নবজাতকের আর্তনাদ – বিয়ের পর সর্বপ্রথম সূখ অনুভূতি হয় সন্তানের জন্মের সময়। একজন ব্যক্তির শত দুঃখ-কষ্ট মুছে দিতে পারে তার নিষ্পাপ সন্তানের চেহারা। সন্তানের বিয়োগ ব্যাথায় বাবা-মা শোকে কাতর হয়ে যায়। বাবা-মায়ের বিয়োগ ব্যাথায়ও সন্তানরা কান্না করে। কষ্ট পায়। এই বন্ধন বড়ই সুখের।
একটা শিশু তার পরিপূর্ণ সিকিউরিটি পাওয়ার সমাজের নিকট তার অধিকার। সে নিরাপত্তা চায়। তাকে নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হলে এই দায় সমাজের। এই দায় সরকারের।
গতকাল একটা সংবাদ দেখে স্বভাবগতই হতবাক ও হতভম্ব হয়ে যাই। মুখ ফুঁটে এই কথা বলতে বাধ্য হই, এমন কার্যকলাপও কি ঘটে বর্তমান সময়ে।
আগে একটা সময় ছিল যখন মানুষের কোনো নিরাপত্তা ছিল না। ছিল না কোনো অধিকার।
এক সময় দুশমনদের হাত থেকে এই ভূ-খণ্ড স্বাধীন হলো। স্বাধীন হলো একটি পতাকার। কিন্তু আমাদের অধিকার কি আমরা পেয়েছি?
এখানেই আমাদের হাত কেঁপে উঠে। যদি বলি পেয়েছি, তাহলে গরীব-অসহায়দের বদদোয়া আমাদের উপর পতিত হবে।
যদি বলি পাই নি, তাহলে ক্ষমতাশীল লোকদের তীর্যকদৃষ্টি আমাদের দিকে নিবদ্ধ হবে।
শিশুর কথায় ফিরে যাই
সবেমাত্র সাতমাস হলো সে মায়ের গর্ভে আছে। আমাদের চিকিৎসাবিজ্ঞানের নলেজ অনুযায়ী জানি,
সন্তান মায়ের পেটে ১০ মাস ১০ দিন থাকে। আর এই শিশুটি তার মায়ের গর্ভে ৭ মাস ছিল।
তার বাবা জাহাঙ্গীর আলম কাজকর্ম করেন অন্য দশটা দিনমজুরের মতো। বয়স তার বেশি হয় নি। মাত্র ৩৫।
বছরখানেক আগে বিয়ে করেছেন রত্না নামে একটা মেয়েকে। তার বর্তমান বয়স ২৬।
৭ মাস আগে রত্না গর্ভবতী হন। পরিবারে খুশীর জোয়ার বয়ে যায়। এতদিন পর সন্তান আলোর মুখ দেখবে।
বাবা-মা তাদের নয়ন জুড়াবে সন্তানের দিকে তাকিয়ে।
দীর্ঘ কাজকর্ম শেষে বাবা ঘরে এসে সন্তানকে বুকে তুলে নিবে। কিন্তু তা আর হলো কই?
মাকে নিয়ে হসপিটালে যাওয়ার সময় বাবা-মা এবং তাদের মেয়ে সানজিদা ট্রাকের নিচে চাপা পড়ে ঘটনাস্থলে মারা যান। তাহলে পেটের শিশুটি?
আল্লাহর অশেষ কুদরতে সন্তান মায়ের পেট ফেঁটে ভূমিষ্ঠ হয়। জন্মের আগেই তার মা-বাবা উভয়ে দুনিয়া থেকে বিদায় গ্রহণ করলো।
এক নিষ্ঠুর পৃথিবীর আলো দেখলো শিশুটি। নবজাতকের আর্তনাদ মানুষের বিবেককে নাড়িয়ে তুলে।
ঘটনাটি ঘটেছে ময়মনসিংহের ত্রিশালে। ট্রাক নিয়ন্ত্রণহীনভাবে চালিয়ে শেষ করে দিয়েছে দুইটি প্রাণ।
পরিবার
শহীদ জাহাঙ্গীর আলম ও রত্না বেগমের পরিবারে আরো দুজন সন্তান রয়েছে। বড় ছেলের নাম এবাদত। ছোট মেয়ের নাম জান্নাত।
আর মেয়ে সানজিদা বাবা-মায়ের সাথে ট্রাকচাপায় মারা যায়।
এখন নতুন সন্তান জন্মগ্রহণ করলো মায়ের পেট ফেঁটে। কি হবে তার ভবিষ্যত?
এই তিন সন্তানের দায়িত্ব কে নেবে?
তা ছাড়া বাড়িতে রয়েছে শহীদ জাহাঙ্গীর আলমের মা-বাবা। তারা খানিকটা মানসিক ভারসাম্যহীন। তারা চলাফেরা করতে অক্ষম।
এই সর্বমোট ৫ জনের দায়িত্ব কি সরকার নেবে? নাকি সরকার ডলারের মান বাড়ানোর জন্য ব্যস্ত?
মানুষের জীবনের কি দু-পয়সা দাম নেই?
বহু আগ থেকেই শুনছি, ফিটনেসবিহীন ও লাইসেন্সেবিহীন গাড়ি চালাচ্ছে চালকরা। তাদের নেই কোনো ড্রাইভিং লাইসেন্সে। নেই তাদের গাড়ি ঠিকভাবে চালোনোর যোগ্যতা।
তারা এমনভাবে গাড়ি চালায় যেন বিমান চালাচ্ছে। স্প্রিড যেখানে কম দেয়া দরকার সেখানে তারা বেশি দিচ্ছে। যেখানে বেশি দেয়া দরকার সেখানে তারা অতিরিক্ত প্রিড দিচ্ছে।
প্রতিনিয়্যত এভাবে তাদের কাজ চলে। সরকারি দায়িত্বশীলরা কি এই দিকগুলোতে নজর দিবেন না? নাকি আপনাদের নজর শুধু উন্নয়নেই ঘুরপাক খায়? অধঃপতনে নয়?
রেফারেন্স
দুর্ঘটনায় নিহত মা, সন্তান ভূমিষ্ট