মরণের বাস্তবতা – প্রথম যখন একটি শিশু দাঁড়াতে শিখে তখন শিশুটির পিতা-মাতা, আত্মীয়স্বজন বিশ্বজয়ের ন্যায় আনন্দিত হয়। এ মুখ ও মুখ হয়ে সংবাদটি ছড়িয়ে পড়ে পুরো পাড়ায়, গোত্রে।
বাহ্যিক দিক থেকে দেখলে একজনের মনে হতেই পারে, “সামান্য এই দাঁড়াতে পারা নিয়ে এত আনন্দিত হওয়ার কি আছে? এগুলো তো অতি বাড়াবাড়ি।”
হ্যাঁ, তার নিকট যেটা বাড়াবাড়ি, শিশুটির পরিবারের নিকট তা আকাশের চাঁদ হাতে পাওয়ার মতো আনন্দের। এর মূল কারণ প্রেক্ষাপট বা সময়ের চাহিদা।
যখন মানুষ যে-ই জিনিসটা চায় তখন সেটা তার না হলে চেপে বসে একরাশ হতাশা। অস্থিরতা মাথায় জেঁকে বসে।
যেদিন পরীক্ষার হলে আমরা বসি সেদিন আফসোসের সাথে বারবার মনে মনে আওড়াতে থাকি, আহহা! বইয়ের অমুক পৃষ্ঠাটা বা অধ্যায়টা আরেকটু ভালোভাবে দেখতাম! যদি আরেকটু পড়তাম! যদি স্যারের লেকচারটা সেদিন ক্লাসে ভালোভাবে শুনতাম!
অনেক হতাশা মাথায় চেপে বসে। কারণ, প্রেক্ষাপট ছিল উত্তীর্ণ হওয়ার দিকে অগ্রসর হয়ে যাওয়া। এখন সেটার দিকে অগ্রসর হতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে।
আমাদের আশেপাশে যত মানুষকেই আমরা দেখি, সবাই একদিন মারা যাবে।
আমিও মারা যাব। আমার পুরো পরিবারও মারা যাবে। বংশের সকলেই মারা যাবে।
দুনিয়া আমাদের তেমন মনে রাখবে না। কখনো একান্ত প্রয়োজন হলে কেউ খানিকটা স্মরণ করবে। আফসোস করবে।
কারও কোনো উপকার করে গেলে সে তখন কৃতজ্ঞতার সহিত হাত তুলে দুআ করতে পারে আমাদের জন্য। যা তখন আমাদের নিকট স্বর্ণের চেয়েও দামি হিসেবে বিবেচিত হবে।
মানুষ কেন মারা যায়? কারণ, দুনিয়া চিরস্থায়ী নয়। কেউই এই পৃথিবীতে চিরকাল থাকে নি।
যত বড়ো পাপিষ্ঠ হোক অথবা যত বড়ো আল্লাহর প্রিয় পাত্র হোক, তাকে একটা সময় দুনিয়া ত্যাগ করে চলে যেতেই হবে।
২
আমাদের জীবন দুইটা। সাধারণভাবে ভাগ করলে বলা যায়, দুনিয়ার জীবন এবং আখিরাতের জীবন। এখানে আবার একটা আরেকটা সম্পূরক।
কেউ দুনিয়াতে আল্লাহর আদেশ-নিষেধ পালন না করলে আখিরাতে তার ভালো থাকার সম্ভাবনা নেই।
আবার যারা দুনিয়াতে আল্লাহকে পরিপূর্ণভাবে মান্য করে চলার চেষ্টা করেছে তাদের জন্য আখিরাত হলো স্বপ্নের জায়গা। কাঙ্ক্ষিত স্থান।
মৃত্যুর সাধারণ একটা ভয় সকলের মধ্যেই কমবেশি থাকে।
রাতে বালিশে মাথা দিয়ে অথবা নীরবে ভাবনার জগতে হারিয়ে গিয়ে যখন আমরা মৃত্যু বা কবর নিয়ে কল্পনা করি তখন শরীর শিউরে ওঠে বারবার। মাথা ঝিম মেরে আসে।
পরক্ষণেই আবার আমরা এই মৃত্যুকে ভুলে গিয়ে নিজের ইচ্ছামতো দুনিয়া যাপন করছি। ইচ্ছামতো আল্লাহর অবাধ্যতায় লিপ্ত হচ্ছি। একটা ড্যাম কেয়ার মনোভাব।
অথচ এই মৃত্যু ফেরাউনের মতো পাপিষ্ঠকেও কুপোকাত করে দিয়েছে। গত শতাব্দীর বড়ো বড়ো তাগুত ও ফেরআউনদেরও অস্তিত্ব বিলীন করে দিয়েছে।
এরপরও আমরা উদাসীন। নফসের দাসত্ব ও শয়তানের নিকট আত্মসমর্পণ করতে অধিক আগ্রহী। আমাদের কি চোখ খুলবে না? আমরা কি জাগ্রত হব না?
হাশরের ময়দানে যেদিন আল্লাহ আমাদের আমলনামাগুলো সামনে পেশ করবেন সেদিন কারও জন্য হবে তা আনন্দের। আর কারও জন্য হবে ভীতিকর।
ভালো ব্যক্তিরা সেদিন খুশি হয়ে আশেপাশের মানুষকে বলবে, দেখো আমার আমলনামা! এটা তো অতি উত্তম একটি কিতাব।
আর যারা দুনিয়াতে আল্লাহর অবাধ্যতায় লিপ্ত ছিল তারা বলবে, এই কিতাব তো আমার নয়। এটা অন্য কারও। আমি এসব খারাপ কাজ কখনোই করিনি।
আল্লাহ তার মুখের জবান বন্ধ করে দেবেন। তার সমস্ত অঙ্গপ্রত্যঙ্গের জবান খুলে দেবেন। শরীরের সমস্ত অঙ্গ তখন তার বিরুদ্ধে আল্লাহর নিকট সাক্ষ্য দেবে।
এরপর ফেরেশতারা তাকে টেনে হিঁচড়ে জাহান্নামের দিকে নিয়ে যাবে। সেদিনের সেই প্রেক্ষাপটে সেও আফসোসের সাথে কড় জোরে বলতে থাকবে,
হে আমার রব! আমাদের আরেকবার দুনিয়াতে প্রেরণ করুন। আমি সবচেয়ে ভালো ব্যক্তিটি হয়ে আপনার সামনে হাজির হব।
আল্লাহ বলবেন, কখনোই না। তুমি ভোগ করো জাহান্নামের আজাব। যেটাকে তোমরা দুনিয়াতে মিথ্যা মনে করতে। যেটা নিয়ে হাসাহাসি করতে।
মরণের বাস্তবতা কি আমরা অস্বীকার করতে পারি? পড়ুন মৃত্যুবিষয়ক আরেকটি লেখা