অমুসলিম দেশে বসবাস – আল্লাহ তা’আলা সূরা তওবার ৩ নং আয়াতে বলেন,

 وان الله بريء من المشركين ورسوله এ আয়াতের মাধ্যমে মুসলমান ও কাফেরদের সকল সম্পর্ক ছিন্ন হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। আর তার জন্য চার মাসের সময় দিয়েছেন।

আল্লাহ ও তাঁর রাসূল দায়িত্বমুক্ত হলে সকল মু’মিন মুসলমানও দায়িত্ব মুক্ত হবেন। তাই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

 أَنَا بَرِئ مِمَّنْ سَكَنَ مَعَ الْمُشْرِكِيْنَ وَ مَاتَ بَيْنَهُمْ ‘আমি এমন ব্যক্তি থেকে দায়িত্বমুক্ত, যে মুশরিকদের সাথে মিলেমিশে রয়েছে এবং তাদের মাঝেই মৃত্যুবরণ করেছে।’

আপনি এটিও দেখতে পারেন,

عَنْ سَمُرَةَ بْنِ جُنْدُبٍ، أَمَّا بَعْدُ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَنْ جَامَعَ الْمُشْرِكَ وَسَكَنَ مَعَهُ فَإِنَّهُ مِثْلُهُ সামুরাহ ইবনু জুনদুব (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ কেউ কোনো মুশরিকের সাহচর্যে থাকলে এবং তাদের সাথে বসবাস করলে সে তাদেরই মতো। ( আবু দাউদ, হাদীস নং ২৭৮৭ )

অমুসলিম দেশে যারা বড় হয়

এর কারণ মুশরিকদের সাথে থাকতে থাকতে কমপক্ষে অন্যায় কাজে বাধা প্রদানের আগ্রহ দূর হয়ে যাবে এবং এতেই সে অভ্যস্ত হয়ে পড়বে।

নিজের অজান্তেই তার আত্মপরিচয় ও আত্মমর্যাদাবোধ তিলে তিলে নিঃশেষ হয়ে যাবে। মুশরিক-অমুসলমানদের সাথে থাকার ফলে সে যুবতী-মহিলাদের সাথে অবাধে মেলামেশা করবে।

এতে তার চরিত্র কলুষিত হবে। তখন আর পাপ দেখে তার চোখ রক্তিম আকার ধারণ করবে না। সবচেয়ে মারাত্মক ও ভয়াবহ হবে তোমাদের ঐ ছেলে-মেয়েদের অবস্থা, যারা আমেরিকা, ইটালি বা সোভিয়েত ইউনিয়নে জন্মগ্রহণ করে সেখানেই বসবাস করছে।

অমুসলিম দেশে নাগরিত্ব নেয়া সম্পর্কে ড. ইউসুফ কারজাভি রহ. এর বক্তব্য পড়ুন

একবারও কি চিন্তা করে দেখেছ, সেই মুসলমান মেয়ের কথা, সহ শিক্ষা ছাড়া যার শিক্ষার কোন ব্যবস্থা নেই?

সেখানে কোন মাদরাসা নেই, কোন ইসলামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নেই। এমন পরিস্থিতিতে তোমার মেয়ে আমেরিকার যুবকদের সাথে লেখাপড়া করবে, আমেরিকান কাফেরকে ভালবাসবে, তারপর তাকে বিয়ে করবে।

অথচ তুমি তার কোন প্রতিবাদ করতে পারবে না। কারণ, তাহলে আমেরিকার আইন তোমাকে জিন্দানখানায় নিক্ষেপ করবে।

তুমি কি তোমার মেয়ের ওপর হাত তুলতে পারবে, যখন সে কোন আমেরিকান ছেলের হাত ধরে কয়েকদিনের জন্য উধাও হয়ে যাবে?

তোমার মেয়ে যদি কোন ইটালিয়ান ছেলেকে বয়ফ্রেন্ড হিসেবে বেছে নেয়, তুমি কি তাকে বাধা দিতে পারবে? তুমি দেখবে, তোমার নাকের ডগা দিয়ে তারা সমুদ্রের তীরে বেড়াতে যাচ্ছে।

কিংবা রৌদ্রস্নান করতে যাচ্ছে। এ ধরনের অনৈতিক ঘটনা ঘটতে থাকবে, অথচ তুমি এর প্রতিবাদ করতে পারবে না। এই হল কাফেরদের সাথে বসবাস করার কুফল।

আমেরিকার এক মসজিদের ঘটনা

একবার আমেরিকার এক মুসলিম যুবক আমার নিকট এসে বলল, শায়খ ইউসুফ কারযাভী প্রথম যখন আমেরিকায় আসেন, তখন শিকাগোতে কোন মসজিদ ছিল না।

তার আগমনে স্থানীয় মুসলমানরা মসজিদ নির্মাণে উৎসাহিত হয়। তারা মসজিদ নির্মাণের জন্য ষাট হাজার ডলার জমা করল।

ইঞ্জিনিয়ার যখন মসজিদের প্ল্যান তৈরি করতে এল, তখন ধনী মুসলমানরা, বিশেষত : যারা মসজিদ নির্মাণে আর্থিক সহায়তা দিয়েছে,

তারা বলল, মসজিদের নীচে অবশ্যই নাচের জন্য হল রুম রাখতে হবে। আমেরিকায় নবাগত যুবক মুসলমানরা তাদের কথা শুনে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠল।

বলল, অসম্ভব। মসজিদে আবার কিভাবে নাচের হল রুম হতে পারে? তারা বলল, মসজিদের নীচে অবশ্যই নাচের হল রুম হতে হবে।

এতে আমাদের মেয়েরা আরব ছেলেদের সাথে নাচবে। তারা একে অপরকে ভালবাসবে। বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হবে। আমেরিকান ছেলেদের বিয়ে করা থেকে তারা বেঁচে যাবে।

নবাগত যুবক মুসলমানরা তাদের বুঝাল, এটা তো ইসলামে বৈধ নয়। এ হল নবাগতদের অবস্থা। আর স্থায়ী বসবাসকারী সম্পদশালী মুসলমানদের অবস্থা যে কতটা শোচনীয়, তা লিখে বুঝানো যাবে না।

তাদের ঈমান নিভু নিভু। আমেরিকার বিষাক্ত পরিবেশে তাদের ঈমান-আক্বীদা, আদব-আখলাক সব শেষ হয়ে গেছে।

অমুসলিমদের সাথে কেমন আচরণ করতে হবে, পড়ুন

এ পরিবেশে লোহার মত শক্ত ঈমানও গলে যায়। এ পরিবেশে ঈমান আমল সহীহ রাখার কোন উপায় নেই । যুবক মুসলমানরা যখন বলল, এটা বৈধ নয়।

তখন বর্ষিয়ানরা বলল, আমরা আমাদের দেয়া অর্থের বিনিময়ে উপকৃত হতে চাই। যুবকরা তাদের কথায় অটল, আর বর্ষীয়ান রাও তাদের সিদ্ধান্তে অনড়।

অবশেষে বর্ষিয়ানরা ক্ষিপ্ত হয়ে তাদের দেয়া অর্থ ফিরিয়ে নিয়ে গেল। ইতোমধ্যে আল্লাহর অনুগ্রহে এক কুয়েতি এসে মসজিদ নির্মাণের জন্য তিন লাখ ডলার দিলেন।

গায়েবী সাহায্য

শিকাগো শহরে তখন কিছু ফিলিস্তিনী মহিলা বাস করত। তাদের মাঝে তখনও ইসলাম ও ঈমানের আলো বিদ্যমান ছিল।

তারা মসজিদ বানানোর জন্য জায়গা দান করল। সেই ফিলিস্তিনী মহিলাদের জায়গার ওপর মসজিদ নির্মিত হল। ধীরে ধীরে মুসলমানদের সংখ্যা বাড়তে লাগল।

যুবক মুসলমানের সংখ্যা ক্রমেই বেড়ে চলল। আমি শিকাগোর সেই মসজিদে কয়েকবার গিয়েছি। তারা সেই মসজিদের নাম রেখেছে – Mosque Foundation (মসজিদ ফাউন্ডেশন)।

মুসলিম যুবকরা তার পরিচালনার দায়িত্ব নিল। একের পর এক নির্বাচনে কয়েকজন যুবক তার দায়িত্ব পালন করল।

অবশেষে এক ডাক্তার যুবক নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে তার পরিচালনার দায়িত্ব নিল। তার সময়ে মসজিদে মহিলাদের নামায পড়ার ব্যবস্থা রইল না।

তাওহীদ আল আমালী কি, পড়ুন

তখন মহিলারা ক্ষিপ্ত হয়ে বলল, এই মসজিদ আমাদের। আমরা অবশ্যই মসজিদে আসব। পরিচালনা কমিটির পক্ষ থেকে বলা হল, আপনাদের দাবি কী? আপনারা কি চান?

তারা বলল, আমরা মসজিদ পরিচালনা কমিটির সদস্য হতে চাই। আমরা মসজিদের মিটিংয়ে শরিক হব।

আমরা আমাদের মতামত তুলে ধরব। ইত্যাদি ইত্যাদি। পরিশেষে অবস্থা কঠিন আকার ধারণ করল। শেষে মহিলারা কোর্টে গিয়ে মামলা করল।

তারা দাবি করল, এই মসজিদ আমাদের। পুরুষরা আমাদের থেকে তা ছিনিয়ে নিয়ে গেছে। সেই মসজিদের জনৈক দায়িত্বশীল ব্যক্তি আমাকে বলেছে,

আমেরিকান বিচারপতি খুব ভাল লোক ছিলেন। তিনি কল্যাণময় কাজকে খুব ভালবাসতেন। ভাল কিছু দেখলে দারুণ আনন্দিত ও বিমোহিত হতেন।

তিনি বিষয়টি এবং লোক পাঠিয়ে আমাদের সংবাদ দিলেন যে, রাষ্ট্রীয় আইন কিন্তু মহিলাদের পক্ষে, যদিও আমার অন্তর আপনাদের পক্ষে।

আমি রাষ্ট্রীয় আইনের বিপরীতে রায় দিতে পারব না। সুতরাং মহিলাদের সাথে আপনারা আপোস করে ফেলুন। আলোচনার মাধ্যমে মিটমাট করে ফেলুন।

অন্যথায় মসজিদ মহিলাদের হাতে চলে যাবে এ হল আমেরিকার অবস্থা। Mosque Foundation (মসজিদ ফাউন্ডেশন)-এর সেই দায়িত্বশীল ব্যক্তি আমার নিকট এক পত্রে লিখেছেন, আমার জন্য দু’আ করবেন।

আল্লাহ যেন আমাকে আমেরিকা থেকে মুক্তি দান করেন।

অমুসলিম দেশে বসবাস

এক তাবলীগ জামাতের ঘটনা – অমুসলিম দেশে বসবাস

ইসলাম নিয়ে কোন মুসলমান আমেরিকায় থাকতে পারে না। ঐ তো শাইখ আবু উমর। তাকে জিজ্ঞেস করুন। তিনি সাক্ষী আছেন, কোন ‘মুসলমান ইসলাম নিয়ে আমেরিকায় থাকতে পারেন কি না।

নিউইয়র্কের পার্শ্বে অবস্থিত নিউ জার্সি শহরেরও ঐ একই অবস্থা। শাইখ আবু উমরের সাথে সেখানে আমার সাক্ষাৎ হয়েছিল।

সেখানে কয়েকটি মুসলিম পরিবার বসবাস করে। আমি তাদের পেয়ে দারুণ আনন্দিত হয়েছিলাম। তারা একটি গির্জা কিনে তা মসজিদে রূপান্তরিত করেছিল।

কিন্তু তারপরও পাশ্চাত্যের দেশগুলোতে ইসলামী জীবন-যাপন যে কত কঠিন, তা চিন্তা করাও অসম্ভব।

সেখানে সমাজ জীবনের সকল নিয়ম-শৃঙ্খলা ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেছে।

হযরত ওমর রা. এর মৃত্যুকালীন ঘটনা পড়ুন

মানবতাবোধ ও চরিত্র বলতে কিছুই সেখানে অবশিষ্ট নেই। সাধারণ মানুষের কথা আর কি বলব। পাদ্রীদের অবস্থা বেশি খারাপ।

পাদ্রীদের দায়িত্ব সমাজ সংস্কার করা আর তারাই যতসব কুকর্মে লিপ্ত ।

আমেরিকা থেকে আগত এক মুসলিম যুবক আমাকে বলেছে, একদা এয়ারপোর্টে একদল পাদ্রী দাঁড়িয়ে ছিল এবং তাবলীগ জামাতের একদল মুসলমানও তাদের অদূরে দাঁড়িয়ে ছিল।

তারা দেখল, সাদা পোশাকপরা একদল মানুষ দাঁড়িয়ে আছে। হাঁটুর নীচ পর্যন্ত তাদের সাদা ধবধবে জুব্বা ঝুলে আছে।

তাবলীগ জামাতের আরব মুসলমানরা এগিয়ে গিয়ে পাদ্রীদের সাথে সাক্ষাত করল। পাদ্রীরাও এগিয়ে এসে আরব মুসলমানদের সাথে সাক্ষাৎ করল।

পাদ্রীদের সাথে একজন মহিলা পাদ্রী এগিয়ে এল এবং হাত বাড়িয়ে তাবলীগ জামাতের মুসলমানদের সাথে করমর্দন করতে চাইল।

কিন্তু মুসলমানরা হাত গুটিয়ে নিল। মহিলা পাদ্রী এতে দারুণ বিস্মিত হল।

সে তাদের ঠিকানা নিল এবং জিজ্ঞেস করল, আপনারা কোথায় উঠবেন?

তাবলীগের লোকেরা বলল, আমরা অমুক মসজিদে উঠব। তাবলীগ জামাতের লোকেরা তো মসজিদ ছাড়া কোথাও থাকে না।

ঠিক তারপরের দিনই সেই মহিলা পাদ্রী মসজিদে গিয়ে উপস্থিত। বলল, আমি জানতে এসেছি, আপনারা কেন আমার সাথে করমর্দন করলেন না।

তাবলীগের লোকেরা বলল, পুরুষের জন্য পরনারীর হাত ধরা ইসলামে হারাম। এ কথা শোনার পরই মহিলার ভাবান্তর সৃষ্টি হল। সে মুসলমান হয়ে গেল।

কাফেরদের ধোঁকা – অমুসলিম দেশে বসবাস

বলল, আমি ঐ ধর্মমত পরিত্যাগ করলাম। কারণ, পাদ্রীরা করমর্দনের সময় আমার হাত পিষ্ট করে, সুড়সুড়ি দেয়। আমি জ্বলন্ত অগ্নিকুণ্ড থেকে পালাতে চাই।

গির্জার কথা আর কী বলব। প্রত্যেকটি গির্জা এখন বেশ্যালয়ে পরিণত হয়েছে।

তাই বলছি, পাশ্চাত্য এক অন্ধকার জগত। এক জাগর অগ্নিকুণ্ড। পুরুষে পুরুষে আর নারীতে নারীতে সমকামিতার ছড়াছড়ি।

বদর যুদ্ধে হযরত আবু বকর রা. এর ঘটনা পড়ুন

উস্তাদ সাইয়্যেদ কুতুবের লেখা ‘আমার দেখা আমেরিকা’ বইটি প্রকাশ হতে পারেনি।

বলা হয় প্রেস থেকে বইটি আমেরিকান এম্বেসীর লোকেরা চুরি করে নিয়ে পুড়িয়ে ফেলেছে।

কিন্তু ‘রিসালা’ নামক পত্রিকায় সেই বইয়ের কয়েকটি অংশ প্রকাশিত হয়েছিল।

তিনি লিখেছেন, পাশ্চাত্যের যুবকরা তাদের প্রেমিকার সাথে, তাদের প্রেমাস্পদের সাথে সাক্ষাত করতে গির্জায় গিয়ে মিলিত হয়।

গির্জা হল প্রেমের অভয়ারণ্য। যে সমাজকে ঘুণে ধরেছে, ধ্বংসের উপক্রম হয়ে পড়েছে, সে সমাজের অবস্থা এমনই হয়ে থাকে।

তাই আমি বলছিলাম, মুশরিক থেকে পৃথক হয়ে যাওয়া, তাদের সঙ্গে বসবাস না করা শরীয়তের দৃষ্টিতে ও জ্ঞানের বিচারে যুক্তিযুক্ত।

জনৈক মুসলিম ছাত্রের ঘটনা – অমুসলিম দেশে বসবাস

এ কারণেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, انا بريء ممن سكن مع المشركين – আমি ঐসব লোকদের যিম্মামুক্ত, যারা মুশরিকদের সাথে বসবাস করে।’

আরো বলেছেন, ومن سكن المشرك ومات معه فهو منه যে ব্যক্তি মুশরিকদের সাথে বসবাস করে এবং তাদের মাঝেই মৃত্যুবরণ করল, সে তাদেরই একজন।’

এ বিষয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে চার-পাঁচটি হাদীস বর্ণিত হয়েছে।

তাই বলছি, পাশ্চাত্যে জীবন-যাপন করা মানে মুশরিকদের মাঝে জীবন-যাপন করা।

বরং তার চেয়েও শতগুণ ক্ষতিকর। তার চেয়ে অনেক কঠিন, কষ্টকর। পাশ্চাত্যের কথা আর কত বলব। বলে শেষ করা যায় না।

জর্দানে জন্ম নেয়া আমার এক ছাত্র এক শীর্ষ সম্মেলনে আমার নিকট এসে বলল, হুজুর, আর আত্মরক্ষা করতে পারছি না।

ইয়ামামার যুদ্ধে হযরত খালিদ বিন ওয়ালিদ রা. এর বীরত্ব পড়ুন

আর বেঁচে থাকতে পারছি না। বিয়ে না করলে বাধ্য হয়েই যিনা করতে হবে।

তিন মাস ধৈর্যধারণ করেছি। এখন আর পারছি না।

এভাবে বার বার বিভিন্নভাবে তার অসহায়ত্বের কথা আমার নিকট বর্ণনা করছিল।

আমি হলফ করে বলতে পারব, কেউ যদি এর বিপরীত কিছু বলে, তবে অবশ্যই সে মিথ্যা বলবে।

সেসব দেশে অবিবাহিত নারী-পুরুষ তথাকথিত স্বাধীনতার তরঙ্গে ভেসে যাচ্ছে। ধ্বংসের অতল গহ্বরে নিপতিত হচ্ছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিন্নযৌবনা যুবতীরা অদ্ভুত একখণ্ড কাপড় পরছে। যা পরলে হাঁটুর উপরেও দশ সেন্টিমিটার উন্মুক্ত থাকে।

অথচ এরা নারী। এরা যুবতী। এরা রূপসী। একদা আমি ইসত বিশ্ববিদ্যালয়ের বাথরুমে গেলাম। অজু করব। দেখলাম, কোন বাথরুমে দরজা নেই।

পুরুষদের বাথরুম, মেয়েদের বাথরুম সবগুলোরই একই অবস্থা। এটা কিভাবে হতে পারে? এটা কিভাবে সম্ভব?

আল্লাহ তা’আলা হযরত ইউসুফ আ. সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে বলেছেন,

ولقد هم به وهم بها لولا ان راى برهان ربه -‘মহিলা তার ব্যাপারে চিন্তা করেছিল আর সেও মহিলার ব্যাপারে চিন্তা করত। যদি না সে তার প্রতিপালকের মহিমা অবলোকন করতো।’ (সূরা ইউসুফ : ২৪)

পূতপবিত্র হযরত ইউসুফ আ. সম্পর্কে আল্লাহ তা’আলা এমন কথা বলছেন, যার পিতা, পিতামহ, প্রপিতামহ সবাই আল্লাহর নবী ছিলেন।

তাহলে পাশ্চাত্যের লোকদের পতন সম্পর্কে ভাবা যায় কি!

এক ডাক্তারী পড়ুয়া ছাত্রের জিজ্ঞাসা – অমুসলিম দেশে বসবাস

একদা ইসলামী আন্দোলনের এক কর্মী-ছাত্র আমার নিকট এল। সে অবিবাহিত। আমাকে জিজ্ঞেস করল, আমি বৃটেনে এক ইংরেজ পরিবারের সাথে থাকি।

সেখানে ডাক্তারি শিখি। আমার জন্য এটা জায়েয হবে?

বললাম, কিভাবে থাক? সে বলল, একই ফ্লাটের একই কামরায় থাকি।

আমি বললাম, কিভাবে রান্না কর? বলল, যৌথ। আমি বললাম, গোসলখানা? সে বলল, যৌথ। আমি বললাম, পায়খানা?

তখনো সে বলল যৌথ। আমি বললাম, তার স্বামী কি বাইরে থাকে? সে তখন বলল, কখনো রাতেও বাইরে থাকে। আর আমি ও তার স্ত্রী একই রুমে থাকি।

আমি বললাম, এটা জায়েয হবে না। এটা জায়েয হবে না। এটা জায়েয হবে না। সে বলল, তাহলে কী করব? আমরা চাই, মুসলিম ডাক্তার, মুসলিম ইঞ্জিনিয়ার তৈরি হোক।

আমি বললাম, ওদের সাথে চললে সাত বৎসর পর তোমার ইসলামের কি কিছু বাকি থাকবে? সে বলল, তাহলে কি আমি লেখা-পড়া ছেড়ে দিব?

আমি কী করব? আমি তাকে বললাম, শিম, তরমুজ, টমেটো ইত্যাদি বিক্রি করে জীবন-যাপন কর। তবুও এভাবে থেক না।

একটু ভেবে দেখুন, একজন যুবক একই কামরায় অন্যের স্ত্রীর সাথে রাত কাটায়।

একই পাকঘর, একই গোসলখানা, একই বাথরুম ব্যবহার করে, আর রাতের পর রাত তার স্বামী বাইরে কাটায়।

জনৈক অফিসারের সাক্ষাৎকার – অমুসলিম দেশে বসবাস

মধ্যপ্রাচ্যের সংস্কৃতি বিভাগের এক অফিসার আমেরিকায় থাকতেন।

তিনি আমাকে বলেছেন, এক রাতে পুলিশ আমার নিকট তিনজন যুবককে ধরে নিয়ে এল।

তারা এইডস রোগে আক্রান্ত এক নারীর সাথে যিনা করেছে।

ফলে তারাও এইডস রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েছে। এ হল পাশ্চাত্যের সমাজ চিত্র।

তাই আমি বলি, স্ত্রী ছাড়া পাশ্চাত্যে থেকে লেখা-পড়া করা হারাম।

আমার এই ফতোয়া তোমরা সবার নিকট পৌঁছিয়ে দাও। আবার বলছি, হারাম, হারাম, হারাম।

একজন সুস্থ যুবক কিভাবে শুচিশুদ্ধ, পাক পবিত্র থাকবে, যখন তার প্রতিবেশী পরিবারের সুন্দরী রূপবতী কন্যা তার সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করে তার পিতামাতার সামনে তার হাত ধরে বাইরে চলে যাবে?

কোথায় ভাই সালাহ? তিনি সুইডেনে ছিলেন। আমার নিকট এলে আমি বললাম, আপনি কি সেখানে ছিলেন? আমার কণ্ঠের বিস্ময় ভাব অনুভব করে বললেন,

মধ্যরাতে মেয়েরা এসে দরজায় নক করে। কোথায় পালাব? দরজা তো বন্ধ, তাহলে ঐ সব মেয়েদের অবস্থা কেমন, যারা রাস্তাঘাটে রাত কাটায়?

যারা ইতালি বা সুইডেন থেকে এসেছে, তারা জানে, পাশ্চাত্যের সামাজিক পতন কত ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। আমার বুঝে আসে না,

তারপর কিভাবে মুসলিম যুবকরা জিহাদ ছেড়ে, আফগানের রণাঙ্গন থেকে সুইডেন যায়। কেন যায়? ভ্রমণের জন্য? আল্লাহ তোমার ভ্রমণে কল্যাণ দান করুন।

কোথায় পালাচ্ছ তুমি? – অমুসলিম দেশে বসবাস

তুমি কি জিহাদের দেশ ছেড়ে পৃথিবীর সবচে’ নষ্ট-ভ্রষ্ট দেশে যেতে চাও? তাই আল্লাহ তা’আলা বলেন, “আল্লাহ মুশরিকদের থেকে দায়িত্ব মুক্ত, তাঁর রাসূলও।

আর যদি তোমরা তওবা কর অর্থাৎ ইসলামে ফিরে আস, তাহলে তা তোমাদের জন্য কল্যাণকর ।

যদি মুখ ফিরিয়ে নাও অর্থাৎ তোমরা তোমাদের কুফরিতেই বহাল থাক এবং ঘোষণা মেনে না নাও, তাহলে তোমরা জেনে রাখ, তোমরা আল্লাহকে পরাভূত করতে পারবে না।

তাহলে কাফেরদেরকে মর্মান্তিক শাস্তির সুসংবাদ দিয়ে দাও। দুনিয়াতে যুদ্ধে পরাজয় ও লাঞ্ছনার মাধ্যমে আর আখেরাতে জাহান্নামের মর্মান্তিক শাস্তির মাধ্যমে।

আলা ইবনে হাযরামি রহ. এর ঘটনা পড়ুন

তবে যে মুশরিকদের সাথে তোমরা চুক্তিবদ্ধ, অতঃপর তারা তোমাদের ব্যাপারে ত্রুটি করেনি এবং তোমাদের বিরুদ্ধে কাউকে সাহায্য করেনি, তাদের সাথে কৃত চুক্তিকে তাদের দেয়া মেয়াদ পর্যন্ত পূরণ কর।”

আমার প্রিয় মুসলিম ভাই, একটু ভাবুন। আমরা কি করছি? আমাদের কি করা উচিত? কখনো ভ্রমণ করতে চাইলে কোন দেশে আমাদের ভ্রমণ করা উচিৎ?

আপনাকে হাতজোড় করে বলছি, নষ্ট সংস্কৃতি আপনাকে সাময়িক আনন্দ দিবে বটে। কিন্তু আজিবনের জন্য তা আফসোসের কারণ হবে। নিজে বাঁচুন এবং অপরকে বাঁচান।

ধন্যবাদ।

তথ্যসুত্র

লেখাটি নেয়া হয়েছে ড. আব্দুল্লাহ আযযাম রহ. এর তাফসীরে সূরা তওবা এর ৩য় অধ্যায় থেকে। আল্লাহ লেখককে উত্তম প্রতিদান দান করুন

Scroll to Top