ডিস্যালাইনেশন কি – পানির অপর নাম জীবন। নামটি যথার্থ। কারণ, মানুষ পানি ছাড়া বেঁচে থাকতে পারবে না। পানি মানুষকে বেঁচে থাকতে সাহায্য করে। আমরা প্রতিদিন বিভিন্ন কাজে পানি ব্যবহার করে থাকি।

পানি ছাড়া আমরা এক মুহুর্তও কল্পনা করতে পারি না। কিন্তু এই পানির উৎস কি? তা কি আমরা জানি?

এ সকল পানি আসে ভূগর্ভস্থ থেকে। সেখানেই বিশুদ্ধ মিনারেল ওয়াটার পানি পাওয়া যায়।

নদীর পানিও প্রকারভেদে বিশুদ্ধ হয়ে থাকে। কিন্তু সমুদ্রের পানি?

সমুদ্রের পানি কি পান করা যায়?

এখানেই সবচেয়ে বড় অসুবিধার সম্মুখিন হতে হয় আমাদের। সমুদ্রের পানিতে লবনের পরিমাণ বেশি থাকায় তা পান করার অযোগ্য। কারন, পানিগুলো বড্ড লবণাক্ত হয়।

কিন্তু অবাক করার বিষয় হলো, এটারও সমাধান আছে। বিজ্ঞান আমাদের জীবনকে সহজ করে তুলেছে।

বিজ্ঞান আমাদের শুধু ডিভাইসই উপহার দেয় নি, দিয়েছে বিশুদ্ধ পানি।

বিশুদ্ধ খাবার ও বিশুদ্ধ ফলমূল। তবে বিজ্ঞান আমাদের ক্ষতিও কম করে নি।

যাই হোক, ক্ষতিটাকে একপাশে রেখে আমরা উপকারগুলো নিয়ে আলোকপাত করি।

সমুদ্রের পানিকে কিভাবে বিশুদ্ধ করা হয়?

এই কোটি কোটি লিটার সমুদ্রের পানিকে বিশুদ্ধ করার একটা পদ্ধতি আছে। সেটার নাম, ডিস্যালাইনেশন। শব্দটা কঠিন মনে হলেও ভেবে নিন এটার পদ্ধতিটাও কঠিন।

এখন কথা হলো, কিভাবে এই ডিস্যালাইনেশন কাজ করে? এই  প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পানি থেকে লবনকে আলাদা করা হয়। এতেই সমুদ্র থেকে বিশুদ্ধ পানি পাওয়া সম্ভব।

কাজটা সহজ মনে হলেও খানিকটা কঠিন। কিভাবে তা একটুপর ব্যাখ্যা করছি।

মধ্যপ্রাচ্যে কিভাবে বিশুদ্ধ পানি সংগ্রহ করা হয়?

মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে পানি সঙ্কট একটি প্রকোপাকারেই ধারণ করে। এই সমস্যা কাঁটিয়ে তুলতেই ইতিমধ্যে সেখানে এই পদ্ধতিটি এপ্লাই করা হচ্ছে।

বিশেষ করে সৌদি আরব, কুয়েত, আরব আমিরাত ও দখলদার ইসরাইল এই প্রক্রিয়ার উপর বরাবর নির্ভরশীল।

দখলদার জায়োনিস্টদের ইসরাইলে গৃহস্থলি কাজের জন্য ৪০% পানিই এই ডিস্যালাইনেশন পদ্ধতির মাধ্যমে আসে।

ডিস্যালাইনেশন কিভাবে কাজ করে?

এখন উপরের কথায় ফিরে আসি। কিভাবে এই পদ্ধতিটা এপ্লাই করা হয়?

পানি থেকে লবণ আলাদা করার দুইটা উপায় আছে। প্রথমটা হলো, পুনঃ অভিস্রবণ।

এটা তরল পদার্থের উপর আবরণ সৃষ্টি করে তরণ পদার্থগুলো একপাশে ও অন্য পদার্থগুলো অন্যপাশে রেখে আলাদা করে।

এটা অনেকটা ছাঁকুনির মতো। তবে এর ছিদ্র খুবই নিঁখুত হতে হয়।

অন্য উপায়টি হলো, পাতন প্রক্রিয়া।

এটা তরল পদার্থকে বাষ্পীভূত ও ঘনীভূত করে অন্য উপাদানকে আলাদা করে ফেলে। এরপর বাষ্পকণাগুলো একত্র করে পানি জমা করা হয়।

উপরোক্ত দুইটা প্রক্রিয়া শুনতে সহজ মনে হলেও এটা কাজ অনেক ব্যয়বহুল।

তবে খরচটা কিভাবে বাড়ে, সেটা একটু বলি।

ডিস্যালাইনেশন করতে কেমন খরচ হয়?

এককথায় বলতে গেলে, পানির সাথে লবণের পরিমাণ বেড়ে গেলে খরচও ফুলেফেঁপে বেড়ে যাবে। পানিতে লবণের পরিমাণ কম থাকলে খরচও কম হবে। একটা উদাহরণ দেই।

বর্তমানে দখলদার ইসরাইলে এখন প্রতি এক হাজার লিটার পানি নিষ্কাশন করতে খরচ পড়ে ৫৮ সেন্ট। যা বাংলাদেশের তুলনায় ৫৪ টাকা করে।

অর্থাৎ প্রতি দশ লিটারে খরচ পড়ে সাড়ে পাঁচ টাকা করে। দখলদার জায়োনিস্ট ইসরাইলে প্রতিমাসে অবৈধ নাগরিকদের পানি সুবিধার জন্য ৩০ ডলার করে প্রদান করতে হয়।

যার বাংলাদেশী মূল্য: দুই হাজার সাতশত নব্বই টাকা করে।

উপসংহার

আশা করি, ভবিষ্যতে আরো নতুন নতুন প্রক্রিয়া উদ্ভাবন হতে পারে। তখন হয়তো খরচ আরো কমবে। এতে আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের মানুষসহ পৃথিবীর বহু অঞ্চলের মানুষ আরো ভালো সুবিধা পাবে।

তবে আমাদেরও কিন্তু পানির অপচয় কমাতে হবে। কথায় আছে, অপচয়কারী শয়তানের ভাই। কথাটা যেন মনে থাকে।

তথ্যসুত্র

বিজ্ঞানচিন্তা

সাইন্স ডিরেক্ট

উইকিপিডিয়া

 আরো পড়ুন

মাহমূদ আফেন্দী কে ছিলেন?

আবু বকর রা. কিভাবে খলিফা হন?

Scroll to Top