মক্কার নেতৃত্বস্থানীয় লোকদের মধ্যে আবু জাহেল ছিল অন্যতম। তার মূল নাম ছিল, আমর ইবনে হিশাম। উপাধী ছিল, আবুল হাকাম।

রাসূল সা. যখন থেকে ইসলাম প্রচারে আত্মনিয়োগ করলেন তখন থেকেই আবু জাহেল নবীজির বিরুদ্ধাচরণ করা শুরু করে।

কথা ও কাজের মাধ্যমে সে নবীজিকে কষ্ট দিতে থাকে। এমনকি সে কখনো কখনো নবীজিকে হত্যার পরিকল্পনাও গ্রহণ করে।

নবীজি প্রকাশ্যে ইসলাম প্রচারে আত্মনিয়োগের পর সবচেয়ে বেশি বিরুদ্ধাচরণের শিকার হয়েছিলেন আবু লাহাব ও আবু জাহলের দ্বারা।

নবীজি সা. বলেছেন, যে আবু জাহেলকে আবুল হাকাম বলে ডাকে সে ভ্রষ্টতার মধ্যে আছে।

নবীজিকে হত্যা চেষ্টা – আবু জাহেল

একবার আবু জাহল মক্কার লোকদের বললো, হে কুরাইশ সম্প্রদায়! মুহাম্মাদ কি করে যাচ্ছে তা কি তোমরা লক্ষ্য করছো?

সে আমাদের ধর্মের দোষত্রুটি বর্ণনা করেছে। আমাদের পূর্বপুরুষকে গালমন্দ করেছে। আমাদের বিজ্ঞ ব্যক্তিদের মূর্খতার অপবাদ দিচ্ছে।

আমি আল্লাহর নামে অঙ্গীকার করছি, আগামীকাল ভোরে আমি একটি পাথর নিয়ে বসে থাকবো। সে যখন নামাজের মধ্যে সেজদায় যাবে তখন সেই পাথর দিয়ে আমি তার মাথা ফাঁটিয়ে দিব।

পরের দিন প্রত্যুষে আবু জাহল সত্যি সত্যি একটি পাথর এনে ওঁৎপেতে থাকে। রাসূল সা. যথারীতি নামাজে দাঁড়ালেন।

কুরাইশরা আবু জাহেলের কার্যকলাপ দেখার জন্য অপেক্ষা করছিল। যখন রাসূল সা. সেজদায় গেলেন তখন আবু জাহেল পাথরটি নিয়ে অগ্রসর হয়।

কিন্তু হঠাৎ সে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পেছনে ফিরে আসে। আবু জাহেলের এমন পরিবর্তনে কুরাইশরা হতভম্ব হয়ে যায়।

তারা ছুটে এসে বললো, হে আবুল হাকাম! আপনার কি হয়েছে?

আবু জাহল বললো, যখন আমি পাথর নিয়ে তার সামনে অগ্রসর হই তখন তার কাছাকাছি পৌঁছতেই তার পেছনে আমি ভয়ঙ্কর একটি উট দেখতে পাই।

সেই উটের মাথা, ঘাড় ও দাঁত এতটাই ভয়ঙ্কর ছিল যে, হাবলের কসম এমন উট আমি কখনো দেখি নি। ওই উট আমাকে খেয়ে ফেলতে উদ্যত হয়েছিল।

আল্লামা মুহাম্মাদ ইবনে ইসহাক রহ. বলেন, নবীজি সা. ইরশাদ করেছেন,

ওই উট মূলত জিবরাইল আ. ছিলেন। যদি আবু জাহল সেটার কাছে যেত তাহলে নিশ্চয়ই উটটি আবু জাহলের উপর আক্রমণ করতো।

আবু জাহেল এর ঋণ নিয়ে বাড়াবাড়ি

ইরাকের ব্যবিলন থেকে এক ব্যক্তি কতক উট নিয়ে মক্কায় এসেছিল। আবু জাহল উক্ত বিক্রেতার কাছ থেকে উটগুলো বাকীতে ক্রয় করে।

নির্ধারিত সময় অতিবাহিত হওয়ার পরও সে মূল্য পরিশোধ করতে বিলম্ব করতে থাকে। উক্ত বিক্রেতা তখন কুরাইশের গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিকট আসে।

রাসূল সা. তখন মসজিদুল হারামের একপাশে বসা ছিলেন। উক্ত বিক্রেতা তখন কুরাইশদের বললো, হে কুরাইশ গোত্র!

আপনাদের মধ্যে কে আবু জাহেলের উপর শক্তি প্রয়োগ করতে পারবেন? সে আমার পাওনা এখনো পরিশোধ করছে না।

কুরাইশরা তখন তাকে রাসূল সা. কে দেখিয়ে বলে, ওই লোকটির নিকট যাও। তিনি তোমার পাওনা উসুল করে দিতে পারবেন।

উক্ত বিক্রেতা তখন রাসূল সা. এর নিকট আসে। রাসূল সা. তখন উক্ত বিক্রেতাকে নিয়ে আবু জাহেলের বাড়িতে আসেন।

দরজায় করাঘাত করার পর আবু জাহেল বললো, কে? নবীজি বললেন, আমি মুহাম্মাদ। তুমি বেরিয়ে এসো। তখন আবু জাহেল ঘর থেকে বেরিয়ে এসে। তার মুখ ছিল ফ্যাকাশে। ভয়ে তার চেহারা বিবর্ণ হয়ে গিয়েছিল।

রাসূল সা. তখন আবু জাহেলকে বললেন, এই লোকটির পাওনা পরিশোধ করো। আবু জাহল তখন সাথে সাথে তার পাওনা পরিশোধ করে দেয়।

কুরাইশরা এই ঘটনা দেখে হতভম্ব হয়ে যায়। তারা ভেবেছিল, আবু জাহল ত্যাড়ামি করবে। কুরাইশরা তখন আবু জাহেলকে জিজ্ঞাসা করলো,

তোমার কি হয়েছিল? আগে তো কখনো এমন কাজ করো নি?

তখন আবু জাহল বললো, মুহাম্মাদ যখন আমার দরজায় করাঘাত করে তখন আমি ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ি। ঘর থেকে বেরিয়ে দেখি,

মুহাম্মাদের মাথার উপর দিয়ে একটি বিশালাকার উট দাঁড়িয়ে আছে। সেই উটটি এতটাই ভয়ঙ্কর যে, এমন উট আমি জীবনেও দেখি নি।

আবু জাহেল আরো বললো, যদি আমি পাওনা পরিশোধে দেরি করতাম তাহলে সেই উটটি নিশ্চয় আমাকে খেয়ে ফেলতো।

তথ্যসুত্র

আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া। খন্ড ৩। পৃষ্ঠা ৮৪-৮৭

আরো পড়ুন

কুলাঙ্গার উবায়দুল্লাহ মাহদী কে ? পড়ুন

আবু আব্দুল্লাহ শিয়ায়ীর পূর্ণাঙ্গ পরিচয় পড়ুন

নবীজির হাজরে আসওয়াদ স্থাপনের ঘটনা পড়ুন

আবু জাহেল কে ছিলেন

আবু জাহেল ছিল উমর ইবনে আবু রাবিয়াহর ভাই এবং উমর ইবনুল খাত্তাব এর মামা। তিনি মুহাম্মাদ (সাঃ) এর অন্যতম ঘোরবিরোধী এবং ইসলাম ও মক্কার প্রাথমিক মুসলমান বিরোধীদের প্রথম সারির পতাকাবাহী। ইসলামের প্রতি তাকে এতো দূর্ভাব ও শত্রু হিসাবে দেখে যে মুহাম্মাদ (সাঃ) তাকে “এই উম্মতের ফেরাউন” উপাধি দিয়েছিলেন।

আবু জাহেলের প্রকৃত নাম কি

আবু জাহেলের প্রকৃত নাম হলো, আমর ইবনে হিশাম। উপাধী হলো আবুল হাকাম। কিন্তু ইসলামের প্রতি তার বৈরিভাব দেখে নবীজি তাকে আবু জাহল উপাধী দিয়েছেন।

গাজ্জার জন্য অনুদান

৭ অক্টোবর ২০২৩ তারিখে তুফানুল আকসা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই ফিলিস্তিনের গাজ্জায় অসংখ্য মানুষ আহত ও শহীদ হয়েছে। বহু মানুষ নিজেদের ঘর-বাড়ী হারিয়েছে। এছাড়াও বর্তমানে গাজ্জার ৯৮% মানুষ অনাহারে জীবন-যাপন করছে। গাজ্জার মানুষের এই দুঃসময়ে আমরা যদি তাদের পাশে না দাঁড়াই তাহলে কে দাঁড়াবে?

আর-রিহলাহ ফাউন্ডেশন তুফানুল আকসা যুদ্ধের শুরু থেকেই ফিলিস্তিনের গাজ্জার জন্য ডোনেশন সংগ্রহ করে আসছে। এই মহান কাজে আপনিও আমাদের সাথে যুক্ত হতে পারেন।

অনুদান দিন

Scroll to Top