খলিফা হিসেবে উসমান রা. নির্বচিত হন দ্বিতীয় খলিফা হযরত উমর রা. এর শহীদ হওয়ার পর। হযরত উমর রা. আততায়ীর হাতে আহত হলে তিনি মজলিসে শুরা গঠন করে তাদেরকে পরবর্তী খলিফা নির্বাচনের দায়িত্ব দেন

উক্ত কমিটিতে ছিলেন হযরত উসমান, আলী, আব্দুর রহমান বিন আউফ, সাদ বিন আবি ওয়াক্কাস, তালহা ও যুবাইর বিন আওয়াম রা.।

পরবর্তীতে সাহাবীদের ঐক্যমতে হযরত উসমান রা. খেলাফতের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। হযরত উসমান রা. যখন খলিফা হিসেবে নির্বাচিত হন তখন ইসলামী সাম্রাজ্যের সীমানা পূর্ব থেকে পশ্চিম পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল।

খোরাসান, পারস্য, ইরাকের অনারব অংশ, ইরাকের আরব অংশ, আলজাজিরা, শাম, মিসর, আর্মেনিয়অ ও আজারবাইজানের বিভিন্ন এলাকা তখন ইসলামী মানচিত্রে যুক্ত হয়েছে।

পাশাপাশি হযরত উমর রা. এর যুগে বিজয়ের যে ধারা শুরু হয়েছিল, সে ধারায় বিজয়ের জন্য তখনো বহু ময়দান বাকি ছিল।

শুরা সম্পর্কে রাফেজীদের মিথ্যাচার

হযরত উসমান রা. এর খলিফা নির্বচন নিয়ে পরবর্তীতে অনেক ফেতনা ও মিথ্যাচারের জন্ম হয়। শিয়া, রাফেজীদের মিথ্যাচারে ইতিহাসের পৃষ্ঠা ভরপুর হয়ে আছে।

অনেক প্রাচ্যবিদরা এসব মিথ্যা ঘটনা যাছাই-বাছাই না করেই প্রচার-প্রসারে লিপ্ত হয়েছেন। ফলে আধুনিক অনেক ইতিহাসবিদ এই ভুল গ্রহণ করে বহু মানুষকে বিভ্রান্ত করছে।

এই ভুল ইতিহাস ছড়ানোর জন্য উদাহরণস্বরুপ আবু মিখনাফ রাফেজি রচিত আশ শুরা নামক গ্রন্থটির কথা উল্লেখ করা যায়।

অনুরুপ ইবনে উকদা এবং ইবনে বাবুইয়া ও এই বিষয়ে সতন্ত্র গ্রন্থ রচনা করেছে।

শুরাব্যবস্থা এবং উসমান রা. এর বাইয়াত সম্পর্কে ওয়াকিদি রহ. এর সনদে ইবনে সা’দ রহ. নয়টি বর্ণনা সন্নিহিত করেছেন।

শিয়াদের সুত্রে বর্ণিত তথ্যগুলো সম্পূর্ণ ভেজালে ভরপুর। এগুলোর পেছনে কোনো ঐতিহাসিক সত্যতা নেই। সেগুলো হচ্ছে:

মুসলমানদের ব্যাপারে সাহাবীদের অবিচারের অভিযোগ

শিয়ারা বলে থাকে, আব্দুর রহমান ইবনে আউফ রা. শুরা পরিচালনা করাটা হযরত আলী রা. মেনে নিতে পারেন নি।

আবু মিখনাফ, হিশাম কালবি এবং আহমাদ আল জাওহারি বর্ণনা করেছে, ভোট সমান অবস্থায় উমর রা. আব্দুর রহমানকে সিদ্ধান্তদাতা হিসেবে নিয়োগ দেন।

তখনই আলী রা. বুঝে ফেলেন, তার হাত থেকে শাসনব্যবস্থা চলে যাচ্ছে।

কেননা তিনি জানতেন, আব্দুর রহমান শশুরের দিক থেকে উসমান রা. এর আত্মীয়।

এবার আমরা এই অভিযোগটি যাছাই করে দেখি।

শাইখুল ইসলাম ইমাম তাকিউদ্দিন ইবনে তাইমিয়া রহ. হযরত উসমান এবং আব্দুর রহমান রা. এর মধ্যে আত্মীয়তাকে অস্বীকার করেছেন।

তিনি বলেন, আব্দুর রহমান ইবনে আউফ রা. উসমানের ভাই ও ছিলেন না, চাচাতো ভাই ও ছিলেন না। বংশগতভাবেও এক ছিলেন না।

উসমান রা. ছিলেন বনু উমাইয়া গোত্রের সদস্য আর আব্দুর রহমান ইবনে আউফ রা. ছিলেন বনু জুহরা গোত্রের সদস্য।

আর বনু জুহরা গোত্রের লোকজন ছিল তুলনামূলকভাবে বনু হাশিমের সাথে সম্পৃক্ত। কেননা বনু জুহরা হলো রাসূল সা. এর মামার বংশ।

হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আউফ রা. ও সা’দ ইবনে আবি ওয়াক্কাস রা. ছিলেন একই বংশের সদস্য।

সা’দ রা. সম্পর্কে রাসূল সা. বলেছেন,

জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ রা. বলেন, “সা‘আদ আগমন করলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,

ইনি হলেন আমার মামা অতএব (আমার মামার মতো) কেউ তার মামাকে দেখাক”।

এখন কথা হলো, শিয়ারা কেন বললো, উসমান রা. এর শশুর সম্পর্কে আত্মীয় হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আউফ রা.।

হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আউফ রা. যেহেতু ওয়ালিদ ইবনে উকবা রা. এর বোন উম্মে কুলসুম বিনতে উকবা রা. কে বিয়ে করেন, এ জন্য শিয়ারা এই অভিযোগ তোলে।

আর ওয়ালিদ ইবনে উকবা রা. ছিলেন বনু উমাইয়া গোত্রের সদস্য এবং তিনি উসমান রা. এর বৈমাত্রিয় ভাই।

তিনি মক্কা বিজয়কালে ইসলাম গ্রহণ করেন।

উমাইয়া ও হাশিম গোত্র নিয়ে অভিযোগ

শিয়া ইতিহাস লেখক আবু মিখনাফের বর্ণনা থেকে বলা হয়, বাইয়াত গ্রহণের সময় উমাইয়া ও হাশিম গোত্রের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দেয়।

অথচ এই কথার কোনো ভিত্তি নেই এবং কোনো সহীহ বা হাসান হাদীস দ্বারা এর কোনো প্রমাণ মেলে না।

আবার কতিপয় ইতিহাসবিদ এসব কথাকে তাদের পুঁজি করে পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা রচনা করেছেন।

হযরত আলি রা. এর উপর অপবাদ আরোপ

বিখ্যাত ইতিহাস লেখক ইবনে জারির রহ. সহ আরো অনেক ইতিহাসবিদ অজ্ঞাত পরিচয় সুত্রে বর্ণনা করেছেন,

খলিফা নির্ধারণ শেষে আলী রা. ইবনে আউফ রা. কে বলেছিলেন,

আপনি তো আমাকে ধোঁকা দিলেন। যেহেতু উসমান আপনার শশুরালয়ের আত্মীয়, তাই তাকে আমার উপর প্রাধান্য দিলেন।

তখন আব্দুর রহমান ইবনে আউফ রা. সূরা ফাতহের ১০ নং আয়াত তেলওয়াত করেন,

যারা তোমার কাছে বাই‘য়াত গ্রহণ করে, তারা শুধু আল্লাহরই কাছে বাই‘য়াত গ্রহণ করে; আল্লাহর হাত তাদের হাতের উপর; অতঃপর যে কেউ ওয়াদা ভঙ্গ করলে তার ওয়াদা ভঙ্গের পরিণাম বর্তাবে তারই উপর। আর যে আল্লাহকে দেয়া ওয়াদা পূরণ করবে অচিরেই আল্লাহ তাকে মহা পুরস্কার দেবেন।

অথচ এই ঘটনা সম্পূর্ণ বানোয়াট এবং ভিত্তিহীন। এমন কোনো ঘটনা সহীহ সনদে পাওয়া যায় না।

হযরত আমর ইবনে আস ও মুগিরা বিন শুবা রা. এর উপর অপবাদ

আবু মিখনাফ শুরা সংক্রান্ত বর্ণনায় বলে, পরামর্শের সময় আমর ইবনে আস রা. এবং মুগিরা বিন শুবা রা. সেখানে বসলে সা’দ রা. তাদের এই বলে তাড়িয়ে দিয়ে বলেন,

তোমরা তো এটাই চাচ্ছ যে, এখান থেকে যাওয়ার পর বলবে, আমরাও শুরার সদস্য ছিলাম। এই কথাগুলো সম্পূর্ণরূপে সাহাবীদের শানের খেলাফ।

তথ্যসুত্র

উসমান ইবনে আফফান। পৃষ্ঠা ৯১-১১২

হযরত ওসমান রাঃ এর উপাধি কি ছিল?

হযরত ওসমান রা. এর উপাধি ছিল যুন নুরাইন বা দুই নূরের অধিকারী।

জামিউল কুরআন কাকে বলা হয় এবং কেন বলা হয়?

কুরআন সংরক্ষণের জন্য হযরত উসমান রা. কে জামিউল কুরআন অর্থাৎ কুরআন একত্রিকরণকারী হিসেবে বলা হয়

গাজ্জার জন্য অনুদান

৭ অক্টোবর ২০২৩ তারিখে তুফানুল আকসা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই ফিলিস্তিনের গাজ্জায় অসংখ্য মানুষ আহত ও শহীদ হয়েছে। বহু মানুষ নিজেদের ঘর-বাড়ী হারিয়েছে। এছাড়াও বর্তমানে গাজ্জার ৯৮% মানুষ অনাহারে জীবন-যাপন করছে। গাজ্জার মানুষের এই দুঃসময়ে আমরা যদি তাদের পাশে না দাঁড়াই তাহলে কে দাঁড়াবে?

আর-রিহলাহ ফাউন্ডেশন তুফানুল আকসা যুদ্ধের শুরু থেকেই ফিলিস্তিনের গাজ্জার জন্য ডোনেশন সংগ্রহ করে আসছে। এই মহান কাজে আপনিও আমাদের সাথে যুক্ত হতে পারেন।

অনুদান দিন

Scroll to Top