আবু বকর রা. ইসলাম গ্রহণের পূর্বে কেমন ছিলেন

ইসলাম গ্রহণের পূর্বে আবু বকর রা. – নবী সা. বলেছেন, “তোমাদের মধ্যে জাহেলী যুগে উত্তম ছিল, ইসলাম গ্রহণের পরেও তারা উত্তম। যদি তারা ইসলামকে সঠিকভাবে বুঝতে সক্ষম হয়”

হযরত আবু বকর রা. ছিলেন আরবের সম্মানিত ব্যক্তিদের মধ্য থেকে একজন। তিনি একাধারে ছিলেন শিক্ষিত, সম্রান্ত, আত্মমর্যাদাসম্পূর্ণ ব্যক্তি।

তিনি জন্মগ্রহণ করেছেন আরবের সম্রান্ত গোত্র বনু তাইম গোত্রে

আবু বকর রা.

আবু বকর রা. ছিলেন তার মাতা-পিতার একমাত্র পুত্র সন্তান। তিনি শৈশবে লালিত-পালিত হয়েছেন অত্যন্ত আদর যত্নের সাথে।

সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিদের একজন আবু বকর রা.

আরবে সে সময় কোনো রাজা বা মন্ত্রী ছিল না। এখানে সমাজ পরিচালিত হতো গোত্রের মাধ্যমে। প্রতিটি গোত্রই ছিল শক্তিশালী। তাই ক্ষেত্রবিশেষে সবাই দায়িত্ব গ্রহণ করতে চাইতো।

কিন্তু সবাই দায়িত্ব নিলে তো পরিবেশ ঠিক থাকবে না। তাই বংশের প্রধানরা আলোচনার মাধ্যমে কিছু ব্যক্তিদের আলাদাভাবে বিভিন্ন বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত করেন।

বনু তাইম গোত্র থেকে হযরত আবু বকর রা. দায়িত্ব ইসলাম গ্রহণের পূর্বে দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। তিনি ছিলেন জরিমানা আরোপন ও রক্তপণের সম্পদ রক্ষক।

তিনি যদি কখনো কারো জামিন হতেন তাহলে কুরাইশরা বিনাবাক্যে তা মেনে নিত। কিন্তু অন্য কারো বেলায় কুরাইশরা মানতো না।

জ্ঞানী ব্যক্তিদের একজন আবু বকর রা.

আরবে সে সময় সর্বোচ্চ জ্ঞান হিসেবে ধরা হতো ইলমুল আনসাব বা বংশ তালিকার জ্ঞান। মানুষ নিজেদের বংশ তালিকা বলাকে মনে করতো, অনেক বড় কিছু।

প্রাচীন আরবের ব্যাপারে তো এমন ঘটনাও পাওয়া যায় যে, অনেকে নিজের উটের বংশ তালিকা পর্যন্ত বলতে পারতো।

আবু বকর বংশ তালিকার জ্ঞান তথা ইলমুল আনসাব বিষয়ে পূর্ণ জ্ঞানের অধিকারী ছিলেন। মানুষ যখন সম্পদ বন্টনের সময় বংশ তালিকা প্রয়োজন পড়তো প্রাচীন আরবের নীতি অনুযায়ী,

আবু বকর রা. এর নিকট আসলে তিনি তাদের বংশ পরিচয় বলে দিতেন। তিনি যখন আরো বংশের ব্যাপারে উল্লেখ করতেন তখন অন্যান্য কবি-সাহিত্যিকদের ন্যায় বংশের খারাপ ব্যক্তিদের হেয়-প্রতিপন্ন করতেন না।

তিনি ছিলেন বিখ্যাত ইলমুল আনসাব বিশারদ আকিল ইবনু আবি তালিব, মুযআর যুবাইরি এবং যুবাইর ইবনে মুতয়িম প্রমুখ ব্যক্তিদের শিক্ষক।

নবীজি সা. হাসসান ইবনে সাবেত রা. কে বলেছেন, তুমি আবু বকরের কাছ থেকে ইলমুল আনসাব শিক্ষা করো। কেননা তিনি আরবের কওমসমূহের বংশ পরিচয় সম্বন্ধে অধিক জ্ঞানী।

হযরত আয়েশা রা. বলেন,

নিঃসন্দেহে তিনি কুরাইশদের মধ্য থেকে তাদের বংশ তালিকা সম্পর্কে সর্বাধিক বিজ্ঞ ও প্রাজ্ঞ ব্যক্তি ছিলেন।

ব্যবসায়ী হিসেবে আবু বকর রা.

ইসলাম আসার পূর্বে আরবের লোকেরা ব্যবসার মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করতো। আরবের প্রতিটি গোত্রই কোনো না কোনোভাবে ব্যবাসার সাথে জড়িত ছিল।

হযরত আবু বকর রা. ইসলাম গ্রহণের পূর্বে ছিলেন একজন খ্যাতিমান ব্যবসায়ী। তিনি ব্যবসার জন্য শাম, বসরাসহ আরো বিভিন্ন স্থানে পণ্য নিয়ে যেতেন।

তিনি কাপড়ের ব্যবসা করতেন। সে সময় মক্কার খ্যাতিমান ব্যবসায়ীদের সাথে তার উঠাবসা ছিল। হযরত খাদীজা রা. যেই মহল্লায় বসবাস করতেন আবু বকর ও সেই মহল্লায় বসবাস করতেন।

আবু বকর ব্যবসার পুঁজি ছিল ৪০ হাজার দিরহাম। যা বর্তমান বাংদেশের বাজার মূল্য হিসেবে ১৫,৬০০,০০০ টাকা।

জাহেলী যুগ থেকে তিনি মেহমানদারিতে প্রসিদ্ধ ছিলেন। গরীব-অসহায়দের জন্য তিনি উদারচিত্তে খরচ সম্পদ খরচ করতেন।

তিনি কখনো মদপান করেন নি

আবু বকর ইসলাম গ্রহণের পূর্বেও কখনো মদপান করেন নি। একবার এক ব্যক্তি তাকে জিজ্ঞাসা করলো, আপনি কি জাহেলী যুগে মদপান করেছেন?

তিনি বললেন, আমি এ থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করি।

লোকটি তখন জিজ্ঞাসা করলো, কেন আপনি পান করেন নি?

তিনি বললেন, নিজ সম্মান ও মর্যাদা রক্ষার খাতিরেই আমি এ থেকে দূরে থেকেছি। যে ব্যক্তি মদপান করে, সে তার সম্মান-সম্ভ্রম হারিয়ে ফেলে। ১০

হযরত আয়েশা রা. বলেন, আবু বকর ও উসমান রা. জাহেলী যুগেও মদপান থেকে দূরে ছিলেন।

তিনি কখনো মূর্তিপূজা করেন নি

হযরত আবু বকর কখনো কোনো প্রতিমার পূজা করেন নি। সাহাবাদের এক মজলিসে তিনি বলেছেন, শৈশবে আমার পিতা আবু কুহাফা আমার হাত ধরে এক দেবালয়ে নিয়ে গিয়ে বললেন,

এই উঁচু মূর্তিটি তোমার মাবুদ। এরপর তিনি আমাকে সেখানে রেখে কাজে চলে যান। আমি তখন মূর্তির কাছে গিয়ে বলি,

আমি ক্ষুধার্ত, আমাকে খাবার দাও। কিন্তু মূর্তি কোনো সাড়া দেয় নি। এরপর আমার বলি, আমার জামা-কাপড় নেই। আমাকে জামা-কাপড় দাও। এবারও সে কোনো জবাবা দেয় না।

তখন আমি একটা পাথর উঠিয়ে তার দিকে ছুড়ে মারলে সেটা ভেঙ্গে মাটিতে পড়ে যায়। ১১

তথ্যসুত্র

১. আবু বকর সিদ্দিক রা.। ড. আলী মুহাম্মাদ আস সাল্লাবী। কালান্তর প্রকাশনী। পৃষ্ঠা ৪৭

আবু বকর রা. বইয়ের রেফারেন্স অনুযায়ী, মিনহাজুস সুন্নাতিন নাবাবিয়্যাহ, ইবনে তাইমিয়া। খণ্ড ৪। পৃষ্ঠা ২৮৮-২৮৯

আবু বাকরিনিস সিদ্দিক আফজালুস সাহাবাতি ওয়া আহাক্কুহুম বিন খিলাফাতি। মুহাম্মাদ আবদুর রহমান কাসিম। পৃষ্ঠা ১৮-১৯

২. হযরত আবু বকর এর জীবনী। আজিজুল হক আনসারী। সুলায়মানিয়া বুক হাউজ। পৃষ্ঠা ১৫

৩. আবু বকর সিদ্দিক রা.। পৃষ্ঠা ৪৪

হযরত আবু বকর এর জীবনী। পৃষ্ঠা ১৬-১৭

আবু বকর সিদ্দিক বইয়ের রেফারেন্স অনুযায়ী, আশহাবু মাশাহিরিল ইসলাম। খণ্ড ১। পৃষ্ঠা ১০

নিহায়াতুল আরব। খণ্ড ১৯। পৃষ্ঠা ১০

তারিখুদ দাওয়াহ। ইয়াসরি মুহাম্মাদ হানি। পৃষ্ঠা ৪২

৪. আবু বকর সিদ্দিক। পৃষ্ঠা ৪৫

হযরত আবু বকর জীবনী। পৃষ্ঠা ২১

আবু বকর সিদ্দিক বইয়ের রেফারেন্স অনুযায়ী, আত তাহজিব। খণ্ড ২। পৃষ্ঠা ১৮৩

আল ইসাবা। খণ্ড ৪। পৃষ্ঠা ১৪৬

৫. হযরত আবু বকর জীবনী। পৃষ্ঠা ২১

৬. আবু বকর সিদ্দিক। পৃষ্ঠা ৪৫

আবু বকর সিদ্দিক বইয়ের রেফারেন্স অনুযায়ী, সহীহ মুসলিম। হাদীস নং ২৪৯০।

আত তাবারানী ফিল কাবির। পৃষ্ঠা ৩৫৮২

৭. আবু বকর সিদ্দিক। পৃষ্ঠা ৪৫

৮. হযরত আবু বকর রা. জীবনী। পৃষ্ঠা ১৭

৯. আবু বকর সিদ্দিক। পৃষ্ঠা ৪৫

আবু বকর সিদ্দিক বইয়ের রেফারেন্স অনুযায়ী, আবু বাকরিনিস সিদ্দিক। আলী তানতাবী। পৃষ্ঠা ৬৬

আত তারিখুল ইসলামি। পৃষ্ঠা ……

আল খুলাফাউর রাশিদুন। মাহমুদ শাকির। পৃষ্ঠা ৩০

১০. আবু বকর সিদ্দিক। পৃষ্ঠা ৪৬

আবু বকর জীবনী। পৃষ্ঠা ১৭

আবু বকর সিদ্দিক বইয়ের রেফারেন্স অনুযায়ী, তারিখুল খুলাফা। ইমাম সুয়ূতি র.। পৃষ্ঠা ৪৯

১১. আবু বকর সিদ্দিক। পৃষ্ঠা ৪৬-৪৭

হযরত আবু বকর জীবনী। পৃষ্ঠা ২০

আবু বকর সিদ্দিক বইয়ের রেফারেন্স অনুযায়ী, আসহাবুর রাসূল। মাহমূদ আল মিসরি। খণ্ড ১। পৃষ্ঠা ৫৮

আল খুলাফা। মাহমূদ শাকির। পৃষ্ঠা ৩১

আরো পড়ুন

আবু বকর এর জন্ম

খলিফা হিসেবে আবু বকর

FAQ

আবু বকর রা. কোন গোত্রে জন্মগ্রহণ করেন?

বনু তাইম গোত্রে।

আবু বকর রা. কি কখনো মদপান করেছেন?

তিনি ইসলাম গ্রহণের পূর্বে ও পরে কখনো মদপান করেন নি।

আবু বকর রা. প্রতিমার সাথে কি করেছেন?

তার পিতার তাকে প্রতিমার কাছে নেয়ার পর তিনি তাদের নিকট নিজের প্রয়োজন পূরণ করার কথা বলেন। কিন্তু তারা কোনো কথা বলে নি। ফলে তিনি পাথর মেরে প্রতিমা ভেঙ্গে ফেলেন।

আবু বকর রা. কি বিষয়ে পারদর্শী ছিলেন?

ইলমুল আনসাব তথা বংশ তালিকা বিষয়ক জ্ঞানে পারদর্শী ছিলেন।

জাহেলিয়াতের যুগে আবু বকর রা. কোন দায়িত্বে ছিলেন?

মুক্তিপণ আদায় ও জামানত বিষয়ক দায়িত্বে ছিলেন।

লেখাটি অন্যের নিকট শেয়ার করে তাকেও জানার সুযোগ করে দিন....

About The Author

Scroll to Top