বন্ধুত্ব কি – শৈশব থেকে আমাদের জীবনে যত ঘটনা ঘটে, সব কখনো মনে থাকে না আর সব মনে রাখার প্রয়োজনও থাকে না।

কিন্তু এর ফাঁকেও কিছু কাজ বা কিছু কথা আজিবন মনে থাকে। অন্তরে তা খোঁচা দেয়। কখনো তার ব্যাথায় রক্তক্ষরণ হয়।

চলতে-ফিরতে, উঠতে-বসতে এমন ঘটনা আমাদের সকলেরই কমবেশি হয় এবং হবে। কখনো দেখা যাবে, আপনি খুবই বিশ্বাস নিয়ে কাউকে কিছু বললেন, কিন্তু তা দুইদিন পরে আপনার পরিচিত অন্য কারো নিকট তা শুনছেন। আপনার বিশ্বাসের ভিত্তি এখানেই ভেঙ্গে পড়বে।

স্কুল জীবন কিংবা মাদ্রাসা জীবনে আমরা আমাদের জীবনে সবচেয়ে বড় ভুল করে থাকি, বন্ধু নির্বাচনের ক্ষেত্রে। শুনে হাস্যকর মনে হলেও এটা সত্যি।

কারো সাথে দুইদিন চলাফেরা করে, আসা-যাওয়া করে আমরা তাকে বিশ্বাস করে ফেলি। পরে ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় তাকে অনেক গোপন কথা বলি।

বীমা কি করা যায়? পড়ুন

যা আমাদের পরবর্তী জীবনে আফসোসের কারণ হয়। কখনো হয়তো এমনও ঘটে, বন্ধু সামনে ভালো সাজলেও পেছনে তার উদ্দেশ্য খারাপ থাকে।

সে কোনো স্বার্থের জন্য আপনার সাথে চলে। আপনাকে সময় দেয়। আমরা ভুলে তার টোপ গ্রহণ করি। সে তখন আপনাকে ন্যাপকিনের ন্যায় ব্যবহার করে।

যারা খানিকটা বই পড়েন তারা এসব বিষয়ে ধারণা রাখেন। কিন্তু সমস্যাটা হলো, আমরা বাস্তবতা থেকে অবাস্তবতাকেই অধিক গ্রহণ করি।

আমরা যখন বইয়ে কোনো ফিকশন কাহিনী পড়ি, তখন আবেগে আপ্লুত হয়ে যাই। বইয়ের চরিত্রের ন্যায় যদি আমার একটা বন্ধু থাকতো! এমনটা ভাবি।

কিন্তু বাস্তব জীবনে তা ঘটে না। নন ফিকশন বা বাস্তবতার বড় শিক্ষা হলো, কেউ আপন নয়

আপনি আজ আপনার বন্ধুকে নাস্তা করালেন, বা কোনো গিফট দিলেন, কিছুদিনের মধ্যে যদি সে আপনাকে গিফট না দেয় বা নাস্তা না করায় অথবা আপনার সাথে খারাপ ব্যবহার করে, তখন আপনি বাস্তববাদী হয়ে যান।

বন্ধুত্ব কি

তখন মনে মনে তাকে গালি দেন। এর কারণ হলো, আপনি তাকে বিশ্বাস করেছিলেন। তার থেকে কিছু আশা করেছিলেন। কিন্তু সে তা পূর্ণ করে নি।

ধর্মীয় আলাপন – বন্ধুত্ব কি

এবার একটু ধর্মের দিকে যাই। কারণ, ধর্মই হলো পৃথিবীর মূল তত্ত্ব ও সামাজিক বন্ধনের মাধ্যম। পবিত্র কুরআনে সূরা মুমিনের ৬০ নং আয়াতে আছে,

وَ قَالَ رَبُّکُمُ ادۡعُوۡنِیۡۤ اَسۡتَجِبۡ لَکُمۡ ؕ اِنَّ الَّذِیۡنَ یَسۡتَکۡبِرُوۡنَ عَنۡ عِبَادَتِیۡ سَیَدۡخُلُوۡنَ جَهَنَّمَ دٰخِرِیۡنَ

তোমাদের রব বলেছেন, ‘তোমরা আমাকে ডাক, আমি তোমাদের জন্য সাড়া দেব। নিশ্চয় যারা অহঙ্কার বশতঃ আমার ইবাদাত থেকে বিমুখ থাকে, তারা অচিরেই লাঞ্ছিত অবস্থায় জাহান্নামে প্রবেশ করবে।’

আল্লাহকে ডাকা দ্বারা কি বুঝায়, বলতে পারবেন? আর কেনই বা তিনি আমাদের ডাকে সাড়া দিবেন? আল্লাহ আমাদের স্রষ্টা।

তিনি আমাদের সৃষ্টি করেছেন। আমাদের অভাব, আমাদের প্রয়োজন তিনিই পূরণ করে থাকেন। তিনি আমাদের সকলের জন্য খাদ্যের যোগান দেন।

বিনিময়ে তিনি কি চান? আমরা যেন তার ইবাদাত করি। আমরা যেন তার আনুগত্য করি। আমরা যেন তাকে ভালোবাসি।

এর বেশি কিছু আপনার রব আপনার থেকে চান না। এখন আপনার যদি মনে হয়, আহহা! আল্লাহকে যে ডাকবো, তিনি যে আমার আপন হবেন, তিনি কি বাস্তবে আমার কথা শুনবেন? আমাকে দেখবেন?

আপনার জন্য আল্লাহ সূরা কাফ এর ১৬ নং আয়াতে বলেন,

وَ لَقَدۡ خَلَقۡنَا الۡاِنۡسَانَ وَ نَعۡلَمُ مَا تُوَسۡوِسُ بِهٖ نَفۡسُهٗ ۚۖ وَ نَحۡنُ اَقۡرَبُ اِلَیۡهِ مِنۡ حَبۡلِ الۡوَرِیۡدِ

অবশ্যই আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি এবং তার প্রবৃত্তি তাকে যে কুমন্ত্রণা দেয় তাও আমি জানি। আর আমি তার গলার রগ হতেও অধিক কাছে অবস্থান করি।

এই আয়াতের অর্থ বুঝেছেন আপনি? আপনি যে কুমন্ত্রণার শিকার হয়ে অন্যকে বন্ধু মনে করে নিজের সব বলে দিলেন অথবা অন্যকে আরেকজনের গোপনীয়তা বলে দিলেন, এটা কিন্তু আপনার রব জানেন।

আর তিনি আপনার নিকটেই রয়েছেন। বিখ্যাত তাফসীরের কিতাব ‘তাফসীরে ইবনে কাসীরে’ উল্লেখ আছে,

আমি তার গলার রগ হতেও অধিক কাছে অবস্থান করি, এই কথা দ্বারা বুঝানো হয়েছে যে, আল্লাহর পক্ষ থেকে ফেরেশতারা আমাদের গলার নিকটেই থাকেন। তারা সব জানেন, যা আমরা করি।

আল্লাহ যদি তাদেরকে নির্দেশ দেন, পাকড়াও করো। সাথে সাথে আদেশ শিরোধার্য। আপনি আর এক চুল পরিমাণও নড়তে পারবেন না।

আরে ভাই! আপনাকে তো ফেরেশতার উদাহরণ দিলাম। আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম যে, আপনি ফেরেশতা বিশ্বাস করেন না।

আপনি এলিয়েন আছে বলে বিশ্বাস করলেন, ডায়নোসর আছে বলে বিশ্বাস করলেন,

নিজের প্রাণ আছে বলে বিশ্বাস করলেন, আর ফেরেশতার বেলায় আপনার অবিশ্বাস তৈরি হয়। আপনি তখন প্রবৃত্তির তাড়নায় পড়ে যান।

গেম খেলতে না দিলে যদি শিশু আত্মহত্যা করে, তাহলে সামনের ভবিষ্যতে কি হবে? পড়ুন

অথচ আপনার চোখে আল্লাহর এই আয়াত পড়ে না যে, আল্লাহ সূরা বাকারার ১১৭ নং আয়াতে বলেন,

بَدِیۡعُ السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضِ ؕ وَ اِذَا قَضٰۤی اَمۡرًا فَاِنَّمَا یَقُوۡلُ لَهٗ کُنۡ فَیَکُوۡنُ

তিনি আসমানসমূহ ও যমীনের স্রষ্টা। আর যখন তিনি কোন বিষয়ের সিদ্ধান্ত নেন, তখন কেবল বলেন ‘হও’ ফলে তা হয়ে যায়।

ধোঁকা নিয়ে বলি – বন্ধুত্ব কি

বন্ধুত্ব বলুন আর শত্রুতা বলুন, উভয়টা শব্দগত পার্থক্য হলেও কাজ কিন্তু একই।

বন্ধু আপনাকে না জানিয়ে আপনার ক্ষতি করে আর শত্রু আপনাকে জানিয়ে আপনার ক্ষতি করে।

আপনি হয়তো কখনো কখনো শত্রুর আচরণে এতটা কষ্ট পান না, যতটা কষ্ট পান বন্ধুর আচরণে। এর বেশ কিছু কারণ আছে।

১. অধিক বিশ্বাস

বন্ধুদের আমরা খুব বিশ্বাস করি। তাদের নিকট নিজের ঘরের কথাও কখনো কখনো বলে দেই।

অথচ একবারও এটা ভাবি না, এই লোকের সাথে যদি কখনো আমার সম্পর্ক খারাপ হয়, তখন তো সে আমার সব কিছু ফাঁস করে দিবে।

২. অধিক আত্মবিশ্বাস

অনেকে আবার একটু ভিন্ন ধাতুতে গড়া। তারা ভাবে, যা মন চায় করুক। আমার কোনো অসুবিধা নেই।

ভাবখানা এমন যে, বিপদ যেন তার নিকট আসার আগে বলবে, এই যে ভাইসাব! আমি আর পাঁচ মিনিটের মধ্যে আসতেছি। আপনি রেডি থাইকেন।

৩. অধিক অবিশ্বাস

এই শ্রেণীটা একটু ভিন্ন। আমরা কখনো কখনো অধিক সন্দেহপ্রবণ হই। এটা অনেকের মুদ্রাদোষ অনেকের আবার ঠেকায় পড়ে করতে হয়।

আযানে হিন্দুত্ববাদের চুলকানি হয় কেন? পড়ুন

আপনি যার সাথে চলেন, কখনো কখনো দেখা যায়, অহেতুক কোনো কারণে গোয়েন্দাদের মতো তাকে সন্দেহ করেন। তার থেকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে তথ্য নিতে চান।

আপনার ভাবখানা এমন যে, এখন আপনি কিছু সময়ের জন্য গোয়েন্দা সদস্য হয়ে গেছেন।

আপনার এমন অবস্থা কিন্তু আপনার পার্টনার বুঝতে পারে।

বই থেকে শিক্ষা – বন্ধুত্ব কি

আজ একটা বই পড়ছিলাম। নন ফিকশন বই সেটা। তাতে এমন কিছু আচরণ বা ক্যারেক্টার চোখে পড়লো, যারা ধোঁকা দিতে পারদর্শী।

কেউ টাকা-পয়সার জন্য দেশকে ধোঁকা দেয়, কেউ সম্মান বা পদবীর জন্য ধর্ম ও ধর্মীয় ভাইদের ধোঁকা দেয়।

কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা কেউই তেমন সফল হতে পারে না।

এ থেকে একটা শিক্ষা আছে, যখন আপনি কারো ক্ষতি করতে যাবেন তখন সেই ক্ষতিটা আপনারই হয়।

আর যদি তখন না হয়, ভবিষ্যতে কোনো একদিন তা হবেই। তা ঘটবেই।

Scroll to Top