আলী রা. এর খেলাফত – ইসলামের চতুর্থ খলিফা হযরত আলী রা. ছিলেন নবীজি সা. এর সম্মানিত জামাই এবং চাচাতো ভাই। তিনি নবীজির সা. এর সাথে সকল যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন।

নবীজি সা. এর ইন্তিকালের সময় হযরত আলী রা. এর বয়স ছিল ৩৩ বছর।

তিনি একজন অভিজ্ঞ ব্যক্তি হিসেবে আবু বকর রা. এর মজলিসে, উমর রা. এর পরামর্শসভায় ও মজলিসে শূরায় এবং উসমান রা. এর পরামর্শদাতা হিসেবে নিজের জীবন, মেধা ও প্রজ্ঞা দিয়ে মুসলিম জাতির খেদমত করেছেন।

হযরত আবু বকর ও উমর রা. এর শাসনামলে আলী রা. মদীনার কাজী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছিলেন।

হযরত উসমান রা. কে বিদ্রোহী সাবায়ীরা শহীদ করার আগে সাহাবীদের নিকট একটি বার্তা পাঠিয়েছিলেন।

সেখানে তিনি বলেছেন, আপনারা আলীর হাতে বাইয়াত গ্রহণ করুন। আল্লাহ আলীর অন্তরে যা অবতীর্ণ করবেন তা যেন তিনি বাস্তবায়ন করেন।

আলী রা. এর বাইয়াত কিভাবে হয়

দুই নূরের অধিকারী হযরত উসমান রা. কে সাবায়ীরা শহীদ করার পর হযরত তালহা, যুবাইর রা. ও অন্যান্য প্রবীণ মুহাজির ও আনসার সাহাবীরা আলী রা. এর নিকট আসেন।

হযরত তালহা ও যুবাইর রা. আলী রা. এর হাতে বাইয়াত গ্রহণের জন্য খুবই জোরালোভাবে আবেদন করছিলেন। কিন্তু আলী রা. বললেন,

আপনারা চাইলে আমার হাতে বাইয়াত গ্রহণ করতে পারেন আবার চাইলে আমি আপনাদের কোনো একজনের হাতে বাইয়াত গ্রহণ করতে পারি।

তালহা ও যুবাইর রা. বললেন, “আমরাই আপনার হাতে বাইয়াত গ্রহণ করবো।”

এরপর তারা উভয়ে হযরত আলী রা. এর হাতে বাইয়াত গ্রহণ করলেন।

সাধারণ বাইয়াত গ্রহণ ও জনসম্মুখে আলী রা.

২৪ জিলহজ ৩৫ হিজরীতে হযরত আলী রা. মসজিদে নববীতে খিলাফতের এই মহান দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেন।

সাহাবীরা এবং সাধারণ জনগণ হযরত আলী রা. এর হাতে বাইয়াত গ্রহণ করে। বাইয়াতের পর হযরত আলী রা. মানুষদের বললেন,

হে লোকসকল! এই মহান দায়িত্ব আমি নিজে গ্রহণ করাটা পছন্দ করছিলাম না। কিন্তু তোমরা আমাকে জোর করে নির্বাচন করেছ। জেনে রাখ, তোমাদের পাশ কাঁটিয়ে কোনো কাজ করার অধিকার আমার নেই। হ্যাঁ, বাইতুল মালের চাবি আমার কাছে থাকবে বটে। কিন্তু আমি তোমাদের অনুমতি ব্যতিত এক দিরহামও নিতে পারবো না। তোমরা কি এতে সম্মত?

উপস্থিত সকলে বললো, হ্যা আমরা সম্মত। এভাবেই আলী রা. এর খেলাফত এর যাত্রা শুরু হয়।

আলী রা. এর খেলাফত নিয়ে মিথ্যাচার

কোনো কোনো বর্ণনায় হযরত তালহা ও যুবায়ের রা. এর বাইয়াত গ্রহণ নিয়ে অতিরঞ্জিত মিথ্যাচার ও বানোয়াট কথাবার্তা বর্ণনা করা হয়েছে।

তাদের বর্ণনায় বলা হয়, তালহা ও যুবায়ের রা. চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে বাইয়াত গ্রহণ করেছেন।

আর কোথাও উল্লেখ করা হয় তরবারী ঘাড়ে রেখে আলী রা. তাদের থেকে বাইয়াত নিয়েছেন।

এগুলো সবই ভুল ও সাহাবাদের শানে জঘন্য মিথ্যাচার। তারিখুত তাবারীতে বিচ্ছিন্ন সুত্রে এমন ঘটনা বর্ণনা করা আছে। আল্লাহ এমন চিন্তা লালন করা থেকে হেফাজত করুন।

তথ্যসুত্র

মুসলিম উম্মাহর ইতিহাস, খন্ড ৪, পৃষ্ঠা ২৪৯-২৫৪

Scroll to Top