ইসলামের ইতিহাস বুক রিভিউ – ড. মুহাম্মাদ ইবরাহিম আশ-শারিকি এর লিখিত “ইসলামের ইতিহাস (নববী যুগ থেকে বর্তমান)” বইটি পড়া শেষ করলাম আলহামদুলিল্লাহ।
বইটা মাকতাবাতুল আসলাফ থেকে প্রকাশিত হয়েছে। সম্পাদনায় ছিলেন শাইখ মিজান হারুন হাফিঃ। আমার পড়া মুসলিম ইতিহাসের মধ্যে এটি প্রথম নয়।
পূর্বে ইসমাইল রেহান সাহেবের লিখিত ‘মুসলিম উম্মাহর ইতিহাস’ বইটা পড়েছিলাম।
সেটিতে অনেক ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করে নির্ভরযোগ্য ইতিহাস তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে।
ড. মুহাম্মাদ ইবরাহিম আশ-শারিকি এর ইসলামের ইতিহাস বইটা সংক্ষিপ্ত আকারে পুরো ইতিহাস আনার চেষ্টা করা হয়েছে।
যদিও দেখা গিয়েছে, সংক্ষেপে লেখার কারণে অনেক ইতিহাসই উল্লেখযোগ্যভাবে তুলে ধরা হয় নি।
তবে এত ভালো কিছুর পরও এখানে কিছু সীমাবদ্ধতা আছে।
সর্বপ্রথম যেই জিনিষটা চোখে পড়েছিল, তা হলো হযরত উসমান রা. এর শহীদ হওয়ার পর পরবর্তী ফিতনার ইতিহাসগুলো।
এখানে সাহাবাদের নিজস্ব ইখতিলাফ ও ভুল বুঝাবুঝিকে শিয়াদের ধ্যান-ধারণা অনুযায়ী উপস্থাপন করার হয়েছে বলে আমার নিকট মনে হয়েছে।
হযরত মুআবিয়া রা. এর ঘটনা এমনভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে, যেন তিনি ক্ষমতার জন্য উন্মুখ ছিলেন।
এছাড়াও তার পরবর্তী ইয়াজিদকে কিভাবে খলিফা বসানো হয়েছে, সেটিও বিস্তারিত এখানে আলোচনা করা হয় নি।
যেহেতু এগুলো সাহাবীদের সাথে সম্পৃক্ত, তাই এই অংশের ইতিহাস একটু বড় করে হলেও বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা প্রয়োজন ছিল।
যারা এই পড়েছেন বা পড়তে ইচ্ছুক, তারা কষ্ট করে এই অংশের ইতিহাসটি ইসমাইল রেহান সাহেবের লিখিত বই ‘মুসলিম উম্মাহর ইতিহাস’ থেকে একবার পড়ে নজর বুলিয়ে নিবেন।
তাহলে আর কোনো সংশয় থাকবে না ইনশাআল্লাহ।
এছাড়াও বইতে বর্তমান শিয়া আর আলী রা. এর অনুসারী শিয়াদের মধ্যে কোনো পার্থক্য লেখা হয় নি।
এটি অনেক মানুষের জন্য বিভ্রান্তির কারণ হতে পারে। এছাড়াও আব্দুল্লাহ ইবনে সাবা এর ষড়যন্ত্র সম্পর্কে কিছুই লেখা হয় নি।
খারেজিদের সম্পর্কে একেবারে সংক্ষিপ্ত আলোচনা এসেছে। যা দ্বারা কিছুই তেমন বুঝা যায় না।
আর মোগল সাম্রাজ্য নিয়ে মাত্র ২ পৃষ্ঠার বেশি আলোচনা করা হয়েছে।
যা এত বড় একটি সাম্রাজ্যের ইতিহাস বুঝার জন্য যথেষ্ঠ নয়।
২. – ইসলামের ইতিহাস বুক রিভিউ
এছাড়াও ফিলিস্তিন ইস্যু, বিভিন্ন মুসলিম অঞ্চল, আফ্রিকা সম্পর্কে আলোচনা খুব কম এসেছে।
যেহেতু বইয়ের সাব হেডিং নামে লেখা হয়েছে “নববী যুগ থেকে বর্তমান” তাই উচিৎ ছিল, ইহুদি-খৃস্টানদের ষড়যন্ত্রগুলো বিস্তারিত হলেও তুলে ধরা।
বইয়ের শেষে মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর পরিসংখ্যান দেওয়াটা উত্তম মনে হয়েছে। তবে আরেকটু বিশদ আলোচনার দাবী রাখে এগুলো।
সর্বশেষ যেটা না বললেই নয়, তা হলো সংক্ষিপ্ত ধারণা নেওয়ার জন্য এই বইটা যথেষ্ঠ মনে হলেও এটির দ্বারা পুরো ১৪০০ বছরের ইতিহাস জানা যায় না।
তাই আগ্রহী পাঠকরা বর্তমানে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য কিতাব “মুসলিম উম্মাহর ইতিহাস” বইটা সংগ্রহ করতে পারেন। সেটি পড়া উত্তম হবে বলে মনে করি।
এতটুকুই ছিল ইসলামের ইতিহাস বই সম্পর্কে আমার সংক্ষিপ্ত বুক রিভিউ ।