হালিমার বাড়িতে নবীজির শৈশব

হালিমার বাড়িতে নবীজির শৈশব – পৃথিবী আলোকিত করে জন্ম হলো এক শিশুর। নাম মুহাম্মাদ। এই তো কিছুদিন পূর্বে মক্কায় ঘটে গেল হস্তীবাহিনীর ঘটনা। আল্লাহ অশেষ মেহেরবানীতে রক্ষা করলেন মক্কানগরীকে। তিনি জালিমদের হাত থেকে বাঁচালেন মক্কার মানুষদের।

জন্মের পূর্বেই শিশুটির বাবা মারা গিয়েছে। শিশুটিও জন্মগ্রহণ করলো রবিউল আউয়ালের ৮ বা ৯ তারিখে।

এই ধরণীতে রয়েছে তার মা ও দাদা। তারাই তার দেখভাল করেন।

তৎকালীন আরবে রীতি ছিল, যদি শিশু জন্মগ্রহণ করতো তাহলে সুন্দর আবহাওয়ায় যেন সে লালিত-পালিত হয় এবং বিশুদ্ধ ভাষা শিক্ষাগ্রহণ করে, তাই তাকে পাঠিয়ে দেয়া হতো গ্রামে।

গ্রামের প্রাকৃতিক আবহাওয়ায় তারা বড় হতো। এতে তারা হয়ে উঠতো শক্তিশালী ও কর্মঠ।

হালিমার বাড়িতে নবীজির শৈশব

বনু সাদের মহিলাদের মক্কায় গমন

মক্কা থেকে ১২০ কি.মি. দূরেই হলো তায়েফ নগরী। এই নগরীটি খুবই দৃষ্টিনন্দন ও সুন্দর প্রাকৃতিক পরিবেশে দ্বারা গঠিত। এখানে রয়েছে সবুজ দুর্বা ঘাস। রয়েছে বড় বড় বাগান। আরো আছে কূপ বা জলাশয়।

তায়েফের নিকটেই বসবাস করতো বনু সা’দ গোত্র। তাদের নারীরা দাত্রী হিসেবে প্রসিদ্ধ ছিল।

তারা শিশুকে দুধপান করানোর পাশাপাশি শিক্ষা দিত বিশুদ্ধ ভাষা।

আবরের সম্রান্ত ব্যক্তিরা বনু সা’দের নিকট শিশুকে দুধপানের জন্য দিত। সেই মোতাবেক তারা প্রায় সময় মক্কায় আসতো।

প্রতিবারের মতো তখনো বনু সাদের মহিলারা মক্কায় আসলো। সবাই এক একজন করে শিশুকে নিয়ে যেতে লাগলো মাতৃস্নেহে। কিন্তু শিশু মুহাম্মাদকে কেউ নিতে চাচ্ছিল না।

কারণ, সময়টা ছিল দুর্ভিক্ষের। আর এই দুর্ভিক্ষের সময় মহিলারা চাচ্ছিল, কিছু আর্থিক উপার্জন।

যদি বড়লোকের সন্তানকে লালন-পালন করে তাহলে পারিশ্রমিক বেশি পাবে।

আর মুহাম্মাদের যেহেতু বাবা নেই, তাই তারা ভেবে নিল এই বাড়ি থেকে এত বেশি টাকা পাওয়া যাবে না।

হালিমার সাথে দেখা

বনু সাদের মহিলাদের সাথে মক্কায় আসলো একজন মহিলা। যার নাম হালিমা বিনতে আবু জুয়াইব।

সে যখন শিশু মুহাম্মাদকে দেখলো, তখন তার অন্তরে ভালোবাসা উথলে উঠলো।

তাকে কোলে তুলে নিল। হালিমা শিশু মুহাম্মাদকে নেয়ার সাথে সাথেই এতটা বরকত পেতে থাকলো,

যা আগে কখনো কোনো ব্যক্তি পায় নি। অবশেষে সে মুহাম্মাদকে নিয়ে নিল।

নবীজির দুধ মা হালিমার স্বামীর নাম ছিল, হারেস ইবনে আব্দুল ওযযা। আর নবীজির দুধ ভাই-বোনদের নাম ছিল,

আব্দুল্লাহ, আনিসা, হোযাফা, জোযামা।

হালিমা রা. এর উপাধী ছিল, শায়মা। তিনি এই নামেই প্রসিদ্ধ ছিলেন।

হালিমার বিস্ময়কর ঘটনাবলী

শিশু মুহাম্মাদ যখন হালিমার বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলেন তখন থেকেই অঝোর ধারায় বরকত বর্ষিত হতে শুরু করলো।

এত বরকত কখনো হালিমা চোখে দেখেন নি। তাই হালিমার স্বামী হারেস বলতে বাধ্য হলো,

হালিমা! নিশ্চয় তুমি এক পূর্ণবান সন্তান এনেছ।

যখন হালিমা তার স্বামীর সাথে মক্কায় রওয়ানা দিয়েছিলেন তখন তারা ছিল ক্ষুধার্ত। তাদের নিকট ছিল শুধুমাত্র একটি মাদী গাধা। বছরটি ছিল দুর্ভিক্ষের বছর

হালিমার বাড়িতে ছিল একটি উটনী। কিন্তু সেটি কোনো দুধ দিত না। কারণ, দুর্ভিক্ষের কারণে খাবারই নেই। দুধ আসবে কোথা থেকে।

যখন নবীজিকে নিয়ে তারা তায়েফের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলেন তখন যেন তাদেরকে বরকত আকড়ে ধরলো।

তাদের মাদী গাধাটি পূর্ণ গতিতে ছুটতে লাগলো। এতটাই তাড়াতাড়ি সে তায়েফে পৌছে গেল যে, অন্যান্য মহিলারা অবাক হয়ে গেল।

তারা জিজ্ঞাসা করতে লাগলো, হালিমা এটা কি সেই গাধা, যেটাতে সওয়ার হয়ে তুমি মক্কায় এসেছিলে?

তিনি উত্তর দিলেন, হ্যাঁ।

বাড়িতে যাওয়ার পর দেখলেন উটনীর উলান ভর্তি হয়ে আছে। আর বাড়ির পাশের ফসলগুলো পরিপূর্ণ হয়ে আছে।

শিশু মুহাম্মাদের দুধ ভাই-বোনেরা আগে খাবার না পেয়ে কান্নাকাটি করতো। এখন তারা দিব্যি হেসে খেলে বেড়াচ্ছে।

সত্যিই এতটা বরকত হালিমার পরিবার কখনো দেখেন নি।

তথ্যসুত্র

মুসলিম উম্মাহর ইতিহাস। খণ্ড ১

আর রাহীকুল মাখতুম।

আমি একজন মুসলিম ও ইসলামিক আলোচক। পড়ালেখা করেছি কওমী মাদ্রাসায়। পরবর্তীতে সাইন্স বিভাগ থেকে এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে বর্তমানে আমি ডিপ্লোমা ইন মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এ অধ্যায়নরত। অবসরে আমি বই পড়তে পছন্দ করি। নতুন কিছু শিখতে, নতুন কিছু জানতে ভালোবাসি। আমার ইচ্ছা, ভালো মানুষ হয়ে সমাজকে সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজে বিরত রাখার চেষ্টা করা।

https://alfan.link/abdurrahmanalhasan