তাওবাতুন নাসুহা – মানুষ হিসেবে আমরা কেউই ভুলের উর্ধ্বে নয়। আমরা সকলেই পাপ করে থাকি। ভুল করে থাকি। আমরা সর্বদা শয়তানের প্ররোচনায় প্ররচিত হই।
আমাদেরকে শয়তান পথভ্রষ্ট করে ফেলে। আমরা কখনো কখনো গুনাহ করতে করতে এতটাই নৈরাশ হয়ে যাই যে, আমরা মনে করি আল্লাহ হয়তো আমাকে আর ক্ষমা করবেন না।
আমরা তখন তওবা করতে ভয় পাই। আল্লাহর কাছে চাইতে ভয় পাই। আল্লাহকে বলতে ভয় পাই।
আমরা মনে করি, এত পাপ করার পর যদি আল্লাহর নিকট আমরা প্রার্থনা করি তাহলে হয়তো তিনি আমাদের দিকে ফিরেও তাকাবেন না।
এটা সম্পূর্ণ একটা ভুল কথা
আল্লাহ তা’আলা হলেন, রহমান, রহীম। অর্থাৎ দয়ালু, দয়াময়। তার থেকে বড় দয়াবান এই পৃথিবীতে আর কেউ নেই।
তিনি হলেন সর্বশ্রেষ্ঠ দয়াবান। তার নিকট যেই বান্দাই প্রার্থনা করবে, তার দোয়া কবুল করবেন।
তওবাতুন নাসুহা কি?
হজরত ইবনে কাসির রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, ‘তওবায়ে নাসুহা হলো- ‘সত্য ও আত্মবিশ্বাসপূর্ণ তওবাহ।
আল্লাহ তা’আলা কুরআনে সূরা বাকারার ১৬০ নং আয়াতে বলেন,
“যারা তওবা করে এবং নিজেদের সংশোধন করে এবং আল্লাহর আয়াতকে স্পষ্টভাবে বর্ণনা করে, তাদের তওবাই আমি কবুল করে থাকি। আর আমি তওবা গ্রহনকারী, পরম দয়ালু।”
উল্লেখ্য আয়াতে আল্লাহ স্পষ্টভাবে বলে দিয়েছেন যে, তোমরা প্রথমত নিজেদের সংশোধন করো। গুনাহের কাজ থেকে আগে বিরত হও।
আপনি একদিনে তওবাও করলেন আবার অন্য দিকে গুনাহও করলেন তাহলে তো হবে না। আপনাকে প্রথমে মনের মধ্যে এই দৃঢ় বিশ্বাস আনতে হবে যে,
আমি এই ভুলটি আর কখনো করবো না। তারপর আপনি আল্লাহর নিকট তওবা করুন।
আর মনের মধ্যে সর্বদা ইসলামী সঠিক আকীদাগুলো লালন করবেন।
ইসলামী আকীদা কি?
ইসলামী আকীদাগুলো হলো, আল্লাহ এক। তিনি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই। মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর বান্দা ও রাসূল।
আল্লাহর পাঠানো কুরআন সত্য। নবীজির কথা সত্য। আল্লাহর পক্ষ হতে নবীজি যেই আদেশ-নিষেধ দিয়ে গিয়েছেন তা আমাদের মানতে হবে। তার উপর বিশ্বাস রাখতে হবে।
তওবা করবেন যেভাবে
তাওবাতুন নাসুহা – এরপর আপনি তওবা করতে বসুন। তওবা করার জন্য কোনো আনুষ্ঠানিকতা প্রয়োজন নেই। আপনি পাক-পবিত্র অবস্থায় আল্লাহর নিকট হাত তুলে প্রার্থনা করুন।
আল্লাহকে বলুন, হে আল্লাহ! আমি দুনিয়ার সবচেয়ে বড় পাপী। আমাকে তুমি ক্ষমা করো। আল্লাহ অবশ্যই আপনাকে ক্ষমা করে দিবেন।
আমাদের সর্বদা মারাত্বক কিছু পাপ কাজ থেকে বিরত থাকা উচিৎ। প্রথমত, সূদ বা রিবা থেকে বেঁচে থাকা উচিৎ।
দ্বিতীয়ত, ঘুষ থেকে বেঁচে থাকা উচিৎ। তৃতীয়ত, হারাম যে কোনো কর্ম থেকে বেঁচে থাকা উচিৎ।
সূদ সম্পর্কে কুরআনের আয়াত
আল্লাহ কুরআনে সূরা বাকারার ২৭৯ নং আয়াতে বলেন,
“যদি তোমরা (সূদ) বর্জন না করো তাহলে জেনে রাখ, তোমাদের বিরুদ্ধে আল্লাহ ও তার রাসূলের যুদ্ধ অনিবার্য।
কিন্তু যদি তোমরা তওবা করো তাহলে তোমাদের মূলধন তোমাদেরই।
তোমরা কারো উপর অত্যাচার করবে না এবং নিজেরাও অত্যাচারিত হবে না।”
কত মারাত্বক একটা কথা আল্লাহ কুরআনে বলেছেন। আল্লামা ইবনে কাসীর রহ. তাফসীরে ইবনে কাসীরে একটা হাদীস এনেছেন।
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেছেন, যদি ইসলামী দেশে কোনো ব্যক্তি সূদ ছাড়তে রাজী না হয় তাহলে দেশের শাসনকর্তার উপর কর্তব্য হলো তাকে তওবা করানো।
যদি সে তওবা করতে রাজী না হয় তাহলে তাকে শিরচ্ছেদ করা।
সুতরাং আমাদের সর্বদা সুদ-ঘুষ এবং অন্যায় কাজ থেকে বেঁচে থাকতে হবে। তাহলে আমরা সফলকাম হবো।
আমাদেরকে সর্বদা গুনাহ থেকে বেঁচে থাকতে হবে। তাহরেই আমরা সফল মুমিন হতে পারবো।
আল্লাহ আামাদের তাওফীক দান করুন।
আমীন।
আরো পড়ুন
মদ হারাম হওয়া সম্পর্কে কুরআনের আয়াত