ফরিদপুরে দুই ভাই হত্যা

ফরিদপুরে দুই ভাই হত্যা – আজকে সকালে (২৬ এপ্রিল ২০২৪) সফরে বের হলাম। কিছুদিন আগে ফরিদপুরে দুই সহোদর ভাই উগ্র হিন্দুদের নির্মম আঘাতে শহীদ হন।

আমরা গিয়েছি তাদের কবর যিয়ারত করতে এবং তাদের মা-বাবার সাথে দেখা করতে এবং কিছু অনুদান দিতে। এছাড়া অন্য কোনো উদ্দেশ্য আমাদের ছিল না।

ফজরের নামাজ পড়ে আমি বাসা থেকে বের হয়ে সায়দাবাদ যাই। সেখানে সাইফুল ইসলাম ভাইয়ের জন্য অপেক্ষা করছিলাম।

তাকে ফোন দেওয়ার পর দেখি সে এখনো মালিবাগ। আমি খুব বেশি আগে চলে এসেছিলাম। উনি বললেন, দেখেন কোন বাস ফরিদপুর যায়।

আমাকে তিনি বললেন, যাত্রাবাড়ি মোড়ে গিয়ে দেখেন। সেখানে গেলাম কিন্তু এত সকালে কোনো বাস পেলাম না।

বাসের হেলপার বললো, আপনারা ভেঙ্গে ভেঙ্গে যান। কিন্তু এটা একদমই ইচ্ছা হলো না। কারণ, এতে সমস্যা হতে পারে।

প্রায় ঘন্টাখানেক পর সাইফ ভাই আসলেন। তার সাথে দেখা করলাম সায়দাবাদ এসে। সেখানে আরো একজন আসলেন।

আমরা হেঁটে সামনে গেলাম। গোল্ডেন লাইন বাস কাউন্টারে গিয়ে আমরা টিকিট কাঁটি।

বললো, এখনই বাস ছাড়বে। তাড়াতাড়ি যান। বাস দাঁড়িয়ে আছে সায়দাবাদ মোড়ের দিকে।

গিয়ে বাসে উঠলাম। ৩/৪ মিনিটের মধ্যেই বাস ছেড়ে দিল। শুরু হলো ফরিদপুর সফর।

যাওয়ার পথে – ফরিদপুরে দুই ভাই হত্যা

বাসে থাকাবস্থায় আমি মোজ্জাম্মেল তহা ও রোর বাংলা থেকে কিছু ব্লগ পড়ি। এভাবেই সময় কেঁটৈ যায়।

আমি অবশ্য সাথে করে দুইটা বই নিয়ে গিয়েছিলাম।

১. অসমাপ্ত আত্মজীবনী ২. জলে ডাঙ্গায়। বই দুটোই ইন্টারেন্সিং হলেও বাসের ঝাঁকুনির কারণে পড়ায় মন বসে নি।

কিছুক্ষণ মোবাইল চালিয়েছি। কিছুক্ষণ বাসের জানালা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখেছি। আল্লাহর কত সুন্দর সৃষ্টি! বিগত কয়েকদিন মারাত্মক গরম পড়ছে।

আমরা এই গরমে সফর করার কারণে ও বাসে থাকার কারণে বাতাসে যেন দোল খাচ্ছিলাম। শরীর ও মন জুঁড়িয়ে যাচ্ছিল।

চলতে চলতে কত ব্রিজ, কত পুল, কত ক্ষেত দেখলাম, এর কোনো হিসাব নেই। একটা সময় পদ্মা ব্রিজের নিকট চলে আসলাম।

এই ব্রিজ হওয়ায় মানুষ এখন কত কম সময়েই যেতে পারছে। আগে ফেরি দিয়ে পার হতে হতো। সময়ও লাগতো বেশি।

উত্তাল পদ্মা নদীর ঢেউ এত উপর থেকে বেশি একটা বুঝা যায় না। নৌকা ও জাহাজ চলছিল।

আমরা পদ্মা ব্রিজ পার হলাম। অসাধারণ একটি অভিজ্ঞতা ছিল।

সকাল ৮টার মধ্যেই আমরা ফরিদপুর পৌঁছে গেলাম। বাস থেকে নামলাম। আস্তে আস্তে সূর্যের তেজ বাড়তেছে। শহরের একটি হোটেলে প্রবেশ করলাম।

এখানেই সকালের নাস্তা করি। কিছুক্ষণ পর স্থানীয় কিছু ভাই আসলো। তাদেরকে পূর্বেই সাইফ ভাই আসতে বলেছিলেন।

তাদের সাথে পরামর্শ করে আমরা রওয়ানা দিলাম। যেহেতু এখানে বড় একটি সমস্যা হয়েছে কিছুদিন আগে। তাই আমরাও বিপদে পড়তে পারি।

বিপদ এড়াতে আমরা প্রথমে গেলাম মধুপুরের স্থানীয় একটি ঈদগাহে। এখানে আমাদের জন্য স্থানীয় একজন আলেম অপেক্ষা করছিলেন।

আসার পথে দেখলাম, রাস্তায় অনেক পুলিশ, কোস্টগার্ড, আনসার দাঁড়িয়ে আছে।

আমাদের জন্য উক্ত আলেম একটি অটো নিয়ে আসলেন। সেটি দিয়ে আমরা গেলাম দুই শহীদের কবর যিয়ারত করতে।

প্রথম কোনো শহীদের কবর দেখা – ফরিদপুরে দুই ভাই হত্যা

কবর দিয়েছে তাদের বাবার বাড়িতে।

এখানে বলে রাখা ভালো, শহীদ আশরাফ ও আরশাদের মা-বাবার মধ্যে বিচ্ছেদ হয়েছে আরো ৮ বছর আগে।

বিচ্ছেদের পর থেকে বাবা সন্তানদের কোনো খোঁজ খবর নিত না। ভরণ-পোষণের দায়িত্বও নিত না। তারপরও আমরা গেলাম।

কবর দিয়েছে একটু ক্ষেত পার হয়ে ভেতরে। আমরা গেলাম। পাশাপাশি দুই শহীদের কবর। তারা শুয়ে আছে। আল্লাহ তাদের ত্যাগকে কবুল করে নিন। তাদেরকে মাফ করে দিন।

আমরা কবর যিয়ারত করে এসে দেখি, পুলিশ গাড়ি নিয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে। ভয় লাগলো। তারপরও সাহস রাখলাম।

আমরা তো কোনো অপরাধ করি নি। শহীদদের কবর যিয়ারত করা কি কোনো অপরাধ? পুলিশদের সাথে দেখা হওয়ার পর তারা জিজ্ঞাসা করলো, কোথা থেকে এসছি আমরা এবং কোন মাদ্রাসার।

তখন আমাদের সাথে স্থানীয় আলেম বললেন, আমরা এখানকার স্থানীয়। কোনো মাদ্রাসার নয়। এরপর পুলিশরা আমাদের একটি ছবি তুললো।

সেখানে ডিজিএফআই এর লোকও ছিল। এরপর তারা আমাদেরকে বললো, একটি কাগজে আমাদের নাম, পিতার নাম, ফোন নম্বর লিখতে। লিখা হলো এটি।

এরপর ছেলেদের বাবাকে ডেকে আমরা টাকা দিলাম। স্থানীয় এক ভাই এটি ভিডিও ও ছবি তুলে নিয়েছিলেন। আল্লাহ তাদেরকে ধৈর্য্যধারণ করার তাওফিক দান করুন। আমীন।

এরপর আমরা এখান থেকে বিদায় নিয়ে গেলাম এক আহত পরিবারের বাড়িতে। সেখানে আমরা তাদেরকে কিছুটা সহায়তা দিলাম।

এখানে আবার দেখি, চ্যানেল আই থেকে লোক এসেছে। তবে আমাদেরকে কিছু জিজ্ঞাসা করে নি। তারা হয়তো অন্য কাজে এখানে এসেছিল।

এখান থেকে আমরা রওয়ানা দিলাম শহীদদের নানাবাড়িতে। যাওয়ার পথেই জুমুআর সময় হয়ে যায়। আমরা গ্রামের একটি মসজিদে জুমুআর নামাজ আদায় করি। নামাজ শেষে আবার রওয়ানা হই।

শহীদ সহোদরদ্বয়ের মায়ের সাথে দেখা

স্থানীয় মসজিদে জুমুআর নামাজগুলো যেন নিষ্প্রাণ। ফ্যানের আওয়াজের কারণে খতীব সাহেবের কথা ভালোভাবে শোনা যায় না। মাইকও নাই। উনি খুতবা দিলেন বই দেখে দেখে। এটা দোষের নয়।

তবে এই খতীবদের জনসমর্থন বেশি থাকে। তাদের উচিৎ ফেতনা নিয়ে সতর্ক করা। নামাজের পরে আমরা শহীদদের মামার বাড়ি গেলাম।

দেখা হলো শহীদদের এক মামার সাথে। উনি আমাদের জন্য ঠান্ডা পানির ব্যবস্থা করলেন। বললেন, ওরা ছোট থেকেই এখানে বড় হয়েছে। আজ নাই।

কিছুক্ষণ পর শহীদদের সম্মানিতা মা আসলেন। এই প্রথম আমি কোনো শহীদের মাকে দেখলাম। তিনি আমাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানালেন।

তখন জানলাম, উনার ছোট আরো একজন ছেলে আছে। সে গ্রামের এক বাড়িতে মিলাদে গেছে। তাই আমাদের সাথে দেখা হয় নি।

সাইফুল ইসলাম ভাই উনার উদ্দেশ্যে কিছু কথা বললেন। শহীদদের মা আমাদের বললেন, আমার মানিকেরা চলে গেছে এতে আমার কোনো কষ্ট নেই। তারা শহীদ হয়েছে। ওরা নির্মমভাবে পিটিয়ে মেরেছে। যখন আমি হাসপাতালে গেলাম তখন দেখি তাদের শরীর নীল হয়ে আছে। আহ্!

বড় ছেলে আরো আগ থেকেই শ্রমিকের কাজ করতো। ছোট ছেলে মাদ্রাসায় পড়ছিল। ১৫ পারা মুখস্ত করেছে।

কিন্তু সে মনে রাখতে পারে না দেখে ১৫ দিন আগে শ্রমিকের কাজে যুক্ত হয়। আর তখনই এই নির্মম ঘটনা ঘটে।

আল্লাহ যেন উক্ত উগ্র হিন্দুদের হেদায়েত দান করেন অথবা তাদের ধ্বংস করে দিন। আমরা উনাকে কিছু সহায়তা দিলাম।

আমি তাদের বিকাশ নম্বর এনেছি। ইচ্ছা আছে, ভবিষ্যতে ছোট সন্তানটির জন্য আমরা টাকা-পয়সা ব্যয় করবো। ১-২ বছর পর হয়তো কেউ খবরও রাখবে না। তখন তাদের পাশে দাঁড়াবো ইনশাআল্লাহ।

ঢাকার পথে ও পেছনে নির্মম অভিজ্ঞতা

এরপর আমরা এখান থেকে রওয়ানা দিয়ে চলে আসলাম ফরিদপুর শহরে। স্থানীয় একটি হোটেলে প্রবেশ করলাম দুপুরের খাবার খেতে।

এখানে দেখলাম আরেক সমস্যা। গরুর গোশত নাই। আমরা রাগারাগি করার পর বললো, এখানে হিন্দু বেশি দেখে গরুর গোশত নাই।

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি দেখিয়ে লাভ কি? যদি তাদের উগ্রতার শিকার হয়ে আমার ভাই মারা যায়!

খাওয়া-দাওয়া করে আমরা পরষ্পর থেকে বিদায় নেই। আমরাও ঢাকার পথ ধরি বিআরটিসি বাসে করে। বিকেলবেলার গ্রাম বাংলার দৃশ্য আমাদের মুগ্ধ করছিল।

কত কৃষকের কষ্টের ফসল। কত শ্রমিকের কষ্টের দ্বারা তৈরি হয়েছে ইমারত ও ব্রিজ, পুল।

বিকেলবেলার লাল সূর্য্যের দৃশ্য ও পদ্মার পানির সাথে মিলে এক অভূতপূর্ব দৃশ্য দেখলাম। পদ্মা ব্রিজ থেকে এই দৃশ্য ছিল দেখার মতো।

মাগরিবের আগেই আমরা ঢাকা চলে আসি। এই সফরে অনেক কিছু শিখলাম। অনেক অভিজ্ঞতা হলো। জ্ঞানের পরিধিও কিছুটা বাড়লো। আল্লহ শহীদর পরিবারকে ধৈর্য্যধারণ করার তাওফিক দান করুন আমীন।

লেখাটি শেয়ার করতে সর্ট লিংক কপি করুন

বাহ্যিক লিংক থেকে পড়ুন

প্রথম মার শুরু করেন চেয়ারম্যানই যোগ দেন শত শত মানুষ – মানবজমিন

ফরিদপুরে মন্দিরে আগুনের পর দুই জন হত্যা- কী ঘটেছিল? – বিবিসি

চাঁদা না দেওয়ায় দুই সহোদরকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে, অভিযোগ বাবার – বাংলা নিউজ

মধুখালী হত্যা: চেয়ারম্যান তপনের বিরুদ্ধে অভিযোগের ঝাঁপি – বিডিনিউজ২৪

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

2 thoughts on “ফরিদপুরে দুই ভাই হত্যা”

  1. আব্দুল্লাহ

    কি নির্মমতা! আল্লাহ জালিমদের ধ্বংস করুন

Scroll to Top