আবু লাহাব ও তার পরিবারের পরিণতি

রাসূল সা. যখন সাফা পাহাড়ে উঠে মানুষকে আল্লাহর পথে আহবান করলেন তখন আবু লাহাব বিরুদ্ধাচরণ করে বলেছিল,

‘ধ্বংস হও তুমি। এ জনই কি তুমি আমাদের ডেকেছ?’ এরপর ই আল্লাহ তা’আলা সূরা লাহাব নাজিল করলেন। যখন সে সূরা লাহাব শুনতে পেল তখন আরো ক্রুদ্ধ হয়ে উঠলো।

সূরা লাহাবে আবু লাহাব সম্পর্কে কি বলা হয়েছে ?

تَبَّتْ يَدَآ أَبِى لَهَبٍ وَتَبَّ . مَآ أَغْنَىٰ عَنْهُ مَالُهُۥ وَمَا كَسَبَ . سَيَصْلَىٰ نَارًا ذَاتَ لَهَبٍ . وَٱمْرَأَتُهُۥ حَمَّالَةَ ٱلْحَطَبِ . فِى جِيدِهَا حَبْلٌ مِّن مَّسَدٍۭ

“আবু লাহাবের দুই হাত ধ্বংস হোক এবং ধ্বংস হোক সে নিজেও। তার ধন-সম্পদ কোনো কাজে আসে নি, যা সে উপার্জন করেছে। খুব তাড়াতাড়ি সে প্রবেশ করবে লেলিহান আগুনের মধ্যে এবং সাথে তার স্ত্রীও প্রবেশ করবে, যে লাকড়ি বহন করে। তার গলদেশে খর্জুরের রশি নিয়ে।”

এই সূরার শুরুতেই আল্লাহ বলেছেন, আবু লাহাব ধ্বংস হোক। পাশাপাশি সে যা কিছু অর্জন করেছে, সেটাও ধ্বংস হোক।

এরপর আল্লাহ দুনিয়াতে থাকা অবস্থাতেই তার জাহান্নামে পতিত হওয়ার কথা বলে দিয়েছেন। এরপর আবু লাহাবের স্ত্রীর একটি ঘটনার দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে।

ঘটনাটা হলো,

আবু লাহাবের স্ত্রী অত্যন্ত মূল্যবান একটি গলার হার পরিধান করতো। সে তখন কসম করে বলেছিল, লাত-উজ্জার কসম!

আমি আমার এই হারটি বিক্রি করে এর টাকাগুলো মুহাম্মাদের বিরুদ্ধাচরণের জন্য ব্যয় করবো। এই গর্ববোধ করার কারণে কেয়ামতের দিন তার গলায় রশি পরানো হবে।

উপরোক্ত বর্ণনাটি হযরত সাঈদ ইবনে মুসাইয়্যাব রহ. বর্ণনা করেছেন। আর হযরত হাফিজ ইবনে কাসির রহ. তার তাফসীর গ্রন্থে এটি সন্নিহিত করেছেন।

আবু লাহাব এর ছেলেদের উপর বলপ্রয়োগ

নবীজি সা. এর দুই মেয়ে রুকাইয়া এবং উম্মে কুলসুম রা. আবু লাহাবের দুই ছেলে উতবা ও উতাইবার বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ ছিল।

আবু লাহাব তখন তার ছেলেদের নবীজির মেয়েদের তালাক দেয়ার নির্দেশ দেয়। তখনো তারা নবীজির মেয়েকে উঠিয়ে নেয় নি‌।

পিতার নির্দেশে ছেলেরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কন্যাদের তালাক প্রদান করে।

আবু লাহাব এর স্ত্রীর উৎপীড়ন

এই ঘটনার পর থেকে আবু লাহাব এবং তার স্ত্রী উম্মে জামীল নবীজিকে কষ্ট দিতে কোনো পদ্ধতিই বাদ রাখে নি।

আবু লাহাবের ঘর এবং নবীজির ঘর কাছাকাছি ছিল। এজন্য আবু লাহাবের স্ত্রী একটা ফন্দি আটঁলো।

রাতের বেলা আবু লাহাবের স্ত্রী নবীজির ঘরের সামনে কাঁটা পুঁতে রাখতো। আরো বিভিন্ন পন্থায় উম্মে জামীল নবীজিকে কষ্ট দিত।

আবু লাহাবের ওদ্ধত্য প্রকাশ

যখন নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর সূরা শুআরার ২১৪ নং আয়াত নাজিল হয় তখন রাসূল সা. তার গোত্রের লোকদের সতর্ক করার ইচ্ছা করলেন।

আয়াতটি হলো,

وَ اَنۡذِرۡ عَشِیۡرَتَکَ الۡاَقۡرَبِیۡنَ . وَ اخۡفِضۡ جَنَاحَکَ لِمَنِ اتَّبَعَکَ مِنَ الۡمُؤۡمِنِیۡنَ

তুমি তোমার নিকটাত্মীয়দেরকে সতর্ক কর। আর যারা তোমার অনুসরণ করে, সেই সব মু’মিনের প্রতি বিনয়ী হও।

হযরত আলী রা. বলেন, যখন রাসূলের উপর এই আয়াত নাজিল হলো তখন তিনি চুপ থাকেন। কারণ, কাফেররা এটা শুনলে অপ্রীতিকর কাণ্ড করে বসবে।

তখন হযরত জিবরাইল আ. নবীজির নিকট এসে বললো, যদি আপনি আল্লাহর আদেশ না মানেন তাহলে তিনি আপনাকে আগুনের শাস্তি দিবেন।

তখন নবীজি হযরত আলীকে নির্দেশ দিলেন, হে আলী! তুমি সাড়ে তিন কেজি খাদ্যের সাথে একটি বকরি রান্না করো। আর এক পাত্র দুধের ব্যবস্থা করো।

রান্নার পর নবীজির নির্দেশে আলী রা. বনু আব্দুল মুত্তালিবের তথা নবীজির বাবার বংশীয় সকল আত্মীয়কে দাওয়াত দিলেন।

তারা সকলে উপস্থিত হলো। সংখ্যায় ছিল প্রায় ৪০ জন। উপস্থিত লোকদের মধ্যে ছিল নবীজির চাচা আবু তালিব, হামজা, আব্বাস এবং আবু লাহাবও ছিল।

নবীজি তখন আলী রা. কে খাদ্য উপস্থিতের নির্দেশ দিলেন। সেখানে যতুটুকু খাদ্য ছিল, তা একজন পেটভরে খেতে পারে। কিন্তু সেখানে সংখ্যায় ছিল অনেক বেশি।

তাই নবীজি এক টুকরো গোশত ছিঁড়ে পাত্রের চারিপাশে ছিটিয়ে দিলেন। এরপর বললেন, বিসমিল্লাহ বলে খাওয়া শুরু করুন।

সকলেই তৃপ্তি সহকারে আহার করলো। অথচ সেই খাবার একজনের জন্য যথেষ্ঠ ছিল। এরপর নবীজি খাবার শেষে কথা বলতে উদ্যত হলেন।

তখন আবু লাহাব বলে উঠলো, এই লোক তো জাদু দেখাচ্ছে। তা অত্যন্ত শক্তিশালী বটে।

এ কথা শুনে সবাই চলে গেল। দ্বিতীয়দিন আবার নবীজি সবাইকে দাওয়াত দিলেন। নবীজি যখন কথা বলতে চাইলেন তখন আবু লাহাব আবার বাঁধা দিল।

তৃতীয়দিন নবীজি আবার সকলকে দাওয়াত দিলেন। খাওয়ার শেষে নবীজি সকলকে উদ্দেশ্য করে বললেন, হে আব্দুল মুত্তালিবের বংশধর!

আমি তোমাদের নিকট যা নিয়ে এসেছি কোনো আরব যুবক তার সম্প্রদাযের নিকট এমন বার্তা এনেছে নাকি আমার জানা নেই। তোমাদের জন্য আমি দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যানকর বিষয় নিয়ে এসেছি।

তথ্যসুত্র

আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া। খন্ড ৩। পৃষ্ঠা ৭৫-৭৮

মুসলিম উম্মাহর ইতিহাস। খন্ড ১। পৃষ্ঠা ২৯৬-২৯৭

আর রাহিকুল মাখতুম। পৃষ্ঠা ৮৪-৮৬

মুসলিম উম্মাহর ইতিহাস বইয়ের রেফারেন্স অনুযায়ী, তাফসীরে ইবনে কাসীর। সূরা লাহাব অংশ।

আস সিরাতুল হালাবিয়্যা। খন্ড ১। পৃষ্ঠা ৪৪৭

আরো পড়ুন

হাজরে আসওয়াদ স্থাপনের ঘটনা

তুলাইহা আসাদির ফেতনা

মদীনায় আবু বকরের হিজরত

ইহরাম অবস্থায় কি বিয়ে করা যায়? পড়ুন

সূর্য কিভাবে আল্লাহর আরশের নিচে সেজদা করে ? পড়ুন

আবু লাহাব কে ছিল ?

আবু লাহাব ছিল নবীজির আপন চাচা। সে আব্দুল মুত্তালিবের সন্তান ছিল।

আবু লাহাবের কোন ছেলের সাথে নবীজির মেয়ে বিয়ে হয়েছিল ?

নবীজির মেয়ে রুকাইয়ার সাথে আবু লাহাবের বড় ছেলে উতবার বিয়ে হয়। আর নবীজির মেয়ে উম্মে কুলসুমের সাথে আবু লাহাবের ছোট ছেলে উতাইবার বিয়ে হয়।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top