যাতুস সালাসিল – আবু বকর রা. এর নির্দেশে খালিদ রা. এর কমান্ডে সেনাদলগুলো এসে উবুল্লা নামক স্থানে একত্রিত হয়।

বর্তমানে উবুল্লা হলো ইউফ্রেটিস – টাইগ্রিস মোহনার ডান তীরে পারস্য উপসাগরে প্রবেশময় অবস্থিত। এটি পুরাতন বসরার পূর্বে অবস্থিত এবং নাহর আল-উবুল্লা নামক খালের উত্তর দিকে অবস্থিত।

যা বসরাকে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে টাইগ্রিস নদী, আবাদান (আধুনিক ইরানে) এবং শেষ পর্যন্ত সংযুক্ত করেছে।

পারস্য উপসাগর আধুনিক বসরার আশর পাড়া বর্তমানে আল-উবুল্লার জায়গা দখল করে আছে।

এই স্থান এতটাই গুরুত্বপূর্ণ যে, এখানে অবস্থানকারী সেনারা চাইলে আরব ও ইরাক কবজা করার পাশাপাশি সমুদ্রেপথে ভারত উপমহাদেশেও অভিযান পরিচালনা করতে পারবে।

ইরাকের এই পয়েন্টটি পারস্যের গভর্নর হরমুজের শাসনাধীন ছিল। সে ছিল বদকার লোক। অসহায় জনগণের উপর হরমুজ নির্যাতন করতো।

খালিদ রা. এর হুমকি

খালিদ রা. হরমুজকে চিঠি লিখে বলে, তোমার সামনে তিনটা পথ খোলা আছে। হয় তুমি ইসলাম গ্রহন করবে। কিংবা তুমি জিজিয়া কর দিয়ে আমাদের নিরাপত্তায় চলে আসবে।

অন্যথায় যুদ্ধের ময়দানে তোমাদের সাথে আমাদের ফায়সালা হবে।

আর তোমাকে হত্যা করার জন্য আমার নিকট এমন এক বাহিনী আছে, যারা আল্লাহকে ভালোবাসে। যেমনটা তুমি মদপান করতে ভালোবাসো।

হরমুজের প্রতিক্রিয়া

হরমুজ খালিদ রা. এর চিঠিটি পাওয়ার পর সেটা পারস্যের রাজধানী মাদায়েনে পাঠিয়ে দেয়। তখন পারস্যের সম্রাট ছিল আরদশির।

এরপর হরমুজ তখন বিশাল বড় সেনাবাহিনী নিয়ে মুসলমানদের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য বের হয়।

সাথে ছিল পারস্যের প্রসিদ্ধ শাহজাদা ও নামকরা পালোয়ানরা। হরমুজ তার সৈন্যদের পায়ে শেকল বেঁধে দেয়। যাতে তারা যুদ্ধের ময়দান থেকে পলায়ন না করে।

এই যুদ্ধটি ছিল আবরদের সাথে অনাবরদের প্রথম যুদ্ধ। তাই বেশ ঘটা করেই প্রস্তুতি নেয়া হয়।

যুদ্ধের সারিতে দাঁড়ানোর পর হযরত খালিদ রা. ময়দানের মাঝখানে এসে মল্লযুদ্ধের আহবান জানান। হরমুজ তখন এগিয়ে আসে।

যখন হরমুজ ও খালিদ রা. পরষ্পর সামনাসামনি যুদ্ধে লিপ্ত ছিলেন তখনই দুই বাহিনীর মধ্যে ঘোরতর যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়।

কাফেরদের একটা অংশ হযরত খালিদ রা. এর উপর আক্রমণ করার জন্য উদ্যত হয়। সে সময় হযরত কা’কা বিন আমর রা. তাদেরকে পিছু হটিয়ে দেন।

দীর্ঘক্ষণ মল্লযুদ্ধ হওয়ার পর হযরত খালিদ রা. হরমুজকে হত্যা করেন।

তাকে হত্যার পর পরই কাফেরদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়ে যায়। তারা পলায়ন করতে থাকে।

তাদের পালোয়ানরা ও সৈন্যরা পায়ের শেকল ভেঙ্গে ভেগে যেতে থাকে। মুসলিমরা তাদের পিছু নিয়ে অসংখ্য সৈন্যদের হত্যা করেন।

এটি হলো ১২ হিজরীর শুরুর দিকের ঘটনা। এই যুদ্ধের নামকরণ করা হয় যাতুস সালাসিল নামে। অকল্পনীয় এই বিজয়ে পুরো মুসলিম বিশ্বে আনন্দের জোয়ার বয়ে যায়।

তথ্যসুত্র

মুসলিম উম্মাহর ইতিহাস। খন্ড ৩। পৃষ্ঠা ৭৪-৭৬

মুসলিম উম্মাহর ইতিহাস বইয়ের রেফারেন্স ‍অনুযায়ী, তারিখুত তাবারী। খন্ড ৩। পৃষ্ঠা ৩৭০

আরো পড়ুন

বদর যুদ্ধে আবু বকর রা. এর সাহসিকতা

হুদাইবিয়ার দিন আবু বকর রা. এর আনুগত্য

কেয়ামতের ভয়াবহতা সম্পর্কে কুরআন কি বলে?

যাতুস সালাসিল যুদ্ধে মুসলিম সেনাপ্রধান কে ছিলেন?

হযরত খালিদ বিন ওয়ালিদ রা.।

যাতুস সালাসিল যুদ্ধে কাফেররা কিভাবে ময়দানে এসেছিল?

তারা পায়ে শেকল বেঁধে ময়দানে উপস্থিত হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা বেঘোরে মারা যায়।

গাজ্জার জন্য অনুদান

৭ অক্টোবর ২০২৩ তারিখে তুফানুল আকসা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই ফিলিস্তিনের গাজ্জায় অসংখ্য মানুষ আহত ও শহীদ হয়েছে। বহু মানুষ নিজেদের ঘর-বাড়ী হারিয়েছে। এছাড়াও বর্তমানে গাজ্জার ৯৮% মানুষ অনাহারে জীবন-যাপন করছে। গাজ্জার মানুষের এই দুঃসময়ে আমরা যদি তাদের পাশে না দাঁড়াই তাহলে কে দাঁড়াবে?

আর-রিহলাহ ফাউন্ডেশন তুফানুল আকসা যুদ্ধের শুরু থেকেই ফিলিস্তিনের গাজ্জার জন্য ডোনেশন সংগ্রহ করে আসছে। এই মহান কাজে আপনিও আমাদের সাথে যুক্ত হতে পারেন।

অনুদান দিন

Scroll to Top