প্রথম ইন্তিফাদা ছিল ফিলিস্তিনে জায়োনিস্ট দখলদারদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ আন্দোলনের পথিকৃৎ। এই প্রথম ইন্তিফাদা চালু থাকে ১৯৮৭ সাল থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত।

১৯৮৭ খ্রিস্টাব্দের ৮ই ডিসেম্বর ইসরায়েলে কাজ শেষে প্রত্যাবর্তনকারী একটি গাড়িকে জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরের কাছে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী ট্যাংক দিয়ে চাপা দেয়।

এতে ঘটনাস্থলেই চারজন শ্রমিক মারা যান।

নিহত শ্রমিকদের জানাযা শীঘ্রই একটি ব্যাপক বিক্ষোভে রূপ নেয়।

পরের দিন ইসরায়েলি গাড়িতে ফিলিস্তিনিরা হামলা করলে পাল্টা হামলায় আরো এক ফিলিস্তিনি যুবক নিহত হয় এবং ১৬ জন আহত হয়।

এই বিক্ষোভ দ্রুত পশ্চিম-তীর ও পূর্ব-জেরুজালেমেও ছড়িয়ে পড়ে।

ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ ব্যাপকভাবে ঘরবাড়ি ধ্বংস ও নিপীড়নের পথে অগ্রসর হয় এবং ৮০,০০০ সৈন্য মোতায়েন করে।

ফিলিস্তিনি জনগণ ইহুদি বসতিতে পাথর নিক্ষেপ, ইসরায়েলি পণ্য বর্জন, ট্যাক্স দিতে অস্বীকার, ব্যারিকেড সৃষ্টি, টায়ার জ্বালিয়ে রাস্তাঘাটে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে।

এই বিক্ষোভে নারী-শিশুসহ হাজারো বেসামরিক জনগণ শামিল হয়।

ইসরায়েল এসব ঘটনাকে দাঙ্গা হিসেবে আখ্যায়িত করে এবং লাঠি, কাঁদানে গ্যাস, জল কামান, রাবার বুলেট, গোলাবারুদ; এমনকি সরাসরি গুলি ছুড়ে এর জবাব দেয়।

কিন্তু আন্দোলন দিনকে দিন বেগবান হতে থাকে। ইন্তিফাদার প্রথম ১৩ মাসে ৩৩২ জন ফিলিস্তিনি ও ১২ জন ইসরায়েলি নিহত হয়।

পশ্চিম-তীরের স্কুল, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ১ বছরের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়। ব্ল্যাক কারফিউ জারি করা হয় ১৬০০ বারেরও বেশি।

ফিলিস্তিনে পানি, বিদ্যুৎ, জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়। লাইসেন্স বাজেয়াপ্ত করা হয় এবং খামার ও ঘরবারি ধ্বংস করা হয়।

ইন্তিফাদার শুরুর দিন থেকেই ইখওয়ানের সকল গ্রুপ (ফিলিস্তিনে থাকা ইখওয়ানের কয়েকটি গ্রুপ ছিল) একই সঙ্গে কর্মতৎপরতা শুরু করে।

পরবর্তীতে উক্ত শাখাগুলোকে একত্রিত করেই শায়েখ আহমেদ ইয়াসিন হামাস প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তারা তখন পাথর নিক্ষেপ কিংবা সাধারণ ককটেল নিক্ষেপ করতো।

প্রথম প্রথম ইসরাইল ধারণাও করতে পারে নি, কারা ইন্তিফাদা পরিচালনা করছে। তবে তারা শায়েখ ইয়াসিনকে এর জন্য দায়ী মনে করতো।

ইন্তিফাদায় হতাহত – প্রথম ইন্তিফাদা

ইসরায়েল প্রায় ৮০,০০০ সৈন্য মোতায়েন করে ফিলিস্তিনিদের প্রতি সরাসরি গুলি ছুঁড়ে ব্যাপক সংখ্যক মুসলমানদের হত্যা করে।

প্রথম ১৩ মাসে ৩৩২ জন ফিলিস্তিনি এবং ১২ জন ইসরায়েলি নিহত হয়।

এই বিরাট সংখ্যক শিশু, যুবক এবং বেসামরিক জনতাকে হত্যা করার পর তারা ‘জবরদস্তি, শক্তি ও আঘাত’-এর মাধ্যমে “ফিলিস্তিনিদের হাড় ভেঙ্গে দেয়া”র নীতি অবলম্বন করে।

কিশোরদের লাঠি দিয়ে প্রহার করার দৃশ্য বিশ্বব্যাপী সম্প্রচার হলে জায়োনিস্ট ইসরাইল আধা-প্রাণঘাতী প্লাস্টিক বুলেট ছোঁড়া শুরু করে।

ইন্তিফাদার প্রথম বছরে জায়োনিস্ট দখলদার বাহিনী ৩১১ জন ফিলিস্তিনিকে অন্যায়ভাবে হত্যা করে। যার মধ্যে ৫৩ জনের বয়স ছিল ১৭ বছরেরও কম।

“সেইভ দ্য চিল্ড্রেন”-এর মতে, প্রথম দুই বছর ব্যাপী ১৮ বছরের কম বয়সী আনুমানিক ৭% ফিলিস্তিনি গুলি, প্রহার বা কাঁদানে গ্যাসের আঘাতে আহত হন।

ছয় বছরে আইডিএফ আনুমানিক ১,১৬২-১,২০৪ জন ফিলিস্তিনি হত্যা করে। প্রথম দুই বছরে আইডিএফ-এর আঘাতে ২৩,৬০০-২৯,৯০০ ফিলিস্তিনি শিশুর চিকিৎসা প্রয়োজন হয়।

ফিলিস্তিনিরা ১০০ জন জায়োনিস্ট ও ৬০ জন আইডিএফ কর্মীকে জাহান্নামে পাঠায় এবং ১,৪০০ জনের বেশি জায়োনিস্ট নাগরিক ও ১,৭০০ জনের বেশি দখলদার সৈন্যদের আহত করে।

তথ্যসুত্র

ফিলিস্তিন ও হামাস, পৃষ্ঠা ৭৯-৮৯

বাংলা উইকিপিডিয়া

Scroll to Top