মাহমূদ আফেন্দী কে ছিলেন

মাহমূদ আফেন্দী – ১৯২৩ সালে উসমানী খেলাফতের বিলুপ্তির পর তুরষ্কের শাসন ক্ষমতা কেড়ে নেয় ইহুদী জায়োনিজমের আদর্শ লালনকারী কামাল।

(আতাতুর্ক শব্দটি ব্যবহার করছি না। কারণ, তার মতো ফ্যাসিবাদী শাসককে আমি তুর্কি জাতির পিতা হিসেবে মেনে নিতে পারি না।)

কামালের ইসলাম বিদ্ধেষ

কামাল রাষ্ট্রক্ষমতায় আসার পর পরই ইসলামকে আরবদের প্রাচীন রীতি হিসেবে ভেবে তা বর্জনের ডাক দেয়। কিন্তু ইসলাম ধর্ম যাদের রক্তে মিশে আছে,

তারা কিভাবে ইসলামকে বর্জনের ডাক মেনে নিতে পারে? তাই শুরু হলো মুসলিমদের গণ আন্দোলন।

প্রেসিডেন্ট কামাল যখন দেখলো অবস্থা বেগতিক তখনই সেনাবাহিনীসহ আরো বিভিন্ন ফোর্স পাঠিয়ে তাদের দমানোর চেষ্টা করলো। সেই সাথে সে তুর্কির ভাষার লিখিত অক্ষরের পরিবর্তন করে ফেললো।

আগে তুর্কি ভাষা লিখা হতো আরবি অক্ষর দিয়ে। প্রেসিডেন্ট কামাল তা পরিবর্তন করে ল্যাটিন অক্ষর বসিয়ে দিল।

সে খেলাফত ব্যবস্থাকে সেকেলে ঘোষণা দিয়ে ইসলামী সংবিধান বাতিল করে ইউরোপের সংবিধান গ্রহন করলো।

সে কুরআনকে বিলুপ্ত ঘোষণা করলো। আলেমদের তাঁড়িয়ে দিল। কাউকে বা হত্যা করলো।

মুসলিম রমনীদের হিজাব পরিধান করা নিষিদ্ধ করলো। তার এই কঠোর নীতির বিরুদ্ধে আলেমরা গণ আন্দোলন শুরু করলো।

তাদের মধ্যে নকশেবন্দী তরীকার আলেমরা অন্যতম।

প্রেসিডেন্ট কামাল তাদেরকে দেশদ্রোহী আখ্যা দিয়ে গণহারে হত্যা করলো এবং ফাঁসিতে ঝুলালো। অনেক আলেমরা তখন শহর ও শহরতলী ছেড়ে গ্রাম বা পাহাড়ে চলে গেলেন।

তারা সেখানে চুপি চুপি মানুষকে দ্বীনের বিষয় শিক্ষা দিতেন। যখনই কোনো সৈনিক চোখে পড়তো তখনই তারা ক্ষেতে নেমে পড়তেন কৃষকের ন্যায়।

শায়েখ মাহমূদ আফেন্দী রহ. এর জন্ম

এমনই এক কঠোর পরিস্থিতিতে জন্ম হয় শায়েখ মাহমূদ আফেন্দী রহ. এর।

তিনি ১৯২৯ সালে উস্তাওসমানওগলু জেলার তাবসানলী গ্রামে জন্মগ্রহন করেন। তিনি ১০ বছর বয়সে তার বাবার নিকট কুরআনুল কারীমের হাফেজ হন।

পরবর্তীতে তিনি অন্যন্য আলেমের নিকট ইসলামী উচ্চশিক্ষা গ্রহন করেন।

১৬ বছর বয়সে তিনি একজন আলেম হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। তিনি সেসময় তার চাচাতো বোনকে বিয়ে করেন।

একজন আলেম হিসেবে তখন থেকেই তিনি মানুষকে সৎপথে আহ্বান ও অসৎ পথ থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করেন।

দীক্ষা গ্রহন

১৯৫২ সালে তার সাথে শায়েখ আলী হায়দার এফেন্দীর সাথে তার দেখা হয়। তিনি ছিলেন নকশেবন্দী তরীকার একজন বড় ব্যক্তি। মাহমূদ এফেন্দী তার নিকট দুই বছর দীক্ষা গ্রহন শেষে

১৯৫৪ সালে শায়েখ আলী হায়দার এফেন্দী তাকে খেলাফত দিয়ে ইসমাইলাইগা মসজিদের ইমাম হিসেবে নিযুক্ত করেন।

সেখানে থাকা অবস্থায় মাহমূদ এফেন্দী মানুষের আরো কাছে যেতে পারেন। মানুষকে তিনি সঠিক দিক নির্দেশনা প্রদান করতেন।

এরপর আসলো ১৯৬০ সাল। এ বছর শায়েখ আলী হায়দার এফেন্দী ইন্তিকাল করেন। তার ইন্তিকালের পর নকশেবন্দী তরীকার প্রধান হিসেবে মাহমূদ এফেন্দী দায়িত্বপ্রাপ্ত হন।

এর মাধ্যমেই তার জীবনে বড় পরিবর্তন আসে।

দাওয়াতি কার্যক্রম

তুরষ্কের বৃহৎ একটি অংশ তার কথা মান্য করে। তারা কামালের সেক্যুলার শাসনের দিকে ভ্রুক্ষেপ না করে ইসলামের আলোয় আলোকিত হয়।

২০১০ সালে মাওলানা আবু তাহের মিসবাহ হাফিঃ তুরষ্কে সফরকালে শায়েখ মাহমূদ আফেন্দী এর সাথে করেন। যেটা তার “তুরষ্কে তুর্কিস্থানের সন্ধানে” বইতে উল্লেখ করেছেন।

শায়েখ মাহমূদ এফেন্দী ছিলেন তুরষ্কের নিভু নিভু অবস্থায় আশার প্রদীপ। তিনি সুন্নাহকে গুরুত্বারোপ করতেন।

তুরষ্কে সেকুল্যারদের আদর্শে বিলুপ্তপ্রায় সুন্নাহগুলো তিনি পুনজ্জীবিত করেছেন।

তিনি প্রতিসপ্তাহ বা প্রতিমাসে তুরষ্ক ও তার পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে সফর করতেন। বিভিন্ন স্থানে তার খানকা রয়েছে। ইউরোপেও রয়েছে তার খানকা। বর্তমান তুরষ্কের অনেক রাজনৈতিক নেতা তার আদর্শে আদর্শিত।

তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য তুর্কি সফল প্রেসিডেন্ট রেসেপ তায়্যিব এরদোয়ান।

শায়েখ মাহমূদ এফেন্দী রুহুল কুরআন নামে তুর্কিভাষায় একটা তাফসীরগ্রন্থ লিখেন।

যাতে তিনি কুরআনের ব্যাখ্যা ও মানুষকে সৎপথে আহ্বানের ব্যাপারে ‍উৎসাহিত করেছেন।

মৃত্যু

তিনি গত ২৪ জুন ২০২২ তারিখে মহান রবের ডাকে সাড়া দিয়ে ইন্তিকাল করেন।

ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিয়ূন।

এর মাধ্যমে তুর্কি জাতি হারালো এক মহাপুরুষকে। এক বড় আলেমকে। তুরষ্কে তার অসংখ্য ছাত্র, মুরিদ, সহকর্মী রয়েছে।

তার জানাযায় তুরষ্কের প্রেসিডেন্ট রেসেপ তায়্যিব এরদোয়ানও উপস্থিত ছিলেন।

আল্লাহ শায়েখ মাহমূদ আফেন্দীকে জান্নাত দান করুন। আমীন।

তথ্যসুত্র>>

উইকিপিডিয়া

The muslim 500

আরো পড়ুন>>

শিক্ষক হত্যা আমাদের কি বার্তা দেয়?

আবু বকর রা. এর খেলাফত লাভ

Abdur Rahman Al Hasan
Scroll to Top