মা আমেনার মৃত্যু এবং আব্দুল মুত্তালিবের তত্ত্বাবধান

মা আমেনার মৃত্যু এবং আব্দুল মুত্তালিবের তত্ত্বাবধান – দীর্ঘদিন নবীজির দুধমাতা হালিমার নিকট লালিত-পালিত হওয়ার পর অবশেষে নবীজি তার মায়ের কোলে ফিরে আসলেন।

শিশু মুহাম্মাদকে মা কোনোদিক থেকে আদর যত্নের কম করেন নি। তিনি নিজেকে উজাড় করে সন্তানকে আগলে রেখেছেন।

নবীজির বয়স তখন সবেমাত্র ৬ বছর। মা আমেনা একদিন ভাবলেন, তার নিজের বাড়িতে যাবেন। আমেনা ছিলেন আদি ইবনে নাজ্জার গোত্রের অন্তর্ভুক্ত।

সেই সুবাদে তিনি তার দাসী উম্মে আয়মান এবং রাসূলের দাদা আব্দুল মুত্তালিবকে সাথে নিলেন।

সে সময় মদীনায় একবার একটি আশ্চর্যজনক ঘটনা ঘটলো। দুজন ইহুদী আমেনার দাসী উম্মে আয়মানকে বললো, মুহাম্মাদকে নিয়ে আসো।

তাকে আনা হলে তারা ভালোভাবে শিশু মুহাম্মাদকে দেখে। এরপর পরষ্পর বলাবলি করে, এই ছেলেটিই এই উম্মতের নবী হবে।

তার কারণে অনেক যুদ্ধ-বিগ্রহ সংগঠিত হবে। আর সে মক্কায় থাকতে পারবে না।

সেখানকার লোকজন তাকে মক্কা থেকে বের করে দিবে। এই ইয়াসরিব তথা মদীনাই হবে তার হিজরতের স্থান।

রাসূল সা. বনু নাজ্জারে কিছুদিন বেড়ান। এখানে বনু আদি বিন নাজ্জারের একটি পুকুর ছিল।

রাসূল সা. এই পুকুর থেকে সাঁতার শিখে নেন।

আমেনার ইন্তিকাল

দীর্ঘ ১ মাস মদীনায় অবস্থানের পর তারা মক্কার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করলো। তখন মক্কা এবং মদীনার মধ্যবর্তী আবওয়া  নামক জায়গায় এসে আমেনা গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন।

ক্রমে ক্রমে এই অসুখ বাড়তে লাগলো। শেষ পর্যন্ত এই জনমানবহীন স্থানে মা আমেনার মৃত্যু হয়।

মক্কায় গমন

ইন্তিকালের মাধ্যমে নবীজি মা-বাবা উভয়কেই হারালেন। এই জনমানবহীন স্থানে আমেনাকে দাফন করে উম্মে আয়মান এবং আব্দুল মুত্তালিব নবীজিকে নিয়ে মক্কায় আসলেন।

মক্কায় আসার পর নবীজির সম্পূর্ণ দায়িত্ব আব্দুল ‍মুত্তালিব নিজেই নিয়ে নেন। তিনি তার অন্যান্য সন্তানদের ন্যায় মুহাম্মাদকে লালন-পালন করতেন।

আব্দুল মুত্তালিব তাকে কেমন ভালোবাসতেন, তার ছোট একটি ঘটনা উল্লেখ করা যাক।

কা’বার ছায়ায় চাদর

যেহেতু আব্দুল মুত্তালিব ছিলেন তার গোত্রের সরদার সেই সুবাদে তার জন্য সরদার হিসেবে কা’বার ছায়ায় চাদর বা গদি বিছিয়ে দেয়া হতো।

সেই চাদরে অন্য কারো বসার অনুমতি ছিল না। আব্দুল মুত্তালিবের কোনো সন্তানরাও কখনো এই চাদরে বসে নি। কিন্তু নবীজিকে তিনি সেই চাদরে বসাতেন।

লোকেরা যদি নবীজিকে সরিয়ে দিতে চাইতো তাহলে আব্দুল মুত্তালিব বলতেন, তোমরা আমার নাতিকে ছেড়ে দাও। নিশ্চয় সে বড় হয়ে সম্মানিত একজন ব্যক্তি হবে।

তথ্যসুত্র

১. আর রাহিকুল মাখতুম। খাদিজা আখতার রেজায়ী। পৃষ্ঠা ৭৪

মুসলিম উম্মাহর ইতিহাস। খণ্ড ১। পৃ্ষ্ঠা ২৫৮

আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া। খণ্ড ২। ইসলামিক ফাউন্ডেশন। পৃষ্ঠা ৫০৯

(দাদার সাথে যাওয়াটা শুধুমাত্র আর রাহিকুল মাখতুমেই বর্ণিত আছে)

২. আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া। খণ্ড ২। পৃষ্ঠা ৫০৯

৩. মুসলিম উম্মাহর ইতিহাস। খণ্ড ১। পৃষ্ঠা ২৫৮

৪. মুসলিম উম্মাহর ইতিহাস। খণ্ড ১। পৃষ্ঠা ২৫৯

আর রাহিকুল মাখতুম। পৃষ্ঠা ৭৪

৫. (মুসলিম উম্মাহর ইতিহাস বইয়ে আছে, সে সময় উম্মে আয়মানের বয়স ছিল মাত্র ১৬ থেকে ১৭ বছর।

সেই সুবাদে আব্দুল মুত্তালিবের সাথে থাকাটা যৌক্তিক।

কেননা কেউ কখনো পুরুষ ব্যাতিত একাকী ঘর থেকে বের হয় না। মক্কা থেকে মদীনার দুরত্ব ৪৫০.৫ কি.মি.।

তাই এত দীর্ঘ রাস্তা নিশ্চয় আমেনা কোনো পুরুষ ব্যতিত অতিক্রম করেন নি।)

৬. মুসলিম উম্মাহর ইতিহাস। খণ্ড ১। পৃষ্ঠা ২৫৯

আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া। খণ্ড ২। পৃষ্ঠা ৫১২

আর রাহিকুল মাখতুম। পৃষ্ঠা ৭৪

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top