ইহুদিরা কেন ফিলিস্তিনে ? লিখেছেন: সৈয়দ তানজীম হাসান – আল-আকসা প্রাঙ্গনে ইহুদিরা ‘থার্ড সলোমন টেম্পল‘ নির্মান করতে চায়। প্রশ্ন হল এক্স্যাক্টলি এখানেই কেন, আল-আকসা প্রাঙ্গনেই কেন?
ইহুদিদের বিশ্বাস এই প্রাঙ্গনের নিচেই সোলাইমান (আঃ) এর প্রথম টেম্পল অবস্থিত। এখন যদি প্রশ্ন করা হয় সোলাইমান (আঃ) এর টেম্পল এর সাথে ইহুদিদের কি সম্পর্ক?!
তিনি যে তাদের একমাত্র নবী ছিলেন এমনও না। উত্তরটা বুঝার জন্য আমাদের বেশ পেছনে যেতে হবে…
আমরা জানি মানুষের মাঝে সবচেয়ে প্রিভিলেজড ক্ষমতা (মুজিজা) লাভকারি পয়গম্বর ছিলেন সোলাইমান (আঃ)। আল্লাহর ইচ্ছায় তিনি জ্বীন জাতি ও পশুপাখিকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারতেন।
উনার ছিল মহা সাম্রাজ্য ও অচিন্তনীয় ধনসম্পদ। তার ক্ষমতা নিয়ে আজো গল্প, সিনেমা, উপন্যাসে বহু মিথের প্রচলন আছে।
আল্লাহর ইচ্ছায় প্রাপ্ত তার এই মহা ক্ষমতা ও সম্পদ অর্জন করার জন্য বহুকাল আগে থেকেই একদল মানুষ লোভে পতিত হয়।
এই উদ্দেশ্যে ব্যবিলনিয়দের সময় থেকেই প্রচুর চেষ্টা করা হয়।
কিন্তু এই ভুল উদ্দেশ্য তাড়া করেই কিনা, ব্যবিলনিয়রা জাদুবিদ্যা ও শয়তান চর্চায় জড়িয়ে গিয়ে অধঃপতিত হয়েছিল।
কোরআনে সুরা বাকারায় এই ব্যাপারে বলা আছে।
যাই হোক, খ্রিস্টানদের ন্যায় ইহুদি জাতিও কিন্তু স্রেফ একটি ধারা না। মুসা (আঃ) এর সময় থেকেই তারা নানা দল-উপদলে বিভক্ত হয়।
পরবর্তিতে ইহুদি জাতির একটি বিশেষ কিছু দল সোলাইমান (আঃ) এর ক্ষমতা ও ব্যবিলনিয়দের জাদুবিদ্যার প্রতি সবচেয়ে বেশি প্রলুব্ধ ছিল।
বিশেষত ‘আশকেনাজি’ ওরফে ‘খাজারিয়ান’ জিউরা এদের মাঝে অগ্রগন্য। এই প্রচন্ড নটোরিয়াস গ্রুপটি মূলত ‘খাজারিয়া’ বা বর্তমান ইউক্রেনের একটি যাযাবর ও ঠগী গোষ্ঠী ছিল।
এরা জন্মসূত্রে ইয়াহূদী ছিল না বরং ইউরোপিয়ান ছিল। ঘটনাক্রমে ততকালীন রাশান জারের দেয়া শর্তমতে প্রাণে বেচে থাকার জন্য এরা বাধ্য হয়ে ইহুদি ধর্মে রুপান্তরিত হয়েছিল।
একটা পর্যায়ে ব্যবিলনে পালিয়ে গিয়েছিল ও কোনভাবে সেই জাদুকর, শয়তানপূজারী গোষ্ঠীর সংস্পর্শে এসেছিল।
এরা তখন একটি নতুন অকাল্ট ধর্ম বা মিস্টিক ধারা তৈরি করে যা ‘কাব্বালিক’ হিসেবে পরিচিত।
ঘটনাক্রমে মধ্যযুগে এদের সাথে ব্যাভারিয়ান ‘ফ্রিমেসন’ নামক আরেকটি গুপ্তসংঘ ও খ্রিস্টান ক্রুসেডারদের বিশেষ বাহিনী ‘নাইট টেম্পলার’ দের যোগসূত্র স্থাপিত হয়।
2
নাইট টেম্পলাররা এদের দ্বারা ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হয়ে ক্রিশ্চিয়ানিজম থেকে দলছুট হয়ে যায়।
এর ফলে ইউরোপে চার্চ তাদের ধর্মত্যাগী ঘোষণা করে হুলিয়া জারি করে যে তাদের দেখামাত্রই হত্যা করতে হবে।
এর ফলে ‘নাইট টেম্পলাররা’ নর্দান ইউরোপের দেশগুলোতে আত্মগোপনে চলে যায় কয়েক শতকের জন্য।
ধারণা করা হয় এই ‘কাব্বালিক ইহুদি’, ‘ব্যাভারিয়ান’ এবং ‘নাইট টেম্পলার’ এই তিন গোষ্ঠীর সন্মিলনে এক বা একাধিক সমমনা গুপ্তসংঘের আবির্ভাব ঘটে।
ইউরোপ থেকে পুনরায় আত্মপ্রকাশ করা এই সংঘগুলির সদস্যরা পরবর্তীতে পৃথিবীতে বিপুল পরিমাণ রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করে।
আমরা ‘ফ্রি-মেসন’ কিংবা ‘ইলুমিন্যাটি’ বিভিন্ন নামে বর্তমানে যে বিপুল ক্ষমতাধর গুপ্তসংগঠনগুলোকে ডাকি- তারা সেই গোষ্ঠীগুলোরই ব্লাডলাইন তথা উত্তরসূরী।
হ্যাঁ, কয়েক শতকে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিকভাবে বিপুল ক্ষমতা বিস্তার করে বর্তমানে এরাই আড়াল থেকে এই পৃথিবীর কলকাঠি নাড়ে।
নতুন এই বিশ্বের গালভরা নাম দিয়েছে এরা ‘নিউ ওয়ার্ল্ড অর্ডার’।
বর্তমানে আমরা মোটের উপরে এই পৃথিবীর যে রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক বাস্তবতা দেখি তা অনেকাংশেই এই নিউ ওয়ার্ল্ড অর্ডারের নিয়ন্ত্রিত।
প্রায়ই এমেরিকা, ইউরোপের যে নামকরা সেলিব্রেটি, রাজনীতিবিদ, ধনকুবেরদের স্যাটানিক রিচুয়ালের (শয়তান পূজা) খবর, ছবি ভাইরাল হয় তারা এদেরই হাতের পুতুল।
এবার মূল কথায় আসি। ইব্রাহীম (আ:) এর বংশধররা মূলত হলদেটে বর্ণের ‘জুডাইস্ট’।
জিনেটিকালি আরবদের ভাই এই জুডাইস্টদের একটা বড় অংশ নম্র এবং ধর্মগ্রন্থ হিসেবে ‘বুক অব তোরাহ’ অনুসরণ করার চেষ্টা করে।
এরা ব্রাজিল, রাশিয়াসহ পৃথিবীর নানা দেশে ছড়িয়ে আছে।
একটু খোঁজ নিলে জানতে পারবেন যে এই জুদাইস্টদের একটি বড় অংশ ‘প্রমিসড ল্যান্ড’ এর নামে স্বাধীন ফিলিস্তিনে জুলুম করে ইজ্রাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করে।
আসি মূল টুইস্টে। বর্তমান জায়নবাদী ইজরাইলের মূল হোতা হচ্ছে সেই ইউরোপীয় লালমুখো আশকেনাজি জিউরা।
এরা অনুসরণ ও চর্চা করে করে ‘বুক অব তালমুদ’।
যেটি কোন আসমানী কিতাব নয় বরং কথিত আছে এটি জাদুবিদ্যায় ঠাসা একটি বই! এর একটি নাম হচ্ছে ‘ব্যবিলনিয়ান তালমুদ’!
কি?! কিছু মনে পড়ে যাচ্ছে?! বিশ্বাস না হলে গুগল করে দেখতে পারেন! এই চূড়ান্ত বিপথগামী জায়োনিস্টরা একটি বিশেষ এজেন্ডা নিয়ে কাজ করছে।
3
ফিলিস্তিনে স্রেফ একটি ইহুদি রাষ্ট্র কায়েম করা তাদের উদ্দেশ্য না। সারা বিশ্বে ইহুদিরা অর্থনৈতিকভাবে ও রাজনৈতিকভাবে যে বলীয়ান তারা পৃথিবীর যে কোন স্থানে কি রাষ্ট্র কায়েম করতে পারতো না?
একটি স্বাধীন রাষ্ট্রকে রীতিমত দখল করে, এত রক্তক্ষয় করে এটা তারা কেন করতে চাচ্ছে? এই প্রশ্নের উত্তর জানলে আপনি আরো বহু প্রশ্নের উত্তর নিমিষেই পেয়ে যাবেন।
কথিত ‘প্রতিশ্রুত ভূমি’ তে তারা একটি রাষ্ট্র কায়েম করতে চায়।
সেই রাষ্ট্র থেকে তারা সোলাইমান (আ:) এর সেই বিস্ময়কর ক্ষমতা ও রাজত্বের অনুকরনে পুরো পৃথিবী করতলগত করতে চায়।
তাদের আল্টিমেট টার্গেটের একটি হচ্ছে আল-আকসা প্রাঙ্গনে কথিত ‘সলোমন টেম্পল’ পুনঃর্নির্মান।
এখন এই সলোমন টেম্পল নিয়ে বেশ রহস্যে ঘেরা আলোচনা আছে।
ইহুদিদের বিশ্বাস এই টেম্পলে এমন শক্তি/জ্ঞান লুপ্ত আছে যা তাদেরকে প্রবল ক্ষমতাধর করবে ও সারা পৃথিবীতে বিজয়ী করবে।
তাদের বিজয়ের কান্ডারি হাল ধরবেন এবং এই টেম্পল থেকেই নিজের একচ্ছত্র রাজত্ব ঘোষণা করবেন।
এই কান্ডারীর আগমন ঘনিয়ে আসার কারনেই আল-আকসা দখলে এত তোড়জোড়! এই কান্ডারীটা কে জানেন?
-মসিহাহ দাজ্জাল!
কি? চমকে গেলেন?! মানব ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ফিতনা। যারা রাসুল (সাঃ) এর শেষ জামানার প্রফেসিগুলো জানেন তারা জানেন যে এর অধিকাংশই বাস্তবায়িত হয়েছে।
অধিকংশ শাইখই বলছেন দাজ্জাল আসার সময় নিকটবর্তী। তিনটি ধর্ম- মুসলিম, খ্রিস্টানদের একাংশ, ইহুদিরা নিজ নিজ মসিহার জন্য অপেক্ষা করছে।
আমরা অপেক্ষা করছি ইমাম মাহদি (আ:) ও ইসা (আঃ) এর জন্য, ক্রিস্টানরা অপেক্ষা করছে ইসা (আঃ) এর জন্য।
তাহলে ইহুদিরা অপেক্ষা করছে কার জন্য? ইহুদিরা তাদের মসিহাহ দাজ্জালের অপেক্ষা করছে! কিন্তু কেন?!
এখানেই বড় টুইস্ট। আমরা জানি তৌরাত ও ইঞ্জিলে শেষ নবী আগমনের কথা বলে রাখা হয়েছে। কিন্তু শেষ নবী (সাঃ) যখন আসলেন ইহুদিরা তখন তাকে অস্বীকার করলো।
ফলে তাদের হিসেবে শেষ নবী এখনো আসেনি। এই বিপথগামিতা তাদেরকে এখন মানব জাতির সবচেয়ে বড় ফিতনার অনুগামী করেছে।
তারা শেষ নবী হিসেবে দাজ্জালকে মনে করে তার আগমনের জন্য অপেক্ষা করছে! নিউ ওয়ার্ল্ড অর্ডার হলো দাজ্জালের আগমনের পূর্বে পুরো বিশ্বকে প্রস্তুত করার নিখুঁত পরিকল্পনা।
স্বীকারোক্তি
উপরোক্ত লেখাটি সংগ্রহ করা হয়েছে একটি ফেসবুক পেইজ থেকে। লেখকের মূল প্রোফাইল আমি খুঁজে পাই নি। পেলে অনুমতি নিতে পারতাম।
যদি কোনোদিন এই লেখাটি লেখকের চোখে পড়ে, আর তিনি যদি এটি আমাদের ওয়েবসাইটে না রাখতে চান, তাহলে কন্ট্রাক্ট পেজ থেকে কন্ট্রাক্ট করলেই আমরা লেখাটি রিমুভ করে দিব। ধন্যবাদ।