করে দেখানো হয়েছে,

যখন তারা ঐক্য থেকে সরে গেছে তখন তাদের ইহকাল ও পরকাল বরবাদ হয়ে গেছে।

সহীহ মুসলিমের ১৭১৫ নং হাদীসে বর্ণিত আছে,

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ “‏ إِنَّ اللَّهَ يَرْضَى لَكُمْ ثَلاَثًا وَيَكْرَهُ لَكُمْ ثَلاَثًا فَيَرْضَى لَكُمْ أَنْ تَعْبُدُوهُ وَلاَ تُشْرِكُوا بِهِ شَيْئًا وَأَنْ تَعْتَصِمُوا بِحَبْلِ اللَّهِ جَمِيعًا وَلاَ تَفَرَّقُوا وَيَكْرَهُ لَكُمْ قِيلَ وَقَالَ وَكَثْرَةَ السُّؤَالِ وَإِضَاعَةَ الْمَالِ

আবূ হুরাইরাহ্ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ তা’আলা তিনটি কাজ পছন্দ করেন এবং তিনটি কাজ অপছন্দ করেন। তোমাদের জন্য তিনি যা পছন্দ করেন, তা হলঃ

১. তোমরা তারই ইবাদাত করবে,

২. তার সঙ্গে কিছুই শারীক করবে না এবং

৩. তোমরা সম্মিলিতভাবে আল্লাহর রজ্জু মজবুতভাবে ধারণ করবে ও পরস্পর বিচ্ছিন্ন হবে না।

আর যে সকল বিষয় তিনি তোমাদের জন্য অপছন্দ করেনঃ

১. নিরর্থক কথাবার্তা বলা,

২. অধিক প্রশ্ন করা এবং

৩. সম্পদ বিনষ্ট করা।

মাওলানা শাব্বির আহমাদ উসমানী রাহি. বলতেন, আল্লাহর রজ্জু ছিঁড়ে যেতে পারে না। তবে ফসকে যেতে পারে।

এই রজ্জু ফসকে যাওয়ার আশঙ্কা থেকে বলা হয়েছে, প্রত্যেক মুসলমান যেমন গুনাহ থেকে বেচে থাকা জরুরি মনে করে তদ্রুপ সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ করাকেও জরুরি মনে করবে।

তথ্যসুত্র

মুসলিম উম্মাহর ঐক্য সংক্রান্ত আলোচনা নেওয়া হয়েছে তাফসীরে ইবনে কাসির ও শফী রহ. লিখিত মারেফুল কুরআন হতে।

Scroll to Top