সামরিক বাহিনীর প্রতি অতিরিক্ত শ্রদ্ধার কারণ ও বাস্তবতা

সামরিক বাহিনীর প্রতি অতিরিক্ত শ্রদ্ধার কারণ – আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় সামরিক বাহিনীকে পবিত্র ও সমালোচনার ঊর্ধ্বে মনে করা হয়।

প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী কিংবা কোনো আমলাতন্ত্রের বিরুদ্ধে জনগণ সোচ্চার হলেও, সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে জনগণ কথা বলতে নারাজ।

এই ভাবমূর্তি রাষ্ট্রীয় প্রচারণার ফল, যা বিশ্বব্যাপী সকল দেশে প্রায় একই রকম।

সেনাবাহিনীর মাধ্যমে কোনো অপরাধ হয়ে গেলে রাষ্ট্র সেটিকে কঠোর গোপনীয়তার মধ্যে মীমাংসা করে দেয়। যেন তাদের জনগণের কাছে সেনাবাহিনীর ইমেজ নষ্ট না হয়।

আর্মি দোষ করেছে” এটা যতটা না দোষণীয়, তার থেকে বেশি দোষণীয় আর্মির অপরাধকে যে প্রকাশ করেছে তার।

উদাহরণস্বরূপ, ব্র্যাডলি ম্যানিং আমেরিকার যুদ্ধাপরাধ ফাঁস করায় ৩৫ বছরের কারাদণ্ড পান।

যদিও মার্কিন আইন হুইসেল ব্লোয়ারদের (গোপন বা অবৈধ কার্যক্রম প্রকাশকারী ব্যক্তিদের) সুরক্ষা দেওয়ার কথা বলে।

আবু গারিব কারাগারে নির্যাতনের তথ্য প্রকাশ করায় জেনারেল অ্যান্থনিও তাগুবাকে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়।

বাংলাদেশে জুলাইয়ের বিপ্লবের সময় সেনাবাহিনী জনগণের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরার পর পুরো দেশবাসী তাদের বিরুদ্ধে চলে যায়। ফলস্বরূপ তড়িঘড়ি করে শেখ হাসিনাকে পদত্যাগে বাধ্য করে সেনাপ্রধান।

সেনাবাহিনীতে যুদ্ধাপরাধ সংগঠিত হওয়া সত্ত্বেও রাষ্ট্রীয় প্রচারণার মাধ্যমে তাদের মহান হিসেবে উপস্থাপন করা হয়।

আমেরিকার রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যতই কোন্দল থাকুক, তারা কখনোই তাদের সেনাবাহিনীর ভুলগুলো বলবে না।

তাদের সেনাবাহিনী আফগানিস্তান, সোমালিয়া, ইরাক ও ভিয়েতনামের যুদ্ধে যে-ই অমানবিক কাজ করেছে, তা নিয়ে কখনোই কথা বলবে না কোনো শিক্ষিত আমেরিকান।

ফিলিস্তিনের যুদ্ধে সরাসরি আমেরিকান মিলিটারি কর্তৃক ইসরাইলকে সাহায্যের ব্যাপারে কখনো শুনবেন না আমেরিকায় কোনো আন্দোলন হতে।

বরং আমেরিকায় আন্দোলন হয়, ইসরাইল কেন গাজ্জায় হামলা করে, এটা নিয়ে।

চীন, রাশিয়া, আমেরিকা, ভারত, পাকিস্তান, এমনকি বাংলাদেশেও সেনাবাহিনীকে ফেরেশতা-সম ভাবা হয়।

যদিও তারা জাতিসংঘ নির্ধারিত মানবাধিকার লঙ্ঘন, নির্যাতন ও যুদ্ধাপরাধে লিপ্ত থাকে।

2

বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রনায়কদের হত্যা, অপারেশন ক্লিন হার্টের নামে নিপীড়ন, এবং পিসকিপিং মিশনে নির্যাতনের অভিযোগও আছে।

সামরিক বাহিনীর প্রতি অতিরিক্ত শ্রদ্ধা রাষ্ট্রীয় প্রচারণার ফল। যা পুলিশের মতো অন্য বাহিনীর ক্ষেত্রে দেখা যায় না।

রাষ্ট্রব্যবস্থা তাদের তৈরি করা আর্মি বাহিনীর ব্যাপারে এ রকম এক ধ্যানধারণা রাখার ব্যবস্থা করে, যেন সাধারণ মানুষের নিকট এরা ফেরেশতাদের কোন দল।

অথচ জীবনের ঝুঁকি বেশি থাকে ফায়ার ব্রিগেডের কর্মী, সমুদ্রের জেলে কিংবা সাধারণ নাগরিকদেরও। যুদ্ধকালেও শুধু সেনাবাহিনী নয়, সাধারণ জনগণও যুদ্ধে অংশ নেয়।

পাকিস্তান আর্মির ব্যাপারটি না তুললেই নয়। এমন কোন অন্যায় কাজ নেই, যা এই আর্মি বাহিনী করেনি।

দলগতভাবে একটি মুসলিম বাহিনী হওয়ার পরেও এরা পূর্ব বাংলার সাধারণ মুসলিমদের উপর যেভাবে অত্যাচার চালিয়েছে, তা ইতিহাসে এখনও দগদগ করে জ্বলছে।

অথচ সেই সময়ে তারা পূর্ব পাকিস্তানের এই যুদ্ধকে জিহাদ হিসেবে প্রচার করেছিল।

এই প্রোপাগান্ডায় পড়ে পাকিস্তানের অনেক আলিমও এই ভূমিতে এসে জিহাদ করার আশা ব্যক্ত করেছিল। এগুলো ঐতিহাসিক সত্য।

রাষ্ট্রীয় সুবিধাভোগী সামরিক বাহিনীকে প্রশ্নের বাইরে রাখার প্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসা জরুরি।

তাদের নৈতিক অবস্থান সম্পর্কে সচেতন হতে হবে এবং অন্য বাহিনীর মতোই তাদের দায়বদ্ধতার আওতায় আনা উচিৎ।

সহায়ক লেখা

আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় সেনাবাহিনীর পূজা

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top