আবু তালিবের মৃত্যুর ঘটনা

আবু তালিবের মৃত্যুর ঘটনা – নবুয়তের ১০ম হিজরীর রজব মাসের ঘটনা। নবীজির চাচা আবু তালিবের অসুস্থতা বাড়তে লাগলো।

আবু তালিবের মৃত্যুর পূর্বে নবীজি সা. তার নিকট উপস্থিত হলেন। সেখানে আবু জাহলও ছিল। রাসূল সা. তার চাচাকে বললেন,

হে চাচাজান! আমি শুধুমাত্র বলুন “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” (আল্লাহ ব্যতিত কোনো ইলাহ নেই)। এতুটুকু স্বীকার করলেই আমি আল্লাহর নিকট আপনার ব্যাপারে সুপারিশ করবো।

তখন আবু জাহল ও আব্দুল্লাহ ইবনে উমাইয়া ব্যঙ্গ করে বললো, হে আবু তালিব! আপনি কি আব্দুল মুত্তালিবের অনুসরণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবেন?

আবু তালেব তখন বললো, আমি আব্দুল মুত্তালিবের মিল্লাত বা ধর্মের উপর আছি। এরপরই আবু তালিব মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।

শোকের বছর

যেই বছর নবীজির অভিবাবক আবু তালিব ইন্তিকাল করেন সেই একই বছরে নবীজির প্রিয় সহধর্মিনী হযরত খাদিজা রা. ইন্তিকাল করেন

আল্লামা মুহাম্মাদ ইবনে ইসহাক রহ. বলেন, আবু তালিব অন্তিম ময্যায় শায়িত এই সংবাদ পেয়ে কুরাইশরা বলাবলি করতে লাগলো,

হামযা এবং উমর ইতিমধ্যেই ইসলাম গ্রহণ করেছে। আর মুহাম্মাদের আনীত ধর্ম কুরাইশদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ছে। চল আমরা আবু তালিবের নিকট যাই এবং তার থেকে কিছু অঙ্গীকার নিয়ে নেই।

তখন তারা আবু তালিবের নিকট গেল। সেখানে কুরাইশদের অভিজাত নেতৃবর্গ ছিল। উতবা ইবনে রাবীআ, শায়বা ইবনে রাবীআ, আবু জাহল, উমাইয়া ইবনে খালফ, আবু সুফিয়ান প্রমুখ।

তারা তখন আবু তালিবকে বলতে থাকে, হে আবু তালিব! আমরা আপনার ভাতিজার ব্যাপারে শঙ্কিত। তাই তাকে ডেকে কিছু অঙ্গীকার আদায় করে নিন, যাতে আমাদের জন্য সুবিধা হয়।

তখন আবু তালিব নবীজি সা. কে ডাকলেন। আবু তালিব তাকে বললেন, ভাতিজা! এরা তোমার সম্প্রদায়ের সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিবর্গ। তারা এনেছেন কিছু অঙ্গীকার আদায় করে নিতে। তুমি তাদেরকে কিছু অঙ্গীকার দাও।

রাসূল সা. তখন বললেন, আপনারা শুধু আমাদের একটি কথা দিন, যার মাধ্যমে আপনারা সম্পূর্ণ আরব জাহানের অধিপতি হতে পারবেন

এবং সমগ্র অনারব অঞ্চল আপনার হস্তগত থাকবে। তখন আবু জাহল বললো, এমন অঙ্গীকার হলে তো আমরা তোমার দশটা কথাও মানতে পারি।

নবীজি সা. তখন বললেন, তবে আপনারা বলুন লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ (আল্লাহ ব্যতিত কোনো উপাস্য নেই)। তখন কাফেররা বললো,

তুমি কি বহু ইশ্বরের পরিবর্তে একজন মাত্র ইশ্বরকে ইলাহ সাব্যস্ত করতে চাও? এটা তো আশ্চর্যজনক প্রস্তাব।

আবু তালিবের মৃত্যুর পর নবীজির দোয়া

নবীজির চাচা আবু তালিব কাফের অবস্থায় মারা যাওয়ার পর নবীজি অত্যন্ত কষ্ট পেলেন। যেই চাচা ইসলামের জন্য এত কিছু করলেন তিনিই ইসলাম গ্রহণ করলেন না!

তখন নবীজি সা. বললেন, আমাকে নিষেধ না করা পর্যন্ত আমি চাচার জন্য মাগফিরাতের দোয়া করতে থাকবো।

এরপর আল্লাহ সূরা তাওবা এর ১১৩ নং আয়াত অবতীর্ণ করেন। তা হলো,

مَا کَانَ لِلنَّبِیِّ وَ الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اَنۡ یَّسۡتَغۡفِرُوۡا لِلۡمُشۡرِکِیۡنَ وَ لَوۡ کَانُوۡۤا اُولِیۡ قُرۡبٰی مِنۡۢ بَعۡدِ مَا تَبَیَّنَ لَهُمۡ اَنَّهُمۡ اَصۡحٰبُ الۡجَحِیۡمِ

নবী ও মুমিনদের জন্য উচিত নয় যে, তারা মুশরিকদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করবে। যদিও তারা আত্মীয় হয়। তাদের নিকট এটা স্পষ্ট হয়ে যাওয়ার পর যে, নিশ্চয় তারা প্রজ্বলিত আগুনের অধিবাসী।

এরপর আল্লাহ সূরা কাসাস এর ৫৬ নং আয়াত অবতীর্ণ করেন। তা হলো,

اِنَّکَ لَا تَهۡدِیۡ مَنۡ اَحۡبَبۡتَ وَ لٰکِنَّ اللّٰهَ یَهۡدِیۡ مَنۡ یَّشَآءُ ۚ وَ هُوَ اَعۡلَمُ بِالۡمُهۡتَدِیۡنَ

তুমি যাকে ভালবাস তাকে সৎপথ দেখাতে পারবে না, বরং আল্লাহ্ই যাকে চান সৎ পথে পরিচালিত করেন, সৎপথপ্রাপ্তদের তিনি ভাল করেই জানেন।

দাফন-কাফন

হযরত আলী রা. বলেন, আমার পিতা (আবু তালিব) ইন্তিকাল করার পর নবীজির নিকট আমি উপস্থিত হয়ে বলি, আপনার চাচা ইন্তিকাল করেছেন।

তখন তিনি উত্তরে বললেন, যাও। দাফন করে ফেল। আমি বললাম, কিন্তু তিনি তো মুশরিক অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছেন।

নবীজি সা. আবার বললেন, যাও দাফন কর। এরপর আলী রা. তাই করলেন। লাশকে গোসল দিয়ে দাফন করে দিলেন।

তথ্যসুত্র

আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, খন্ড ৩, পৃষ্ঠা ২৩২-২৪০

আর রাহিকুল মাখতুম, পৃষ্ঠা ১২৩

আবু তালেবের মৃত্যুর পর কি হয়েছিল

আবু তালেবের মৃত্যুর কিছুদিন পর নবীজি সা. এর স্ত্রী হযরত খাদিজা রা. ও ইন্তিকাল করেন

আবু তালেবের শেষ কথা কি ছিল

যদি আমি ঈমান আনি তাহলে আমার বংশের লোকেরা বলবে, আবু তালিব ভয়ে ঈমান এনেছে

নবুয়তের কত বছর চাচা আবু তালিব মারা যায়?

নবুয়তের ১০ম বর্ষে নবীজির চাচা আবু তালিব মারা যায়

আবু তালিব কত বছর নবীকে রক্ষা করেছিলেন

নবুয়তের পূর্বে নবীজির ১০ বছর বয়স থেকে ৪০ বছর বয়স পর্যন্ত। এরপর নবুয়তের পরে ৫০ বছর বয়স পর্যন্ত। সব মিলিয়ে ৪০ বছর নবীজিকে তিনি রক্ষা করেছেন

Scroll to Top