পরিবার ভাবনা – একটি ছেলে এবং একটি মেয়ে বালেগ হওয়ার পর থেকেই পৃথিবীকে নতুনভাবে জানতে শিখে। নতুনভাবে সে অবলোকন করে পৃথিবীর হাল-হাকীকত।

সে তখন পৃথিবীর নিয়মতান্ত্রিক উপক্রমা ও পরিবারতন্ত্র সম্পর্কে জানতে পারে। অজানা এক মোহে সে আকৃষ্ট হয়। একটি প্রাপ্তবয়স্ক ছেলে অন্য একটি মেয়ের প্রতি এবং একজন প্রাপ্তবয়ষ্ক মেয়ে অন্য এক ছেলের প্রতি আকৃষ্ট হয়। আধুনিক পৃথিবীতে এরপরের ধারা আর উল্লেখ না করাই উত্তম।

নাটক, থ্রিলার, ওয়েব সিরিজ, ড্রামা সিরিজ ও সিনেমার মাধ্যমে আমরা এরপরের কাহিনী জানি। আমরা আরেকটু পর থেকে জানবো।

বিয়ে, স্বপ্নের অষ্টপ্রহর

বিয়ের মাধ্যমে শুধুমাত্র দুইটি সত্ত্বা নয় বরং দুইটি পরিবার আত্মীয়তার বন্ধনে আবদ্ধ হয়। মানুষকে আল্লাহ তাআলা সৃষ্টি করেছেন সামাজিক প্রাণী হিসেবে।

মানুষ একজনের দেখাদেখি অন্যজন অনুকরণ করতে পছন্দ করে। ভালো কাজ হোক কিংবা খারাপ কাজ হোক, সে অনুকরণ করতে চায়।

একটি শিশু জন্মের পর তার মা-বাবাকে দেখে হাঁটার অনুকরণ করে, কথা বলার অনুকরণ করে। বিয়ের মাধ্যমে একটি হালাল সম্পর্ক তৈরি হয়।

পৃথিবীর সবচেয়ে নির্মল একটি সম্পর্ক তৈরি হয়। দুজন দুজনকে বিশ্বাস করা, সুখে-দুঃখে পাশে থাকা, প্রয়োজনে উপদেশ দেয়া।

জীবনবীমা কি আপনার পরিবারে শান্তি আনবে? পড়ুন

কখনো বা মৃদু মনমালিন্য হওয়া। এসকল কিছুই একটি বন্ধনের জন্যই হয়। একজন স্বামী সর্বদা চায়, তার স্ত্রী ভালো থাকুক।

তেমনি একজন স্ত্রীও চায় তার স্বামী ভালো থাকুক। শান্তিতে থাকুক। বিয়ের আগেই কোনো একজন মাহরামকে সাথে নিয়ে যদি ছেলে মেয়েকে দেখতে যায় এবং পুরোপুরি মেয়ের সম্পর্কে জেনে নেয় এবং মেয়েও ছেলের সম্পর্কে জেনে নেয়, তাহলে বিয়ের পর আর তেমন ভুল বুঝাবুঝি হয় না।

পরষ্পর কেমন হবে?

একজন ব্যাক্তি সমাজ ও সামাজিকতা নিয়ে যেমন চিন্তাধারা পোষণ করে, এর অর্ধেক সে শিখে পরিবারের নিকট হতে।

বাকী অর্ধেক সে শিখে শিক্ষার মাধ্যমে। ছেলে এবং মেয়ে যদি বিপরীত মেরুর চিন্তাধারায় অভ্যস্ত হয় তাহলে শান্তি এবং আনন্দ হয়তো কখনো দরজায় করাঘাত করবে না।

বিয়ের পূর্বেই একজন ছেলে ও মেয়ের এই জিনিষটি মনে রাখা আবশ্যকীয় যে,

আমার জীবনের বাকী অংশ যার সাথে কাঁটাবো, তার চিন্তাভাবনা বা পরিবার ভাবনা যেন পুরোপুরি আমার সাথে মিলে। আর যদি পুরোপুরি নাও মিলে অত্যন্ত ৮০% যেন মিলে।

কারণ সকলের রুচি সৃষ্টিকর্তা একরকমভাবে তৈরি করেন নি। পরষ্পরের চিন্তাধারা এক থাকলে একজন আরেকজনকে বুঝতে তাড়াতাড়ি।

নবজাতকের আর্তনাদ! যদি আপনার এমন হয়, পড়ুন

সে কি চায়, কি প্রয়োজন, তার পছন্দ-অপছন্দ কি, কখন তার মুড ভালো থাকে,

কখন সে কথা বলতে পছন্দ করে এসব প্রশ্নের উত্তর পরষ্পরের জেনে রাখা একান্ত কর্তব্য।

দ্বীনদার হওয়া কেন প্রয়োজন

নবীজি সাঃ এর একটি হাদীস আছে সুনানে আবু দাউদ শরীফের ২০৪৭ নং এ,

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: ” تُنْكَحُ النِّسَاءُ لِأَرْبَعٍ: لِمَالِهَا، وَلِحَسَبِهَا، وَلِجَمَالِهَا، وَلِدِينِهَا، فَاظْفَرْ بِذَاتِ الدِّينِ تَرِبَتْ يَدَاكَ

আবূ হুরাইরাহ (রাযি.) সূত্রে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ নারীদেরকে (সাধারণত) চারটি বিষয় দেখে বিয়ে করা হয়। তার ধন-সম্পদ, বংশমর্যাদা, তার রূপসৌন্দর্য এবং তার দ্বীনদারী। তবে তুমি দ্বীনদার নারী বিয়ে করো। অন্যথায় তুমি লাঞ্ছিত হবে।

মানুষ দ্বীনদারীতা শিখে ছোটবেলায় মক্তবে যাওয়া থেকে। কেউ বা শিখে আরো অনেক পরে।

কেউ বা হঠাৎ হেদায়াত পায়। কেউ বা বিপদে পড়ে স্রষ্টার অনুগত্য করা শুরু করে।

একজন ব্যক্তি দ্বীনদার হওয়া মানে এই নয় যে, সে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে। রমজানে রোজা রাখে।

দ্বীনদার হওয়া মানে, সে ফরজ ইবাদাতের পাশাপাশি খারাপ কাজ থেকে কতুটুকু বিরত থাকে।

সে নিজেকে অশ্লীল কথাবার্তা থেকে বিরত রাখে নাকি। নিজেকে সে গায়রে মাহরাম থেকে হেফাজত করে নাকি।

নিজের দৃষ্টির হেফাজত করে নাকি।

সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজের নিষেধ করে নাকি। চিন্তা-ভাবনা পরিশুদ্ধ নাকি। এমন আরো অনেক বিষয় আছে যা দ্বীনদারিতার মানদন্ড হতে পারে।

বিয়ের সময় কি শুধু দ্বীনদারিতাই দেখবেন? চেহারা কি মুখ্য নয়?

আপনি যদি ভেবে থাকেন একজন পুরুষ হিসেবে যে, গরীব দেখে কাউকে বিয়ে করে নিবো।

নামাজ রোজা করে এমন কাউকে বিয়ে করে নিব।

চেহারা একরকম হলেই হয়। বর্তমান যামানায় এমনটা ভাবলে একটা সময় নিজেই গুনাহে জড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা আছে। সকল মানুষের পছন্দ এক নয়।

কেউ খুব সুন্দরী পছন্দ করে, কেউ হালকা সুন্দরী, কেউ শ্যামলা, কেউ খানিকটা গাত্রবর্ণের, কেউ কালো বর্ণের, কেউ খুব সাস্থ্যবান চায় আবার কেউ ফিট শরীর চায়,  কেউ খানিকটা চিকন চায়, কেউ খানিকটা লম্বা চায় কেউ বা খাটো চায়।

মোবাইল, কম্পিউটার কেন আপনার জন্য ও সন্তানের জন্য হুমকিস্বরুপ? পড়ুন

একজনের পছন্দের সাথে অন্যের পছন্দ কখনোই মিলবে না।

তাই বিয়ের আগে কোনো মাহরামকে সাথে নিয়ে মেয়েকে দেখে নিন। অভিজ্ঞ ও বড়দের সাথে পরামর্শ করুন। আশা করি জীবনে ঠকবেন না।

বিয়ের পরবর্তী জীবন

সবেমাত্র আপনার বিয়ে হলো। কি করবেন এখন? এতদিন একা একা সময় কাটিঁয়েছেন এখন কি ট্যুর, হানিমুনের জন্য উঠেপড়ে লাগবেন?

একটা সমীক্ষায় বলা হয়, আমাদের জীবনের সবচেয়ে বেহুদা টাকা খরচ করি আমরা বিয়ের আগে ও পরের সময়গুলোতে।

যেই জিনিষ প্রয়োজন নেই, সেটিও আমরা কিনি। যেটি দরকার, সেটিও আবেগের ঠেলায় মাত্রাতিরিক্ত সংগ্রহ করি।

এমন কাজ থেকে বিরত থাকা উচিৎ।

কৃপণতা নয়। বুঝেশুনে খরচ করুন। একবার ভাবুন, সম্পদের হিসাব যদি আল্লাহ চায় তখন আপনি কিভাবে হিসাব দিবেন?

পরষ্পর পরষ্পরকে সময় দিন। কিন্তু তাতে সমঝোতা রাখুন। জীবনের প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করতে পারেন। হয়তো মতামতের ভিত্তিতে সঠিক সিদ্ধান্তে পৌছাতে পারবেন।

পরিবার ভাবনা আপনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এটি ভিত্তির ন্যায় কাজ করে।

সন্তান পালন

আল্লাহ তাআলার অন্যতম এক উপহার হলো সন্তান। সন্তানকে বড় করা, তাকে নীতিবান করা ও আদর্শ শিক্ষা দেয়া বাবা-মায়ের দায়িত্ব।

বিয়ের সময় একজন সৎ ও দায়িত্ববান স্ত্রী খোঁজার পাশাপাশি একজন আদর্শ মা খুঁজুন। একজন মা পারে তার সন্তানকে সঠিকভাবে গড়ে তুলতে।

সন্তানকে শৈশবকাল থেকে ইসলামিক ছোট ছোট বিধানগুলো জানিয়ে দিন। তাকে মাঠে ও বন-বাদাড়ে খেলতে দিন।

তাকে মিথ্যা ভয় দেখিয়ে মন মস্তিষ্ক নষ্ট করে দিবেন না। সাহসী করে তুলুন। সাহস তাকে অনেক দূর নিয়ে যাবে। পরিবার ভাবনা সর্বদা আপনার মাথায় রাখতে হবে।

শিশুদের শিক্ষা অর্জনে বাবা মায়ের ভূমিকা কতুটুকু? পড়ুন

সমাজের তালে তালে চলে নিজের জীবন ও সন্তানের জীবনকে হুমকির মুখে ফেলবেন না।

উপসংহার

হয়তো আমার কথাগুলো আপনি পুরোপুরি অনুধাবন করতে পারবেন না। তবে জ্ঞানীদের জন্য এতুটুকুই যথেষ্ঠ মনে করি।

জ্ঞানীরা ইশারার মাধ্যমে মূল ভাবার্থ বুঝে নেয়। Be Brave

আরো পড়ুন এখান থেকে

ইসলামে কি বাল্যবিবাহ বৈধ? পড়ুন

হযরত আয়েশা রাঃ কে নিয়ে নাস্তিকদের আপত্তির জবাব

Scroll to Top